সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চাঁদের দিকে ধাবিত ‘ওয়াইআর৪’ গ্রহাণু: ২০৩১ সালে সংঘর্ষের আশঙ্কা, গবেষণার বিরল সুযোগ

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১২:১২:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
  • / ৫৬ Time View

e44a9941e0834fa9a7e9edce6590d47d 66def5af74ef5

e44a9941e0834fa9a7e9edce6590d47d 66def5af74ef5

চাঁদের দিকে ধাবিত হচ্ছে একটি বিরল ও বিপজ্জনক গ্রহাণু, যার নাম ‘ওয়াইআর৪’ (YR4)। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ বিজ্ঞানীদের তথ্য অনুযায়ী, ২০৩১ সালে এই গ্রহাণুটি চাঁদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে পারে। যদিও গ্রহাণুটি পৃথিবীতে সরাসরি আঘাত হানবে না, তবে এটি চাঁদের পৃষ্ঠে আঘাত করলে সৃষ্ট ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করতে পারে—এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

গ্রহাণুটির বৈশিষ্ট্য ও গতি

‘ওয়াইআর৪’ গ্রহাণুটি প্রথম শনাক্ত হয় ২০২৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ের একটি গ্রহাণু পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে। এটি পৃথিবীর কাছ দিয়ে অতীতে একাধিকবার অতিক্রম করেছে।

নাসার ‘সেন্টার ফর নিয়ার আর্থ অবজেক্ট স্টাডিজ (CNEOS)’ সূত্র অনুযায়ী, এই গ্রহাণু সূর্যকে প্রতি চার বছর অন্তর একবার পরিভ্রমণ করে। ২০২৫ সালের মে মাসে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে পাওয়া বিশ্লেষণে জানা যায়, এর দৈর্ঘ্য ১৭৪ থেকে ২২০ ফুট, অর্থাৎ প্রায় ১০ তলা ভবনের সমান

সংঘর্ষের সম্ভাবনা ও পরিসংখ্যান

প্রাথমিক বিশ্লেষণে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে চাঁদে আঘাত হানার সম্ভাবনা ছিল মাত্র ১.৭%। কিন্তু এপ্রিলের শেষ নাগাদ সেটি বাড়ে ৩.৮%-এ। সর্বশেষ ২০২৫ সালের মে মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গ্রহাণুটির চাঁদে আঘাত হানার সম্ভাবনা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৩%

এ বিষয়ে নাসার বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, যদিও সম্ভাবনা এখনও কম, তবুও আঘাত ঘটলে তা হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক ঘটনা। চাঁদের পৃষ্ঠে সরাসরি একটি বৃহৎ গ্রহাণুর সংঘর্ষ শত বছরে এমনকি হাজার বছরেও একবার ঘটে, এবং সেটি পৃথিবী থেকে পর্যবেক্ষণযোগ্য হলে সেটি অনন্য গবেষণার সুযোগ এনে দিতে পারে।

সম্ভাব্য প্রভাব ও ঝুঁকি

যদি গ্রহাণুটি চাঁদে আঘাত হানে, তবে সৃষ্ট ধূলিকণা ও ধ্বংসাবশেষ চাঁদের মহাকর্ষ ছাড়িয়ে পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও এটি পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠে সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলবে না, তবুও স্যাটেলাইট যোগাযোগ, টেলিস্কোপ কার্যক্রম, ও মহাকাশ স্টেশনের নিরাপত্তা নিয়ে সতর্কতা জারি থাকতে পারে।

গবেষণার বিরল সুযোগ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের সংঘর্ষ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চন্দ্রপৃষ্ঠে এমন সরাসরি আঘাত চাঁদের ভূতাত্ত্বিক গঠন, মাটির গঠনপ্রক্রিয়া ও অভ্যন্তরীণ গতিশীলতা বিশ্লেষণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

নাসার এক জ্যোতির্বিজ্ঞানী বলেন—

“আমরা যদি এই সংঘর্ষ সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে পারি, তাহলে এটি হবে চাঁদ সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী অধ্যায়।”

বর্তমান অবস্থান ও ভবিষ্যৎ গতিপথ

বর্তমানে গ্রহাণুটি পৃথিবী ও চাঁদের তুলনায় অনেক দূরে রয়েছে। তবে বিজ্ঞানীরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন, ২০২৮ সালের ডিসেম্বর মাসে এটি আবার পৃথিবীর কাছাকাছি আসবে, এবং তারপর ২০৩১ সালের দিকে চাঁদের দিকে দিক পরিবর্তনের প্রবণতা বাড়বে।

‘ওয়াইআর৪’ গ্রহাণুর সম্ভাব্য চাঁদে আঘাত বিজ্ঞানীদের জন্য যেমন একটি বিরল গবেষণার সুযোগ, তেমনি মহাকাশ নিরাপত্তা ও পরিবেশ বিশ্লেষণের জন্য একটি চ্যালেঞ্জও বটে। এই মুহূর্তে এটি পৃথিবীর জন্য সরাসরি হুমকি না হলেও, ভবিষ্যতে মহাকাশে চলমান কার্যক্রম এবং চাঁদে মানব মিশনের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। বিজ্ঞানীরা তাই গ্রহাণুটির গতি ও অবস্থান নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন, যাতে সময়মতো পূর্বাভাস ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়।

সূত্র: NDTV, NASA, Meher News Agency.

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

চাঁদের দিকে ধাবিত ‘ওয়াইআর৪’ গ্রহাণু: ২০৩১ সালে সংঘর্ষের আশঙ্কা, গবেষণার বিরল সুযোগ

Update Time : ১২:১২:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

e44a9941e0834fa9a7e9edce6590d47d 66def5af74ef5

চাঁদের দিকে ধাবিত হচ্ছে একটি বিরল ও বিপজ্জনক গ্রহাণু, যার নাম ‘ওয়াইআর৪’ (YR4)। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ বিজ্ঞানীদের তথ্য অনুযায়ী, ২০৩১ সালে এই গ্রহাণুটি চাঁদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে পারে। যদিও গ্রহাণুটি পৃথিবীতে সরাসরি আঘাত হানবে না, তবে এটি চাঁদের পৃষ্ঠে আঘাত করলে সৃষ্ট ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করতে পারে—এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

গ্রহাণুটির বৈশিষ্ট্য ও গতি

‘ওয়াইআর৪’ গ্রহাণুটি প্রথম শনাক্ত হয় ২০২৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ের একটি গ্রহাণু পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে। এটি পৃথিবীর কাছ দিয়ে অতীতে একাধিকবার অতিক্রম করেছে।

নাসার ‘সেন্টার ফর নিয়ার আর্থ অবজেক্ট স্টাডিজ (CNEOS)’ সূত্র অনুযায়ী, এই গ্রহাণু সূর্যকে প্রতি চার বছর অন্তর একবার পরিভ্রমণ করে। ২০২৫ সালের মে মাসে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে পাওয়া বিশ্লেষণে জানা যায়, এর দৈর্ঘ্য ১৭৪ থেকে ২২০ ফুট, অর্থাৎ প্রায় ১০ তলা ভবনের সমান

সংঘর্ষের সম্ভাবনা ও পরিসংখ্যান

প্রাথমিক বিশ্লেষণে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে চাঁদে আঘাত হানার সম্ভাবনা ছিল মাত্র ১.৭%। কিন্তু এপ্রিলের শেষ নাগাদ সেটি বাড়ে ৩.৮%-এ। সর্বশেষ ২০২৫ সালের মে মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গ্রহাণুটির চাঁদে আঘাত হানার সম্ভাবনা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৩%

এ বিষয়ে নাসার বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, যদিও সম্ভাবনা এখনও কম, তবুও আঘাত ঘটলে তা হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক ঘটনা। চাঁদের পৃষ্ঠে সরাসরি একটি বৃহৎ গ্রহাণুর সংঘর্ষ শত বছরে এমনকি হাজার বছরেও একবার ঘটে, এবং সেটি পৃথিবী থেকে পর্যবেক্ষণযোগ্য হলে সেটি অনন্য গবেষণার সুযোগ এনে দিতে পারে।

সম্ভাব্য প্রভাব ও ঝুঁকি

যদি গ্রহাণুটি চাঁদে আঘাত হানে, তবে সৃষ্ট ধূলিকণা ও ধ্বংসাবশেষ চাঁদের মহাকর্ষ ছাড়িয়ে পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও এটি পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠে সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলবে না, তবুও স্যাটেলাইট যোগাযোগ, টেলিস্কোপ কার্যক্রম, ও মহাকাশ স্টেশনের নিরাপত্তা নিয়ে সতর্কতা জারি থাকতে পারে।

গবেষণার বিরল সুযোগ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের সংঘর্ষ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চন্দ্রপৃষ্ঠে এমন সরাসরি আঘাত চাঁদের ভূতাত্ত্বিক গঠন, মাটির গঠনপ্রক্রিয়া ও অভ্যন্তরীণ গতিশীলতা বিশ্লেষণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

নাসার এক জ্যোতির্বিজ্ঞানী বলেন—

“আমরা যদি এই সংঘর্ষ সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে পারি, তাহলে এটি হবে চাঁদ সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী অধ্যায়।”

বর্তমান অবস্থান ও ভবিষ্যৎ গতিপথ

বর্তমানে গ্রহাণুটি পৃথিবী ও চাঁদের তুলনায় অনেক দূরে রয়েছে। তবে বিজ্ঞানীরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন, ২০২৮ সালের ডিসেম্বর মাসে এটি আবার পৃথিবীর কাছাকাছি আসবে, এবং তারপর ২০৩১ সালের দিকে চাঁদের দিকে দিক পরিবর্তনের প্রবণতা বাড়বে।

‘ওয়াইআর৪’ গ্রহাণুর সম্ভাব্য চাঁদে আঘাত বিজ্ঞানীদের জন্য যেমন একটি বিরল গবেষণার সুযোগ, তেমনি মহাকাশ নিরাপত্তা ও পরিবেশ বিশ্লেষণের জন্য একটি চ্যালেঞ্জও বটে। এই মুহূর্তে এটি পৃথিবীর জন্য সরাসরি হুমকি না হলেও, ভবিষ্যতে মহাকাশে চলমান কার্যক্রম এবং চাঁদে মানব মিশনের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। বিজ্ঞানীরা তাই গ্রহাণুটির গতি ও অবস্থান নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন, যাতে সময়মতো পূর্বাভাস ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়।

সূত্র: NDTV, NASA, Meher News Agency.