সময়: রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

প্রাথমিকের ৩০ হাজার প্রধান শিক্ষকের জন্য সুখবর: ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের পথে বড় অগ্রগতি

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৬:১২:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫
  • / ২০ Time View

c04049b2f90639ae7558fc42b45eb421 686a66007e26e

c04049b2f90639ae7558fc42b45eb421 686a66007e26e

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ হাজার প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে যেসব দাবি করে আসছিলেন, তার অন্যতম একটি—দশম গ্রেডে বেতনস্কেল উন্নীতকরণ—এখন বাস্তবায়নের দোরগোড়ায়। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এই দাবি সক্রিয়ভাবে বিবেচনার মধ্যে রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এটি প্রধান শিক্ষকদের জন্য নিঃসন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ স্বস্তিদায়ক খবর

হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এগোচ্ছে প্রক্রিয়া

গত শনিবার (৫ জুলাই) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মোহাম্মদ কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে জানানো হয়, হাইকোর্টে রায়প্রাপ্ত ৪৫ জন রিটকারী প্রধান শিক্ষকের বেতনস্কেল ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সম্মতি দিয়েছে। অবশিষ্ট প্রধান শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও একই গ্রেড বাস্তবায়নের বিষয়টি এখন সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।

২০১৮ সালে রিট পিটিশন নম্বর-৩২১৪/২০১৮ এর মাধ্যমে ৪৫ জন প্রধান শিক্ষক হাইকোর্টে রিট করেন। এরপর ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালত রায় দেন, যাতে তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে গেজেটে অন্তর্ভুক্ত এবং ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার নির্দেশনা ছিল। পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিলে গেলে ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি তা খারিজ হয়। মন্ত্রণালয়ের রিভিউ আবেদনও পরবর্তীতে আপিল বিভাগ খারিজ করে দেয়।

শিক্ষকদের দাবি এবং সরকারের ইতিবাচক বার্তা

এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। সংগঠনের সভাপতি মো. আবুল কাশেম বলেন, “১০ গ্রেড বাস্তবায়নে সরকারের ইতিবাচক সিদ্ধান্তের জন্য ধন্যবাদ। এতে ৩০ হাজার প্রধান শিক্ষকের দশম গ্রেডে উন্নীত হওয়ার পথ সুগম হবে।” তিনি জানান, যদিও আপাতত রায়প্রাপ্ত ৪৫ জন শিক্ষকের ক্ষেত্রেই গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে, তবে সরকার সক্রিয়ভাবে বাকিদের বিষয়েও পদক্ষেপ নিচ্ছে—এটি একটি আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি।

তবে তিনি উল্লেখ করেন, শুধু প্রধান শিক্ষক নয়, সহকারী শিক্ষকদের বেতনস্কেল ১১তম গ্রেডে বাস্তবায়ন করার দাবিও দীর্ঘদিনের। এই দাবিগুলো পূরণে সরকারের সদিচ্ছা এবং বাস্তবায়ন জরুরি।

অতীতের প্রতিশ্রুতি ও বৈষম্যের ইতিহাস

২০১৪ সালের ৯ মার্চ তৎকালীন সরকার ঘোষণা দিয়েছিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয়

শ্রেণিতে উন্নীত করার। সেই ঘোষণায় প্রশিক্ষিত প্রধান শিক্ষককে ১১তম এবং অপ্রশিক্ষিতদের ১২তম গ্রেড নির্ধারণ করা হয়, যা পরে বিতর্ক ও অসন্তোষ সৃষ্টি করে। তখনকার সরকারি প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াজ পারভেজসহ অনেকেই এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নামেন, যার ফলস্বরূপ আজকের এই অর্জন।

চাঁদাবাজ চক্রের ফাঁদে পড়বেন না কেউ: সতর্ক বার্তা

অধিদপ্তরের জারি করা অফিস আদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েরও উল্লেখ করা হয়েছে—চাঁদাবাজি। আদেশে বলা হয়, ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের খবরকে কেন্দ্র করে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করছে। বিষয়টি ফৌজদারি অপরাধ এবং কেউ যেন কোনোভাবেই এই প্রতারণার ফাঁদে না পড়েন, সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। চাঁদাবাজদের চিহ্নিত করে নিকটস্থ থানায় সোপর্দ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে

সরকারের অবস্থান ও পরবর্তী পদক্ষেপ

পরিচালক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানিয়েছেন, যেহেতু এই সিদ্ধান্তে সরকারের আর্থিক বড় কোনো বোঝা পড়ছে না, তাই সরকার বিষয়টিকে পজিটিভলি দেখছে। অধিদপ্তর থেকে প্রস্তাব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, সেখান থেকে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে গিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পরই চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, এতে কিছু সময় লাগতে পারে।

শিক্ষকদের মর্যাদার পথে নতুন মাইলফলক

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষকদের অবদান অপরিসীম। তাদের মর্যাদা, সম্মান ও প্রাপ্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই দশম গ্রেড বাস্তবায়ন শুধু একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি শিক্ষকদের প্রতি রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব পালনের একটি প্রতীক।

প্রত্যাশা করা হচ্ছে, সরকারের এই ইতিবাচক অবস্থান দ্রুত বাস্তবায়নে রূপান্তরিত হবে এবং ৩০ হাজার প্রধান শিক্ষক তাদের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়িত হতে দেখবেন। একইসঙ্গে এটি হবে সহকারী শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষাপেশাজীবীদের দাবি পূরণের পথপ্রদর্শক একটি উদাহরণ।

 

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

প্রাথমিকের ৩০ হাজার প্রধান শিক্ষকের জন্য সুখবর: ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের পথে বড় অগ্রগতি

Update Time : ০৬:১২:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫

c04049b2f90639ae7558fc42b45eb421 686a66007e26e

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ হাজার প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে যেসব দাবি করে আসছিলেন, তার অন্যতম একটি—দশম গ্রেডে বেতনস্কেল উন্নীতকরণ—এখন বাস্তবায়নের দোরগোড়ায়। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এই দাবি সক্রিয়ভাবে বিবেচনার মধ্যে রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এটি প্রধান শিক্ষকদের জন্য নিঃসন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ স্বস্তিদায়ক খবর

হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এগোচ্ছে প্রক্রিয়া

গত শনিবার (৫ জুলাই) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মোহাম্মদ কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে জানানো হয়, হাইকোর্টে রায়প্রাপ্ত ৪৫ জন রিটকারী প্রধান শিক্ষকের বেতনস্কেল ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সম্মতি দিয়েছে। অবশিষ্ট প্রধান শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও একই গ্রেড বাস্তবায়নের বিষয়টি এখন সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।

২০১৮ সালে রিট পিটিশন নম্বর-৩২১৪/২০১৮ এর মাধ্যমে ৪৫ জন প্রধান শিক্ষক হাইকোর্টে রিট করেন। এরপর ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালত রায় দেন, যাতে তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে গেজেটে অন্তর্ভুক্ত এবং ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার নির্দেশনা ছিল। পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিলে গেলে ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি তা খারিজ হয়। মন্ত্রণালয়ের রিভিউ আবেদনও পরবর্তীতে আপিল বিভাগ খারিজ করে দেয়।

শিক্ষকদের দাবি এবং সরকারের ইতিবাচক বার্তা

এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। সংগঠনের সভাপতি মো. আবুল কাশেম বলেন, “১০ গ্রেড বাস্তবায়নে সরকারের ইতিবাচক সিদ্ধান্তের জন্য ধন্যবাদ। এতে ৩০ হাজার প্রধান শিক্ষকের দশম গ্রেডে উন্নীত হওয়ার পথ সুগম হবে।” তিনি জানান, যদিও আপাতত রায়প্রাপ্ত ৪৫ জন শিক্ষকের ক্ষেত্রেই গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে, তবে সরকার সক্রিয়ভাবে বাকিদের বিষয়েও পদক্ষেপ নিচ্ছে—এটি একটি আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি।

তবে তিনি উল্লেখ করেন, শুধু প্রধান শিক্ষক নয়, সহকারী শিক্ষকদের বেতনস্কেল ১১তম গ্রেডে বাস্তবায়ন করার দাবিও দীর্ঘদিনের। এই দাবিগুলো পূরণে সরকারের সদিচ্ছা এবং বাস্তবায়ন জরুরি।

অতীতের প্রতিশ্রুতি ও বৈষম্যের ইতিহাস

২০১৪ সালের ৯ মার্চ তৎকালীন সরকার ঘোষণা দিয়েছিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয়

শ্রেণিতে উন্নীত করার। সেই ঘোষণায় প্রশিক্ষিত প্রধান শিক্ষককে ১১তম এবং অপ্রশিক্ষিতদের ১২তম গ্রেড নির্ধারণ করা হয়, যা পরে বিতর্ক ও অসন্তোষ সৃষ্টি করে। তখনকার সরকারি প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াজ পারভেজসহ অনেকেই এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নামেন, যার ফলস্বরূপ আজকের এই অর্জন।

চাঁদাবাজ চক্রের ফাঁদে পড়বেন না কেউ: সতর্ক বার্তা

অধিদপ্তরের জারি করা অফিস আদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েরও উল্লেখ করা হয়েছে—চাঁদাবাজি। আদেশে বলা হয়, ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের খবরকে কেন্দ্র করে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করছে। বিষয়টি ফৌজদারি অপরাধ এবং কেউ যেন কোনোভাবেই এই প্রতারণার ফাঁদে না পড়েন, সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। চাঁদাবাজদের চিহ্নিত করে নিকটস্থ থানায় সোপর্দ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে

সরকারের অবস্থান ও পরবর্তী পদক্ষেপ

পরিচালক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানিয়েছেন, যেহেতু এই সিদ্ধান্তে সরকারের আর্থিক বড় কোনো বোঝা পড়ছে না, তাই সরকার বিষয়টিকে পজিটিভলি দেখছে। অধিদপ্তর থেকে প্রস্তাব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, সেখান থেকে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে গিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পরই চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, এতে কিছু সময় লাগতে পারে।

শিক্ষকদের মর্যাদার পথে নতুন মাইলফলক

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষকদের অবদান অপরিসীম। তাদের মর্যাদা, সম্মান ও প্রাপ্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই দশম গ্রেড বাস্তবায়ন শুধু একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি শিক্ষকদের প্রতি রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব পালনের একটি প্রতীক।

প্রত্যাশা করা হচ্ছে, সরকারের এই ইতিবাচক অবস্থান দ্রুত বাস্তবায়নে রূপান্তরিত হবে এবং ৩০ হাজার প্রধান শিক্ষক তাদের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়িত হতে দেখবেন। একইসঙ্গে এটি হবে সহকারী শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষাপেশাজীবীদের দাবি পূরণের পথপ্রদর্শক একটি উদাহরণ।