সময়: বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
1
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

জুলাই আন্দোলনে গুলিতে ৬ বছরের শিশু রিয়ার মৃত্যু: ১১ মাস পর মামলা, আসামি ২০০

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১১:১৬:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫
  • / ৩৮ Time View

1751432555 6fd33470dea458ab90e18c964caa6eb9

1751432555 6fd33470dea458ab90e18c964caa6eb9

নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। সেই আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত ৬ বছরের শিশু রিয়া গোপের মৃত্যুর ১১ মাস পর অবশেষে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এই দীর্ঘ সময়ে তদন্ত বা দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েও।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু রায়হান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ২০০ জন আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই বিকেলে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ চলাকালে সরকারি দলের অজ্ঞাতনামা লোকজন আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়। তারা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো নয়ামাটি এলাকা আতঙ্কের পরিবেশে ফেলে দেয়।

সে সময় শহরের নয়ামাটি এলাকার গুলশান হল সিনেমা ভবনের পেছনে একটি পাঁচতলা ভবনের ছাদে খেলছিল শিশু রিয়া গোপ। হঠাৎ ছোঁড়া গুলির একটি রিয়ার মাথায় লাগে। তৎক্ষণাৎ তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ জুলাই সে মারা যায়।

রিয়ার মৃত্যু নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তখন ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তবে ঘটনার পরপরই মামলার কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা ও উদ্বেগ বাড়ে। নিহত শিশুর পরিবার প্রাথমিকভাবে মামলা করতে রাজি হয়নি বলে জানান নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, “ঘটনার দিন এবং পরবর্তী সময় আমরা পরিবারকে মামলা করার জন্য উৎসাহ দিয়েছি। কিন্তু তারা নানা কারণে পিছিয়ে যায়। অবশেষে পুলিশ নিজ উদ্যোগে মামলা দায়ের করেছে যাতে ন্যায়বিচারের পথ উন্মুক্ত হয়।”

পুলিশ জানিয়েছে, মামলার তদন্ত চলছে এবং এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তদন্তের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ৬ বছরের একটি নিষ্পাপ শিশুর মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনার পরও এত বিলম্বে মামলা দায়ের এবং অপরাধীদের চিহ্নিত না হওয়া আমাদের বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতাকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের জুলাইয়ে দেশে ছড়িয়ে পড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে গিয়ে বিভিন্ন এলাকায় সরকারি দলের নেতাকর্মীদের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক উঠে। বহু স্থানে সংঘর্ষ, গুলি, ধরপাকড়ের ঘটনা ঘটে। শিশু রিয়ার মৃত্যু সেই দুঃসময়কে স্মরণ করিয়ে দেয়, যেখানে রাজনীতি আর সহিংসতার বলি হয় একটি নিষ্পাপ প্রাণ।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো দাবি করছে, রিয়ার মৃত্যু শুধু একটি “দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা” নয়, বরং এটি রাজনৈতিক সহিংসতার সরাসরি ফলাফল। তারা দ্রুত তদন্ত শেষে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই মামলার খবরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, যেখানে অনেকেই বলছেন, “১১ মাস পর মামলা নয়, ১১ দিনের মধ্যেই বিচার হওয়া উচিত ছিল।”

 

Please Share This Post in Your Social Media

5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
1
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

জুলাই আন্দোলনে গুলিতে ৬ বছরের শিশু রিয়ার মৃত্যু: ১১ মাস পর মামলা, আসামি ২০০

Update Time : ১১:১৬:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫

1751432555 6fd33470dea458ab90e18c964caa6eb9

নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। সেই আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত ৬ বছরের শিশু রিয়া গোপের মৃত্যুর ১১ মাস পর অবশেষে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এই দীর্ঘ সময়ে তদন্ত বা দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েও।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু রায়হান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ২০০ জন আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই বিকেলে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ চলাকালে সরকারি দলের অজ্ঞাতনামা লোকজন আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়। তারা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো নয়ামাটি এলাকা আতঙ্কের পরিবেশে ফেলে দেয়।

সে সময় শহরের নয়ামাটি এলাকার গুলশান হল সিনেমা ভবনের পেছনে একটি পাঁচতলা ভবনের ছাদে খেলছিল শিশু রিয়া গোপ। হঠাৎ ছোঁড়া গুলির একটি রিয়ার মাথায় লাগে। তৎক্ষণাৎ তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ জুলাই সে মারা যায়।

রিয়ার মৃত্যু নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তখন ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তবে ঘটনার পরপরই মামলার কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা ও উদ্বেগ বাড়ে। নিহত শিশুর পরিবার প্রাথমিকভাবে মামলা করতে রাজি হয়নি বলে জানান নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, “ঘটনার দিন এবং পরবর্তী সময় আমরা পরিবারকে মামলা করার জন্য উৎসাহ দিয়েছি। কিন্তু তারা নানা কারণে পিছিয়ে যায়। অবশেষে পুলিশ নিজ উদ্যোগে মামলা দায়ের করেছে যাতে ন্যায়বিচারের পথ উন্মুক্ত হয়।”

পুলিশ জানিয়েছে, মামলার তদন্ত চলছে এবং এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তদন্তের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ৬ বছরের একটি নিষ্পাপ শিশুর মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনার পরও এত বিলম্বে মামলা দায়ের এবং অপরাধীদের চিহ্নিত না হওয়া আমাদের বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতাকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের জুলাইয়ে দেশে ছড়িয়ে পড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে গিয়ে বিভিন্ন এলাকায় সরকারি দলের নেতাকর্মীদের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক উঠে। বহু স্থানে সংঘর্ষ, গুলি, ধরপাকড়ের ঘটনা ঘটে। শিশু রিয়ার মৃত্যু সেই দুঃসময়কে স্মরণ করিয়ে দেয়, যেখানে রাজনীতি আর সহিংসতার বলি হয় একটি নিষ্পাপ প্রাণ।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো দাবি করছে, রিয়ার মৃত্যু শুধু একটি “দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা” নয়, বরং এটি রাজনৈতিক সহিংসতার সরাসরি ফলাফল। তারা দ্রুত তদন্ত শেষে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই মামলার খবরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, যেখানে অনেকেই বলছেন, “১১ মাস পর মামলা নয়, ১১ দিনের মধ্যেই বিচার হওয়া উচিত ছিল।”