আইফোনে কী নতুনত্ব আনছে অ্যাপল: অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হলেও আশাবাদী ভক্তরা

- Update Time : ০৩:২২:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
- / ৫৬ Time View
প্রতিবছর নতুন আইফোন আসবে, থাকবে নতুন চমক—এ যেন অ্যাপলপ্রেমীদের চিরন্তন প্রত্যাশা। সেই সঙ্গে প্রযুক্তিপ্রেমী ও বিশ্লেষকদের আগ্রহও থাকে তুঙ্গে। তবে ২০২৫ সালের প্রজন্মের আইফোনে কোনো বড় ধরনের ডিজাইন পরিবর্তন বা নতুন যুগান্তকারী প্রযুক্তির সম্ভাবনা আপাতত খুব বেশি নেই বলেই জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
বিশ্বখ্যাত ডিসপ্লে প্রযুক্তি বিশ্লেষক এবং ডিসপ্লে সাপ্লাই চেইন কনসালট্যান্টসের (DSCC) প্রধান নির্বাহী রস ইয়ং-এর মতে, বহু প্রতীক্ষিত ‘হোল-ফ্রি’ বা সম্পূর্ণ ছিদ্রমুক্ত আইফোনের দেখা পেতে ভক্তদের অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছু বছর। বিশেষ করে, বেজেলহীন, পাঞ্চ-হোল ও হিডেন ফেস আইডি প্রযুক্তির আইফোন মডেল ২০২৬ সালের আগে বাজারে আসার সম্ভাবনা নেই।
বেজেলহীন আইফোনের স্বপ্ন
আগে থেকেই গুঞ্জন রয়েছে, আইফোনের ২০তম বার্ষিকীতে—অর্থাৎ ২০২৭ সালে—অ্যাপল একেবারে নতুন, তরুণধর্মী এবং ভবিষ্যতমুখী ডিজাইনের আইফোন বাজারে আনবে। সম্ভাব্য ওই মডেলে থাকবে প্রায় সম্পূর্ণ বেজেলহীন ডিসপ্লে, গ্লাস ব্যাক প্যানেল এবং রাউন্ডেড ফ্রেম। তবে এখনো এ ব্যাপারে অ্যাপলের পক্ষ থেকে নিশ্চিত কোনো ঘোষণা আসেনি।
রস ইয়ং জানাচ্ছেন, ভবিষ্যতের ওই আইফোনে ফেস আইডি সেন্সর এবং সেলফি ক্যামেরা পুরোপুরি অ্যামোলেড স্ক্রিনের নিচে স্থাপন করা হবে। এতে স্ক্রিনে কোনো কাটআউট বা পাঞ্চ-হোল দৃশ্যমান থাকবে না। তবে এমন প্রযুক্তি সম্পন্ন একটি ডিভাইস বাজারে আনতে অ্যাপলের আরও সময় লাগবে—কমপক্ষে ২০২৬ সাল পর্যন্ত।
হোল–ফ্রি ডিজাইনের পথে চ্যালেঞ্জ
বর্তমানে যে পিল-শেপড কাটআউট বা ‘ডায়নামিক আইল্যান্ড’ দেখা যায়, সেটি স্ক্রিনের ওপরে কিছু সেন্সর এবং সেলফি ক্যামেরা ধারণ করার জন্য রাখা হয়। বিশ্লেষকদের মতে, আগামী কয়েক বছরে অ্যাপল এই কাটআউট আরও ছোট করে ফেলতে পারে—যদিও পুরোপুরি ছিদ্রমুক্ত স্ক্রিন বাস্তবে ধরা দেবে না।
রস ইয়ং আরও বলেছেন, ২০২৮ সালের মধ্যে অ্যাপল থ্রিডি ফেস রিকগনিশন প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত সব সেন্সর স্ক্রিনের নিচে সরিয়ে নিতে সক্ষম হবে বলে তারা আশাবাদী। কিন্তু আন্ডার-ডিসপ্লে সেলফি ক্যামেরা প্রযুক্তি এখনো আশানুরূপ মানে পৌঁছায়নি। ফলে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সেলফি ক্যামেরা পাঞ্চ-হোলেই থাকতে পারে।
প্রযুক্তি আসবে ধাপে ধাপে
অ্যাপল বরাবরই নতুন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ধীর, কিন্তু নিখুঁত পথে অগ্রসর হয়। কোনো প্রযুক্তি পুরোপুরি পরিপক্ব না হওয়া পর্যন্ত অ্যাপল সাধারণত তা ব্যবহার করে না। আন্ডার-ডিসপ্লে ফেস আইডি ও ক্যামেরা প্রযুক্তি এখনো উন্নয়নের পথে রয়েছে। চীনভিত্তিক কয়েকটি কোম্পানি এই প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করলেও ছবি বা ভিডিওর গুণমান এখনও প্রত্যাশা পূরণে অক্ষম।
তবে অ্যাপল ইতোমধ্যে হিডেন ফেস আইডি ও স্ক্রিন-অন্তর্ভুক্ত ক্যামেরার গবেষণা চালাচ্ছে এবং এই রূপান্তরকে সময়োপযোগী করার পরিকল্পনায় রয়েছে। এজন্য চিপ ডিজাইন, সেন্সর স্থাপনা ও ডিসপ্লে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে একযোগে কাজ চলছে।
শেষ কথা
সার্বিকভাবে বলতে গেলে, নিকট ভবিষ্যতের আইফোনগুলোতে আমরা হয়তো বড় ধরনের ডিজাইন বিপ্লব দেখব না, কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়ন চলবে ধাপে ধাপে। ২০২৬ সালের আগে হোল-ফ্রি আইফোন বা হিডেন ফেস আইডির দেখা না মিললেও, ২০২৭ থেকে শুরু করে ২০২৮-৩০ সালের মধ্যে এসব প্রযুক্তি বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসতে পারে।
তবে আইফোনপ্রেমীদের জন্য একটাই আশার কথা—অ্যাপল ধীরে হলেও সবসময় নির্ভরযোগ্যতা, পারফরম্যান্স এবং অভিজ্ঞতার মানে একধাপ এগিয়ে থাকে। কাজেই অপেক্ষাটা বৃথা যাবে না বলেই আশাবাদী প্রযুক্তিবিশ্ব।
Please Share This Post in Your Social Media

আইফোনে কী নতুনত্ব আনছে অ্যাপল: অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হলেও আশাবাদী ভক্তরা

প্রতিবছর নতুন আইফোন আসবে, থাকবে নতুন চমক—এ যেন অ্যাপলপ্রেমীদের চিরন্তন প্রত্যাশা। সেই সঙ্গে প্রযুক্তিপ্রেমী ও বিশ্লেষকদের আগ্রহও থাকে তুঙ্গে। তবে ২০২৫ সালের প্রজন্মের আইফোনে কোনো বড় ধরনের ডিজাইন পরিবর্তন বা নতুন যুগান্তকারী প্রযুক্তির সম্ভাবনা আপাতত খুব বেশি নেই বলেই জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
বিশ্বখ্যাত ডিসপ্লে প্রযুক্তি বিশ্লেষক এবং ডিসপ্লে সাপ্লাই চেইন কনসালট্যান্টসের (DSCC) প্রধান নির্বাহী রস ইয়ং-এর মতে, বহু প্রতীক্ষিত ‘হোল-ফ্রি’ বা সম্পূর্ণ ছিদ্রমুক্ত আইফোনের দেখা পেতে ভক্তদের অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছু বছর। বিশেষ করে, বেজেলহীন, পাঞ্চ-হোল ও হিডেন ফেস আইডি প্রযুক্তির আইফোন মডেল ২০২৬ সালের আগে বাজারে আসার সম্ভাবনা নেই।
বেজেলহীন আইফোনের স্বপ্ন
আগে থেকেই গুঞ্জন রয়েছে, আইফোনের ২০তম বার্ষিকীতে—অর্থাৎ ২০২৭ সালে—অ্যাপল একেবারে নতুন, তরুণধর্মী এবং ভবিষ্যতমুখী ডিজাইনের আইফোন বাজারে আনবে। সম্ভাব্য ওই মডেলে থাকবে প্রায় সম্পূর্ণ বেজেলহীন ডিসপ্লে, গ্লাস ব্যাক প্যানেল এবং রাউন্ডেড ফ্রেম। তবে এখনো এ ব্যাপারে অ্যাপলের পক্ষ থেকে নিশ্চিত কোনো ঘোষণা আসেনি।
রস ইয়ং জানাচ্ছেন, ভবিষ্যতের ওই আইফোনে ফেস আইডি সেন্সর এবং সেলফি ক্যামেরা পুরোপুরি অ্যামোলেড স্ক্রিনের নিচে স্থাপন করা হবে। এতে স্ক্রিনে কোনো কাটআউট বা পাঞ্চ-হোল দৃশ্যমান থাকবে না। তবে এমন প্রযুক্তি সম্পন্ন একটি ডিভাইস বাজারে আনতে অ্যাপলের আরও সময় লাগবে—কমপক্ষে ২০২৬ সাল পর্যন্ত।
হোল–ফ্রি ডিজাইনের পথে চ্যালেঞ্জ
বর্তমানে যে পিল-শেপড কাটআউট বা ‘ডায়নামিক আইল্যান্ড’ দেখা যায়, সেটি স্ক্রিনের ওপরে কিছু সেন্সর এবং সেলফি ক্যামেরা ধারণ করার জন্য রাখা হয়। বিশ্লেষকদের মতে, আগামী কয়েক বছরে অ্যাপল এই কাটআউট আরও ছোট করে ফেলতে পারে—যদিও পুরোপুরি ছিদ্রমুক্ত স্ক্রিন বাস্তবে ধরা দেবে না।
রস ইয়ং আরও বলেছেন, ২০২৮ সালের মধ্যে অ্যাপল থ্রিডি ফেস রিকগনিশন প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত সব সেন্সর স্ক্রিনের নিচে সরিয়ে নিতে সক্ষম হবে বলে তারা আশাবাদী। কিন্তু আন্ডার-ডিসপ্লে সেলফি ক্যামেরা প্রযুক্তি এখনো আশানুরূপ মানে পৌঁছায়নি। ফলে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সেলফি ক্যামেরা পাঞ্চ-হোলেই থাকতে পারে।
প্রযুক্তি আসবে ধাপে ধাপে
অ্যাপল বরাবরই নতুন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ধীর, কিন্তু নিখুঁত পথে অগ্রসর হয়। কোনো প্রযুক্তি পুরোপুরি পরিপক্ব না হওয়া পর্যন্ত অ্যাপল সাধারণত তা ব্যবহার করে না। আন্ডার-ডিসপ্লে ফেস আইডি ও ক্যামেরা প্রযুক্তি এখনো উন্নয়নের পথে রয়েছে। চীনভিত্তিক কয়েকটি কোম্পানি এই প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করলেও ছবি বা ভিডিওর গুণমান এখনও প্রত্যাশা পূরণে অক্ষম।
তবে অ্যাপল ইতোমধ্যে হিডেন ফেস আইডি ও স্ক্রিন-অন্তর্ভুক্ত ক্যামেরার গবেষণা চালাচ্ছে এবং এই রূপান্তরকে সময়োপযোগী করার পরিকল্পনায় রয়েছে। এজন্য চিপ ডিজাইন, সেন্সর স্থাপনা ও ডিসপ্লে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে একযোগে কাজ চলছে।
শেষ কথা
সার্বিকভাবে বলতে গেলে, নিকট ভবিষ্যতের আইফোনগুলোতে আমরা হয়তো বড় ধরনের ডিজাইন বিপ্লব দেখব না, কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়ন চলবে ধাপে ধাপে। ২০২৬ সালের আগে হোল-ফ্রি আইফোন বা হিডেন ফেস আইডির দেখা না মিললেও, ২০২৭ থেকে শুরু করে ২০২৮-৩০ সালের মধ্যে এসব প্রযুক্তি বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসতে পারে।
তবে আইফোনপ্রেমীদের জন্য একটাই আশার কথা—অ্যাপল ধীরে হলেও সবসময় নির্ভরযোগ্যতা, পারফরম্যান্স এবং অভিজ্ঞতার মানে একধাপ এগিয়ে থাকে। কাজেই অপেক্ষাটা বৃথা যাবে না বলেই আশাবাদী প্রযুক্তিবিশ্ব।