সময়: সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

গত ৪৮ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩০০ ফিলিস্তিনি, ধ্বংসস্তূপে রূপ নিচ্ছে জীবনধারা

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১০:৫২:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫
  • / ৫৭ Time View

a3 20250704085042

শেয়ার করুনঃ
fb-share-icon
Pin Share

 

a3 20250704085042

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর লাগাতার বিমান ও স্থল হামলা যেন মৃত্যুর আরেক নাম হয়ে উঠেছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় অন্তত ৩০০ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও শত শত মানুষ। প্রতিদিনের মতো বাজার, আশ্রয়কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি ত্রাণ সংগ্রহের জন্য অপেক্ষমাণ নিরীহ জনগণও রেহাই পাচ্ছেন না এই ভয়াবহতা থেকে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) জানায়, মাত্র গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৮ জন নিহত ও ৫৮১ জন আহত হয়েছেন। গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস নিশ্চিত করেছে যে, এসব প্রাণহানির অধিকাংশই হয়েছে এমন স্থানগুলোতে, যেখানে মানুষ খাদ্য, আশ্রয় বা চিকিৎসার জন্য জড়ো হয়েছিল।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, নিহতদের মধ্যে ৩৩ জন ছিলেন ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ)-এর পরিচালিত একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে, যেখানে তারা খাদ্য সহায়তা নিতে গিয়েছিলেন। আল-মাওয়াসি এলাকায় একটি তাঁবুতে ১৩ জন নিহত হন, যেখানে কয়েকটি পরিবার ঘুমাচ্ছিল। আর মুস্তাফা হাফেজ স্কুলে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুতদের উপর চালানো বোমা হামলায় প্রাণ যায় আরও ১৬ জনের।

গাজার এক প্রত্যক্ষদর্শী আহমেদ মনসুর জানান, “ভোররাতে এক প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ঘুম ভেঙে যায়। আমাদের চারপাশে শুধু ধোঁয়া, আগুন আর মানুষের আর্তনাদ। কেউ কাউকে সাহায্য করার অবস্থায় ছিল না। আগুনে পুড়ে অনেকে ঘটনাস্থলেই মারা যান।”

গাজা সরকারের অভিযোগ, এই হামলাগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নারী, শিশু ও নিরীহ নাগরিকদের লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে। তারা বলছে, এটি কোনো সন্ত্রাস দমন অভিযান নয়—বরং এটি একটি পরিকল্পিত গণহত্যা। ইসরায়েলি ড্রোন এবং যুদ্ধবিমানের টার্গেটিং প্যাটার্ন এবং বোমাবর্ষণের সময়সূচি থেকেই এই উদ্দেশ্য পরিষ্কার বোঝা যায় বলে দাবি করেছে তারা।

গাজার কেন্দ্রীয় শহর দেইর আল-বালাহ থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম জানান, “মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে শুধু একটু খাবারের আশায়। কিন্তু তখনই শুরু হয় গুলি, বোমাবর্ষণ। ত্রাণকর্মীরাও এই গোলাবর্ষণের মধ্যে পড়ায় আহতদের চিকিৎসা করাও অসম্ভব হয়ে উঠেছে। পুরো মানবিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে।”

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) আরও একটি চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উত্থাপন করেছে। তারা জানায়, জিএইচএফ-এর নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে থাকা মার্কিন ঠিকাদাররা ক্ষুধার্ত মানুষের ওপর তাজা গুলি ও স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই নিরাপত্তাকর্মী জানায়, এসব রক্ষীরা অনভিজ্ঞ, অতিরিক্ত অস্ত্রধারী এবং দায়িত্বশীলতার সম্পূর্ণ বাইরে কাজ করছে।

জিএইচএফ অবশ্য এপি’র এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। সংস্থাটি জানায়, অভিযোগের পরপরই তারা তদন্ত শুরু করে এবং ভিডিও ফুটেজসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হয় যে এপি-র প্রতিবেদনটি “পুরোপুরি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।”

গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও কার্যত ধসে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে জায়গা নেই, ওষুধ নেই, বিদ্যুৎ নেই। চিকিৎসকরা সীমিত সরঞ্জামে জীবন রক্ষা করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মহল থেকে আবারও যুদ্ধবিরতির আহ্বান উঠলেও, ইসরায়েলের দিক থেকে এর কোনো সাড়া মিলছে না। বরং সামরিক অভিযান আরও বিস্তৃত হওয়ার আভাস দিচ্ছে।

একজন বয়স্ক গাজাবাসী মন্তব্য করেন, “আমরা জানি না কখন কোথায় বোমা পড়বে। খাবার চাই, আশ্রয় চাই, চিকিৎসা চাই—তবু মৃত্যুই এসে ধরা দেয়। এই কি আমাদের নিয়তি?”

এই প্রশ্ন এখন শুধু গাজার নয়, মানবতার বিবেকের।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, এপি

 

শেয়ার করুনঃ
fb-share-icon
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

গত ৪৮ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩০০ ফিলিস্তিনি, ধ্বংসস্তূপে রূপ নিচ্ছে জীবনধারা

Update Time : ১০:৫২:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
fb-share-icon
Pin Share

 

a3 20250704085042

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর লাগাতার বিমান ও স্থল হামলা যেন মৃত্যুর আরেক নাম হয়ে উঠেছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় অন্তত ৩০০ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও শত শত মানুষ। প্রতিদিনের মতো বাজার, আশ্রয়কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি ত্রাণ সংগ্রহের জন্য অপেক্ষমাণ নিরীহ জনগণও রেহাই পাচ্ছেন না এই ভয়াবহতা থেকে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) জানায়, মাত্র গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৮ জন নিহত ও ৫৮১ জন আহত হয়েছেন। গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস নিশ্চিত করেছে যে, এসব প্রাণহানির অধিকাংশই হয়েছে এমন স্থানগুলোতে, যেখানে মানুষ খাদ্য, আশ্রয় বা চিকিৎসার জন্য জড়ো হয়েছিল।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, নিহতদের মধ্যে ৩৩ জন ছিলেন ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ)-এর পরিচালিত একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে, যেখানে তারা খাদ্য সহায়তা নিতে গিয়েছিলেন। আল-মাওয়াসি এলাকায় একটি তাঁবুতে ১৩ জন নিহত হন, যেখানে কয়েকটি পরিবার ঘুমাচ্ছিল। আর মুস্তাফা হাফেজ স্কুলে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুতদের উপর চালানো বোমা হামলায় প্রাণ যায় আরও ১৬ জনের।

গাজার এক প্রত্যক্ষদর্শী আহমেদ মনসুর জানান, “ভোররাতে এক প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ঘুম ভেঙে যায়। আমাদের চারপাশে শুধু ধোঁয়া, আগুন আর মানুষের আর্তনাদ। কেউ কাউকে সাহায্য করার অবস্থায় ছিল না। আগুনে পুড়ে অনেকে ঘটনাস্থলেই মারা যান।”

গাজা সরকারের অভিযোগ, এই হামলাগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নারী, শিশু ও নিরীহ নাগরিকদের লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে। তারা বলছে, এটি কোনো সন্ত্রাস দমন অভিযান নয়—বরং এটি একটি পরিকল্পিত গণহত্যা। ইসরায়েলি ড্রোন এবং যুদ্ধবিমানের টার্গেটিং প্যাটার্ন এবং বোমাবর্ষণের সময়সূচি থেকেই এই উদ্দেশ্য পরিষ্কার বোঝা যায় বলে দাবি করেছে তারা।

গাজার কেন্দ্রীয় শহর দেইর আল-বালাহ থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম জানান, “মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে শুধু একটু খাবারের আশায়। কিন্তু তখনই শুরু হয় গুলি, বোমাবর্ষণ। ত্রাণকর্মীরাও এই গোলাবর্ষণের মধ্যে পড়ায় আহতদের চিকিৎসা করাও অসম্ভব হয়ে উঠেছে। পুরো মানবিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে।”

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) আরও একটি চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উত্থাপন করেছে। তারা জানায়, জিএইচএফ-এর নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে থাকা মার্কিন ঠিকাদাররা ক্ষুধার্ত মানুষের ওপর তাজা গুলি ও স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই নিরাপত্তাকর্মী জানায়, এসব রক্ষীরা অনভিজ্ঞ, অতিরিক্ত অস্ত্রধারী এবং দায়িত্বশীলতার সম্পূর্ণ বাইরে কাজ করছে।

জিএইচএফ অবশ্য এপি’র এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। সংস্থাটি জানায়, অভিযোগের পরপরই তারা তদন্ত শুরু করে এবং ভিডিও ফুটেজসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হয় যে এপি-র প্রতিবেদনটি “পুরোপুরি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।”

গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও কার্যত ধসে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে জায়গা নেই, ওষুধ নেই, বিদ্যুৎ নেই। চিকিৎসকরা সীমিত সরঞ্জামে জীবন রক্ষা করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মহল থেকে আবারও যুদ্ধবিরতির আহ্বান উঠলেও, ইসরায়েলের দিক থেকে এর কোনো সাড়া মিলছে না। বরং সামরিক অভিযান আরও বিস্তৃত হওয়ার আভাস দিচ্ছে।

একজন বয়স্ক গাজাবাসী মন্তব্য করেন, “আমরা জানি না কখন কোথায় বোমা পড়বে। খাবার চাই, আশ্রয় চাই, চিকিৎসা চাই—তবু মৃত্যুই এসে ধরা দেয়। এই কি আমাদের নিয়তি?”

এই প্রশ্ন এখন শুধু গাজার নয়, মানবতার বিবেকের।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, এপি

 

শেয়ার করুনঃ
fb-share-icon
Pin Share