সময়: বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় আরও ১০৯ নিহত: ত্রাণকেন্দ্রেও রক্তপাত, যুদ্ধবিরতির দাবি ট্রাম্পের

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১২:৩১:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫
  • / ৪২ Time View

1751431191 bb9e7c9d610ad12d035acef7be92e80e

1751431191 bb9e7c9d610ad12d035acef7be92e80e

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার বিমান ও স্থল হামলায় নতুন করে আরও অন্তত ১০৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১ জুলাই) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা গাজার চিকিৎসা সূত্রের বরাত দিয়ে এই মর্মান্তিক তথ্য প্রকাশ করেছে।

নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ১৬ জন ত্রাণ প্রত্যাশী, যারা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের তাড়নায় বিতর্কিত মানবিক সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত এক ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে সমবেত হয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনারা সেখানে হঠাৎ করে ভিড় করা মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান বেশ কয়েকজন। অনেকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান।

জিএইচএফ, যাদের কার্যক্রম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক রয়েছে, গত মে মাসের শেষ দিকে সীমিত ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব নিয়েছিল। কিন্তু এর পর থেকে তাদের পরিচালিত বিভিন্ন কেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক অপ্রত্যাশিত ঘোষণায় জানিয়েছেন, ইসরায়েল একটি ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নিতে রাজি হয়েছে। নিজের সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে গাজা যুদ্ধ বন্ধে কাজ করবে। আমি হামাসকেও এই প্রস্তাব গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।” যদিও ইসরায়েলি সরকার বা বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

এরই মধ্যে গাজার উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাগুলো, বিশেষ করে গাজা সিটির উত্তরে, যেখানে সম্প্রতি ইসরায়েল জোরপূর্বক নির্বাসন নির্দেশ জারি করেছে, সেখানে আবারও ব্যাপক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এলাকাটি কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, আর বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো চরম অনিশ্চয়তার মুখে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

জাতিসংঘের তথ্য মতে, গাজার অন্তত ৮২ শতাংশ এলাকা বর্তমানে ইসরায়েলি সেনা নিয়ন্ত্রিত অথবা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির হুমকির মধ্যে রয়েছে। বহু মানুষ ইতোমধ্যে ঘরছাড়া এবং যারা এখনো নিজেদের ভিটেমাটিতে টিকে আছেন, তাদের সামনে পালানোর আর কোনো পথ অবশিষ্ট নেই। জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার হুঁশিয়ারি দিচ্ছে, পুরো গাজা উপত্যকা একটি মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের এই দমনমূলক অভিযানকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ বলেও অভিহিত করা যেতে পারে। বেসামরিক ত্রাণকেন্দ্রে হামলা, শিশু ও নারী হত্যার মতো ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন স্পষ্টভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে।

এদিকে গাজার বর্তমান চিত্র—ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন, ধুলোয় মাখা মৃতদেহ, আর ভীত-সন্ত্রস্ত মানুষের আর্তনাদ—বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করতে না পারায় সমালোচনা বাড়ছে পশ্চিমা বিশ্বের ভূমিকাও নিয়ে।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, শুধু যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নয়, এখন সময় আন্তর্জাতিক আদালতে এই আগ্রাসনের বিচার দাবি করার। গাজা আর কত মৃত্যু দেখলে বিশ্ব নড়ে উঠবে, সেই প্রশ্নই ঘুরে ফিরে আসছে প্রতিটি ফিলিস্তিনির মুখে।

সূত্র: আল-জাজিরা, গাজা মেডিকেল সেন্টার, জাতিসংঘ পরিস্থিতি প্রতিবেদন (১ জুলাই ২০২৫)।

 

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় আরও ১০৯ নিহত: ত্রাণকেন্দ্রেও রক্তপাত, যুদ্ধবিরতির দাবি ট্রাম্পের

Update Time : ১২:৩১:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫

1751431191 bb9e7c9d610ad12d035acef7be92e80e

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার বিমান ও স্থল হামলায় নতুন করে আরও অন্তত ১০৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১ জুলাই) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা গাজার চিকিৎসা সূত্রের বরাত দিয়ে এই মর্মান্তিক তথ্য প্রকাশ করেছে।

নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ১৬ জন ত্রাণ প্রত্যাশী, যারা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের তাড়নায় বিতর্কিত মানবিক সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত এক ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে সমবেত হয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনারা সেখানে হঠাৎ করে ভিড় করা মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান বেশ কয়েকজন। অনেকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান।

জিএইচএফ, যাদের কার্যক্রম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক রয়েছে, গত মে মাসের শেষ দিকে সীমিত ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব নিয়েছিল। কিন্তু এর পর থেকে তাদের পরিচালিত বিভিন্ন কেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক অপ্রত্যাশিত ঘোষণায় জানিয়েছেন, ইসরায়েল একটি ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নিতে রাজি হয়েছে। নিজের সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে গাজা যুদ্ধ বন্ধে কাজ করবে। আমি হামাসকেও এই প্রস্তাব গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।” যদিও ইসরায়েলি সরকার বা বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

এরই মধ্যে গাজার উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাগুলো, বিশেষ করে গাজা সিটির উত্তরে, যেখানে সম্প্রতি ইসরায়েল জোরপূর্বক নির্বাসন নির্দেশ জারি করেছে, সেখানে আবারও ব্যাপক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এলাকাটি কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, আর বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো চরম অনিশ্চয়তার মুখে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

জাতিসংঘের তথ্য মতে, গাজার অন্তত ৮২ শতাংশ এলাকা বর্তমানে ইসরায়েলি সেনা নিয়ন্ত্রিত অথবা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির হুমকির মধ্যে রয়েছে। বহু মানুষ ইতোমধ্যে ঘরছাড়া এবং যারা এখনো নিজেদের ভিটেমাটিতে টিকে আছেন, তাদের সামনে পালানোর আর কোনো পথ অবশিষ্ট নেই। জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার হুঁশিয়ারি দিচ্ছে, পুরো গাজা উপত্যকা একটি মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের এই দমনমূলক অভিযানকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ বলেও অভিহিত করা যেতে পারে। বেসামরিক ত্রাণকেন্দ্রে হামলা, শিশু ও নারী হত্যার মতো ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন স্পষ্টভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে।

এদিকে গাজার বর্তমান চিত্র—ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন, ধুলোয় মাখা মৃতদেহ, আর ভীত-সন্ত্রস্ত মানুষের আর্তনাদ—বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করতে না পারায় সমালোচনা বাড়ছে পশ্চিমা বিশ্বের ভূমিকাও নিয়ে।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, শুধু যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নয়, এখন সময় আন্তর্জাতিক আদালতে এই আগ্রাসনের বিচার দাবি করার। গাজা আর কত মৃত্যু দেখলে বিশ্ব নড়ে উঠবে, সেই প্রশ্নই ঘুরে ফিরে আসছে প্রতিটি ফিলিস্তিনির মুখে।

সূত্র: আল-জাজিরা, গাজা মেডিকেল সেন্টার, জাতিসংঘ পরিস্থিতি প্রতিবেদন (১ জুলাই ২০২৫)।