সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের ভাইসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তিন কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত

- Update Time : ০৬:২৬:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
- / ৬ Time View
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় মাদকবিরোধী অভিযানের নামে স্থানীয় এক নারীর বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা লুট এবং হুমকি-ধমকির অভিযোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তিন কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই তিনজনের মধ্যে রয়েছেন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক প্রধান হারুন অর রশিদের আপন ছোট ভাই সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. জিয়াউর রহমান। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ১০টার দিকে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন—পরিদর্শক মো. সিরাজুল ইসলাম, উপপরিদর্শক মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. জিয়াউর রহমান। অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে সোমবার রাতেই তাদের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়। একই অভিযানে অংশগ্রহণকারী সহকারী উপ-পরিদর্শক শামীম আল আজাদ আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় দায়িত্বে যোগ না দেওয়ায় কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ভূঞাপুর উপজেলার বাহাদিপুর গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক কাউন্সিলর ছালেহা বেগম লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন যে, গত ১৮ জুন সকালে তার বাড়িতে মাদকবিরোধী অভিযান চালানো হয়। মাদক না পেয়ে অভিযানে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তারা গাড়ির তেলের খরচের কথা বলে প্রথমে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। ছালেহা বেগম বাধ্য হয়ে ১০ হাজার টাকা দেন এবং বাকিটা পরে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর অভিযানে থাকা কর্মকর্তারা আবার ঘরে প্রবেশ করে আসবাবপত্র এলোমেলো করে এবং পরে নাটকীয়ভাবে ১০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে মামলা দেওয়ার ভয় দেখান।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, অভিযানের সময় কর্মকর্তারা ছালেহা বেগমের আলমারি থেকে নগদ ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা এবং তার ছেলের ঘর থেকে আরও ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। তারা ভিডিও ধারণ করে জোর করে বক্তব্য নেয় এবং টাকা না দিলে ভয়াবহ পরিণতির হুমকি দেয়। অভিযুক্তদের মধ্যে শামীম আল আজাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে—তিনি নাকি ছালেহা বেগমকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করেছেন, টানাহেঁচড়া করেছেন এবং লাঠি দিয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
ছালেহা বেগম বলেন, “আমি একজন সাধারণ মানুষ। সরকারি কর্মকর্তাদের এমন আচরণে আমি চরমভাবে অপমানিত ও আতঙ্কিত। সাময়িক বরখাস্তে আমি সন্তুষ্ট নই। আমি চাই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, এবং আমার লুট হওয়া টাকা যেন ফেরত দেওয়া হয়।”
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, “অভিযানের নামে কোনো ধরনের অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। তদন্ত চলছে, এবং তদন্তে প্রমাণ মিললে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
অধিদপ্তরের অফিস আদেশে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ছালেহা বেগমের বাড়ি থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠায় এবং এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, মাদকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় অভিযানকে অনেক ক্ষেত্রেই কিছু অসাধু কর্মকর্তা ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। সুশাসনের স্বার্থে শুধু সাময়িক বহিষ্কার নয়, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও আইনানুগ কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
Please Share This Post in Your Social Media

সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের ভাইসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তিন কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় মাদকবিরোধী অভিযানের নামে স্থানীয় এক নারীর বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা লুট এবং হুমকি-ধমকির অভিযোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তিন কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই তিনজনের মধ্যে রয়েছেন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক প্রধান হারুন অর রশিদের আপন ছোট ভাই সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. জিয়াউর রহমান। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ১০টার দিকে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন—পরিদর্শক মো. সিরাজুল ইসলাম, উপপরিদর্শক মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. জিয়াউর রহমান। অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে সোমবার রাতেই তাদের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়। একই অভিযানে অংশগ্রহণকারী সহকারী উপ-পরিদর্শক শামীম আল আজাদ আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় দায়িত্বে যোগ না দেওয়ায় কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ভূঞাপুর উপজেলার বাহাদিপুর গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক কাউন্সিলর ছালেহা বেগম লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন যে, গত ১৮ জুন সকালে তার বাড়িতে মাদকবিরোধী অভিযান চালানো হয়। মাদক না পেয়ে অভিযানে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তারা গাড়ির তেলের খরচের কথা বলে প্রথমে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। ছালেহা বেগম বাধ্য হয়ে ১০ হাজার টাকা দেন এবং বাকিটা পরে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর অভিযানে থাকা কর্মকর্তারা আবার ঘরে প্রবেশ করে আসবাবপত্র এলোমেলো করে এবং পরে নাটকীয়ভাবে ১০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে মামলা দেওয়ার ভয় দেখান।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, অভিযানের সময় কর্মকর্তারা ছালেহা বেগমের আলমারি থেকে নগদ ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা এবং তার ছেলের ঘর থেকে আরও ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। তারা ভিডিও ধারণ করে জোর করে বক্তব্য নেয় এবং টাকা না দিলে ভয়াবহ পরিণতির হুমকি দেয়। অভিযুক্তদের মধ্যে শামীম আল আজাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে—তিনি নাকি ছালেহা বেগমকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করেছেন, টানাহেঁচড়া করেছেন এবং লাঠি দিয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
ছালেহা বেগম বলেন, “আমি একজন সাধারণ মানুষ। সরকারি কর্মকর্তাদের এমন আচরণে আমি চরমভাবে অপমানিত ও আতঙ্কিত। সাময়িক বরখাস্তে আমি সন্তুষ্ট নই। আমি চাই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, এবং আমার লুট হওয়া টাকা যেন ফেরত দেওয়া হয়।”
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, “অভিযানের নামে কোনো ধরনের অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। তদন্ত চলছে, এবং তদন্তে প্রমাণ মিললে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
অধিদপ্তরের অফিস আদেশে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ছালেহা বেগমের বাড়ি থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠায় এবং এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, মাদকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় অভিযানকে অনেক ক্ষেত্রেই কিছু অসাধু কর্মকর্তা ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। সুশাসনের স্বার্থে শুধু সাময়িক বহিষ্কার নয়, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও আইনানুগ কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।