সময়: বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে যাচ্ছে ইয়েমেন: ১৬ জুলাইয়ের মধ্যে রায় কার্যকর হওয়ার আশঙ্কা

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৬:৪০:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
  • / ১২ Time View

d7cee099b567e5395231f14660dc64c6 686d38cc58892

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

d7cee099b567e5395231f14660dc64c6 686d38cc58892

ইয়েমেন সরকার ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ড ২০২৫ সালের ১৬ জুলাইয়ের মধ্যে কার্যকর করতে যাচ্ছে। একাধিক ভারতীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, ইয়েমেনের আদালতে একজন দেশি নাগরিক হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়া নিমিশা প্রিয়ার শেষ আপিল আবেদনও খারিজ হয়ে গেছে। গত বছর ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট রাশাদ আল-আলিমি আনুষ্ঠানিকভাবে তার মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করেন, এবং চলতি মাসের মধ্যেই দণ্ড কার্যকর হবে বলে ইয়েমেনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

কেরালার বাসিন্দা নিমিশা প্রিয়া ২০০৮ সালে নার্স হিসেবে কাজ করতে ইয়েমেন যান। সেখানে একাধিক হাসপাতালে সুনামের সঙ্গে কাজ করার পর ২০১৪ সালে তিনি নিজেই একটি ক্লিনিক খোলেন। তবে ইয়েমেনের আইনি কাঠামো অনুযায়ী, বিদেশিদের স্থানীয় কারো সঙ্গে অংশীদারিত্ব ছাড়া ব্যবসা করার অনুমতি নেই। তাই বাধ্য হয়ে নিমিশা স্থানীয় নাগরিক তালাল আবদো মাহদির সঙ্গে অংশীদারিত্বে ব্যবসা শুরু করেন। তবে সময়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে, এবং নিমিশা অভিযোগ করেন, মাহদি তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করছিলেন। এ নিয়ে একাধিকবার তিনি পুলিশেও অভিযোগ করেন।

২০১৬ সালে মাহদিকে গ্রেপ্তার করা হলেও তিনি জামিনে মুক্তি পান। মুক্তির পরও তিনি নিমিশার ওপর হুমকি ও নির্যাতন চালিয়ে যেতে থাকেন বলে অভিযোগ ওঠে। এসব নির্যাতনের মধ্যেই মাহদির কাছে আটকে রাখা নিজের পাসপোর্ট উদ্ধারের চেষ্টা করেন নিমিশা। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি মাহদিকে ঘুমের ইনজেকশন দেন যাতে তিনি অচেতন অবস্থায় নিজের পাসপোর্ট উদ্ধার করতে পারেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত অতিরিক্ত মাত্রার কারণে মাহদির মৃত্যু ঘটে।

মাহদির মৃত্যুর পর দেশ ছেড়ে পালানোর সময় বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন নিমিশা প্রিয়া। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার পর ২০১৮ সালে ইয়েমেনের আদালত তাকে হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে উচ্চ আদালতেও এই রায় বহাল থাকে। ২০২3 সালের নভেম্বরে ইয়েমেনের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলও নিম্ন আদালতের রায় অনুমোদন করে।

নিমিশার পরিবার এবং ভারতের বহু মানবাধিকার সংগঠন এই মৃত্যুদণ্ড বন্ধ করার জন্য ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছে। তারা দাবি করছে, নিমিশার কাজ ছিল আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে এবং পুরো ঘটনাটি একটি দুর্ঘটনা। ইতোমধ্যে কেরালা রাজ্য সরকারও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইয়েমেন সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা শুরু করেছে। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি. মুরলীধরনের নেতৃত্বে একটি নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা ইয়েমেন সরকারের কাছে ক্ষমা চেয়ে মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করার আহ্বান জানিয়ে একটি “ক্ষমা আবেদন” প্রচারণা শুরু করেছে।

এই ঘটনার পর ভারতের কূটনৈতিক মহলে চাপ বেড়েছে। কূটনীতিক ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, বর্তমান যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে একটি নারী বিদেশি নাগরিকের ন্যায়বিচার পাওয়া দুরূহ হয়ে উঠেছে। সেইসঙ্গে নারী নিরাপত্তা ও আত্মরক্ষার মতো একটি জটিল বিষয়কেও ফৌজদারি বিচারে যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয়নি বলে অনেকেই মনে করছেন।

১৬ জুলাইয়ের নির্ধারিত তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই নিমিশা প্রিয়ার মুক্তি নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে। এদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও ইয়েমেনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ইতোমধ্যে ইয়েমেন সরকারকে মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে। তবে ইয়েমেন সরকার এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়নি। ভারতীয় দূতাবাসও এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত্যুদণ্ড স্থগিত বা ক্ষমার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানায়নি।

নিমিশার মেয়ে, কিশোরী ইশা, তার মায়ের প্রাণভিক্ষার জন্য সামাজিক মাধ্যমে কাঁদছে। তার ছোট্ট মুখে বারবার উঠে আসছে একটাই কথা— “আমার মা কি আর কোনোদিন ফিরে আসবে না?”— যা ভারতে বহু মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।

এখন সময়ের অপেক্ষা— ইয়েমেন কি মানবিক দিক বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করবে? নাকি ১৬ জুলাই-ই হবে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত নার্সের ফাঁসি কার্যকরের দিন?

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে যাচ্ছে ইয়েমেন: ১৬ জুলাইয়ের মধ্যে রায় কার্যকর হওয়ার আশঙ্কা

Update Time : ০৬:৪০:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

d7cee099b567e5395231f14660dc64c6 686d38cc58892

ইয়েমেন সরকার ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ড ২০২৫ সালের ১৬ জুলাইয়ের মধ্যে কার্যকর করতে যাচ্ছে। একাধিক ভারতীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, ইয়েমেনের আদালতে একজন দেশি নাগরিক হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়া নিমিশা প্রিয়ার শেষ আপিল আবেদনও খারিজ হয়ে গেছে। গত বছর ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট রাশাদ আল-আলিমি আনুষ্ঠানিকভাবে তার মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করেন, এবং চলতি মাসের মধ্যেই দণ্ড কার্যকর হবে বলে ইয়েমেনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

কেরালার বাসিন্দা নিমিশা প্রিয়া ২০০৮ সালে নার্স হিসেবে কাজ করতে ইয়েমেন যান। সেখানে একাধিক হাসপাতালে সুনামের সঙ্গে কাজ করার পর ২০১৪ সালে তিনি নিজেই একটি ক্লিনিক খোলেন। তবে ইয়েমেনের আইনি কাঠামো অনুযায়ী, বিদেশিদের স্থানীয় কারো সঙ্গে অংশীদারিত্ব ছাড়া ব্যবসা করার অনুমতি নেই। তাই বাধ্য হয়ে নিমিশা স্থানীয় নাগরিক তালাল আবদো মাহদির সঙ্গে অংশীদারিত্বে ব্যবসা শুরু করেন। তবে সময়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে, এবং নিমিশা অভিযোগ করেন, মাহদি তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করছিলেন। এ নিয়ে একাধিকবার তিনি পুলিশেও অভিযোগ করেন।

২০১৬ সালে মাহদিকে গ্রেপ্তার করা হলেও তিনি জামিনে মুক্তি পান। মুক্তির পরও তিনি নিমিশার ওপর হুমকি ও নির্যাতন চালিয়ে যেতে থাকেন বলে অভিযোগ ওঠে। এসব নির্যাতনের মধ্যেই মাহদির কাছে আটকে রাখা নিজের পাসপোর্ট উদ্ধারের চেষ্টা করেন নিমিশা। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি মাহদিকে ঘুমের ইনজেকশন দেন যাতে তিনি অচেতন অবস্থায় নিজের পাসপোর্ট উদ্ধার করতে পারেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত অতিরিক্ত মাত্রার কারণে মাহদির মৃত্যু ঘটে।

মাহদির মৃত্যুর পর দেশ ছেড়ে পালানোর সময় বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন নিমিশা প্রিয়া। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার পর ২০১৮ সালে ইয়েমেনের আদালত তাকে হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে উচ্চ আদালতেও এই রায় বহাল থাকে। ২০২3 সালের নভেম্বরে ইয়েমেনের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলও নিম্ন আদালতের রায় অনুমোদন করে।

নিমিশার পরিবার এবং ভারতের বহু মানবাধিকার সংগঠন এই মৃত্যুদণ্ড বন্ধ করার জন্য ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছে। তারা দাবি করছে, নিমিশার কাজ ছিল আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে এবং পুরো ঘটনাটি একটি দুর্ঘটনা। ইতোমধ্যে কেরালা রাজ্য সরকারও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইয়েমেন সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা শুরু করেছে। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি. মুরলীধরনের নেতৃত্বে একটি নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা ইয়েমেন সরকারের কাছে ক্ষমা চেয়ে মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করার আহ্বান জানিয়ে একটি “ক্ষমা আবেদন” প্রচারণা শুরু করেছে।

এই ঘটনার পর ভারতের কূটনৈতিক মহলে চাপ বেড়েছে। কূটনীতিক ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, বর্তমান যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে একটি নারী বিদেশি নাগরিকের ন্যায়বিচার পাওয়া দুরূহ হয়ে উঠেছে। সেইসঙ্গে নারী নিরাপত্তা ও আত্মরক্ষার মতো একটি জটিল বিষয়কেও ফৌজদারি বিচারে যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয়নি বলে অনেকেই মনে করছেন।

১৬ জুলাইয়ের নির্ধারিত তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই নিমিশা প্রিয়ার মুক্তি নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে। এদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও ইয়েমেনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ইতোমধ্যে ইয়েমেন সরকারকে মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে। তবে ইয়েমেন সরকার এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়নি। ভারতীয় দূতাবাসও এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত্যুদণ্ড স্থগিত বা ক্ষমার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানায়নি।

নিমিশার মেয়ে, কিশোরী ইশা, তার মায়ের প্রাণভিক্ষার জন্য সামাজিক মাধ্যমে কাঁদছে। তার ছোট্ট মুখে বারবার উঠে আসছে একটাই কথা— “আমার মা কি আর কোনোদিন ফিরে আসবে না?”— যা ভারতে বহু মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।

এখন সময়ের অপেক্ষা— ইয়েমেন কি মানবিক দিক বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করবে? নাকি ১৬ জুলাই-ই হবে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত নার্সের ফাঁসি কার্যকরের দিন?

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share