আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখতে যেসব বিচারক ভূমিকা রেখেছেন, তাদের তালিকা প্রকাশের দাবি ব্যারিস্টার মাহবুবের

- Update Time : ০৫:৪৯:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
- / ৯২ Time View
ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে যেসব বিচারক নির্লজ্জভাবে সহায়তা করেছেন, তাদের নাম-ঠিকানাসহ তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপিপন্থী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে দমন এবং গণতন্ত্রকে পঙ্গু করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিচার বিভাগের একটি অংশকে ব্যবহার করা হয়েছে। এসব বিচারকের ভূমিকা ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বুধবার (৯ জুলাই) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের অডিটোরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন খোকন। তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রাখার পেছনে বিচার বিভাগের কিছু কর্তা ব্যক্তির পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা ছিল। তাদের অনেকেই সংবিধান, আইন এবং বিচারিক নিরপেক্ষতার নীতিমালাকে পায়ে দলে রাজনৈতিক আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। আমরা জানতে চাই, সেই বিচারকদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? সরকার এবং প্রধান বিচারপতির সদিচ্ছা থাকলে এদের চিহ্নিত করে তালিকা প্রকাশ করা খুবই সহজ।”
তিনি আরও বলেন, “এই তালিকা শুধু জনগণের জানার অধিকার নয়, বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা এবং ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবেও কাজ করবে। এই বিচারকদের কাজ বিচার নয়, বরং রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়তা করা। এটা রাষ্ট্রের জন্য অশুভ বার্তা।”
সংবাদ সম্মেলনে বিচার বিভাগে প্রয়োজনীয় সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত অধ্যাদেশের পুনঃমূল্যায়ন ও সংশোধন জরুরি। বর্তমানে বিচারক নিয়োগ কমিটিতে কোনো আইনজীবীর প্রতিনিধি নেই, অথচ অধস্তন আদালতের বিচারকদের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। এটি বিচার বিভাগের কাঠামোগত ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করছে। আমরা মনে করি, অভিজ্ঞ আইনজীবীদের এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে পেশাগত অভিজ্ঞতা প্রতিফলিত হতো।”
ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে ৮ম সংবিধান সংশোধনী মামলার রিভিউ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যাবে না। তাই এ বিষয়ে সরকার যেসব বক্তব্য দিচ্ছে, সেগুলো আইনি ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।”
সুপ্রিম কোর্ট বারের আসন্ন নির্বাচন নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেন মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, “বর্তমানে দেশে কার্যত মব শাসন চলছে। এমন প্রেক্ষাপটে বার সমিতির নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে আমরা মনে করি না। সরকারের ছত্রছায়ায় পরিচালিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের প্রভাব সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। তাই আমরা এই পরিস্থিতিতে ভোটে অংশ নিতে অনাগ্রহী।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি ভোটে জালিয়াতির আশঙ্কা থেকে যায় এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চলতে থাকে, তাহলে আইনজীবীরা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হবেন।”
এ সময় অন্যান্য আইনজীবী নেতারাও উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্যে মাহবুব উদ্দিন খোকনের দাবির প্রতি সমর্থন জানান। তাদের দাবি, বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হলে বিচারকদের নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য স্বচ্ছ তদন্ত, দোষীদের চিহ্নিতকরণ এবং প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তারা।
Please Share This Post in Your Social Media

আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখতে যেসব বিচারক ভূমিকা রেখেছেন, তাদের তালিকা প্রকাশের দাবি ব্যারিস্টার মাহবুবের

ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে যেসব বিচারক নির্লজ্জভাবে সহায়তা করেছেন, তাদের নাম-ঠিকানাসহ তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপিপন্থী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে দমন এবং গণতন্ত্রকে পঙ্গু করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিচার বিভাগের একটি অংশকে ব্যবহার করা হয়েছে। এসব বিচারকের ভূমিকা ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বুধবার (৯ জুলাই) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের অডিটোরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন খোকন। তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রাখার পেছনে বিচার বিভাগের কিছু কর্তা ব্যক্তির পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা ছিল। তাদের অনেকেই সংবিধান, আইন এবং বিচারিক নিরপেক্ষতার নীতিমালাকে পায়ে দলে রাজনৈতিক আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। আমরা জানতে চাই, সেই বিচারকদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? সরকার এবং প্রধান বিচারপতির সদিচ্ছা থাকলে এদের চিহ্নিত করে তালিকা প্রকাশ করা খুবই সহজ।”
তিনি আরও বলেন, “এই তালিকা শুধু জনগণের জানার অধিকার নয়, বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা এবং ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবেও কাজ করবে। এই বিচারকদের কাজ বিচার নয়, বরং রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়তা করা। এটা রাষ্ট্রের জন্য অশুভ বার্তা।”
সংবাদ সম্মেলনে বিচার বিভাগে প্রয়োজনীয় সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত অধ্যাদেশের পুনঃমূল্যায়ন ও সংশোধন জরুরি। বর্তমানে বিচারক নিয়োগ কমিটিতে কোনো আইনজীবীর প্রতিনিধি নেই, অথচ অধস্তন আদালতের বিচারকদের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। এটি বিচার বিভাগের কাঠামোগত ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করছে। আমরা মনে করি, অভিজ্ঞ আইনজীবীদের এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে পেশাগত অভিজ্ঞতা প্রতিফলিত হতো।”
ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে ৮ম সংবিধান সংশোধনী মামলার রিভিউ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যাবে না। তাই এ বিষয়ে সরকার যেসব বক্তব্য দিচ্ছে, সেগুলো আইনি ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।”
সুপ্রিম কোর্ট বারের আসন্ন নির্বাচন নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেন মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, “বর্তমানে দেশে কার্যত মব শাসন চলছে। এমন প্রেক্ষাপটে বার সমিতির নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে আমরা মনে করি না। সরকারের ছত্রছায়ায় পরিচালিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের প্রভাব সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। তাই আমরা এই পরিস্থিতিতে ভোটে অংশ নিতে অনাগ্রহী।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি ভোটে জালিয়াতির আশঙ্কা থেকে যায় এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চলতে থাকে, তাহলে আইনজীবীরা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হবেন।”
এ সময় অন্যান্য আইনজীবী নেতারাও উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্যে মাহবুব উদ্দিন খোকনের দাবির প্রতি সমর্থন জানান। তাদের দাবি, বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হলে বিচারকদের নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য স্বচ্ছ তদন্ত, দোষীদের চিহ্নিতকরণ এবং প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তারা।