আদালত অবমাননার মামলায় পলাতক শেখ হাসিনার ছয় মাসের কারাদণ্ড

- Update Time : ০২:১১:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫
- / ৩৮ Time View
আদালত অবমাননার মামলায় পলাতক শেখ হাসিনার ছয় মাসের কারাদণ্ড
শাকিল আকন্দ বুলবুলকেও দুই মাসের সাজা
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে ভারত পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আদালত অবমাননার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই মামলায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বাসিন্দা শাকিল আকন্দ বুলবুলকেও দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি শামীম হাসান ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম।
এই রায়ের মধ্য দিয়ে দেশত্যাগের পর শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো কোনো ফৌজদারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলেন। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “শেখ হাসিনা বিচার বিভাগ ও বিচারকদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অবজ্ঞা করেছেন এবং একটি অডিওবার্তায় ‘২২৭ জনকে মারার লাইসেন্স পেয়েছি’ বলার মাধ্যমে রাষ্ট্রের আইন ও বিচারব্যবস্থার প্রতি সরাসরি হুমকি দিয়েছেন।”
ঘটনার পটভূমি:
২০২৪ সালের ২৫ অক্টোবর গাইবান্ধার এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে শেখ হাসিনার একটি টেলিফোন আলাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়। সেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, “২২৭ জনকে মারার লাইসেন্স পেয়েছি।” এই অডিও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও বিচারব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ বিবেচিত হয়।
ঘটনার পরপরই ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বিভাগ আদালত অবমাননার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় উল্লেখ করা হয়, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার এ ধরনের বক্তব্য শুধুমাত্র অগ্রহণযোগ্য নয়, বরং এটি বিচারিক স্বাধীনতা, সংবিধান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ব্যবস্থার প্রতি অবমাননার শামিল।
বিচার প্রক্রিয়া:
যদিও মামলার প্রধান আসামি শেখ হাসিনা পলাতক ছিলেন, তবুও ন্যায়বিচারের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় খরচে তার পক্ষে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেয় ট্রাইব্যুনাল। আদালতের ভাষ্য অনুযায়ী, “পলাতক আসামির পক্ষেও আইনি প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব।”
বুধবারের শুনানিতে ট্রাইব্যুনাল সদস্যরা বিতর্কিত অডিওবার্তাটি শুনেন এবং সেটিকে যাচাই-বাছাই করেন। বিশ্লেষণের পর আদালত রায় দেয় যে, অডিওতে শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর যাচাই করে দেখা গেছে এবং বক্তব্যটি স্পষ্টতই আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়ে।
শাস্তি:
বিচারিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “শেখ হাসিনার বক্তব্য বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা এবং নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তুলে। এর ফলে দেশের আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল হয়। তাই তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হলো।” একইসঙ্গে অপর আসামি শাকিল আকন্দ বুলবুল, যিনি সামাজিক মাধ্যমে অডিওটি ছড়িয়ে দিয়ে উসকানিমূলক মন্তব্য করেন, তাকেও আদালত দুই মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।
প্রতিক্রিয়া:
রায়ের পর আইনজ্ঞ মহল বলছে, “এই রায় একটি যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। ক্ষমতাধর কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।” রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, এই রায়ের মাধ্যমে আইনের শাসন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ আরও সুগম হলো।
বর্তমানে শেখ হাসিনা পলাতক রয়েছেন এবং তার অবস্থান ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বলে জানা গেছে। রায়ের কপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইন্টারপোলকে পাঠানো হয়েছে।
এই মামলার মাধ্যমে প্রমাণিত হলো, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা কোনো রাজনৈতিক পরিচয় দেখে কাজ করে না, বরং প্রমাণের ভিত্তিতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করাই আদালতের প্রধান কর্তব্য।
Please Share This Post in Your Social Media

আদালত অবমাননার মামলায় পলাতক শেখ হাসিনার ছয় মাসের কারাদণ্ড

আদালত অবমাননার মামলায় পলাতক শেখ হাসিনার ছয় মাসের কারাদণ্ড
শাকিল আকন্দ বুলবুলকেও দুই মাসের সাজা
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে ভারত পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আদালত অবমাননার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই মামলায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বাসিন্দা শাকিল আকন্দ বুলবুলকেও দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি শামীম হাসান ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম।
এই রায়ের মধ্য দিয়ে দেশত্যাগের পর শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো কোনো ফৌজদারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলেন। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “শেখ হাসিনা বিচার বিভাগ ও বিচারকদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অবজ্ঞা করেছেন এবং একটি অডিওবার্তায় ‘২২৭ জনকে মারার লাইসেন্স পেয়েছি’ বলার মাধ্যমে রাষ্ট্রের আইন ও বিচারব্যবস্থার প্রতি সরাসরি হুমকি দিয়েছেন।”
ঘটনার পটভূমি:
২০২৪ সালের ২৫ অক্টোবর গাইবান্ধার এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে শেখ হাসিনার একটি টেলিফোন আলাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়। সেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, “২২৭ জনকে মারার লাইসেন্স পেয়েছি।” এই অডিও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও বিচারব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ বিবেচিত হয়।
ঘটনার পরপরই ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বিভাগ আদালত অবমাননার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় উল্লেখ করা হয়, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার এ ধরনের বক্তব্য শুধুমাত্র অগ্রহণযোগ্য নয়, বরং এটি বিচারিক স্বাধীনতা, সংবিধান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ব্যবস্থার প্রতি অবমাননার শামিল।
বিচার প্রক্রিয়া:
যদিও মামলার প্রধান আসামি শেখ হাসিনা পলাতক ছিলেন, তবুও ন্যায়বিচারের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় খরচে তার পক্ষে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেয় ট্রাইব্যুনাল। আদালতের ভাষ্য অনুযায়ী, “পলাতক আসামির পক্ষেও আইনি প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব।”
বুধবারের শুনানিতে ট্রাইব্যুনাল সদস্যরা বিতর্কিত অডিওবার্তাটি শুনেন এবং সেটিকে যাচাই-বাছাই করেন। বিশ্লেষণের পর আদালত রায় দেয় যে, অডিওতে শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর যাচাই করে দেখা গেছে এবং বক্তব্যটি স্পষ্টতই আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়ে।
শাস্তি:
বিচারিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “শেখ হাসিনার বক্তব্য বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা এবং নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তুলে। এর ফলে দেশের আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল হয়। তাই তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হলো।” একইসঙ্গে অপর আসামি শাকিল আকন্দ বুলবুল, যিনি সামাজিক মাধ্যমে অডিওটি ছড়িয়ে দিয়ে উসকানিমূলক মন্তব্য করেন, তাকেও আদালত দুই মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।
প্রতিক্রিয়া:
রায়ের পর আইনজ্ঞ মহল বলছে, “এই রায় একটি যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। ক্ষমতাধর কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।” রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, এই রায়ের মাধ্যমে আইনের শাসন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ আরও সুগম হলো।
বর্তমানে শেখ হাসিনা পলাতক রয়েছেন এবং তার অবস্থান ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বলে জানা গেছে। রায়ের কপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইন্টারপোলকে পাঠানো হয়েছে।
এই মামলার মাধ্যমে প্রমাণিত হলো, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা কোনো রাজনৈতিক পরিচয় দেখে কাজ করে না, বরং প্রমাণের ভিত্তিতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করাই আদালতের প্রধান কর্তব্য।