‘মৃত’ স্যাটেলাইট হঠাৎ পাঠালো সংকেত! বিজ্ঞানীদের জল্পনা-কল্পনায় নতুন রহস্য

- Update Time : ১২:০০:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫
- / ৬৯ Time View
পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরে বেড়ানো একটি দীর্ঘদিনের ‘মৃত’ স্যাটেলাইট থেকে হঠাৎ করে পাওয়া গেছে শক্তিশালী রেডিও সংকেত। এই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম কৌতূহল ও আশ্চর্যতা। স্যাটেলাইটটি বহু আগেই অকার্যকর এবং ‘মিশন সমাপ্ত‘ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু সম্প্রতি এটি থেকে আসা সংকেত যেন মৃতের মধ্যেই প্রাণ ফিরে পাওয়ার গল্প শোনাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার মানমন্দিরে ধরা পড়ে সংকেত
এই অদ্ভুত সংকেত প্রথম ধরা পড়ে অস্ট্রেলিয়ার একটি মানমন্দিরে, যেখানে কয়েকজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী মহাকাশের গভীর পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত ছিলেন। হঠাৎই তারা মিলিসেকেন্ড স্থায়ী একটি অত্যন্ত শক্তিশালী রেডিও তরঙ্গ পান, যা কিছুক্ষণের জন্য তাদের মনোযোগ পুরো মহাকাশজুড়ে থাকা অন্যান্য পর্যবেক্ষণ থেকে সরিয়ে দেয়।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. জেমস ডেটা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন—
“প্রথমে আমাদের ধারণা ছিল, এটা হয়তো কোনো দূরবর্তী গ্রহ বা নক্ষত্র থেকে আসা সিগন্যাল, কারণ সংকেতটি ছিল খুবই নির্দিষ্ট এবং প্রখর। কিন্তু গভীর বিশ্লেষণের পর আমরা বুঝতে পারি, এই সংকেত এসেছে একটি উপগ্রহ থেকে—যেটি ছিল পৃথিবী থেকে মাত্র ৪,৫০০ কিলোমিটার (প্রায় ২,৮০০ মাইল) দূরে।”
রহস্য উদ্ঘাটন: রিলে–২ স্যাটেলাইট
নানা গবেষণা ও সংকেত বিশ্লেষণের মাধ্যমে তারা চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হন যে, সংকেতটি এসেছে ‘রিলে–২’ নামক একটি পুরনো স্যাটেলাইট থেকে, যা অনেক আগেই তার কার্যকাল শেষ করে ‘অকার্যকর’ বলে চিহ্নিত হয়েছিল।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা হতবাক হয়ে যান—কীভাবে একটি নিষ্ক্রিয় বা ‘মৃত‘ স্যাটেলাইট হঠাৎ করে এত শক্তিশালী রেডিও সংকেত পাঠাতে পারে? সাধারণত স্যাটেলাইট মিশন শেষ হলে সেটির পাওয়ার সিস্টেম ও ট্রান্সমিশন সিস্টেম বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু রিলে-২ স্যাটেলাইট আবার সচল হয়ে ওঠার মতো ঘটনা বিজ্ঞানের জন্য নতুন রহস্যের দরজা খুলে দিয়েছে।
সম্ভাব্য ব্যাখ্যা কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে:
- সূর্যের বিকিরণ বা সৌর ঝড় স্যাটেলাইটের পুরনো সার্কিট বা সোলার প্যানেলে প্রভাব ফেলতে পারে, যা থেকে অনিচ্ছাকৃতভাবে সংকেত তৈরি হতে পারে।
- অভ্যন্তরীণ সফটওয়্যার গ্লিচ বা পাওয়ার রিসেটের মাধ্যমে সিস্টেম সাময়িকভাবে চালু হয়ে সংকেত পাঠাতে পারে।
- কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে পুরনো উপগ্রহ পুনরায় সক্রিয় করে পরীক্ষামূলক সংকেত পাঠিয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
- এর মধ্যে বহির্জাগতিক (extraterrestrial) হস্তক্ষেপ বা পরীক্ষার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলেও কেউ কেউ মত দিচ্ছেন, যদিও তা বৈজ্ঞানিকভাবে এখনো অসমর্থিত।
বিজ্ঞানীদের প্রতিক্রিয়া
ড. ডেটা বলেন—
“আমরা এমন ঘটনার মুখোমুখি আগে হইনি। এক মৃত স্যাটেলাইট থেকে এমন প্রখর সংকেত পাওয়া শুধু প্রযুক্তিগত কৌতূহলের বিষয় নয়, বরং মহাকাশে পরিত্যক্ত বস্তুর ভবিষ্যৎ আচরণ সম্পর্কে আমাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।”
মহাকাশ গবেষণায় নতুন সতর্কতা
এই ঘটনার মাধ্যমে আরও একবার উঠে এসেছে ‘স্পেস জাঙ্ক’ বা মহাকাশে পরিত্যক্ত স্যাটেলাইটের ভবিষ্যৎ আচরণ নিয়ে সতর্কতা। হাজার হাজার পুরনো স্যাটেলাইট বর্তমানে পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যাদের অনেকেরই বর্তমান অবস্থা অজানা। যদি এদের মধ্যে কোনোটি হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠে, তবে তা যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘ্ন, সিগন্যাল জ্যামিং বা নিরাপত্তা হুমকির কারণও হতে পারে।
‘রিলে-২’ স্যাটেলাইটের এই অপ্রত্যাশিত সংকেত বিজ্ঞানীদের সামনে এক নতুন গবেষণার দ্বার খুলে দিয়েছে। এটা হয়তো শুধুই প্রযুক্তিগত গড়বড়, কিংবা সৌর বিকিরণের প্রতিক্রিয়া—তবে ঘটনা যা-ই হোক, এটি প্রমাণ করে যে মহাকাশ এখনও আমাদের কাছে অনেক রহস্যে ভরা। এখন বিজ্ঞানীদের কাজ—এই ‘মৃতের ভাষা’কে সম্পূর্ণরূপে বোঝা, আর তা থেকে ভবিষ্যতের জন্য নতুন শিক্ষা গ্রহণ করা।
Please Share This Post in Your Social Media

‘মৃত’ স্যাটেলাইট হঠাৎ পাঠালো সংকেত! বিজ্ঞানীদের জল্পনা-কল্পনায় নতুন রহস্য

পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরে বেড়ানো একটি দীর্ঘদিনের ‘মৃত’ স্যাটেলাইট থেকে হঠাৎ করে পাওয়া গেছে শক্তিশালী রেডিও সংকেত। এই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম কৌতূহল ও আশ্চর্যতা। স্যাটেলাইটটি বহু আগেই অকার্যকর এবং ‘মিশন সমাপ্ত‘ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু সম্প্রতি এটি থেকে আসা সংকেত যেন মৃতের মধ্যেই প্রাণ ফিরে পাওয়ার গল্প শোনাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার মানমন্দিরে ধরা পড়ে সংকেত
এই অদ্ভুত সংকেত প্রথম ধরা পড়ে অস্ট্রেলিয়ার একটি মানমন্দিরে, যেখানে কয়েকজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী মহাকাশের গভীর পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত ছিলেন। হঠাৎই তারা মিলিসেকেন্ড স্থায়ী একটি অত্যন্ত শক্তিশালী রেডিও তরঙ্গ পান, যা কিছুক্ষণের জন্য তাদের মনোযোগ পুরো মহাকাশজুড়ে থাকা অন্যান্য পর্যবেক্ষণ থেকে সরিয়ে দেয়।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. জেমস ডেটা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন—
“প্রথমে আমাদের ধারণা ছিল, এটা হয়তো কোনো দূরবর্তী গ্রহ বা নক্ষত্র থেকে আসা সিগন্যাল, কারণ সংকেতটি ছিল খুবই নির্দিষ্ট এবং প্রখর। কিন্তু গভীর বিশ্লেষণের পর আমরা বুঝতে পারি, এই সংকেত এসেছে একটি উপগ্রহ থেকে—যেটি ছিল পৃথিবী থেকে মাত্র ৪,৫০০ কিলোমিটার (প্রায় ২,৮০০ মাইল) দূরে।”
রহস্য উদ্ঘাটন: রিলে–২ স্যাটেলাইট
নানা গবেষণা ও সংকেত বিশ্লেষণের মাধ্যমে তারা চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হন যে, সংকেতটি এসেছে ‘রিলে–২’ নামক একটি পুরনো স্যাটেলাইট থেকে, যা অনেক আগেই তার কার্যকাল শেষ করে ‘অকার্যকর’ বলে চিহ্নিত হয়েছিল।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা হতবাক হয়ে যান—কীভাবে একটি নিষ্ক্রিয় বা ‘মৃত‘ স্যাটেলাইট হঠাৎ করে এত শক্তিশালী রেডিও সংকেত পাঠাতে পারে? সাধারণত স্যাটেলাইট মিশন শেষ হলে সেটির পাওয়ার সিস্টেম ও ট্রান্সমিশন সিস্টেম বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু রিলে-২ স্যাটেলাইট আবার সচল হয়ে ওঠার মতো ঘটনা বিজ্ঞানের জন্য নতুন রহস্যের দরজা খুলে দিয়েছে।
সম্ভাব্য ব্যাখ্যা কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে:
- সূর্যের বিকিরণ বা সৌর ঝড় স্যাটেলাইটের পুরনো সার্কিট বা সোলার প্যানেলে প্রভাব ফেলতে পারে, যা থেকে অনিচ্ছাকৃতভাবে সংকেত তৈরি হতে পারে।
- অভ্যন্তরীণ সফটওয়্যার গ্লিচ বা পাওয়ার রিসেটের মাধ্যমে সিস্টেম সাময়িকভাবে চালু হয়ে সংকেত পাঠাতে পারে।
- কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে পুরনো উপগ্রহ পুনরায় সক্রিয় করে পরীক্ষামূলক সংকেত পাঠিয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
- এর মধ্যে বহির্জাগতিক (extraterrestrial) হস্তক্ষেপ বা পরীক্ষার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলেও কেউ কেউ মত দিচ্ছেন, যদিও তা বৈজ্ঞানিকভাবে এখনো অসমর্থিত।
বিজ্ঞানীদের প্রতিক্রিয়া
ড. ডেটা বলেন—
“আমরা এমন ঘটনার মুখোমুখি আগে হইনি। এক মৃত স্যাটেলাইট থেকে এমন প্রখর সংকেত পাওয়া শুধু প্রযুক্তিগত কৌতূহলের বিষয় নয়, বরং মহাকাশে পরিত্যক্ত বস্তুর ভবিষ্যৎ আচরণ সম্পর্কে আমাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।”
মহাকাশ গবেষণায় নতুন সতর্কতা
এই ঘটনার মাধ্যমে আরও একবার উঠে এসেছে ‘স্পেস জাঙ্ক’ বা মহাকাশে পরিত্যক্ত স্যাটেলাইটের ভবিষ্যৎ আচরণ নিয়ে সতর্কতা। হাজার হাজার পুরনো স্যাটেলাইট বর্তমানে পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যাদের অনেকেরই বর্তমান অবস্থা অজানা। যদি এদের মধ্যে কোনোটি হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠে, তবে তা যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘ্ন, সিগন্যাল জ্যামিং বা নিরাপত্তা হুমকির কারণও হতে পারে।
‘রিলে-২’ স্যাটেলাইটের এই অপ্রত্যাশিত সংকেত বিজ্ঞানীদের সামনে এক নতুন গবেষণার দ্বার খুলে দিয়েছে। এটা হয়তো শুধুই প্রযুক্তিগত গড়বড়, কিংবা সৌর বিকিরণের প্রতিক্রিয়া—তবে ঘটনা যা-ই হোক, এটি প্রমাণ করে যে মহাকাশ এখনও আমাদের কাছে অনেক রহস্যে ভরা। এখন বিজ্ঞানীদের কাজ—এই ‘মৃতের ভাষা’কে সম্পূর্ণরূপে বোঝা, আর তা থেকে ভবিষ্যতের জন্য নতুন শিক্ষা গ্রহণ করা।