শেয়ার, বন্ড ও ফান্ডে বিনিয়োগে ঝুঁকি সামাল দিতে ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন নির্দেশনা জারি করল বাংলাদেশ ব্যাংক

- Update Time : ০৩:০১:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
- / ৩০ Time View
শেয়ার, বন্ড ও ফান্ডে বিনিয়োগে ঝুঁকি সামাল দিতে ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন নির্দেশনা জারি করল বাংলাদেশ ব্যাংক এবং কমার্শিয়াল পেপারে বিনিয়োগে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন সংস্থান সংরক্ষণ বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যা ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, বন্ড বা ডিবেঞ্চারের বাজারমূল্য যদি ক্রয়মূল্যের চেয়ে কম হয়, তাহলে এ পার্থক্যকে ‘বিনিয়োগজনিত ক্ষতি’ হিসেবে বিবেচনা করে সমপরিমাণ অর্থ সংস্থান হিসেবে রাখতে হবে। প্রতিটি বিনিয়োগের জন্য আলাদা করে এই হিসাব রাখতে হবে। একইভাবে, অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার বা বন্ডে বিনিয়োগ করলেও নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী নিট সম্পদ মূল্য যদি বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে তফাত অংশটুকুও ক্ষতি হিসেবে সংস্থান রাখতে হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠানের গত তিন বছর ধরে কোনো মুনাফা হয়নি, নিরীক্ষিত হিসাব নেই বা কার্যত অস্তিত্বহীন—তাদের শেয়ার বা বন্ডে বিনিয়োগ করা হলে পুরো বিনিয়োগটিই সংস্থান হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির বন্ড, ডিবেঞ্চার বা নন-কনভার্টিবল প্রেফারেন্স শেয়ারে বিনিয়োগ করে যদি এক বছরের মধ্যে সুদ বা লভ্যাংশ না পাওয়া যায়, তবে পর্যায়ক্রমে প্রথম বছর শেষে ২৫%, দ্বিতীয় বছর শেষে ৫০% এবং তৃতীয় বছর শেষে ১০০% হারে সংস্থান রাখতে হবে।
স্বল্পমেয়াদি বন্ড বা ডিবেঞ্চার মেয়াদ শেষে টাকা ফেরত না দিলে পরবর্তী অর্থবছরে এর পুরো মূল্য সংস্থান হিসেবে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে যেসব বিনিয়োগের সুদ ছয় মাস বা তার বেশি সময় ধরে অনাদায়ী রয়েছে, সেগুলোকে সন্দেহজনক বা ক্ষতিগ্রস্ত শ্রেণিতে চিহ্নিত করে যথাক্রমে ৫০% ও ১০০% হারে সংস্থান সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। কোনো বিনিয়োগ থেকে নগদ লভ্যাংশ না পাওয়া গেলে তা আর্থিক প্রতিবেদনে আয় হিসেবে দেখানো যাবে না বলেও নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও কমার্শিয়াল পেপারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত ২০১৫ ও ২০২০ সালের পুরোনো নির্দেশনাগুলো এ নির্দেশনার আওতায় বহাল থাকবে। তবে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশনার আলোকে এসব নীতিমালা সংশোধন করে মানতে হবে।
ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোকে বছরে চারবার—মার্চ, জুন, সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বর শেষে—এই সংস্থান সংক্রান্ত প্রতিবেদন হার্ডকপি ও সফটকপিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করতে হবে। এ ছাড়াও, বার্ষিক নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীতেও সংস্থান সংক্রান্ত তথ্য যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
‘ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩’-এর ৪১(২)(ঘ) ধারার ক্ষমতাবলে জারি করা এই নির্দেশনার পেছনে মূল উদ্দেশ্য হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে—ফাইন্যান্স কোম্পানির বিনিয়োগ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, সুশাসন ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা, পাশাপাশি আমানতকারী গ্রাহকদের অর্থ সুরক্ষায় অধিকতর প্রস্তুতি নেওয়া।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, শেয়ার, বন্ড, ডিবেঞ্চার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও কমার্শিয়াল পেপারে বিনিয়োগ inherently ঝুঁকিপূর্ণ। এসব বিনিয়োগ থেকে প্রকৃত অর্থে কোনো আয় না হলেও অনেক প্রতিষ্ঠান কৃত্রিমভাবে লাভের হিসাব দেখিয়ে আর্থিক প্রতিবেদনে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করে। এটি শুধুমাত্র গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীর আস্থায় আঘাত হানে না, বরং পুরো আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিও হয়ে ওঠে।
এই প্রেক্ষাপটে, নতুন সংস্থান নির্দেশনার মাধ্যমে সম্ভাব্য লোকসান মোকাবিলায় ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানো, প্রকৃত আর্থিক চিত্র প্রতিফলন এবং বিনিয়োগকারীর আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠাই হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল লক্ষ্য।
Please Share This Post in Your Social Media

শেয়ার, বন্ড ও ফান্ডে বিনিয়োগে ঝুঁকি সামাল দিতে ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন নির্দেশনা জারি করল বাংলাদেশ ব্যাংক

শেয়ার, বন্ড ও ফান্ডে বিনিয়োগে ঝুঁকি সামাল দিতে ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন নির্দেশনা জারি করল বাংলাদেশ ব্যাংক এবং কমার্শিয়াল পেপারে বিনিয়োগে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন সংস্থান সংরক্ষণ বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যা ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, বন্ড বা ডিবেঞ্চারের বাজারমূল্য যদি ক্রয়মূল্যের চেয়ে কম হয়, তাহলে এ পার্থক্যকে ‘বিনিয়োগজনিত ক্ষতি’ হিসেবে বিবেচনা করে সমপরিমাণ অর্থ সংস্থান হিসেবে রাখতে হবে। প্রতিটি বিনিয়োগের জন্য আলাদা করে এই হিসাব রাখতে হবে। একইভাবে, অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার বা বন্ডে বিনিয়োগ করলেও নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী নিট সম্পদ মূল্য যদি বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে তফাত অংশটুকুও ক্ষতি হিসেবে সংস্থান রাখতে হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠানের গত তিন বছর ধরে কোনো মুনাফা হয়নি, নিরীক্ষিত হিসাব নেই বা কার্যত অস্তিত্বহীন—তাদের শেয়ার বা বন্ডে বিনিয়োগ করা হলে পুরো বিনিয়োগটিই সংস্থান হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির বন্ড, ডিবেঞ্চার বা নন-কনভার্টিবল প্রেফারেন্স শেয়ারে বিনিয়োগ করে যদি এক বছরের মধ্যে সুদ বা লভ্যাংশ না পাওয়া যায়, তবে পর্যায়ক্রমে প্রথম বছর শেষে ২৫%, দ্বিতীয় বছর শেষে ৫০% এবং তৃতীয় বছর শেষে ১০০% হারে সংস্থান রাখতে হবে।
স্বল্পমেয়াদি বন্ড বা ডিবেঞ্চার মেয়াদ শেষে টাকা ফেরত না দিলে পরবর্তী অর্থবছরে এর পুরো মূল্য সংস্থান হিসেবে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে যেসব বিনিয়োগের সুদ ছয় মাস বা তার বেশি সময় ধরে অনাদায়ী রয়েছে, সেগুলোকে সন্দেহজনক বা ক্ষতিগ্রস্ত শ্রেণিতে চিহ্নিত করে যথাক্রমে ৫০% ও ১০০% হারে সংস্থান সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। কোনো বিনিয়োগ থেকে নগদ লভ্যাংশ না পাওয়া গেলে তা আর্থিক প্রতিবেদনে আয় হিসেবে দেখানো যাবে না বলেও নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও কমার্শিয়াল পেপারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত ২০১৫ ও ২০২০ সালের পুরোনো নির্দেশনাগুলো এ নির্দেশনার আওতায় বহাল থাকবে। তবে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশনার আলোকে এসব নীতিমালা সংশোধন করে মানতে হবে।
ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোকে বছরে চারবার—মার্চ, জুন, সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বর শেষে—এই সংস্থান সংক্রান্ত প্রতিবেদন হার্ডকপি ও সফটকপিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করতে হবে। এ ছাড়াও, বার্ষিক নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীতেও সংস্থান সংক্রান্ত তথ্য যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
‘ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩’-এর ৪১(২)(ঘ) ধারার ক্ষমতাবলে জারি করা এই নির্দেশনার পেছনে মূল উদ্দেশ্য হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে—ফাইন্যান্স কোম্পানির বিনিয়োগ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, সুশাসন ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা, পাশাপাশি আমানতকারী গ্রাহকদের অর্থ সুরক্ষায় অধিকতর প্রস্তুতি নেওয়া।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, শেয়ার, বন্ড, ডিবেঞ্চার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও কমার্শিয়াল পেপারে বিনিয়োগ inherently ঝুঁকিপূর্ণ। এসব বিনিয়োগ থেকে প্রকৃত অর্থে কোনো আয় না হলেও অনেক প্রতিষ্ঠান কৃত্রিমভাবে লাভের হিসাব দেখিয়ে আর্থিক প্রতিবেদনে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করে। এটি শুধুমাত্র গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীর আস্থায় আঘাত হানে না, বরং পুরো আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিও হয়ে ওঠে।
এই প্রেক্ষাপটে, নতুন সংস্থান নির্দেশনার মাধ্যমে সম্ভাব্য লোকসান মোকাবিলায় ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানো, প্রকৃত আর্থিক চিত্র প্রতিফলন এবং বিনিয়োগকারীর আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠাই হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল লক্ষ্য।