আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি আল মাহমুদের আজ জন্মদিন

- Update Time : ০৩:২৫:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
- / ১৩ Time View
নাম ও পরিচয়
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও প্রভাবশালী কবি আল মাহমুদ তাঁর সাহিত্যকর্ম ও চিন্তার গভীরতা দিয়ে বাংলার পাঠক হৃদয়ে স্থায়ী আসন গড়ে তুলেছেন। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সাংবাদিক, সম্পাদক, ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার।
জন্ম ও শৈশব
আল মাহমুদ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে, একটি রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে। তাঁর শৈশব কেটেছে এই পূর্ববঙ্গের ছোট শহরের গ্রামীণ পরিবেশে, যা পরবর্তীকালে তাঁর সাহিত্যে প্রবলভাবে প্রতিফলিত হয়।
নাগরিকতা
- ব্রিটিশ ভারত (১৯৩৬-১৯৪৭)
- পাকিস্তান (১৯৪৭-১৯৭১)
- বাংলাদেশ (১৯৭১-২০১৯)
কর্মজীবনের সূচনা
আল মাহমুদের লেখালেখির হাতেখড়ি হয় সাংবাদিকতার মাধ্যমে। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকায় আসেন এবং সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন। প্রথম দিকে তিনি দৈনিক মিল্লাত-এ প্রুফরিডার হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি তিনি সাপ্তাহিক কাফেলা পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। কিছুদিন পর তিনি কাফেলার সম্পাদক হন।
কবিতা ও সাহিত্যচর্চা
১৯৬৩ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘লোক লোকান্তর’ তাঁকে বাংলা কাব্যজগতে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। এরপর একে একে ‘কালের
মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আল মাহমুদের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তিনি দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। সে সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনায় তিনি জেল খাটেন। পরে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে পরিচালক হিসেবে যোগ দেন এবং সেখান থেকেই অবসর গ্রহণ করেন।
গল্প ও উপন্যাস রচনা
কবিতার পাশাপাশি তিনি ছোটগল্প ও উপন্যাসেও বিচরণ করেছেন। ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘পানকৌড়ির রক্ত’ এবং ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত উপন্যাস ‘কবি ও কোলাহল’ সাহিত্যের ভিন্ন ধারায় তাঁকে নিয়ে আসে।
প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ
- কবিতা:
- লোক লোকান্তর (১৯৬৩)
- কালের কলস (১৯৬৬)
- সোনালি কাবিন (১৯৬৬)
- মায়াবী পর্দা দুলে উঠো (১৯৬৯)
- আরব্য রজনীর রাজহাঁস
- উড়াল কাব্য
- প্রেমের কবিতা সমগ্র
- প্রেম প্রকৃতির দ্রোহ আর প্রার্থনা কবিতা
- কবিতাসমগ্র (দুই খণ্ড)
- সেরা প্রেমের কবিতা
- নদীর ভেতরের নদী
- না, কোনো শূন্যতা মানি না
- গল্প ও উপন্যাস:
- পানকৌড়ির রক্ত
- আল মাহমুদের গল্প
- গল্পসমগ্র
- প্রেমের গল্প
- জিবরাইলের ডানা
- বিচূর্ণ আয়নায় কবির মুখ
- উপন্যাস সমগ্র (১, ২, ৩ খণ্ড)
- কবি ও কোলাহল
- ময়ূরীর মুখ
- ত্রিশেরা
- গন্ধবণিক
- একটি পাখি লেজ ঝোলা
- অন্যান্য:
- দিনযাপন
- যেভাবে গড়ে উঠি
- কিশোর সমগ্র
- Al Mahmud in English
সাহিত্যিক বৈশিষ্ট্য ও বিষয়বস্তু
আল মাহমুদের সাহিত্যকর্মে গ্রামীণ সমাজ, মাটি ও মানুষের সম্পর্ক, নারীর প্রতি প্রেম, ধর্মীয় চিন্তাধারা এবং ঐতিহ্যবাহী বাঙালি সংস্কৃতির সমন্বয় ঘটেছে অসাধারণ দক্ষতায়। তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যে এক নতুন ভাষার স্রষ্টা, যার কাব্যভাষায় কবিতা পেয়েছে নতুন প্রাণ।
পুরস্কার ও সম্মাননা
আল মাহমুদ তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘একুশে পদক’, যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা।
মৃত্যু
দীর্ঘ সাহিত্যজীবনের পর আল মাহমুদ ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্য এক প্রাজ্ঞ কবিকে হারায়, যার সৃষ্টি ভবিষ্যতেও সাহিত্যপ্রেমীদের আলোকিত করে রাখবে।
আল মাহমুদ শুধুমাত্র একজন কবি নন, তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি সময়কে ছুঁয়ে গেছেন তাঁর শব্দের জাদু দিয়ে। তাঁর কাব্য, গল্প ও উপন্যাসে উঠে এসেছে মানুষের চিরন্তন আকাঙ্ক্ষা, প্রেম, দ্রোহ ও আত্মবিশ্বাস। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে তিনি যা দিয়েছেন, তা আগামী বহু প্রজন্ম ধরে প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
তথ্যসূত্র: বাংলা একাডেমি, উইকিপিডিয়া, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকা ও আল মাহমুদের প্রকাশিত গ্রন্থাবলি থেকে সংগৃহীত।
Please Share This Post in Your Social Media

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি আল মাহমুদের আজ জন্মদিন

নাম ও পরিচয়
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও প্রভাবশালী কবি আল মাহমুদ তাঁর সাহিত্যকর্ম ও চিন্তার গভীরতা দিয়ে বাংলার পাঠক হৃদয়ে স্থায়ী আসন গড়ে তুলেছেন। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সাংবাদিক, সম্পাদক, ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার।
জন্ম ও শৈশব
আল মাহমুদ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে, একটি রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে। তাঁর শৈশব কেটেছে এই পূর্ববঙ্গের ছোট শহরের গ্রামীণ পরিবেশে, যা পরবর্তীকালে তাঁর সাহিত্যে প্রবলভাবে প্রতিফলিত হয়।
নাগরিকতা
- ব্রিটিশ ভারত (১৯৩৬-১৯৪৭)
- পাকিস্তান (১৯৪৭-১৯৭১)
- বাংলাদেশ (১৯৭১-২০১৯)
কর্মজীবনের সূচনা
আল মাহমুদের লেখালেখির হাতেখড়ি হয় সাংবাদিকতার মাধ্যমে। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকায় আসেন এবং সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন। প্রথম দিকে তিনি দৈনিক মিল্লাত-এ প্রুফরিডার হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি তিনি সাপ্তাহিক কাফেলা পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। কিছুদিন পর তিনি কাফেলার সম্পাদক হন।
কবিতা ও সাহিত্যচর্চা
১৯৬৩ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘লোক লোকান্তর’ তাঁকে বাংলা কাব্যজগতে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। এরপর একে একে ‘কালের
মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আল মাহমুদের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তিনি দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। সে সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনায় তিনি জেল খাটেন। পরে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে পরিচালক হিসেবে যোগ দেন এবং সেখান থেকেই অবসর গ্রহণ করেন।
গল্প ও উপন্যাস রচনা
কবিতার পাশাপাশি তিনি ছোটগল্প ও উপন্যাসেও বিচরণ করেছেন। ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘পানকৌড়ির রক্ত’ এবং ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত উপন্যাস ‘কবি ও কোলাহল’ সাহিত্যের ভিন্ন ধারায় তাঁকে নিয়ে আসে।
প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ
- কবিতা:
- লোক লোকান্তর (১৯৬৩)
- কালের কলস (১৯৬৬)
- সোনালি কাবিন (১৯৬৬)
- মায়াবী পর্দা দুলে উঠো (১৯৬৯)
- আরব্য রজনীর রাজহাঁস
- উড়াল কাব্য
- প্রেমের কবিতা সমগ্র
- প্রেম প্রকৃতির দ্রোহ আর প্রার্থনা কবিতা
- কবিতাসমগ্র (দুই খণ্ড)
- সেরা প্রেমের কবিতা
- নদীর ভেতরের নদী
- না, কোনো শূন্যতা মানি না
- গল্প ও উপন্যাস:
- পানকৌড়ির রক্ত
- আল মাহমুদের গল্প
- গল্পসমগ্র
- প্রেমের গল্প
- জিবরাইলের ডানা
- বিচূর্ণ আয়নায় কবির মুখ
- উপন্যাস সমগ্র (১, ২, ৩ খণ্ড)
- কবি ও কোলাহল
- ময়ূরীর মুখ
- ত্রিশেরা
- গন্ধবণিক
- একটি পাখি লেজ ঝোলা
- অন্যান্য:
- দিনযাপন
- যেভাবে গড়ে উঠি
- কিশোর সমগ্র
- Al Mahmud in English
সাহিত্যিক বৈশিষ্ট্য ও বিষয়বস্তু
আল মাহমুদের সাহিত্যকর্মে গ্রামীণ সমাজ, মাটি ও মানুষের সম্পর্ক, নারীর প্রতি প্রেম, ধর্মীয় চিন্তাধারা এবং ঐতিহ্যবাহী বাঙালি সংস্কৃতির সমন্বয় ঘটেছে অসাধারণ দক্ষতায়। তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যে এক নতুন ভাষার স্রষ্টা, যার কাব্যভাষায় কবিতা পেয়েছে নতুন প্রাণ।
পুরস্কার ও সম্মাননা
আল মাহমুদ তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘একুশে পদক’, যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা।
মৃত্যু
দীর্ঘ সাহিত্যজীবনের পর আল মাহমুদ ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্য এক প্রাজ্ঞ কবিকে হারায়, যার সৃষ্টি ভবিষ্যতেও সাহিত্যপ্রেমীদের আলোকিত করে রাখবে।
আল মাহমুদ শুধুমাত্র একজন কবি নন, তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি সময়কে ছুঁয়ে গেছেন তাঁর শব্দের জাদু দিয়ে। তাঁর কাব্য, গল্প ও উপন্যাসে উঠে এসেছে মানুষের চিরন্তন আকাঙ্ক্ষা, প্রেম, দ্রোহ ও আত্মবিশ্বাস। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে তিনি যা দিয়েছেন, তা আগামী বহু প্রজন্ম ধরে প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
তথ্যসূত্র: বাংলা একাডেমি, উইকিপিডিয়া, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকা ও আল মাহমুদের প্রকাশিত গ্রন্থাবলি থেকে সংগৃহীত।