আবরার ফাহাদের মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল: নাহিদ ইসলাম

- Update Time : ০৫:৪৬:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
- / ৫৪ Time View

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “আবরার ফাহাদ আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে এক মোড় ঘোরানো ঘটনার নাম। ‘দিল্লি না ঢাকা’—এই প্রতিবাদী স্লোগান প্রথম উঠেছিল আবরারের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিল থেকে। সেই স্লোগান শুধু সড়কে নয়, পৌঁছে গিয়েছিল কোটি মানুষের হৃদয়ে।” মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দুপুর ১টা ২০ মিনিটে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের রায়ডাঙ্গা গ্রামে আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারতের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা আজকের এই দিনে শহীদ আবরার ফাহাদকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। তিনি আমাদের দেখিয়ে গেছেন কীভাবে দেশপ্রেমিক রাজনীতি করতে হয়। তিনি দেখিয়ে গেছেন ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয় কীভাবে, দেখিয়ে গেছেন কীভাবে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কলম ধরতে হয়। জাতীয় নাগরিক পার্টি সেই পথেই রাজনীতি করছে—স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই। আমরা বিশ্বাস করি, আবরার ছিলেন একটি আন্দোলনের প্রতীক, আর তাঁর রক্তের মাধ্যমে একটি নতুন ধারার রাজনৈতিক চেতনার জন্ম হয়েছে।”

নাহিদ আরও বলেন, “আবরার ফাহাদ থেকে শুরু করে আবু সাইদসহ সব শহীদদের আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। গত ১৬ বছরে যারা গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন—তাদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজকের এই পথ চলছি। আমরা চাই, তাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে উঠুক—একটি গণতান্ত্রিক, অধিকারভিত্তিক, স্বনির্ভর এবং স্বাধীন দেশ, যেখানে জনগণের কথা বলার অধিকার থাকবে। আমাদের জুলাই পদযাত্রা এই চেতনারই বহিঃপ্রকাশ। এনসিপি সেই শহীদদের আদর্শ ধারণ করেই এগিয়ে চলছে।”
তিনি বলেন, “আবরার ছিলেন বুয়েটের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। তাঁর ‘অপরাধ’ ছিল—তিনি দেশের স্বার্থে কথা বলেছিলেন। ফেসবুকে তিনি ভারতের আধিপত্য ও বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী ফেনী নদী চুক্তির সমালোচনা করেছিলেন। সে কারণেই তাঁকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের কিছু সন্ত্রাসী, যাদের অবস্থান ছিল একটি ভারতীয় দাসত্বশৃঙ্খলিত রাজনীতির ছায়ায়। তাঁর এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের প্রতিটি বড় শহরে ছাত্রসমাজ সোচ্চার হয়ে ওঠে। সেই প্রতিরোধ আন্দোলন আধিপত্যবাদবিরোধী সংগ্রামের অন্যতম মাইলফলক হয়ে দাঁড়ায়।”
নাহিদ ইসলাম বলেন, “২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর ২০১৯ সালে আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড ছিল ছাত্র ও যুব রাজনীতিতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জাগরণ। এই ঘটনার পর দেশজুড়ে ভারতীয় হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জোরদার হয়, স্বাধীন কূটনীতি ও অভ্যন্তরীণ নীতির জন্য নতুন করে গণচেতনাবোধ তৈরি হয়। এনসিপি সেই চেতনা ও পথ অনুসরণ করেই রাজনীতি করছে—জনগণের পক্ষে, দেশের পক্ষে, অধিকার ও মর্যাদার পক্ষে।”
কুষ্টিয়ার রায়ডাঙ্গায় আবরারের কবর জিয়ারতে এনসিপি নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ ও মা রোকেয়া খাতুনের সঙ্গে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, এনসিপি নেতা সাইফুল্লাহ হায়দার, আসাদুল্লাহ আল গালিব, আবু সাঈদ লিয়ন, ডা. মাহমুদা আলম মিতু, মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, ফিহাদুর রহমান দিবস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও এনসিপির অঙ্গসংগঠন যুব শক্তি ও শ্রমিক উইংয়ের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও কবর জিয়ারতে অংশ নেন। উপস্থিত নেতারা জানান, আবরারের আত্মত্যাগের পথ ধরেই আগামী দিনের অধিকারভিত্তিক, স্বাধীনতা-নির্ভর নতুন রাজনীতির সূচনা হবে।
Please Share This Post in Your Social Media

আবরার ফাহাদের মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল: নাহিদ ইসলাম


জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “আবরার ফাহাদ আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে এক মোড় ঘোরানো ঘটনার নাম। ‘দিল্লি না ঢাকা’—এই প্রতিবাদী স্লোগান প্রথম উঠেছিল আবরারের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিল থেকে। সেই স্লোগান শুধু সড়কে নয়, পৌঁছে গিয়েছিল কোটি মানুষের হৃদয়ে।” মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দুপুর ১টা ২০ মিনিটে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের রায়ডাঙ্গা গ্রামে আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারতের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা আজকের এই দিনে শহীদ আবরার ফাহাদকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। তিনি আমাদের দেখিয়ে গেছেন কীভাবে দেশপ্রেমিক রাজনীতি করতে হয়। তিনি দেখিয়ে গেছেন ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয় কীভাবে, দেখিয়ে গেছেন কীভাবে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কলম ধরতে হয়। জাতীয় নাগরিক পার্টি সেই পথেই রাজনীতি করছে—স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই। আমরা বিশ্বাস করি, আবরার ছিলেন একটি আন্দোলনের প্রতীক, আর তাঁর রক্তের মাধ্যমে একটি নতুন ধারার রাজনৈতিক চেতনার জন্ম হয়েছে।”

নাহিদ আরও বলেন, “আবরার ফাহাদ থেকে শুরু করে আবু সাইদসহ সব শহীদদের আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। গত ১৬ বছরে যারা গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন—তাদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজকের এই পথ চলছি। আমরা চাই, তাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে উঠুক—একটি গণতান্ত্রিক, অধিকারভিত্তিক, স্বনির্ভর এবং স্বাধীন দেশ, যেখানে জনগণের কথা বলার অধিকার থাকবে। আমাদের জুলাই পদযাত্রা এই চেতনারই বহিঃপ্রকাশ। এনসিপি সেই শহীদদের আদর্শ ধারণ করেই এগিয়ে চলছে।”
তিনি বলেন, “আবরার ছিলেন বুয়েটের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। তাঁর ‘অপরাধ’ ছিল—তিনি দেশের স্বার্থে কথা বলেছিলেন। ফেসবুকে তিনি ভারতের আধিপত্য ও বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী ফেনী নদী চুক্তির সমালোচনা করেছিলেন। সে কারণেই তাঁকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের কিছু সন্ত্রাসী, যাদের অবস্থান ছিল একটি ভারতীয় দাসত্বশৃঙ্খলিত রাজনীতির ছায়ায়। তাঁর এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের প্রতিটি বড় শহরে ছাত্রসমাজ সোচ্চার হয়ে ওঠে। সেই প্রতিরোধ আন্দোলন আধিপত্যবাদবিরোধী সংগ্রামের অন্যতম মাইলফলক হয়ে দাঁড়ায়।”
নাহিদ ইসলাম বলেন, “২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর ২০১৯ সালে আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড ছিল ছাত্র ও যুব রাজনীতিতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জাগরণ। এই ঘটনার পর দেশজুড়ে ভারতীয় হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জোরদার হয়, স্বাধীন কূটনীতি ও অভ্যন্তরীণ নীতির জন্য নতুন করে গণচেতনাবোধ তৈরি হয়। এনসিপি সেই চেতনা ও পথ অনুসরণ করেই রাজনীতি করছে—জনগণের পক্ষে, দেশের পক্ষে, অধিকার ও মর্যাদার পক্ষে।”
কুষ্টিয়ার রায়ডাঙ্গায় আবরারের কবর জিয়ারতে এনসিপি নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ ও মা রোকেয়া খাতুনের সঙ্গে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, এনসিপি নেতা সাইফুল্লাহ হায়দার, আসাদুল্লাহ আল গালিব, আবু সাঈদ লিয়ন, ডা. মাহমুদা আলম মিতু, মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, ফিহাদুর রহমান দিবস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও এনসিপির অঙ্গসংগঠন যুব শক্তি ও শ্রমিক উইংয়ের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও কবর জিয়ারতে অংশ নেন। উপস্থিত নেতারা জানান, আবরারের আত্মত্যাগের পথ ধরেই আগামী দিনের অধিকারভিত্তিক, স্বাধীনতা-নির্ভর নতুন রাজনীতির সূচনা হবে।