বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক পরিকল্পনা: সময়সীমা চূড়ান্ত নয়, দর-কষাকষির ইঙ্গিত ট্রাম্পের

- Update Time : ১১:৪৩:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
- / ৩১ Time View
বিশ্ববাণিজ্যে ফের উত্তেজনা ছড়ালেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার (৭ জুলাই) তিনি এক ঘোষণায় জানান, বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি। তবে এ শুল্ক আরোপের সময়সীমা এখনও চূড়ান্ত নয় বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। তার ভাষ্য অনুযায়ী, আগস্টের ১ তারিখ পর্যন্ত এসব দেশকে চূড়ান্ত আলোচনার সুযোগ দেওয়া হবে— এর মধ্যেই সুনির্দিষ্ট বাণিজ্য চুক্তি না হলে তখন থেকে শুল্ক কার্যকর হবে।
দর–কষাকষির বার্তা নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাতে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে পুনরায় নির্বাচনী প্রচারে সক্রিয় ট্রাম্প সোমবার রাতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেন। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি বলছি না যে সময়সীমা একেবারে চূড়ান্ত। কেউ যদি আমাদের সামনে ভালো কোনো প্রস্তাব নিয়ে আসে, তাহলে সেটি গ্রহণ করার সম্ভাবনাও আছে। ১ আগস্টের সময়সীমা নমনীয়।”
ট্রাম্প আরও বলেন, এই সিদ্ধান্ত হঠাৎ নেওয়া হয়নি। তিনি জানান, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্র যে পাল্টা শুল্কের ঘোষণা স্থগিত করেছিল, সেটি এখন থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে আবার কার্যকর হবে। তবে এবার তা আগের চেয়ে বেশি হারে কার্যকর হবে।
২৫
ট্রাম্পের অফিস থেকে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ ১৪টি দেশের সরকারকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে জানানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ওপর ২৫% থেকে ৪০% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হবে। চিঠিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে:
- বাংলাদেশের পণ্যের ওপর শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫%।
- ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২% এবং থাইল্যান্ডের ওপর ৩৬% শুল্ক আরোপের প্রস্তাব রয়েছে।
- জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষেত্রে এ হার ২৫%।
চিঠিতে উল্লেখিত অন্য দেশগুলো হচ্ছে: মালয়েশিয়া, কাজাখস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, লাওস, মিয়ানমার, বসনিয়া অ্যান্ড হারজেগোভিনা, তিউনিশিয়া, সারবিয়া, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড।
ট্রুথ সোশ্যালে বার্তা
নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ এই শুল্ক পরিকল্পনার বিস্তারিত প্রকাশ করেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় আমাদের কঠোর হতে হবে। কোনো দেশ যদি অবাধে মার্কিন বাজারে প্রবেশ করতে চায়, তবে তাকে সমান শর্তে বাণিজ্য করতে হবে।”
এপ্রিলের সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতা
প্রসঙ্গত, গত ২ এপ্রিল ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে এমন দেশগুলোর ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তখন তিনি প্রায় ১০০ দিনের সময় দিয়ে আলোচনা ও দর-কষাকষির সুযোগ দেন। সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে ৯ জুলাই। তবে ৭ জুলাই ট্রাম্প আবারও নতুন করে সময় বাড়িয়ে ১ আগস্ট পর্যন্ত উন্নীত করেছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
বিশ্লেষকদের মতে, এই শুল্ক আরোপের হুমকি মূলত নির্বাচনী বছরকে সামনে রেখে ট্রাম্পের কৌশল। তার বাণিজ্যিক জাতীয়তাবাদী নীতিকে সামনে রেখে আবারও ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগানে জোর দিচ্ছেন তিনি। তবে এ সিদ্ধান্ত বিশ্ব বাণিজ্যে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো যাদের যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক, চামড়া, হস্তশিল্পসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি নির্ভর করে, তাদের জন্য এই বাড়তি শুল্ক বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে করোনোত্তর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের এই সময়ে এমন শুল্কের প্রস্তাব অনেক দেশের শিল্প ও রপ্তানিখাতকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
যদিও ট্রাম্প শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, তবে চূড়ান্ত কার্যকরের আগে দর-কষাকষির সুযোগ রেখেছেন। আগস্টের প্রথম দিন পর্যন্ত আলোচনা অব্যাহত থাকবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। ফলে এখন প্রশ্ন উঠছে— এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে কি না, এবং ট্রাম্প আদৌ এ শুল্ক কার্যকর করেন কি না।
তথ্যসূত্র: এএফপি, বিবিসি, ট্রুথ সোশ্যাল, হোয়াইট হাউস প্রেস ব্রিফিং.
Please Share This Post in Your Social Media

বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক পরিকল্পনা: সময়সীমা চূড়ান্ত নয়, দর-কষাকষির ইঙ্গিত ট্রাম্পের

বিশ্ববাণিজ্যে ফের উত্তেজনা ছড়ালেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার (৭ জুলাই) তিনি এক ঘোষণায় জানান, বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি। তবে এ শুল্ক আরোপের সময়সীমা এখনও চূড়ান্ত নয় বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। তার ভাষ্য অনুযায়ী, আগস্টের ১ তারিখ পর্যন্ত এসব দেশকে চূড়ান্ত আলোচনার সুযোগ দেওয়া হবে— এর মধ্যেই সুনির্দিষ্ট বাণিজ্য চুক্তি না হলে তখন থেকে শুল্ক কার্যকর হবে।
দর–কষাকষির বার্তা নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাতে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে পুনরায় নির্বাচনী প্রচারে সক্রিয় ট্রাম্প সোমবার রাতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেন। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি বলছি না যে সময়সীমা একেবারে চূড়ান্ত। কেউ যদি আমাদের সামনে ভালো কোনো প্রস্তাব নিয়ে আসে, তাহলে সেটি গ্রহণ করার সম্ভাবনাও আছে। ১ আগস্টের সময়সীমা নমনীয়।”
ট্রাম্প আরও বলেন, এই সিদ্ধান্ত হঠাৎ নেওয়া হয়নি। তিনি জানান, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্র যে পাল্টা শুল্কের ঘোষণা স্থগিত করেছিল, সেটি এখন থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে আবার কার্যকর হবে। তবে এবার তা আগের চেয়ে বেশি হারে কার্যকর হবে।
২৫
ট্রাম্পের অফিস থেকে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ ১৪টি দেশের সরকারকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে জানানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ওপর ২৫% থেকে ৪০% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হবে। চিঠিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে:
- বাংলাদেশের পণ্যের ওপর শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫%।
- ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২% এবং থাইল্যান্ডের ওপর ৩৬% শুল্ক আরোপের প্রস্তাব রয়েছে।
- জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষেত্রে এ হার ২৫%।
চিঠিতে উল্লেখিত অন্য দেশগুলো হচ্ছে: মালয়েশিয়া, কাজাখস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, লাওস, মিয়ানমার, বসনিয়া অ্যান্ড হারজেগোভিনা, তিউনিশিয়া, সারবিয়া, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড।
ট্রুথ সোশ্যালে বার্তা
নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ এই শুল্ক পরিকল্পনার বিস্তারিত প্রকাশ করেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় আমাদের কঠোর হতে হবে। কোনো দেশ যদি অবাধে মার্কিন বাজারে প্রবেশ করতে চায়, তবে তাকে সমান শর্তে বাণিজ্য করতে হবে।”
এপ্রিলের সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতা
প্রসঙ্গত, গত ২ এপ্রিল ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে এমন দেশগুলোর ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তখন তিনি প্রায় ১০০ দিনের সময় দিয়ে আলোচনা ও দর-কষাকষির সুযোগ দেন। সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে ৯ জুলাই। তবে ৭ জুলাই ট্রাম্প আবারও নতুন করে সময় বাড়িয়ে ১ আগস্ট পর্যন্ত উন্নীত করেছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
বিশ্লেষকদের মতে, এই শুল্ক আরোপের হুমকি মূলত নির্বাচনী বছরকে সামনে রেখে ট্রাম্পের কৌশল। তার বাণিজ্যিক জাতীয়তাবাদী নীতিকে সামনে রেখে আবারও ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগানে জোর দিচ্ছেন তিনি। তবে এ সিদ্ধান্ত বিশ্ব বাণিজ্যে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো যাদের যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক, চামড়া, হস্তশিল্পসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি নির্ভর করে, তাদের জন্য এই বাড়তি শুল্ক বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে করোনোত্তর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের এই সময়ে এমন শুল্কের প্রস্তাব অনেক দেশের শিল্প ও রপ্তানিখাতকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
যদিও ট্রাম্প শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, তবে চূড়ান্ত কার্যকরের আগে দর-কষাকষির সুযোগ রেখেছেন। আগস্টের প্রথম দিন পর্যন্ত আলোচনা অব্যাহত থাকবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। ফলে এখন প্রশ্ন উঠছে— এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে কি না, এবং ট্রাম্প আদৌ এ শুল্ক কার্যকর করেন কি না।
তথ্যসূত্র: এএফপি, বিবিসি, ট্রুথ সোশ্যাল, হোয়াইট হাউস প্রেস ব্রিফিং.