সময়: শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় শিশু চিকিৎসক মায়ের বিরুদ্ধে নিজ সন্তানকে হত্যার অভিযোগ

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১১:২১:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫
  • / ৪২ Time View

india 20250703092237

india 20250703092237

যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় শিশু চিকিৎসক মায়ের বিরুদ্ধে নিজ সন্তানকে হত্যার অভিযোগ: ‘স্টেজড ড্রাউনিংতদন্তে চাঞ্চল্য

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে ছুটি কাটাতে গিয়ে চার বছর বয়সী মেয়ের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ভারতের এক মার্কিন নাগরিক ও শিশু চিকিৎসকের বিরুদ্ধে প্রথম-ডিগ্রি হত্যার গুরুতর অভিযোগ গঠিত হয়েছে। অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম ডা. নেহা গুপ্তা (৩৬), যিনি ওকলাহোমা সিটির একজন পেডিয়াট্রিশিয়ান হিসেবে পরিচিত।

ঘটনাটি ঘটেছিল মায়ামির এল পোর্টাল এলাকায়

গত ২৭ জুন, স্থানীয় সময় রাত :৪০ মিনিটে ডা. নেহা গুপ্তা জরুরি সেবা নম্বর ৯১১ কল করেন, এবং জানান, তার মেয়ে আরিয়া তালাঠি বাড়ির পেছনের সুইমিং পুলে ডুবে গেছে। ঘটনাটি ঘটেছিল মায়ামির কাছে এল পোর্টাল নামক এলাকায়, একটি ভাড়া করা বাসায়।

দ্রুত পুলিশ ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছালেও শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় পুল থেকে উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে তাকে সিপিআর (হৃদযন্ত্র চালু করার প্রাথমিক চিকিৎসা) দেওয়া হয় এবং দ্রুত জ্যাকসন মেমোরিয়াল হাসপাতালের রাইডার ট্রমা সেন্টারে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ঘুরিয়ে দিল তদন্তের মোড়

প্রথমদিকে ঘটনাটিকে দুর্ঘটনাজনিত পানিতে ডুবে যাওয়া মৃত্যু হিসেবে বিবেচনা করা হলেও, এক সপ্তাহব্যাপী তদন্ত ও ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্টে চিত্র পুরোপুরি পাল্টে যায়। মিয়ামিডেইড কাউন্টি শেরিফ অফিসের তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, শিশুটির ফুসফুস বা পেটে পানির কোনো উপস্থিতি ছিল না, যা প্রকৃত ডুবে যাওয়ার ঘটনায় প্রত্যাশিত।

বরং রিপোর্টে বলা হয়েছে, আরিয়ার মুখমণ্ডলে গালে আঘাতের চিহ্ন এবং ঘাড়ে চেপে ধরার আলামত পাওয়া গেছে, যা স্পষ্টভাবে শ্বাসরোধে হত্যার সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুটি জীবিত অবস্থায় পুলে পড়েনি, বরং হত্যার পর তাকে পানিতে ফেলা হয়েছিল, যেন ঘটনাটি দুর্ঘটনা বলে মনে হয়।

বিবৃতির অসামঞ্জস্যতা প্রশ্নের উদ্রেক

ডা. নেহা গুপ্তা দাবি করেছিলেন, রাত

১২:৩০ টার দিকে তিনি এবং মেয়ে একই বিছানায় ঘুমাতে যান, কিন্তু ভোর :২০ মিনিটে একটি শব্দ শুনে তার ঘুম ভাঙে এবং তিনি দেখতে পান আরিয়া বিছানায় নেই। পরে পুলে মেয়েকে দেখতে পান। তিনি জানান, সাঁতার জানতেন না, তাই প্রায় ১০ মিনিট চেষ্টা করার পর ব্যর্থ হয়ে ৯১১ কল করেন

তবে এই বিবৃতির সঙ্গে কিছু তথ্যের অসামঞ্জস্যতা স্পষ্ট। যেমন— তিনি বলেন আরিয়া রাত ৯টায় রাতের খাবার খেয়েছিল, কিন্তু ময়নাতদন্তে শিশুটির পেট খালি পাওয়া গেছে, যা এই দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এছাড়া তদন্তকারীরা সন্দেহ করছেন, ঘটনাস্থলে কোনো পানিতে পড়ে যাওয়া বা ছটফট করার শব্দ পাওয়া যায়নি, যা একজন বাচ্চা শিশুর পানিতে ডুবে যাওয়ার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক।

আইনজীবীর দাবি: “শোকাহত মাকে দোষারোপ করা হচ্ছে

ডা. নেহা গুপ্তার পক্ষে আইনজীবী রিচার্ড কুপার বলেন, “এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে, একজন মা, যিনি সদ্য তার শিশুকন্যাকে হারিয়েছেন, তাকে এখন হত্যার অভিযোগে জেলে বন্দি থাকতে হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, বিস্তারিত তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হবে এবং নেহা গুপ্তার নির্দোষ প্রমাণ হবে।”

তিনি আরও বলেন, “শিশু মারা যাওয়ার পরপরই জরুরি সেবায় কল করা, পুল থেকে তোলার চেষ্টা করা, এসব কার্যকলাপ একটি অপরাধীর আচরণের সঙ্গে যায় না।” তবে তদন্তকারীরা বলছেন, এই আচরণই অনেক সময় হত্যাকারীদের নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের নাটক হিসেবে ব্যবহৃত হয়

অতীত ইতিহাস মানসিক অবস্থার প্রশ্ন

এখন তদন্তকারীরা ডা. নেহা গুপ্তার পারিবারিক মানসিক ইতিহাস খতিয়ে দেখছেন। জানা গেছে, তার স্বামী বা সন্তানের পিতার বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। কিছু প্রতিবেশী জানিয়েছেন, শিশুটির সঙ্গে তার মায়ের সম্পর্ক কিছুটা অস্থির একঘেয়ে ছিল, যা তদন্তের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হতে পারে।

এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অভিবাসী ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর উদ্বেগ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একজন চিকিৎসক, যিনি নিজে শিশুদের চিকিৎসা করতেন, তাঁর বিরুদ্ধে নিজ সন্তানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার অভিযোগ সাধারণ মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে।

বর্তমানে মামলাটি মিয়ামিডেইড কাউন্টি আদালতে বিচারাধীন, এবং তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। যদি তার বিরুদ্ধে প্রথমডিগ্রি হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে তাকে আজীবন কারাদণ্ড বা এমনকি মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে হতে পারে।

এই ঘটনাটি স্মরণ করিয়ে দেয়—মানসিক চাপ, একাকিত্ব বা পারিবারিক সমস্যা থেকে জন্ম নেওয়া সহিংসতার রূপ কতটা ভয়াবহ হতে পারে, বিশেষ করে যদি তা নিজের শিশুর জীবন কেড়ে নেয়। এখন সবার অপেক্ষা—এই হৃদয়বিদারক ঘটনার প্রকৃত সত্য কত দ্রুত ও স্বচ্ছভাবে প্রকাশ পায়।

 

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় শিশু চিকিৎসক মায়ের বিরুদ্ধে নিজ সন্তানকে হত্যার অভিযোগ

Update Time : ১১:২১:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫

india 20250703092237

যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় শিশু চিকিৎসক মায়ের বিরুদ্ধে নিজ সন্তানকে হত্যার অভিযোগ: ‘স্টেজড ড্রাউনিংতদন্তে চাঞ্চল্য

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে ছুটি কাটাতে গিয়ে চার বছর বয়সী মেয়ের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ভারতের এক মার্কিন নাগরিক ও শিশু চিকিৎসকের বিরুদ্ধে প্রথম-ডিগ্রি হত্যার গুরুতর অভিযোগ গঠিত হয়েছে। অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম ডা. নেহা গুপ্তা (৩৬), যিনি ওকলাহোমা সিটির একজন পেডিয়াট্রিশিয়ান হিসেবে পরিচিত।

ঘটনাটি ঘটেছিল মায়ামির এল পোর্টাল এলাকায়

গত ২৭ জুন, স্থানীয় সময় রাত :৪০ মিনিটে ডা. নেহা গুপ্তা জরুরি সেবা নম্বর ৯১১ কল করেন, এবং জানান, তার মেয়ে আরিয়া তালাঠি বাড়ির পেছনের সুইমিং পুলে ডুবে গেছে। ঘটনাটি ঘটেছিল মায়ামির কাছে এল পোর্টাল নামক এলাকায়, একটি ভাড়া করা বাসায়।

দ্রুত পুলিশ ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছালেও শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় পুল থেকে উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে তাকে সিপিআর (হৃদযন্ত্র চালু করার প্রাথমিক চিকিৎসা) দেওয়া হয় এবং দ্রুত জ্যাকসন মেমোরিয়াল হাসপাতালের রাইডার ট্রমা সেন্টারে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ঘুরিয়ে দিল তদন্তের মোড়

প্রথমদিকে ঘটনাটিকে দুর্ঘটনাজনিত পানিতে ডুবে যাওয়া মৃত্যু হিসেবে বিবেচনা করা হলেও, এক সপ্তাহব্যাপী তদন্ত ও ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্টে চিত্র পুরোপুরি পাল্টে যায়। মিয়ামিডেইড কাউন্টি শেরিফ অফিসের তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, শিশুটির ফুসফুস বা পেটে পানির কোনো উপস্থিতি ছিল না, যা প্রকৃত ডুবে যাওয়ার ঘটনায় প্রত্যাশিত।

বরং রিপোর্টে বলা হয়েছে, আরিয়ার মুখমণ্ডলে গালে আঘাতের চিহ্ন এবং ঘাড়ে চেপে ধরার আলামত পাওয়া গেছে, যা স্পষ্টভাবে শ্বাসরোধে হত্যার সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুটি জীবিত অবস্থায় পুলে পড়েনি, বরং হত্যার পর তাকে পানিতে ফেলা হয়েছিল, যেন ঘটনাটি দুর্ঘটনা বলে মনে হয়।

বিবৃতির অসামঞ্জস্যতা প্রশ্নের উদ্রেক

ডা. নেহা গুপ্তা দাবি করেছিলেন, রাত

১২:৩০ টার দিকে তিনি এবং মেয়ে একই বিছানায় ঘুমাতে যান, কিন্তু ভোর :২০ মিনিটে একটি শব্দ শুনে তার ঘুম ভাঙে এবং তিনি দেখতে পান আরিয়া বিছানায় নেই। পরে পুলে মেয়েকে দেখতে পান। তিনি জানান, সাঁতার জানতেন না, তাই প্রায় ১০ মিনিট চেষ্টা করার পর ব্যর্থ হয়ে ৯১১ কল করেন

তবে এই বিবৃতির সঙ্গে কিছু তথ্যের অসামঞ্জস্যতা স্পষ্ট। যেমন— তিনি বলেন আরিয়া রাত ৯টায় রাতের খাবার খেয়েছিল, কিন্তু ময়নাতদন্তে শিশুটির পেট খালি পাওয়া গেছে, যা এই দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এছাড়া তদন্তকারীরা সন্দেহ করছেন, ঘটনাস্থলে কোনো পানিতে পড়ে যাওয়া বা ছটফট করার শব্দ পাওয়া যায়নি, যা একজন বাচ্চা শিশুর পানিতে ডুবে যাওয়ার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক।

আইনজীবীর দাবি: “শোকাহত মাকে দোষারোপ করা হচ্ছে

ডা. নেহা গুপ্তার পক্ষে আইনজীবী রিচার্ড কুপার বলেন, “এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে, একজন মা, যিনি সদ্য তার শিশুকন্যাকে হারিয়েছেন, তাকে এখন হত্যার অভিযোগে জেলে বন্দি থাকতে হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, বিস্তারিত তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হবে এবং নেহা গুপ্তার নির্দোষ প্রমাণ হবে।”

তিনি আরও বলেন, “শিশু মারা যাওয়ার পরপরই জরুরি সেবায় কল করা, পুল থেকে তোলার চেষ্টা করা, এসব কার্যকলাপ একটি অপরাধীর আচরণের সঙ্গে যায় না।” তবে তদন্তকারীরা বলছেন, এই আচরণই অনেক সময় হত্যাকারীদের নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের নাটক হিসেবে ব্যবহৃত হয়

অতীত ইতিহাস মানসিক অবস্থার প্রশ্ন

এখন তদন্তকারীরা ডা. নেহা গুপ্তার পারিবারিক মানসিক ইতিহাস খতিয়ে দেখছেন। জানা গেছে, তার স্বামী বা সন্তানের পিতার বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। কিছু প্রতিবেশী জানিয়েছেন, শিশুটির সঙ্গে তার মায়ের সম্পর্ক কিছুটা অস্থির একঘেয়ে ছিল, যা তদন্তের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হতে পারে।

এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অভিবাসী ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর উদ্বেগ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একজন চিকিৎসক, যিনি নিজে শিশুদের চিকিৎসা করতেন, তাঁর বিরুদ্ধে নিজ সন্তানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার অভিযোগ সাধারণ মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে।

বর্তমানে মামলাটি মিয়ামিডেইড কাউন্টি আদালতে বিচারাধীন, এবং তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। যদি তার বিরুদ্ধে প্রথমডিগ্রি হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে তাকে আজীবন কারাদণ্ড বা এমনকি মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে হতে পারে।

এই ঘটনাটি স্মরণ করিয়ে দেয়—মানসিক চাপ, একাকিত্ব বা পারিবারিক সমস্যা থেকে জন্ম নেওয়া সহিংসতার রূপ কতটা ভয়াবহ হতে পারে, বিশেষ করে যদি তা নিজের শিশুর জীবন কেড়ে নেয়। এখন সবার অপেক্ষা—এই হৃদয়বিদারক ঘটনার প্রকৃত সত্য কত দ্রুত ও স্বচ্ছভাবে প্রকাশ পায়।