এইচএসসি পরীক্ষার্থী খুন: ক্ষোভে ঘাতকদের চার বসতঘরে আগুন দিল জনতা

- Update Time : ০৭:০৪:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫
- / ৪২ Time View

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফাহিমকে (১৮) নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তীব্র জনরোষ ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনার পরদিনই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী ঘাতক শাকিল মীরের পরিবারের চারটি বসতঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। বুধবার (২ জুলাই) বিকেলে উপজেলার নওমালা ইউনিয়নের ভাংড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আগুনে পুড়ল চারটি পরিবার, ক্ষয়ক্ষতি লাখাধিক
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল ৪টার দিকে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে শতাধিক ক্ষুব্ধ জনতা শাকিলের দাদা কাসেম মীর, বাবা রশিদ মীর, চাচা সানু মীর এবং জসিম মীরের ঘরগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় কিছু মানুষ পানি ও বালতি দিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালালেও ব্যর্থ হন।
আগুনে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
হত্যাকাণ্ডের নৃশংস বিবরণ
মঙ্গলবার বিকেলে পাশ্ববর্তী দশমিনা উপজেলার ধলু ফকির বাজারে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে বখাটে যুবক শাকিল মীর এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফাহিমকে ধারালো ছুরি দিয়ে কুপিয়ে ফেলে রাখে। ছেলের চিৎকার শুনে বাবা জাকির হোসেন বয়াতি ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে বাঁচাতে গেলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে শাকিল ও তার সহযোগীরা।
বর্তমানে জাকির হোসেন আশঙ্কাজনক অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নিহত ফাহিমের পরিচয়
ফাহিম চলতি এইচএসসি পরীক্ষার শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি নওমালা আব্দুর রশিদ খান ডিগ্রি কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন। সামনে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার প্রস্তুতি চলাকালীনই নির্মমভাবে তার জীবনপ্রবাহ থেমে যায়।
মামলা ও পুলিশের তৎপরতা
ঘটনার পরপরই নিহত ফাহিমের পরিবারের পক্ষ থেকে দশমিনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে বুধবার বিকেলে বাউফল থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং অগ্নিসংযোগে জড়িতদের শনাক্তে চেষ্টা চলছে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
এই ঘটনায় এলাকাজুড়ে চরম ক্ষোভ ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, আইন হাতে তুলে নেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, তবে হত্যাকাণ্ডের যে নির্মমতা ছিল, তা জনতার আবেগকে বশ মানায়নি।
এদিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষ করে চলমান এইচএসসি পরীক্ষাকে ঘিরে শিক্ষাপরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
প্রশাসনের প্রতি প্রশ্ন
এ ঘটনায় সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠে এসেছে—একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যা করার পরও কেন এতদিন বখাটে শাকিলের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?
স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, শাকিল এর আগেও বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত ছিল, কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলেই এই হত্যাকাণ্ডের জন্ম।
এই ঘটনা শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, এটি একটি ব্যর্থ প্রশাসনিক ব্যবস্থারও প্রতিচ্ছবি। অপরাধীর দ্রুত বিচার না হলে এমন ঘটনা আবারও ঘটবে, এবং প্রতিশোধের এই প্রবণতা আরও ভয়ঙ্কর রূপ নেবে।
জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে প্রশাসনের এখনই কঠোর ও নিরপেক্ষ ভূমিকা নেওয়া জরুরি।
Please Share This Post in Your Social Media

এইচএসসি পরীক্ষার্থী খুন: ক্ষোভে ঘাতকদের চার বসতঘরে আগুন দিল জনতা


পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফাহিমকে (১৮) নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তীব্র জনরোষ ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনার পরদিনই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী ঘাতক শাকিল মীরের পরিবারের চারটি বসতঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। বুধবার (২ জুলাই) বিকেলে উপজেলার নওমালা ইউনিয়নের ভাংড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আগুনে পুড়ল চারটি পরিবার, ক্ষয়ক্ষতি লাখাধিক
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল ৪টার দিকে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে শতাধিক ক্ষুব্ধ জনতা শাকিলের দাদা কাসেম মীর, বাবা রশিদ মীর, চাচা সানু মীর এবং জসিম মীরের ঘরগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় কিছু মানুষ পানি ও বালতি দিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালালেও ব্যর্থ হন।
আগুনে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
হত্যাকাণ্ডের নৃশংস বিবরণ
মঙ্গলবার বিকেলে পাশ্ববর্তী দশমিনা উপজেলার ধলু ফকির বাজারে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে বখাটে যুবক শাকিল মীর এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফাহিমকে ধারালো ছুরি দিয়ে কুপিয়ে ফেলে রাখে। ছেলের চিৎকার শুনে বাবা জাকির হোসেন বয়াতি ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে বাঁচাতে গেলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে শাকিল ও তার সহযোগীরা।
বর্তমানে জাকির হোসেন আশঙ্কাজনক অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নিহত ফাহিমের পরিচয়
ফাহিম চলতি এইচএসসি পরীক্ষার শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি নওমালা আব্দুর রশিদ খান ডিগ্রি কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন। সামনে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার প্রস্তুতি চলাকালীনই নির্মমভাবে তার জীবনপ্রবাহ থেমে যায়।
মামলা ও পুলিশের তৎপরতা
ঘটনার পরপরই নিহত ফাহিমের পরিবারের পক্ষ থেকে দশমিনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে বুধবার বিকেলে বাউফল থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং অগ্নিসংযোগে জড়িতদের শনাক্তে চেষ্টা চলছে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
এই ঘটনায় এলাকাজুড়ে চরম ক্ষোভ ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, আইন হাতে তুলে নেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, তবে হত্যাকাণ্ডের যে নির্মমতা ছিল, তা জনতার আবেগকে বশ মানায়নি।
এদিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষ করে চলমান এইচএসসি পরীক্ষাকে ঘিরে শিক্ষাপরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
প্রশাসনের প্রতি প্রশ্ন
এ ঘটনায় সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠে এসেছে—একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যা করার পরও কেন এতদিন বখাটে শাকিলের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?
স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, শাকিল এর আগেও বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত ছিল, কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলেই এই হত্যাকাণ্ডের জন্ম।
এই ঘটনা শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, এটি একটি ব্যর্থ প্রশাসনিক ব্যবস্থারও প্রতিচ্ছবি। অপরাধীর দ্রুত বিচার না হলে এমন ঘটনা আবারও ঘটবে, এবং প্রতিশোধের এই প্রবণতা আরও ভয়ঙ্কর রূপ নেবে।
জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে প্রশাসনের এখনই কঠোর ও নিরপেক্ষ ভূমিকা নেওয়া জরুরি।