স্বাধীনতা এনেছি, এবার সংস্কারও আনব: নওগাঁয় এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের প্রত্যয়

- Update Time : ১১:৩৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫
- / ৩৬ Time View
নতুন ধারার রাজনৈতিক আন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার (৫ জুলাই) নওগাঁ শহরের নওজোয়ান মাঠে আয়োজিত এক পথসভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “স্বাধীনতা আমরা এনেছি, এবার সংস্কারও আমরাই আনব।”
বিচার ও সংবিধান সংস্কারই মূল লক্ষ্য
নাহিদ ইসলাম বলেন, “এক বছর পার হয়ে গেলেও এখনো কোনো দৃশ্যমান রাষ্ট্রীয় সংস্কার আমরা দেখতে পাইনি। তাই আমরা বলছি—এই রাষ্ট্রের পুনর্গঠনের জন্য বিচার সংস্কার ও নতুন সংবিধান অপরিহার্য। আমাদের আন্দোলনের দুইটি কেন্দ্রবিন্দু—ন্যায়বিচার এবং একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান। এই দুইয়ের মাধ্যমেই জনগণের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এমন কোনো রাজনৈতিক শক্তি নই যারা জনগণকে মিথ্যা স্বপ্ন দেখাবে। বরং আমরা বলি এবং শুনি—শহীদ পরিবার, সাধারণ মানুষ, শিক্ষক, দিনমজুর সবার কথা শুনছি। তাঁদের দাবিই আমাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা।”
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সরব অবস্থান
সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে নাহিদ ইসলাম নওগাঁর করুণ সড়ক ও চিকিৎসাব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরে বলেন, “১৫ বছর ধরে যারা ক্ষমতায় আছে, তারা শুধু উন্নয়নের বুলি শুনিয়েছে। বাস্তবে জনগণের জীবনমান উন্নয়ন হয়নি বরং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, গণতন্ত্র হরণ করেছে। সেই প্রতারণার সময় এখন শেষ। এবার জনগণের পালা।”
তিনি বলেন, “৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। কিন্তু আমরা সেই স্বাধীনতাকে সংরক্ষণ করতে পারিনি। এবার ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান সফল করতে হবে—এটাই শহীদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা।”
বিকল্প নেতৃত্ব ও যুবশক্তির জাগরণ
নাহিদ বলেন, “বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জনগণের প্রগতিশীল অংশ ও তরুণ প্রজন্ম বিকল্প নেতৃত্বের দাবি তুলেছে। আমরা সেই বিকল্প নেতৃত্ব হিসেবেই নিজেদের গড়ে তুলছি। একসময় রাজনৈতিক হওয়ার দরকার পড়বে ভাবিনি, কিন্তু পরিস্থিতি আমাদের রাজনৈতিক হতে বাধ্য করেছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আজ যারা রাজপথে এসেছে তারা দালালি নয়, জনগণের সংগ্রামের প্রতিনিধিত্ব করতে চায়। আমরা দিল্লির নয়, ঢাকার কথা বলি। আপোষের নয়, সংগ্রামের পক্ষেই আমরা। এনসিপি দখল নয়, অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিশ্বাস করে।”
সহযোদ্ধাদের কণ্ঠে ক্ষোভ ও প্রত্যয়
সভায় এনসিপি নওগাঁ জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী মুনিরা শারমিন বলেন, “নওগাঁবাসী নিজেরাই বুঝতে পারছেন কীভাবে বছরের পর বছর চিকিৎসা ও শিক্ষার মতো মৌলিক সেবায় বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। নওগাঁর একটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি মানসম্মত হাসপাতাল দাবি করে আসছি বহুদিন, কিন্তু তা আজও বাস্তব হয়নি। এনসিপি এসব দাবিকে জাতীয় অগ্রাধিকারের পর্যায়ে আনবে।”
আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিচারের দাবি
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “আমাদের ভাইকে দিনের আলোয় হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আজও কোনো বিচার হয়নি। গণহত্যার এত প্রমাণ থাকার পরও দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শাসনকালের বিচার এই দেশের মাটিতেই হতে হবে।”
পথসভা ও পদযাত্রার প্রতীকী শক্তি
পথসভা শুরুর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শহরের বালুডাঙা বাসস্ট্যান্ড থেকে ভ্যানগাড়িতে চড়ে পদযাত্রা শুরু করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ঐতিহ্যবাহী রুবির মোড় পেরিয়ে তারা পায়ে হেঁটে নওজোয়ান মাঠে এসে পৌঁছান। এই পদযাত্রা শুধু এক স্থানান্তরের ভ্রমণ নয়, বরং ছিল একটি প্রতীকী প্রতিবাদ—একটি ফ্যাসিবাদবিরোধী পদক্ষেপ, যার কেন্দ্রবিন্দু ছিল জনগণের মুখপাত্র হয়ে ওঠা।
সভা চলাকালে ‘দালালি না রাজপথ’, ‘আপোষ না সংগ্রাম’, ‘দিল্লি না ঢাকা’, ‘চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
সংগঠকদের বার্তা
সভাটি পরিচালনা করেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম এবং দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ মুখ্য সমন্বয়কারী আব্দুল হান্নান মাসউদ, নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারীসহ জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের ভাষায়, “স্বাধীনতা শুধু অর্জন করলেই চলে না, তাকে রক্ষা করাও জরুরি। আজকের আন্দোলন শুধু ক্ষমতার পালাবদলের জন্য নয়, বরং একটি কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্য। বিচার, সংস্কার, সংবিধান ও সম্মান—এই চারটি স্তম্ভের ওপর গড়ে উঠবে নতুন বাংলাদেশ। এনসিপি সেই ভবিষ্যতের নির্মাতা হতে চায়, জনগণের শক্তিতে।”
Please Share This Post in Your Social Media

স্বাধীনতা এনেছি, এবার সংস্কারও আনব: নওগাঁয় এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের প্রত্যয়

নতুন ধারার রাজনৈতিক আন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার (৫ জুলাই) নওগাঁ শহরের নওজোয়ান মাঠে আয়োজিত এক পথসভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “স্বাধীনতা আমরা এনেছি, এবার সংস্কারও আমরাই আনব।”
বিচার ও সংবিধান সংস্কারই মূল লক্ষ্য
নাহিদ ইসলাম বলেন, “এক বছর পার হয়ে গেলেও এখনো কোনো দৃশ্যমান রাষ্ট্রীয় সংস্কার আমরা দেখতে পাইনি। তাই আমরা বলছি—এই রাষ্ট্রের পুনর্গঠনের জন্য বিচার সংস্কার ও নতুন সংবিধান অপরিহার্য। আমাদের আন্দোলনের দুইটি কেন্দ্রবিন্দু—ন্যায়বিচার এবং একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান। এই দুইয়ের মাধ্যমেই জনগণের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এমন কোনো রাজনৈতিক শক্তি নই যারা জনগণকে মিথ্যা স্বপ্ন দেখাবে। বরং আমরা বলি এবং শুনি—শহীদ পরিবার, সাধারণ মানুষ, শিক্ষক, দিনমজুর সবার কথা শুনছি। তাঁদের দাবিই আমাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা।”
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সরব অবস্থান
সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে নাহিদ ইসলাম নওগাঁর করুণ সড়ক ও চিকিৎসাব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরে বলেন, “১৫ বছর ধরে যারা ক্ষমতায় আছে, তারা শুধু উন্নয়নের বুলি শুনিয়েছে। বাস্তবে জনগণের জীবনমান উন্নয়ন হয়নি বরং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, গণতন্ত্র হরণ করেছে। সেই প্রতারণার সময় এখন শেষ। এবার জনগণের পালা।”
তিনি বলেন, “৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। কিন্তু আমরা সেই স্বাধীনতাকে সংরক্ষণ করতে পারিনি। এবার ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান সফল করতে হবে—এটাই শহীদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা।”
বিকল্প নেতৃত্ব ও যুবশক্তির জাগরণ
নাহিদ বলেন, “বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জনগণের প্রগতিশীল অংশ ও তরুণ প্রজন্ম বিকল্প নেতৃত্বের দাবি তুলেছে। আমরা সেই বিকল্প নেতৃত্ব হিসেবেই নিজেদের গড়ে তুলছি। একসময় রাজনৈতিক হওয়ার দরকার পড়বে ভাবিনি, কিন্তু পরিস্থিতি আমাদের রাজনৈতিক হতে বাধ্য করেছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আজ যারা রাজপথে এসেছে তারা দালালি নয়, জনগণের সংগ্রামের প্রতিনিধিত্ব করতে চায়। আমরা দিল্লির নয়, ঢাকার কথা বলি। আপোষের নয়, সংগ্রামের পক্ষেই আমরা। এনসিপি দখল নয়, অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিশ্বাস করে।”
সহযোদ্ধাদের কণ্ঠে ক্ষোভ ও প্রত্যয়
সভায় এনসিপি নওগাঁ জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী মুনিরা শারমিন বলেন, “নওগাঁবাসী নিজেরাই বুঝতে পারছেন কীভাবে বছরের পর বছর চিকিৎসা ও শিক্ষার মতো মৌলিক সেবায় বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। নওগাঁর একটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি মানসম্মত হাসপাতাল দাবি করে আসছি বহুদিন, কিন্তু তা আজও বাস্তব হয়নি। এনসিপি এসব দাবিকে জাতীয় অগ্রাধিকারের পর্যায়ে আনবে।”
আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিচারের দাবি
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “আমাদের ভাইকে দিনের আলোয় হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আজও কোনো বিচার হয়নি। গণহত্যার এত প্রমাণ থাকার পরও দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শাসনকালের বিচার এই দেশের মাটিতেই হতে হবে।”
পথসভা ও পদযাত্রার প্রতীকী শক্তি
পথসভা শুরুর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শহরের বালুডাঙা বাসস্ট্যান্ড থেকে ভ্যানগাড়িতে চড়ে পদযাত্রা শুরু করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ঐতিহ্যবাহী রুবির মোড় পেরিয়ে তারা পায়ে হেঁটে নওজোয়ান মাঠে এসে পৌঁছান। এই পদযাত্রা শুধু এক স্থানান্তরের ভ্রমণ নয়, বরং ছিল একটি প্রতীকী প্রতিবাদ—একটি ফ্যাসিবাদবিরোধী পদক্ষেপ, যার কেন্দ্রবিন্দু ছিল জনগণের মুখপাত্র হয়ে ওঠা।
সভা চলাকালে ‘দালালি না রাজপথ’, ‘আপোষ না সংগ্রাম’, ‘দিল্লি না ঢাকা’, ‘চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
সংগঠকদের বার্তা
সভাটি পরিচালনা করেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম এবং দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ মুখ্য সমন্বয়কারী আব্দুল হান্নান মাসউদ, নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারীসহ জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের ভাষায়, “স্বাধীনতা শুধু অর্জন করলেই চলে না, তাকে রক্ষা করাও জরুরি। আজকের আন্দোলন শুধু ক্ষমতার পালাবদলের জন্য নয়, বরং একটি কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্য। বিচার, সংস্কার, সংবিধান ও সম্মান—এই চারটি স্তম্ভের ওপর গড়ে উঠবে নতুন বাংলাদেশ। এনসিপি সেই ভবিষ্যতের নির্মাতা হতে চায়, জনগণের শক্তিতে।”