সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মদের বোতলে পানি পান করা ! শরীয়তের দৃষ্টিতে কি জায়েজ, না গুনাহ?

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১১:১২:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
  • / ৮৭ Time View

129e7c1f008082ef04f6612cc7abb158 685fbee31d0ee

129e7c1f008082ef04f6612cc7abb158 685fbee31d0ee

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যেখানে প্রতিটি কাজের জন্য আছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। মদ একটি স্পষ্ট হারাম বস্তু, যার ব্যাপারে কুরআন, হাদীস ও ইসলামী ফিকাহে রয়েছে কঠোর সতর্কতা। মদের বোতলে বা পাত্রে পানি বা অন্য কোনো হালাল পানীয় পান করা—এই বিষয়ে শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে হলে প্রাথমিকভাবে বুঝতে হবে, মদের ব্যবহার ও সংশ্লিষ্ট জিনিসের প্রতি ইসলামের অবস্থান কী।

মদের প্রতি ইসলামের কঠোর নিষেধাজ্ঞা

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:

হে ঈমানদারগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারণের শর (লটারির তীর) হলো অপবিত্র শয়তানী কাজ; সুতরাং তোমরা এগুলো থেকে বিরত থাকো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।
(সুরা মায়েদা, আয়াত ৯০)

এই আয়াতে মদকে শুধু হারাম বলা হয়নি, বরং একে “রিজসুম মিন আমালিশ শাইতান” — অর্থাৎ শয়তানী কাজ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই ইসলামে মদ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় থেকে দূরে থাকাই হচ্ছে তাকওয়ার চর্চা।

হাদীসের আলোকে মদের পাত্র ব্যবহার

মদের হারাম হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদের পাত্রেও হালাল পানীয় রাখতেও নিষেধ করেছিলেন। কারণ সে সময় অনেক সাহাবীই আগে মদপান করতেন, ফলে মদের পাত্র দেখলে নেশার স্মৃতি জাগতে পারত। এটি ছিল একটি মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা।

ইবনে বুরায়দা (রাহ.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

আমি তোমাদের কিছু পাত্র ব্যবহার করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু মনে রেখো, কোনো পাত্র হালালহারামের কারণ নয়। বরং, প্রতিটি নেশাকারী বস্তুই হারাম।
(সহিহ মুসলিম: হাদীস ৫৩২৬)

এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, যে কোনো নেশাদ্রব্য হারাম—কিন্তু পাত্র নিজে হালাল বা হারাম করে না। অতএব, যদি পাত্র সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার হয়, এবং তাতে মদের কোনো চিহ্ন বা গন্ধ না থাকে, তাহলে তা ব্যবহার করা যেতে পারে।

ফিকাহবিদদের মতামত সতর্কতা

ইসলামি ফিকাহশাস্ত্রবিদগণ বলেন, যে পাত্র একসময় হারাম কাজে ব্যবহৃত হয়েছে, সেটি ব্যবহার না করাই উত্তম। কারণ:

  1. এটা নফসকে হারামের প্রতি প্রলুব্ধ করতে পারে।
  2. সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে যে, হয়তো এতে আবার মদই রাখা আছে।
  3. এটি তাকওয়া ও পরহেযগারির পরিপন্থী হতে পারে।

তাদের মতে, মদের বোতল বা পাত্র যত ভালোভাবে ধোয়া হোক না কেন, তা থেকে বিরত থাকাই উত্তম সাবধানতামূলক আচরণ (احتياطاً)।

তবে কেউ যদি প্রয়োজন বা অনিচ্ছাকৃতভাবে পরিস্কার বোতল ব্যবহার করে এবং তাতে মদের গন্ধ বা চিহ্ন না থাকে, তাহলে মূলত তা গুনাহ নয় — তবে তা পরিত্যাগ করাই উত্তম।

ফতোয়া অনুযায়ী:

  • যদি বোতল সম্পূর্ণরূপে ধোয়া হয় এবং এতে মদের কোনো প্রভাব না থাকে, তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েজ।
  • কিন্তু পরহেযগারির দৃষ্টিকোণ থেকে এমন বোতল পরিহার করাই উত্তম।

সতর্কতা:

  • মনে রাখতে হবে, কোনো হারাম জিনিসের স্মৃতি বা চিহ্ন এমন কিছুতে না থাকে যা অন্যদের ভুল ধারণা দিতে পারে।
  • ইসলামে বাহ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিও গুরুত্বপূর্ণ—“الظاهر يدل على الباطن” (বাহ্যিক আচরণ অভ্যন্তরের পরিচয় দেয়)।

অতএব, মদের বোতলে পানি পান করা সম্পূর্ণ গুনাহ না হলেও, তা থেকে বিরত থাকা উত্তম এবং অধিক নিরাপদ — কুরআন, হাদীস ও আলেমদের অভিমতের আলোকে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

মদের বোতলে পানি পান করা ! শরীয়তের দৃষ্টিতে কি জায়েজ, না গুনাহ?

Update Time : ১১:১২:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

129e7c1f008082ef04f6612cc7abb158 685fbee31d0ee

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যেখানে প্রতিটি কাজের জন্য আছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। মদ একটি স্পষ্ট হারাম বস্তু, যার ব্যাপারে কুরআন, হাদীস ও ইসলামী ফিকাহে রয়েছে কঠোর সতর্কতা। মদের বোতলে বা পাত্রে পানি বা অন্য কোনো হালাল পানীয় পান করা—এই বিষয়ে শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে হলে প্রাথমিকভাবে বুঝতে হবে, মদের ব্যবহার ও সংশ্লিষ্ট জিনিসের প্রতি ইসলামের অবস্থান কী।

মদের প্রতি ইসলামের কঠোর নিষেধাজ্ঞা

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:

হে ঈমানদারগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারণের শর (লটারির তীর) হলো অপবিত্র শয়তানী কাজ; সুতরাং তোমরা এগুলো থেকে বিরত থাকো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।
(সুরা মায়েদা, আয়াত ৯০)

এই আয়াতে মদকে শুধু হারাম বলা হয়নি, বরং একে “রিজসুম মিন আমালিশ শাইতান” — অর্থাৎ শয়তানী কাজ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই ইসলামে মদ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় থেকে দূরে থাকাই হচ্ছে তাকওয়ার চর্চা।

হাদীসের আলোকে মদের পাত্র ব্যবহার

মদের হারাম হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদের পাত্রেও হালাল পানীয় রাখতেও নিষেধ করেছিলেন। কারণ সে সময় অনেক সাহাবীই আগে মদপান করতেন, ফলে মদের পাত্র দেখলে নেশার স্মৃতি জাগতে পারত। এটি ছিল একটি মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা।

ইবনে বুরায়দা (রাহ.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

আমি তোমাদের কিছু পাত্র ব্যবহার করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু মনে রেখো, কোনো পাত্র হালালহারামের কারণ নয়। বরং, প্রতিটি নেশাকারী বস্তুই হারাম।
(সহিহ মুসলিম: হাদীস ৫৩২৬)

এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, যে কোনো নেশাদ্রব্য হারাম—কিন্তু পাত্র নিজে হালাল বা হারাম করে না। অতএব, যদি পাত্র সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার হয়, এবং তাতে মদের কোনো চিহ্ন বা গন্ধ না থাকে, তাহলে তা ব্যবহার করা যেতে পারে।

ফিকাহবিদদের মতামত সতর্কতা

ইসলামি ফিকাহশাস্ত্রবিদগণ বলেন, যে পাত্র একসময় হারাম কাজে ব্যবহৃত হয়েছে, সেটি ব্যবহার না করাই উত্তম। কারণ:

  1. এটা নফসকে হারামের প্রতি প্রলুব্ধ করতে পারে।
  2. সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে যে, হয়তো এতে আবার মদই রাখা আছে।
  3. এটি তাকওয়া ও পরহেযগারির পরিপন্থী হতে পারে।

তাদের মতে, মদের বোতল বা পাত্র যত ভালোভাবে ধোয়া হোক না কেন, তা থেকে বিরত থাকাই উত্তম সাবধানতামূলক আচরণ (احتياطاً)।

তবে কেউ যদি প্রয়োজন বা অনিচ্ছাকৃতভাবে পরিস্কার বোতল ব্যবহার করে এবং তাতে মদের গন্ধ বা চিহ্ন না থাকে, তাহলে মূলত তা গুনাহ নয় — তবে তা পরিত্যাগ করাই উত্তম।

ফতোয়া অনুযায়ী:

  • যদি বোতল সম্পূর্ণরূপে ধোয়া হয় এবং এতে মদের কোনো প্রভাব না থাকে, তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েজ।
  • কিন্তু পরহেযগারির দৃষ্টিকোণ থেকে এমন বোতল পরিহার করাই উত্তম।

সতর্কতা:

  • মনে রাখতে হবে, কোনো হারাম জিনিসের স্মৃতি বা চিহ্ন এমন কিছুতে না থাকে যা অন্যদের ভুল ধারণা দিতে পারে।
  • ইসলামে বাহ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিও গুরুত্বপূর্ণ—“الظاهر يدل على الباطن” (বাহ্যিক আচরণ অভ্যন্তরের পরিচয় দেয়)।

অতএব, মদের বোতলে পানি পান করা সম্পূর্ণ গুনাহ না হলেও, তা থেকে বিরত থাকা উত্তম এবং অধিক নিরাপদ — কুরআন, হাদীস ও আলেমদের অভিমতের আলোকে।