চিপায় পড়ে ডিসি-এসপিরা ভালো ব্যবহার করছেন: রাজশাহীতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন এনসিপি নেতা হাসনাত

- Update Time : ১০:৩৩:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫
- / ২১ Time View
‘ডিসি-এসপিরা আজ ভালো ব্যবহার করছেন, কারণ তারা চাপে আছেন’— এমন মন্তব্য করে আলোচনার জন্ম দিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। রোববার (৬ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজশাহীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে ‘জুলাই পথযাত্রা’ শেষে আয়োজিত এক জনসভায় তিনি এসব বক্তব্য দেন।
হাসনাত বলেন, “আজ ডিসি-এসপিরা আমাদের সঙ্গে সদাচরণ করছেন, কারণ তারা ‘চিপায় পড়েছেন’। আমরা জানি, আওয়ামী লীগের পতন না হলে তারাই গণভবনে প্রমোশনের জন্য লাইন দিত। এখন পরিস্থিতি বদলেছে বলেই আচরণ বদলেছে।”
সাংবাদিক ও প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি
হাসনাত বলেন, “আমরা সাংবাদিকদের দিকে নজর রাখছি। তারা জুলাই অভ্যুত্থানে আমাদের সন্ত্রাসী বানানোর অপচেষ্টা চালিয়েছিল। আমরা ভুলে যাইনি কে কী করেছিল। আপনারা ভাবছেন সাংবাদিকতা করলে দায়মুক্তি পাবেন? না, সত্য চাপা দিলে তারও জবাবদিহি আছে।”
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যারা মনে করছেন ক্ষমতার লেজ ধরে রক্ষা পাবেন, তারা ইতিহাস পড়েননি। ১৬ বছরের ক্ষমতাসীন আমলে যেসব ডিসি-এসপিরা ছিল, তাদের অনেকেই এখন আত্মগোপনে বা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে। মনে রাখবেন, এই দিন দিন না, আরও দিন আছে।”
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “আমরা বলছি না আপনারা এনসিপিপন্থি হোন, কিন্তু ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারী দলে পৃষ্ঠপোষকতা করলে, মিডনাইট নির্বাচনে সহযোগিতা করলে, এই বাংলাদেশে আপনাদের ঠাঁই হবে না।”
তরুণদের আহ্বান ও সাহসী ভাষণ
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এই তরুণ সমাজ আর দালালি করে না, কারও তাঁবেদারি চায় না। আজকের প্রজন্ম জানে—তাদের বাবা-মা ব্যর্থ হয়েছেন, এখন সন্তানরাই নেতৃত্ব দেবে। তারা রাজপথে নেমে পড়েছে, আর থামবে না।”
তিনি বলেন, “আমাদের হারানোর কিছু নেই। আমাদের কোনো লুটপাটের ব্যাংক নেই, যা হারালে মাথায় হাত পড়বে। আমাদের আছে শুধু জনগণের ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার শক্তিতেই আমরা আবারও রাজপথে নামব, প্রয়োজনে জীবন দেব।”
সাংবাদিক ও প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি
হাসনাত বলেন, “বাংলার আকাশে আবারও দুর্যোগের ঘনঘটা দেখা দিচ্ছে। আমাদের বেঁচে থাকতে আর কাউকে গুম হতে দেওয়া যাবে না। কোনো মায়ের বুক খালি হতে দেওয়া যাবে না। কোনো ইলিয়াস আর নিখোঁজ হবে না। কোনো দেশপ্রেমিক সাংবাদিককে প্রাণভয়ে বিদেশে থাকতে হবে না।”
গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ
হাসনাত কড়া ভাষায় বলেন, “আপনারা যেসব গোয়েন্দা সংস্থার লোক—আপনারা আসলে দেশের স্বাধীনতা রক্ষার কাজ করছেন না। ক্যান্টনমেন্টে বসে রাজনৈতিক দল গঠন করছেন, দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগাচ্ছেন। বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কী ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তা আপনাদের অজানা। কিন্তু দেশের রাজনীতিতে কীভাবে হস্তক্ষেপ করবেন, সেটা ঠিক জানেন।”
আন্দোলনের রূপরেখা ও দাবি
সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করে হাসনাত বলেন, “আমরা ক্ষমতার জন্য আন্দোলন করছি না। তাই বিচার ও সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচনের চেষ্টা হলে আমাদের বুকের ওপর দিয়ে গুলি চালিয়ে যেতে হবে। আমরা নির্বাচন চাই—তবে সেটা হবে সংস্কারসহ, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’-এর ভিত্তিতে।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা প্রতিটি স্তরে প্রস্তুতি নিচ্ছি। দেশের জনগণ, বিশেষ করে তরুণ সমাজ আজ সজাগ। কোনো চক্রান্ত, কোনো গোপন নির্বাচনী তৎপরতা আর সফল হবে না।”
উপস্থিত নেতৃবৃন্দ
এ সময় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সদস্য সচিব আখতার হোসাইন, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দিন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন ও জনসভায় উপস্থিত ছিলেন।
এই বক্তব্য প্রমাণ করে, এনসিপি রাজপথে তার অবস্থান আরও শক্তিশালী করছে এবং প্রশাসনের প্রতিটি স্তরকে এখন তারা রাজনৈতিকভাবে পর্যবেক্ষণের আওতায় এনেছে। ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ এর পটভূমিতে হাসনাত আব্দুল্লাহর এই বক্তব্য প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোড়ন তুলতে পারে।
Please Share This Post in Your Social Media

চিপায় পড়ে ডিসি-এসপিরা ভালো ব্যবহার করছেন: রাজশাহীতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন এনসিপি নেতা হাসনাত

‘ডিসি-এসপিরা আজ ভালো ব্যবহার করছেন, কারণ তারা চাপে আছেন’— এমন মন্তব্য করে আলোচনার জন্ম দিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। রোববার (৬ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজশাহীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে ‘জুলাই পথযাত্রা’ শেষে আয়োজিত এক জনসভায় তিনি এসব বক্তব্য দেন।
হাসনাত বলেন, “আজ ডিসি-এসপিরা আমাদের সঙ্গে সদাচরণ করছেন, কারণ তারা ‘চিপায় পড়েছেন’। আমরা জানি, আওয়ামী লীগের পতন না হলে তারাই গণভবনে প্রমোশনের জন্য লাইন দিত। এখন পরিস্থিতি বদলেছে বলেই আচরণ বদলেছে।”
সাংবাদিক ও প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি
হাসনাত বলেন, “আমরা সাংবাদিকদের দিকে নজর রাখছি। তারা জুলাই অভ্যুত্থানে আমাদের সন্ত্রাসী বানানোর অপচেষ্টা চালিয়েছিল। আমরা ভুলে যাইনি কে কী করেছিল। আপনারা ভাবছেন সাংবাদিকতা করলে দায়মুক্তি পাবেন? না, সত্য চাপা দিলে তারও জবাবদিহি আছে।”
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যারা মনে করছেন ক্ষমতার লেজ ধরে রক্ষা পাবেন, তারা ইতিহাস পড়েননি। ১৬ বছরের ক্ষমতাসীন আমলে যেসব ডিসি-এসপিরা ছিল, তাদের অনেকেই এখন আত্মগোপনে বা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে। মনে রাখবেন, এই দিন দিন না, আরও দিন আছে।”
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “আমরা বলছি না আপনারা এনসিপিপন্থি হোন, কিন্তু ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারী দলে পৃষ্ঠপোষকতা করলে, মিডনাইট নির্বাচনে সহযোগিতা করলে, এই বাংলাদেশে আপনাদের ঠাঁই হবে না।”
তরুণদের আহ্বান ও সাহসী ভাষণ
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এই তরুণ সমাজ আর দালালি করে না, কারও তাঁবেদারি চায় না। আজকের প্রজন্ম জানে—তাদের বাবা-মা ব্যর্থ হয়েছেন, এখন সন্তানরাই নেতৃত্ব দেবে। তারা রাজপথে নেমে পড়েছে, আর থামবে না।”
তিনি বলেন, “আমাদের হারানোর কিছু নেই। আমাদের কোনো লুটপাটের ব্যাংক নেই, যা হারালে মাথায় হাত পড়বে। আমাদের আছে শুধু জনগণের ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার শক্তিতেই আমরা আবারও রাজপথে নামব, প্রয়োজনে জীবন দেব।”
সাংবাদিক ও প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি
হাসনাত বলেন, “বাংলার আকাশে আবারও দুর্যোগের ঘনঘটা দেখা দিচ্ছে। আমাদের বেঁচে থাকতে আর কাউকে গুম হতে দেওয়া যাবে না। কোনো মায়ের বুক খালি হতে দেওয়া যাবে না। কোনো ইলিয়াস আর নিখোঁজ হবে না। কোনো দেশপ্রেমিক সাংবাদিককে প্রাণভয়ে বিদেশে থাকতে হবে না।”
গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ
হাসনাত কড়া ভাষায় বলেন, “আপনারা যেসব গোয়েন্দা সংস্থার লোক—আপনারা আসলে দেশের স্বাধীনতা রক্ষার কাজ করছেন না। ক্যান্টনমেন্টে বসে রাজনৈতিক দল গঠন করছেন, দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগাচ্ছেন। বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কী ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তা আপনাদের অজানা। কিন্তু দেশের রাজনীতিতে কীভাবে হস্তক্ষেপ করবেন, সেটা ঠিক জানেন।”
আন্দোলনের রূপরেখা ও দাবি
সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করে হাসনাত বলেন, “আমরা ক্ষমতার জন্য আন্দোলন করছি না। তাই বিচার ও সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচনের চেষ্টা হলে আমাদের বুকের ওপর দিয়ে গুলি চালিয়ে যেতে হবে। আমরা নির্বাচন চাই—তবে সেটা হবে সংস্কারসহ, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’-এর ভিত্তিতে।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা প্রতিটি স্তরে প্রস্তুতি নিচ্ছি। দেশের জনগণ, বিশেষ করে তরুণ সমাজ আজ সজাগ। কোনো চক্রান্ত, কোনো গোপন নির্বাচনী তৎপরতা আর সফল হবে না।”
উপস্থিত নেতৃবৃন্দ
এ সময় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সদস্য সচিব আখতার হোসাইন, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দিন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন ও জনসভায় উপস্থিত ছিলেন।
এই বক্তব্য প্রমাণ করে, এনসিপি রাজপথে তার অবস্থান আরও শক্তিশালী করছে এবং প্রশাসনের প্রতিটি স্তরকে এখন তারা রাজনৈতিকভাবে পর্যবেক্ষণের আওতায় এনেছে। ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ এর পটভূমিতে হাসনাত আব্দুল্লাহর এই বক্তব্য প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোড়ন তুলতে পারে।