পাঁচটি সামরিক স্থাপনায় ইরানের সফল হামলার তথ্য গোপন রেখেছে ইসরায়েল: স্যাটেলাইট চিত্রে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করলো ডেইলি টেলিগ্রাফ

- Update Time : ১০:১৫:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫
- / ৫৫ Time View
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা ও সামরিক উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এক নতুন মোড় নিয়েছে। সম্প্রতি দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ একটি চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেখানে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকদের স্যাটেলাইট চিত্র ও বিশ্লেষণের তথ্য উপস্থাপন করে দাবি করেছে—ইরান সফলভাবে ইসরায়েলের পাঁচটি সামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যা ইসরায়েল সরকার ও তাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী গোপন রেখেছে।
স্যাটেলাইটে ধরা পড়েছে ধ্বংসের চিত্র
ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির ভূ-চিত্র ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক দল ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটিগুলোর সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করেছে যে উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্য ইসরায়েলে অবস্থিত পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনায় উল্লেখযোগ্য ধ্বংসের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
এই হামলাগুলোর মধ্যে একটি ছিল মধ্য ইসরায়েলের রামাত ডেভিড বিমানঘাঁটি, যা ইসরায়েলের অন্যতম কৌশলগত বিমানঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। অপর দুটি হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল বেজার গভীর রাডার কেন্দ্র এবং একটি সামরিক সরবরাহ ও মজুদ ঘাঁটি। বাকি দুটি স্থাপনার মধ্যে একটি ছিল গোপন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ কেন্দ্র, যেটি মূলত সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স এবং সাইবার নজরদারির কাজে ব্যবহৃত হতো।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের ছোড়া অন্তত ছয়টি দীর্ঘ-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র (সম্ভবত ‘সিজিল’ এবং ‘খোরামশাহর’ মডেলের) এসব স্থাপনায় আঘাত হানে। প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র ছিল ৫০০ থেকে ৭০০ কিলোমিটার পাল্লার এবং বেসামরিক রাডারে এগুলোর গতিপথ শনাক্ত করা কঠিন।
ইসরায়েলের রহস্যজনক নীরবতা
সাধারণত ইসরায়েল যদি কোনো শত্রু হামলায় আক্রান্ত হয়, তবে তাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী তৎক্ষণাৎ তা প্রচার করে এবং পাল্টা পদক্ষেপের হুমকি দেয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে ইসরায়েল সম্পূর্ণ নীরব রয়েছে। ডেইলি
বিশ্লেষকদের মতে, এর পেছনে রয়েছে কৌশলগত হিসাব। ইসরায়েল চায় না আভ্যন্তরীণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াক, বা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের ‘অজেয় প্রতিরক্ষা বলয়’ নিয়ে প্রশ্ন উঠুক। বিশেষ করে “ডেভিড’স স্লিং” এবং “আয়রন ডোম” এর মতো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সক্ষমতা যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে সেটি ইসরায়েলের কূটনৈতিক ও সামরিক অবস্থান দুর্বল করবে।
১২ দিনের সংঘর্ষে ইরানের বিস্ময়কর সাফল্য
টেলিগ্রাফ জানায়, ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের উপর হঠাৎ বিমান হামলা চালানোর মাধ্যমে সংঘর্ষ শুরু করে। একদিনের মধ্যেই ইরান পাল্টা জবাব দেয় এবং ১২ দিনের টানা হামলায় তারা ইসরায়েলের অন্তত ৪০টির বেশি অবকাঠামোতে সফলভাবে আঘাত হানে।
তেহরানের এই প্রতিক্রিয়াকে অনেক বিশ্লেষক বলছেন “প্রতিশোধের চেয়ে কৌশলগত বার্তা”। ইরান পুরো সময় ধরে ‘নির্বাচিত সামরিক লক্ষ্যবস্তু’তে হামলা চালিয়ে পশ্চিমা দুনিয়াকে দেখিয়েছে যে, তারা কেবল রণপ্রস্তুতই নয় বরং প্রযুক্তিগতভাবে অনেকদূর এগিয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়িত হওয়া এবং সংঘাতের বিস্তার
২২ জুন সকালবেলা মার্কিন বোমারু বিমান ‘B-52 Stratofortress’ ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্র—নাতাঞ্জ, ফরদো ও আরাক—এর উপর বিমান হামলা চালায়। এটি সংঘাতকে আরও বহুমাত্রিক করে তোলে এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ যেমন কাতার, সৌদি আরব, ওমান এবং লেবাননে সতর্কতা জারি হয়।
পরের দিন, ইরান কাতারের আল–উদেইদ মার্কিন বিমানঘাঁটিতে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এটি ছিল মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক স্থাপনা এবং এমন হামলা অত্যন্ত বিরল ঘটনা। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ দাবি করে, এ হামলায় কোনো হতাহত হয়নি, তবে স্যাটেলাইট চিত্রে অন্তত দুটি হ্যাঙ্গার ও একটি রানওয়ে আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে গবেষকরা জানান।
ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি
২৪ জুন, ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিবৃতিতে জানান, ইসরায়েল এবং ইরান উভয়ই একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। মার্কিন মধ্যস্থতায় এই চুক্তি কার্যকর হয় এবং ইসরায়েল ঘোষণা করে তারা তাদের “সামরিক লক্ষ্য অর্জন করেছে”। বিপরীতে তেহরান দাবি করে, তারা “তেল আবিবের আক্রমণ প্রতিহত করে ও একতরফাভাবে আগ্রাসন বন্ধ করে” কূটনৈতিকভাবে জয়লাভ করেছে।
এই ঘোষণার পর থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে। তবে বিভিন্ন পর্যবেক্ষক সংস্থা মনে করছে, এটি কেবল একটি “স্থগিত সংঘাত”—একটি অস্থায়ী বিরতি, যার পেছনে রয়েছে বড় রাজনৈতিক হিসাব।
বিশ্লেষকদের মতামত ও ভবিষ্যদ্বাণী
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক ড. আলি রেজা হুসেইনি মনে করেন, “এই সংঘর্ষে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির পরিণত অবস্থান, লক্ষ্যনির্ভর হামলা এবং পশ্চিমা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। তেহরান তার সক্ষমতা একবারেই প্রকাশ করতে চায়নি, বরং বার্তা দিতে চেয়েছে।”
ইসরায়েলি নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইয়োহান বেন-ডেভিড বলেন, “ইসরায়েল হয়তো হামলাগুলোর সত্যতা গোপন রাখছে, কারণ এগুলোর স্বীকারোক্তি মানেই জনসচেতনতা এবং আত্মবিশ্বাসে ধস নামানো। পাশাপাশি, এটি আন্তর্জাতিক মহলে ইরানকে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।”
ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ এক নতুন দিক উন্মোচন করেছে—যেখানে শুধু সামরিক শক্তি নয়, তথ্য ব্যবস্থাপনা, মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ এবং কৌশলগত বার্তার ভূমিকাও বড় হয়ে উঠেছে। স্যাটেলাইট চিত্র ফাঁসের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখে পড়েছে ইসরায়েলের দুর্বলতা এবং ইরানের অগ্রগতি।
যুদ্ধবিরতি আপাতত কার্যকর থাকলেও, মধ্যপ্রাচ্যের বাতাসে এখনও বারুদের গন্ধ। এই সংঘাত কি নতুন এক পরমাণু শীতল যুদ্ধের সূচনা, নাকি একবারেই নতুন আঞ্চলিক ভারসাম্য গড়ে দেবে—তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলা যায়, গোপন হামলার এই সত্য ফাঁস ইসরায়েল ও পশ্চিমাদের নিরাপত্তা কৌশল নিয়ে নতুন করে ভাবার দরজা খুলে দিয়েছে।
সূত্র:
- The Daily Telegraph (UK)
- Oregon State University Satellite Imagery Lab
- Al Jazeera, Haaretz, Reuters, New York Times
- Iran Press, IDF official site, US Central Command
Please Share This Post in Your Social Media

পাঁচটি সামরিক স্থাপনায় ইরানের সফল হামলার তথ্য গোপন রেখেছে ইসরায়েল: স্যাটেলাইট চিত্রে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করলো ডেইলি টেলিগ্রাফ
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা ও সামরিক উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এক নতুন মোড় নিয়েছে। সম্প্রতি দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ একটি চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেখানে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকদের স্যাটেলাইট চিত্র ও বিশ্লেষণের তথ্য উপস্থাপন করে দাবি করেছে—ইরান সফলভাবে ইসরায়েলের পাঁচটি সামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যা ইসরায়েল সরকার ও তাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী গোপন রেখেছে।
স্যাটেলাইটে ধরা পড়েছে ধ্বংসের চিত্র
ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির ভূ-চিত্র ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক দল ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটিগুলোর সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করেছে যে উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্য ইসরায়েলে অবস্থিত পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনায় উল্লেখযোগ্য ধ্বংসের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
এই হামলাগুলোর মধ্যে একটি ছিল মধ্য ইসরায়েলের রামাত ডেভিড বিমানঘাঁটি, যা ইসরায়েলের অন্যতম কৌশলগত বিমানঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। অপর দুটি হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল বেজার গভীর রাডার কেন্দ্র এবং একটি সামরিক সরবরাহ ও মজুদ ঘাঁটি। বাকি দুটি স্থাপনার মধ্যে একটি ছিল গোপন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ কেন্দ্র, যেটি মূলত সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স এবং সাইবার নজরদারির কাজে ব্যবহৃত হতো।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের ছোড়া অন্তত ছয়টি দীর্ঘ-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র (সম্ভবত ‘সিজিল’ এবং ‘খোরামশাহর’ মডেলের) এসব স্থাপনায় আঘাত হানে। প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র ছিল ৫০০ থেকে ৭০০ কিলোমিটার পাল্লার এবং বেসামরিক রাডারে এগুলোর গতিপথ শনাক্ত করা কঠিন।
ইসরায়েলের রহস্যজনক নীরবতা
সাধারণত ইসরায়েল যদি কোনো শত্রু হামলায় আক্রান্ত হয়, তবে তাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী তৎক্ষণাৎ তা প্রচার করে এবং পাল্টা পদক্ষেপের হুমকি দেয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে ইসরায়েল সম্পূর্ণ নীরব রয়েছে। ডেইলি
বিশ্লেষকদের মতে, এর পেছনে রয়েছে কৌশলগত হিসাব। ইসরায়েল চায় না আভ্যন্তরীণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াক, বা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের ‘অজেয় প্রতিরক্ষা বলয়’ নিয়ে প্রশ্ন উঠুক। বিশেষ করে “ডেভিড’স স্লিং” এবং “আয়রন ডোম” এর মতো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সক্ষমতা যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে সেটি ইসরায়েলের কূটনৈতিক ও সামরিক অবস্থান দুর্বল করবে।
১২ দিনের সংঘর্ষে ইরানের বিস্ময়কর সাফল্য
টেলিগ্রাফ জানায়, ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের উপর হঠাৎ বিমান হামলা চালানোর মাধ্যমে সংঘর্ষ শুরু করে। একদিনের মধ্যেই ইরান পাল্টা জবাব দেয় এবং ১২ দিনের টানা হামলায় তারা ইসরায়েলের অন্তত ৪০টির বেশি অবকাঠামোতে সফলভাবে আঘাত হানে।
তেহরানের এই প্রতিক্রিয়াকে অনেক বিশ্লেষক বলছেন “প্রতিশোধের চেয়ে কৌশলগত বার্তা”। ইরান পুরো সময় ধরে ‘নির্বাচিত সামরিক লক্ষ্যবস্তু’তে হামলা চালিয়ে পশ্চিমা দুনিয়াকে দেখিয়েছে যে, তারা কেবল রণপ্রস্তুতই নয় বরং প্রযুক্তিগতভাবে অনেকদূর এগিয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়িত হওয়া এবং সংঘাতের বিস্তার
২২ জুন সকালবেলা মার্কিন বোমারু বিমান ‘B-52 Stratofortress’ ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্র—নাতাঞ্জ, ফরদো ও আরাক—এর উপর বিমান হামলা চালায়। এটি সংঘাতকে আরও বহুমাত্রিক করে তোলে এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ যেমন কাতার, সৌদি আরব, ওমান এবং লেবাননে সতর্কতা জারি হয়।
পরের দিন, ইরান কাতারের আল–উদেইদ মার্কিন বিমানঘাঁটিতে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এটি ছিল মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক স্থাপনা এবং এমন হামলা অত্যন্ত বিরল ঘটনা। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ দাবি করে, এ হামলায় কোনো হতাহত হয়নি, তবে স্যাটেলাইট চিত্রে অন্তত দুটি হ্যাঙ্গার ও একটি রানওয়ে আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে গবেষকরা জানান।
ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি
২৪ জুন, ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিবৃতিতে জানান, ইসরায়েল এবং ইরান উভয়ই একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। মার্কিন মধ্যস্থতায় এই চুক্তি কার্যকর হয় এবং ইসরায়েল ঘোষণা করে তারা তাদের “সামরিক লক্ষ্য অর্জন করেছে”। বিপরীতে তেহরান দাবি করে, তারা “তেল আবিবের আক্রমণ প্রতিহত করে ও একতরফাভাবে আগ্রাসন বন্ধ করে” কূটনৈতিকভাবে জয়লাভ করেছে।
এই ঘোষণার পর থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে। তবে বিভিন্ন পর্যবেক্ষক সংস্থা মনে করছে, এটি কেবল একটি “স্থগিত সংঘাত”—একটি অস্থায়ী বিরতি, যার পেছনে রয়েছে বড় রাজনৈতিক হিসাব।
বিশ্লেষকদের মতামত ও ভবিষ্যদ্বাণী
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক ড. আলি রেজা হুসেইনি মনে করেন, “এই সংঘর্ষে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির পরিণত অবস্থান, লক্ষ্যনির্ভর হামলা এবং পশ্চিমা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। তেহরান তার সক্ষমতা একবারেই প্রকাশ করতে চায়নি, বরং বার্তা দিতে চেয়েছে।”
ইসরায়েলি নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইয়োহান বেন-ডেভিড বলেন, “ইসরায়েল হয়তো হামলাগুলোর সত্যতা গোপন রাখছে, কারণ এগুলোর স্বীকারোক্তি মানেই জনসচেতনতা এবং আত্মবিশ্বাসে ধস নামানো। পাশাপাশি, এটি আন্তর্জাতিক মহলে ইরানকে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।”
ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ এক নতুন দিক উন্মোচন করেছে—যেখানে শুধু সামরিক শক্তি নয়, তথ্য ব্যবস্থাপনা, মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ এবং কৌশলগত বার্তার ভূমিকাও বড় হয়ে উঠেছে। স্যাটেলাইট চিত্র ফাঁসের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখে পড়েছে ইসরায়েলের দুর্বলতা এবং ইরানের অগ্রগতি।
যুদ্ধবিরতি আপাতত কার্যকর থাকলেও, মধ্যপ্রাচ্যের বাতাসে এখনও বারুদের গন্ধ। এই সংঘাত কি নতুন এক পরমাণু শীতল যুদ্ধের সূচনা, নাকি একবারেই নতুন আঞ্চলিক ভারসাম্য গড়ে দেবে—তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলা যায়, গোপন হামলার এই সত্য ফাঁস ইসরায়েল ও পশ্চিমাদের নিরাপত্তা কৌশল নিয়ে নতুন করে ভাবার দরজা খুলে দিয়েছে।
সূত্র:
- The Daily Telegraph (UK)
- Oregon State University Satellite Imagery Lab
- Al Jazeera, Haaretz, Reuters, New York Times
- Iran Press, IDF official site, US Central Command