১০ লাখ ডলারের বিনিময়ে ভারতীয় নার্স প্রিয়াকে বাঁচানোর চেষ্টা!

- Update Time : ০৭:০৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
- / ১১ Time View
ইয়েমেনে ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তারিখ দ্রুতই এগিয়ে আসছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৬ জুলাই তার ফাঁসি কার্যকর করা হবে। কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাকে বাঁচানোর জন্য লড়ছে পরিবার, মানবাধিকার সংগঠন ও একদল আন্তর্জাতিক সমাজকর্মী। তাদের একমাত্র ভরসা এখন ইয়েমেনের ইসলামী বিচার ব্যবস্থার ‘দিয়াহ’ বা রক্তমূল্য পরিশোধের মাধ্যমে ভুক্তভোগী পরিবারের ক্ষমা লাভ করা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ২০১৭ সালে ইয়েমেনে মাহদি নামে এক নাগরিককে হত্যার অভিযোগে প্রিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর আদালত তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড দেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, মাহদিকে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ দিয়ে অজ্ঞান করার পর তার মৃত্যু হয় এবং দেহ খণ্ডবিখণ্ড করার অভিযোগ আনা হয়। তবে প্রিয়া বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তার আইনজীবীরা আদালতে যুক্তি দেন, মাহদি প্রিয়াকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। তার টাকা, পাসপোর্ট কেড়ে নিয়েছিলেন এবং বন্দুক দেখিয়ে হুমকি দিতেন। আইনজীবীদের দাবি, প্রিয়া তার পাসপোর্ট উদ্ধার করতে গিয়ে মাহদিকে অজ্ঞান করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ‘ভুলবশত’ ওষুধের মাত্রা বেশি হয়ে যায়।
২০২০ সালে স্থানীয় একটি আদালত প্রিয়াকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হলেও ২০২৩ সালে তা খারিজ হয়ে যায়। সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারিতে হুতি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের সুপ্রিম পলিটিক্যাল কাউন্সিলের প্রধান মাহদি আল-মাশাত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করেন।
বর্তমানে ৩৪ বছর বয়সী প্রিয়া ইয়েমেনের রাজধানী সানার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন। তার মুক্তির একমাত্র সম্ভাবনা এখন ভুক্তভোগীর পরিবার মাহদির পক্ষ থেকে ক্ষমা পাওয়া। এজন্যই সক্রিয় হয়েছে ‘Save Nimisha Priya International Action Council’ নামের একটি আন্তর্জাতিক লবি গ্রুপ।
এই গ্রুপের সদস্য এবং সমাজকর্মী বাবু জন বিবিসিকে বলেন, “ইয়েমেনের প্রসিকিউশনের মহাপরিচালক ইতোমধ্যেই কারা কর্তৃপক্ষকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিন জানিয়ে দিয়েছেন। আমরা এখনো তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু চূড়ান্তভাবে মাহদির পরিবারের সম্মতির ওপরই সব নির্ভর করছে।”
এই কাউন্সিলের পক্ষ থেকে মাহদির পরিবারকে ১০ লাখ মার্কিন ডলার দিয়াহ বা রক্তমূল্য হিসেবে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সমাজকর্মী স্যামুয়েল জেরোম, যিনি ইয়েমেনেই অবস্থান করছেন, তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মাহদির পরিবারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। প্রিয়ার মা, যিনি কেরালার এক দরিদ্র গৃহকর্মী, ২০১৪ সাল থেকে মেয়েকে মুক্ত করার আশায় ইয়েমেনেই রয়েছেন।
স্যামুয়েল জেরোম জানিয়েছেন, “আমরা মাহদির পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাইনি। ক্ষমা বা আর্থিক সমঝোতার জন্য তারা কী চান, সেটার অপেক্ষায় আছি।”
এদিকে কাউন্সিলের উদ্যোগে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রাউডফান্ডিং। বিভিন্ন দেশের মানবিক মানুষদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এই ১০ লাখ ডলার জোগাড়ের চেষ্টা চলছে। যদিও এখনো পুরো অর্থ সংগ্রহ সম্ভব হয়নি, তবুও অনেকেই আশা করছেন, শেষ মুহূর্তে কিছু একটা করে হয়তো প্রিয়াকে বাঁচানো সম্ভব হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইয়েমেনের বিচারব্যবস্থায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো আসামিকে শুধু ভুক্তভোগী পরিবারের ক্ষমা পাওয়ার মাধ্যমেই মুক্তি দেয়া সম্ভব। কিন্তু এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং সংবেদনশীল। মাহদির পরিবারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই বিভিন্নভাবে নিজেদের মতামত প্রকাশ করলেও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তারা ক্ষমা দেয়নি বা প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।
বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারকর্মীরা এই বিষয়টিকে মানবিক দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনা করছেন। তারা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে অত্যাচারের শিকার হওয়া একজন নার্সের যদি সুযোগ থাকে নিজের জীবন ফিরে পাওয়ার, তবে সমাজের উচিত তা নিশ্চিত করা।
এখন শুধু অপেক্ষা, ১৬ জুলাইয়ের আগে মাহদির পরিবার কী সিদ্ধান্ত নেয়। আর যদি তারা শেষ মুহূর্তে প্রিয়াকে ক্ষমা করে দেয়, তবে ‘রক্তের মূল্য’ পরিশোধের মাধ্যমেই মৃত্যুদণ্ড এড়াতে পারবেন নিমিশা প্রিয়া।
সূত্র: বিবিসি
Please Share This Post in Your Social Media

১০ লাখ ডলারের বিনিময়ে ভারতীয় নার্স প্রিয়াকে বাঁচানোর চেষ্টা!

ইয়েমেনে ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তারিখ দ্রুতই এগিয়ে আসছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৬ জুলাই তার ফাঁসি কার্যকর করা হবে। কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাকে বাঁচানোর জন্য লড়ছে পরিবার, মানবাধিকার সংগঠন ও একদল আন্তর্জাতিক সমাজকর্মী। তাদের একমাত্র ভরসা এখন ইয়েমেনের ইসলামী বিচার ব্যবস্থার ‘দিয়াহ’ বা রক্তমূল্য পরিশোধের মাধ্যমে ভুক্তভোগী পরিবারের ক্ষমা লাভ করা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ২০১৭ সালে ইয়েমেনে মাহদি নামে এক নাগরিককে হত্যার অভিযোগে প্রিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর আদালত তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড দেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, মাহদিকে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ দিয়ে অজ্ঞান করার পর তার মৃত্যু হয় এবং দেহ খণ্ডবিখণ্ড করার অভিযোগ আনা হয়। তবে প্রিয়া বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তার আইনজীবীরা আদালতে যুক্তি দেন, মাহদি প্রিয়াকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। তার টাকা, পাসপোর্ট কেড়ে নিয়েছিলেন এবং বন্দুক দেখিয়ে হুমকি দিতেন। আইনজীবীদের দাবি, প্রিয়া তার পাসপোর্ট উদ্ধার করতে গিয়ে মাহদিকে অজ্ঞান করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ‘ভুলবশত’ ওষুধের মাত্রা বেশি হয়ে যায়।
২০২০ সালে স্থানীয় একটি আদালত প্রিয়াকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হলেও ২০২৩ সালে তা খারিজ হয়ে যায়। সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারিতে হুতি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের সুপ্রিম পলিটিক্যাল কাউন্সিলের প্রধান মাহদি আল-মাশাত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করেন।
বর্তমানে ৩৪ বছর বয়সী প্রিয়া ইয়েমেনের রাজধানী সানার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন। তার মুক্তির একমাত্র সম্ভাবনা এখন ভুক্তভোগীর পরিবার মাহদির পক্ষ থেকে ক্ষমা পাওয়া। এজন্যই সক্রিয় হয়েছে ‘Save Nimisha Priya International Action Council’ নামের একটি আন্তর্জাতিক লবি গ্রুপ।
এই গ্রুপের সদস্য এবং সমাজকর্মী বাবু জন বিবিসিকে বলেন, “ইয়েমেনের প্রসিকিউশনের মহাপরিচালক ইতোমধ্যেই কারা কর্তৃপক্ষকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিন জানিয়ে দিয়েছেন। আমরা এখনো তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু চূড়ান্তভাবে মাহদির পরিবারের সম্মতির ওপরই সব নির্ভর করছে।”
এই কাউন্সিলের পক্ষ থেকে মাহদির পরিবারকে ১০ লাখ মার্কিন ডলার দিয়াহ বা রক্তমূল্য হিসেবে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সমাজকর্মী স্যামুয়েল জেরোম, যিনি ইয়েমেনেই অবস্থান করছেন, তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মাহদির পরিবারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। প্রিয়ার মা, যিনি কেরালার এক দরিদ্র গৃহকর্মী, ২০১৪ সাল থেকে মেয়েকে মুক্ত করার আশায় ইয়েমেনেই রয়েছেন।
স্যামুয়েল জেরোম জানিয়েছেন, “আমরা মাহদির পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাইনি। ক্ষমা বা আর্থিক সমঝোতার জন্য তারা কী চান, সেটার অপেক্ষায় আছি।”
এদিকে কাউন্সিলের উদ্যোগে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রাউডফান্ডিং। বিভিন্ন দেশের মানবিক মানুষদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এই ১০ লাখ ডলার জোগাড়ের চেষ্টা চলছে। যদিও এখনো পুরো অর্থ সংগ্রহ সম্ভব হয়নি, তবুও অনেকেই আশা করছেন, শেষ মুহূর্তে কিছু একটা করে হয়তো প্রিয়াকে বাঁচানো সম্ভব হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইয়েমেনের বিচারব্যবস্থায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো আসামিকে শুধু ভুক্তভোগী পরিবারের ক্ষমা পাওয়ার মাধ্যমেই মুক্তি দেয়া সম্ভব। কিন্তু এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং সংবেদনশীল। মাহদির পরিবারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই বিভিন্নভাবে নিজেদের মতামত প্রকাশ করলেও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তারা ক্ষমা দেয়নি বা প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।
বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারকর্মীরা এই বিষয়টিকে মানবিক দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনা করছেন। তারা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে অত্যাচারের শিকার হওয়া একজন নার্সের যদি সুযোগ থাকে নিজের জীবন ফিরে পাওয়ার, তবে সমাজের উচিত তা নিশ্চিত করা।
এখন শুধু অপেক্ষা, ১৬ জুলাইয়ের আগে মাহদির পরিবার কী সিদ্ধান্ত নেয়। আর যদি তারা শেষ মুহূর্তে প্রিয়াকে ক্ষমা করে দেয়, তবে ‘রক্তের মূল্য’ পরিশোধের মাধ্যমেই মৃত্যুদণ্ড এড়াতে পারবেন নিমিশা প্রিয়া।
সূত্র: বিবিসি