সময়: বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
1
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

ফেনীতে টানা বৃষ্টিতে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ১০টি স্থানে ভয়াবহ ভাঙন, প্লাবিত ১৫ গ্রামেরও বেশি এলাকা

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৬:১৬:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
  • / ৪৮ Time View

d517faffed9890404833e798dae05407 686d6c1584e2b

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

d517faffed9890404833e798dae05407 686d6c1584e2b

ফেনী জেলার পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় টানা ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাতভর প্রবল স্রোতের কারণে দুই উপজেলার অন্তত ১০টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে বিশাল এলাকাজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, এতে কমপক্ষে ১৫টি গ্রামের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে অবশ্য ভাঙনের স্থান পাঁচটি বলে দাবি করা হলেও বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ।

বিশেষ করে চিথলিয়া ইউনিয়নের মধ্যম ধনীকুন্ডা, নোয়াপুর ও শালধর গ্রামে মুহুরী নদীর তীব্র স্রোতে তিনটি স্থানে এবং পশ্চিম অলকা এলাকায় আরও তিনটি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে গেছে। অপরদিকে মির্জানগর ইউনিয়নের পশ্চিম গদানগর, জঙ্গলঘোনা, উত্তর মনিপুর দাসপাড়া ও মেলাঘর এলাকায় সিলোনিয়া নদীর চারটি স্থানে বাঁধ ভেঙে পাশের লোকালয়ে হুহু করে পানি ঢুকে পড়ে। এর ফলে পূর্ব রাঙ্গামাটিয়া, পশ্চিম অলকা, সাতকুচিয়া, পূর্ব অলকা, মধ্যম ও উত্তর ধনীকুন্ডা, মধ্যম মনিপুর, উত্তর মনিপুরসহ একের পর এক গ্রাম ডুবে যায় বন্যার পানিতে।

চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আইয়ুব জানান, হঠাৎ করে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে বলে তিনি জানান।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। স্বাভাবিকের তুলনায় পানির গতি ও উচ্চতা এতটাই বেড়েছে যে, বাঁধগুলো চাপ সইতে না পেরে ভেঙে পড়েছে। ত্রাণ ও সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে ফেনী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় মোট ১৩১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে রান্না করা খাবার ও শুকনো খাবার সরবরাহের পাশাপাশি ৬ লাখ টাকা প্রাথমিকভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা একযোগে উদ্ধার ও সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ভাঙা বাঁধগুলো দ্রুত সংস্কার, পর্যাপ্ত ত্রাণ এবং দীর্ঘমেয়াদে টেকসই বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

ফেনী জেলার এই ভয়াবহ পরিস্থিতি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং অব্যবস্থাপনার প্রেক্ষাপটে নতুন করে বন্যা ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তাও সামনে এনেছে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
1
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

ফেনীতে টানা বৃষ্টিতে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ১০টি স্থানে ভয়াবহ ভাঙন, প্লাবিত ১৫ গ্রামেরও বেশি এলাকা

Update Time : ০৬:১৬:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

d517faffed9890404833e798dae05407 686d6c1584e2b

ফেনী জেলার পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় টানা ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাতভর প্রবল স্রোতের কারণে দুই উপজেলার অন্তত ১০টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে বিশাল এলাকাজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, এতে কমপক্ষে ১৫টি গ্রামের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে অবশ্য ভাঙনের স্থান পাঁচটি বলে দাবি করা হলেও বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ।

বিশেষ করে চিথলিয়া ইউনিয়নের মধ্যম ধনীকুন্ডা, নোয়াপুর ও শালধর গ্রামে মুহুরী নদীর তীব্র স্রোতে তিনটি স্থানে এবং পশ্চিম অলকা এলাকায় আরও তিনটি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে গেছে। অপরদিকে মির্জানগর ইউনিয়নের পশ্চিম গদানগর, জঙ্গলঘোনা, উত্তর মনিপুর দাসপাড়া ও মেলাঘর এলাকায় সিলোনিয়া নদীর চারটি স্থানে বাঁধ ভেঙে পাশের লোকালয়ে হুহু করে পানি ঢুকে পড়ে। এর ফলে পূর্ব রাঙ্গামাটিয়া, পশ্চিম অলকা, সাতকুচিয়া, পূর্ব অলকা, মধ্যম ও উত্তর ধনীকুন্ডা, মধ্যম মনিপুর, উত্তর মনিপুরসহ একের পর এক গ্রাম ডুবে যায় বন্যার পানিতে।

চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আইয়ুব জানান, হঠাৎ করে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে বলে তিনি জানান।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। স্বাভাবিকের তুলনায় পানির গতি ও উচ্চতা এতটাই বেড়েছে যে, বাঁধগুলো চাপ সইতে না পেরে ভেঙে পড়েছে। ত্রাণ ও সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে ফেনী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় মোট ১৩১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে রান্না করা খাবার ও শুকনো খাবার সরবরাহের পাশাপাশি ৬ লাখ টাকা প্রাথমিকভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা একযোগে উদ্ধার ও সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ভাঙা বাঁধগুলো দ্রুত সংস্কার, পর্যাপ্ত ত্রাণ এবং দীর্ঘমেয়াদে টেকসই বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

ফেনী জেলার এই ভয়াবহ পরিস্থিতি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং অব্যবস্থাপনার প্রেক্ষাপটে নতুন করে বন্যা ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তাও সামনে এনেছে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share