সোনালী ব্যাংকের রেকর্ড: প্রথম ছয় মাসেই ৩৭০৬ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা

- Update Time : ০৬:৩১:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
- / ২৭ Time View
রাষ্ট্রমালিকানাধীন সর্ববৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংক পিএলসি ২০২৫ সালের প্রথম অর্ধবার্ষিকীতে ইতিহাস গড়েছে। ব্যাংকটি এই সময়কালে পরিচালন মুনাফা হিসেবে অর্জন করেছে ৩৭০৬ কোটি টাকা, যা পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ১,৪৫৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা বেশি। গত ২০২৪ সালের জুন শেষে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ২,২৫২ কোটি টাকা। এই প্রবৃদ্ধিকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ‘ব্যতিক্রমী এবং ঐতিহাসিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
অর্থনীতির বৈচিত্র্যময় প্রেক্ষাপটে এই মুনাফা অর্জন শুধু সংখ্যা নয়, বরং ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা, কর্মীদের নিষ্ঠা এবং পরিচালন দক্ষতার স্পষ্ট প্রতিফলন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. শওকত আলী খান বলেন, “এটি আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। গ্রাহকসেবা উন্নয়ন, ঋণ আদায়ে দক্ষতা, এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে গতিশীলতা—সব কিছুই একসঙ্গে এই অর্জনের পথ তৈরি করেছে।”
আমানত বেড়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি
ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে আমানতের পরিমাণেও। ২০২৫ সালের জুন শেষে ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১,৭২,৬৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ১৩,৬৩১ কোটি টাকারও বেশি। এই প্রবৃদ্ধি ব্যাংকের প্রতি জনগণের আস্থা, বিশেষ করে সঞ্চয়কারী ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের আগ্রহ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
ঋণ ও অগ্রিমে সামান্য পতন, অনুপাতে স্থিতিশীলতা
২০২৪ সালের তুলনায় চলতি বছরের জুন শেষে কিছু সরকারি খাতের ঋণ আদায় হওয়ায় ব্যাংকের মোট ঋণ ও অগ্রিম কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৯৮,৪৪৬ কোটি টাকা, যেখানে ২০২৪ সালে একই সময়ে ছিল ৯৮,৯২৬ কোটি টাকা। তবে ঋণ ও আমানতের অনুপাত বর্তমানে ৫৭.১ শতাংশ, যা একটি স্থিতিশীল ও ঝুঁকিমুক্ত আর্থিক ব্যবস্থাপনার প্রতিফলন।
লস শাখা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪টিতে
সেবার মান ও পরিচালনার দক্ষতা বৃদ্ধির ফলে ব্যাংকের লস শাখার সংখ্যাও কমেছে। ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে যেখানে লস শাখা ছিল ১৫টি, তা ২০২৫ সালের জুন শেষে নেমে এসেছে ১৪টিতে। বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের মোট শাখা সংখ্যা ১,২০৪টি।
সফলতার পেছনে সিএমএসএমই ও খেলাপি ঋণ আদায় বড় ভূমিকা
ব্যাংকটির সিইও শওকত আলী খান বলেন, “আমরা গুণগত ঋণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সিএমএসএমই খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ আদায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়েছি, যার ফলে ঋণ ফেরতের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।” এছাড়া রেমিট্যান্স আহরণ, আমদানি-রপ্তানি ও নন-ফান্ডেড আয়ে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় প্রযুক্তিনির্ভর গ্রাহকসেবা
সেবার মান বৃদ্ধি, ব্যাংকিং কার্যক্রমে প্রযুক্তির ব্যবহার, অভ্যন্তরীণ সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক সামনের দিনগুলোতেও সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শওকত আলী খান। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য, গ্রাহকের জন্য সেবা হবে সহজ, দ্রুত, ও বিশ্বাসযোগ্য। ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার বিস্তৃত ব্যবহারে আমরা একটি আধুনিক সোনালী ব্যাংক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
এই অর্জন শুধু সোনালী ব্যাংকের জন্য নয়, বরং গোটা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।
Please Share This Post in Your Social Media

সোনালী ব্যাংকের রেকর্ড: প্রথম ছয় মাসেই ৩৭০৬ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা

রাষ্ট্রমালিকানাধীন সর্ববৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংক পিএলসি ২০২৫ সালের প্রথম অর্ধবার্ষিকীতে ইতিহাস গড়েছে। ব্যাংকটি এই সময়কালে পরিচালন মুনাফা হিসেবে অর্জন করেছে ৩৭০৬ কোটি টাকা, যা পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ১,৪৫৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা বেশি। গত ২০২৪ সালের জুন শেষে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ২,২৫২ কোটি টাকা। এই প্রবৃদ্ধিকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ‘ব্যতিক্রমী এবং ঐতিহাসিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
অর্থনীতির বৈচিত্র্যময় প্রেক্ষাপটে এই মুনাফা অর্জন শুধু সংখ্যা নয়, বরং ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা, কর্মীদের নিষ্ঠা এবং পরিচালন দক্ষতার স্পষ্ট প্রতিফলন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. শওকত আলী খান বলেন, “এটি আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। গ্রাহকসেবা উন্নয়ন, ঋণ আদায়ে দক্ষতা, এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে গতিশীলতা—সব কিছুই একসঙ্গে এই অর্জনের পথ তৈরি করেছে।”
আমানত বেড়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি
ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে আমানতের পরিমাণেও। ২০২৫ সালের জুন শেষে ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১,৭২,৬৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ১৩,৬৩১ কোটি টাকারও বেশি। এই প্রবৃদ্ধি ব্যাংকের প্রতি জনগণের আস্থা, বিশেষ করে সঞ্চয়কারী ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের আগ্রহ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
ঋণ ও অগ্রিমে সামান্য পতন, অনুপাতে স্থিতিশীলতা
২০২৪ সালের তুলনায় চলতি বছরের জুন শেষে কিছু সরকারি খাতের ঋণ আদায় হওয়ায় ব্যাংকের মোট ঋণ ও অগ্রিম কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৯৮,৪৪৬ কোটি টাকা, যেখানে ২০২৪ সালে একই সময়ে ছিল ৯৮,৯২৬ কোটি টাকা। তবে ঋণ ও আমানতের অনুপাত বর্তমানে ৫৭.১ শতাংশ, যা একটি স্থিতিশীল ও ঝুঁকিমুক্ত আর্থিক ব্যবস্থাপনার প্রতিফলন।
লস শাখা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪টিতে
সেবার মান ও পরিচালনার দক্ষতা বৃদ্ধির ফলে ব্যাংকের লস শাখার সংখ্যাও কমেছে। ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে যেখানে লস শাখা ছিল ১৫টি, তা ২০২৫ সালের জুন শেষে নেমে এসেছে ১৪টিতে। বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের মোট শাখা সংখ্যা ১,২০৪টি।
সফলতার পেছনে সিএমএসএমই ও খেলাপি ঋণ আদায় বড় ভূমিকা
ব্যাংকটির সিইও শওকত আলী খান বলেন, “আমরা গুণগত ঋণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সিএমএসএমই খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ আদায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়েছি, যার ফলে ঋণ ফেরতের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।” এছাড়া রেমিট্যান্স আহরণ, আমদানি-রপ্তানি ও নন-ফান্ডেড আয়ে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় প্রযুক্তিনির্ভর গ্রাহকসেবা
সেবার মান বৃদ্ধি, ব্যাংকিং কার্যক্রমে প্রযুক্তির ব্যবহার, অভ্যন্তরীণ সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক সামনের দিনগুলোতেও সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শওকত আলী খান। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য, গ্রাহকের জন্য সেবা হবে সহজ, দ্রুত, ও বিশ্বাসযোগ্য। ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার বিস্তৃত ব্যবহারে আমরা একটি আধুনিক সোনালী ব্যাংক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
এই অর্জন শুধু সোনালী ব্যাংকের জন্য নয়, বরং গোটা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।