সময়: বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

বিপুল তেলের বিনিময়ে চীনের কাছ থেকে আকাশ প্রতিরক্ষা মিসাইল নিচ্ছে ইরান

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৬:০৩:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
  • / ৫১ Time View

maxresdefault 70 1 2507091129

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

maxresdefault 70 1 2507091129

ইসরাইলের সঙ্গে সাম্প্রতিক দ্বন্দ্বের পর সাময়িক যুদ্ধবিরতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাচ্ছে ইরান। এই পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে চীনের কাছ থেকে অত্যাধুনিক ভূমি-থেকে-আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা সংগ্রহ করেছে দেশটি। মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এই প্রতিরক্ষা চুক্তির বিনিময়ে ইরান বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল সরবরাহ করছে চীনকে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের হাতে পৌঁছানো নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা হচ্ছে চীনের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন HQ-9 (এইচ কিউ-৯) আকাশ প্রতিরক্ষা সিস্টেম। এই প্রযুক্তিটি মূলত রাশিয়ার এস-৩০০ ভিত্তিক, যা চীন ২০০১ সাল থেকে নিজেদের সামরিক বাহিনীতে ব্যবহার করে আসছে। HQ-9 এর পাল্লা প্রায় ৩০০ কিলোমিটার এবং এটি প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রে প্রায় ১৮০ কেজি বিস্ফোরক বহন করতে সক্ষম। এটি শত্রুপক্ষের যুদ্ধবিমান, ক্রুজ মিসাইল এবং ড্রোন প্রতিহত করতে অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত।

ইসরাইল-ইরান সাম্প্রতিক সংঘর্ষ এবং এর পরিণতি

ইসরাইলের সঙ্গে সাম্প্রতিক ১২ দিনের সংঘর্ষে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা নগ্নভাবে প্রকাশ পায়। ইসরাইলি বাহিনী সফলভাবে একাধিক কৌশলগত স্থাপনায় আঘাত হানতে সক্ষম হয়, যা তেহরানকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এই দুর্বলতা দূর করতে এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য সংঘাতে নিজেদের প্রস্তুত করতে ইরান এই কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেয়।

জ্বালানি রপ্তানির কূটনীতি সামরিক চুক্তি

প্রচলিত নিষেধাজ্ঞা ও আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে ইরান আন্তর্জাতিক বাজারে অনেকক্ষেত্রেই সরাসরি অস্ত্র বা প্রযুক্তি কিনতে অক্ষম। কিন্তু তাদের প্রধান সম্পদ—তেল—হিসেবেই এবার কৌশলগত বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। জানা গেছে, ইরান বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল চীনকে সরবরাহ করে এই সামরিক সহযোগিতা নিশ্চিত করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি তেহরান-বেইজিং সম্পর্কের মধ্যে নতুন মাত্রা যোগ করছে এবং ইঙ্গিত দিচ্ছে—ইরান এখন চীন-রাশিয়া ঘনিষ্ঠ জোটের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে।

চীনের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ

চীন এই অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে দীর্ঘদিন ধরে কৌশলগত ও অর্থনৈতিকভাবে সক্রিয়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব হ্রাস পাওয়ার প্রেক্ষাপটে বেইজিং এখন তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোর সঙ্গে সরাসরি সামরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী। HQ-9 সিস্টেম সরবরাহের মাধ্যমে চীন শুধু ইরানকেই শক্তিশালী করছে না, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যে নিজের অস্তিত্ব ও সামরিক প্রভাব জোরদার করছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া সম্ভাব্য প্রভাব

এ বিষয়ে মার্কিন হোয়াইট হাউসসহ পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অবগত রয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। তবে এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তা সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ভারসাম্যে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় আনবে। একদিকে এটি ইরানকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে, অন্যদিকে ইসরাইলের জন্য নিরাপত্তা হুমকি আরও বাড়বে।

তাদের মতে, এই সহযোগিতা শুধু সামরিক নয়, বরং ভূ-রাজনৈতিক শিবিরবিন্যাসের বড় উদাহরণও বটে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমে আসা এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ফাঁক গলে বিকল্প জোট গঠনের একটি চলমান উদাহরণ এখন চীন-ইরান সম্পর্ক।

এখন দেখার বিষয়, এই চুক্তির ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ভবিষ্যতের যুদ্ধাবস্থা কোন দিকে মোড় নেয় এবং বিশ্বশক্তিগুলো কী ধরনের প্রতিক্রিয়া জানায়। তবে এটা স্পষ্ট, ইরান আর আগের মতো একঘরে নয়, বরং নিজেদের চারপাশে শক্তিশালী মিত্র জুটিয়ে নিচ্ছে—তেল, প্রযুক্তি ও কৌশলগত অবস্থানকে কেন্দ্র করে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

বিপুল তেলের বিনিময়ে চীনের কাছ থেকে আকাশ প্রতিরক্ষা মিসাইল নিচ্ছে ইরান

Update Time : ০৬:০৩:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

maxresdefault 70 1 2507091129

ইসরাইলের সঙ্গে সাম্প্রতিক দ্বন্দ্বের পর সাময়িক যুদ্ধবিরতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাচ্ছে ইরান। এই পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে চীনের কাছ থেকে অত্যাধুনিক ভূমি-থেকে-আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা সংগ্রহ করেছে দেশটি। মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এই প্রতিরক্ষা চুক্তির বিনিময়ে ইরান বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল সরবরাহ করছে চীনকে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের হাতে পৌঁছানো নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা হচ্ছে চীনের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন HQ-9 (এইচ কিউ-৯) আকাশ প্রতিরক্ষা সিস্টেম। এই প্রযুক্তিটি মূলত রাশিয়ার এস-৩০০ ভিত্তিক, যা চীন ২০০১ সাল থেকে নিজেদের সামরিক বাহিনীতে ব্যবহার করে আসছে। HQ-9 এর পাল্লা প্রায় ৩০০ কিলোমিটার এবং এটি প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রে প্রায় ১৮০ কেজি বিস্ফোরক বহন করতে সক্ষম। এটি শত্রুপক্ষের যুদ্ধবিমান, ক্রুজ মিসাইল এবং ড্রোন প্রতিহত করতে অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত।

ইসরাইল-ইরান সাম্প্রতিক সংঘর্ষ এবং এর পরিণতি

ইসরাইলের সঙ্গে সাম্প্রতিক ১২ দিনের সংঘর্ষে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা নগ্নভাবে প্রকাশ পায়। ইসরাইলি বাহিনী সফলভাবে একাধিক কৌশলগত স্থাপনায় আঘাত হানতে সক্ষম হয়, যা তেহরানকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এই দুর্বলতা দূর করতে এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য সংঘাতে নিজেদের প্রস্তুত করতে ইরান এই কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেয়।

জ্বালানি রপ্তানির কূটনীতি সামরিক চুক্তি

প্রচলিত নিষেধাজ্ঞা ও আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে ইরান আন্তর্জাতিক বাজারে অনেকক্ষেত্রেই সরাসরি অস্ত্র বা প্রযুক্তি কিনতে অক্ষম। কিন্তু তাদের প্রধান সম্পদ—তেল—হিসেবেই এবার কৌশলগত বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। জানা গেছে, ইরান বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল চীনকে সরবরাহ করে এই সামরিক সহযোগিতা নিশ্চিত করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি তেহরান-বেইজিং সম্পর্কের মধ্যে নতুন মাত্রা যোগ করছে এবং ইঙ্গিত দিচ্ছে—ইরান এখন চীন-রাশিয়া ঘনিষ্ঠ জোটের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে।

চীনের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ

চীন এই অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে দীর্ঘদিন ধরে কৌশলগত ও অর্থনৈতিকভাবে সক্রিয়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব হ্রাস পাওয়ার প্রেক্ষাপটে বেইজিং এখন তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোর সঙ্গে সরাসরি সামরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী। HQ-9 সিস্টেম সরবরাহের মাধ্যমে চীন শুধু ইরানকেই শক্তিশালী করছে না, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যে নিজের অস্তিত্ব ও সামরিক প্রভাব জোরদার করছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া সম্ভাব্য প্রভাব

এ বিষয়ে মার্কিন হোয়াইট হাউসসহ পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অবগত রয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। তবে এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তা সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ভারসাম্যে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় আনবে। একদিকে এটি ইরানকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে, অন্যদিকে ইসরাইলের জন্য নিরাপত্তা হুমকি আরও বাড়বে।

তাদের মতে, এই সহযোগিতা শুধু সামরিক নয়, বরং ভূ-রাজনৈতিক শিবিরবিন্যাসের বড় উদাহরণও বটে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমে আসা এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ফাঁক গলে বিকল্প জোট গঠনের একটি চলমান উদাহরণ এখন চীন-ইরান সম্পর্ক।

এখন দেখার বিষয়, এই চুক্তির ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ভবিষ্যতের যুদ্ধাবস্থা কোন দিকে মোড় নেয় এবং বিশ্বশক্তিগুলো কী ধরনের প্রতিক্রিয়া জানায়। তবে এটা স্পষ্ট, ইরান আর আগের মতো একঘরে নয়, বরং নিজেদের চারপাশে শক্তিশালী মিত্র জুটিয়ে নিচ্ছে—তেল, প্রযুক্তি ও কৌশলগত অবস্থানকে কেন্দ্র করে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share