সময়: শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

গাজায় গণহত্যায় ‘ক্ষুধা’কে অস্ত্রে পরিণত করছে ইসরায়েল: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১২:০২:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫
  • / ৪৯ Time View

942073e7ce2c6bf8e8aaf701044cc4e8 686769261a88c

942073e7ce2c6bf8e8aaf701044cc4e8 686769261a88c
 ছবি: ওয়াশিংটন পোস্ট

 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল যে ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন চালিয়ে যাচ্ছে, তা এখন আর শুধু সামরিক আক্রমণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—বরং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ক্ষুধাকে একটি পরিকল্পিত অস্ত্রে রূপান্তর করেছে ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ তুলে সংস্থাটি জানায়, গাজায় খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসেবা সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে ইসরায়েল গণহত্যার একটি নতুন রূপ কার্যকর করছে।

ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা আনাদোলুর বরাতে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজাবাসীর মৌলিক মানবিক অধিকার হরণ করছে। এবং এই কৌশলটি আন্তর্জাতিক আইনে “গণহত্যার” সংজ্ঞার আওতায় পড়ে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।

জীবনের মৌলিক শর্ত ধ্বংস করাগণহত্যারই নামান্তর

অ্যামনেস্টির মহাসচিব অ্যাগনেস কালামার্ড বলেন,
ইসরায়েল জানে, মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোযেমন খাদ্য, পানি, ওষুধধ্বংস করে দিলে জীবনধারণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। এটি শুধু শারীরিক হত্যাকাণ্ড নয়, বরং জীবনের অস্তিত্ব ধ্বংস করে ফেলার পরিকল্পিত উপায়। আর এটাই হলো গণহত্যা।

তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল গাজার পরিস্থিতিকে এমনভাবে পরিচালিত করছে যেন ক্ষুধা ও রোগকে সরাসরি একটি দমননীতি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা যখন ত্রাণ নিতে যান, তখন সেখানেই তাদের ওপর গুলিবর্ষণ হয় বা বোমা ফেলা হয়।

ত্রাণকেন্দ্র এখনমৃত্যুকেন্দ্র

অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অনুমোদিত তথাকথিত হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (Gaza Humanitarian Foundation – GHF) এখন কার্যত মৃত্যুকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সাহায্যের আশায় লাইনে দাঁড়ানো বহু মানুষ সেখানে প্রাণ হারাচ্ছেন।

সংস্থাটি জানায়, প্রতিদিন শত শত ত্রাণবাহী ট্রাক গাজার সীমান্তে এসে দাঁড়ায়, কিন্তু ইসরায়েলি বাধায় অধিকাংশই প্রবেশ করতে পারে না। ফলে খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

শিশুদের মৃত্যু: নীরব গণহত্যার প্রতিচ্ছবি

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের পর থেকে এখন পর্যন্ত অপুষ্টিজনিত

কারণে কমপক্ষে ৬৬ জন শিশু মারা গেছে, বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। আরও বহু শিশু সংক্রমণ, পানিশূন্যতা ও নিরাময়যোগ্য রোগে মারা যাচ্ছে।

একটি করুণ উদাহরণ দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, মাত্র চার মাস বয়সী জিনান ইসকাফি দুধ না পেয়ে গুরুতর অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় মারা যায়। খান ইউনিস ও গাজার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের অন্তত ১৫ শতাংশের দেহে মারাত্মক অপুষ্টির লক্ষণ পাওয়া গেছে।

চিকিৎসকদের অভিযোগ, তারা নিজেরাই গৃহহীন, দুর্বল ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে কাজ করতে পারছেন না। ক্যাম্পে আসা শিশুদের অস্থায়ী চিকিৎসা দেওয়া হলেও তারা দ্রুত আবার অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

আন্তর্জাতিক নীরবতার তীব্র সমালোচনা

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কেবল ইসরায়েল নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও দায়ী করেছে।
সংস্থাটি বলেছে,
বিশ্বনেতারা শুধু ব্যর্থ নয়, তারা ইসরায়েলের ধ্বংসযজ্ঞ চলতে দিচ্ছেনযেন নির্বাক প্রত্যক্ষদর্শী।

তারা আরও দাবি করেছে—

  • ইসরায়েলের প্রতি সব ধরনের সামরিক সহায়তা বন্ধ করতে হবে
  • ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে
  • অস্ত্র ব্যবসা বিনিয়োগ বন্ধের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে

মানবিক বিপর্যয়ের মুখে ন্যায়বিচারের প্রশ্ন

এই প্রতিবেদন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমালোচনার সুরকে আরও তীব্র করেছে। বিশ্ববাসীকে আর শুধু মানবিক সহানুভূতিতে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না—গাজায় যেভাবে মানবিক অস্ত্র হিসেবে ক্ষুধা, পিপাসা ওষুধের অভাবকে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা মানবসভ্যতার অন্যতম কলঙ্কজনক অধ্যায়ে পরিণত হতে চলেছে।

এই সংকটের অবসানে কার্যকর আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি, নইলে ইতিহাস একদিন প্রশ্ন তুলবেই—আপনারা দেখেছেন, জানতেনতবুও থামাননি কেন?”

 

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

গাজায় গণহত্যায় ‘ক্ষুধা’কে অস্ত্রে পরিণত করছে ইসরায়েল: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

Update Time : ১২:০২:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫
942073e7ce2c6bf8e8aaf701044cc4e8 686769261a88c
 ছবি: ওয়াশিংটন পোস্ট

 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল যে ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন চালিয়ে যাচ্ছে, তা এখন আর শুধু সামরিক আক্রমণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—বরং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ক্ষুধাকে একটি পরিকল্পিত অস্ত্রে রূপান্তর করেছে ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ তুলে সংস্থাটি জানায়, গাজায় খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসেবা সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে ইসরায়েল গণহত্যার একটি নতুন রূপ কার্যকর করছে।

ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা আনাদোলুর বরাতে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজাবাসীর মৌলিক মানবিক অধিকার হরণ করছে। এবং এই কৌশলটি আন্তর্জাতিক আইনে “গণহত্যার” সংজ্ঞার আওতায় পড়ে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।

জীবনের মৌলিক শর্ত ধ্বংস করাগণহত্যারই নামান্তর

অ্যামনেস্টির মহাসচিব অ্যাগনেস কালামার্ড বলেন,
ইসরায়েল জানে, মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোযেমন খাদ্য, পানি, ওষুধধ্বংস করে দিলে জীবনধারণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। এটি শুধু শারীরিক হত্যাকাণ্ড নয়, বরং জীবনের অস্তিত্ব ধ্বংস করে ফেলার পরিকল্পিত উপায়। আর এটাই হলো গণহত্যা।

তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল গাজার পরিস্থিতিকে এমনভাবে পরিচালিত করছে যেন ক্ষুধা ও রোগকে সরাসরি একটি দমননীতি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা যখন ত্রাণ নিতে যান, তখন সেখানেই তাদের ওপর গুলিবর্ষণ হয় বা বোমা ফেলা হয়।

ত্রাণকেন্দ্র এখনমৃত্যুকেন্দ্র

অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অনুমোদিত তথাকথিত হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (Gaza Humanitarian Foundation – GHF) এখন কার্যত মৃত্যুকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সাহায্যের আশায় লাইনে দাঁড়ানো বহু মানুষ সেখানে প্রাণ হারাচ্ছেন।

সংস্থাটি জানায়, প্রতিদিন শত শত ত্রাণবাহী ট্রাক গাজার সীমান্তে এসে দাঁড়ায়, কিন্তু ইসরায়েলি বাধায় অধিকাংশই প্রবেশ করতে পারে না। ফলে খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

শিশুদের মৃত্যু: নীরব গণহত্যার প্রতিচ্ছবি

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের পর থেকে এখন পর্যন্ত অপুষ্টিজনিত

কারণে কমপক্ষে ৬৬ জন শিশু মারা গেছে, বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। আরও বহু শিশু সংক্রমণ, পানিশূন্যতা ও নিরাময়যোগ্য রোগে মারা যাচ্ছে।

একটি করুণ উদাহরণ দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, মাত্র চার মাস বয়সী জিনান ইসকাফি দুধ না পেয়ে গুরুতর অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় মারা যায়। খান ইউনিস ও গাজার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের অন্তত ১৫ শতাংশের দেহে মারাত্মক অপুষ্টির লক্ষণ পাওয়া গেছে।

চিকিৎসকদের অভিযোগ, তারা নিজেরাই গৃহহীন, দুর্বল ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে কাজ করতে পারছেন না। ক্যাম্পে আসা শিশুদের অস্থায়ী চিকিৎসা দেওয়া হলেও তারা দ্রুত আবার অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

আন্তর্জাতিক নীরবতার তীব্র সমালোচনা

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কেবল ইসরায়েল নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও দায়ী করেছে।
সংস্থাটি বলেছে,
বিশ্বনেতারা শুধু ব্যর্থ নয়, তারা ইসরায়েলের ধ্বংসযজ্ঞ চলতে দিচ্ছেনযেন নির্বাক প্রত্যক্ষদর্শী।

তারা আরও দাবি করেছে—

  • ইসরায়েলের প্রতি সব ধরনের সামরিক সহায়তা বন্ধ করতে হবে
  • ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে
  • অস্ত্র ব্যবসা বিনিয়োগ বন্ধের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে

মানবিক বিপর্যয়ের মুখে ন্যায়বিচারের প্রশ্ন

এই প্রতিবেদন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমালোচনার সুরকে আরও তীব্র করেছে। বিশ্ববাসীকে আর শুধু মানবিক সহানুভূতিতে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না—গাজায় যেভাবে মানবিক অস্ত্র হিসেবে ক্ষুধা, পিপাসা ওষুধের অভাবকে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা মানবসভ্যতার অন্যতম কলঙ্কজনক অধ্যায়ে পরিণত হতে চলেছে।

এই সংকটের অবসানে কার্যকর আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি, নইলে ইতিহাস একদিন প্রশ্ন তুলবেই—আপনারা দেখেছেন, জানতেনতবুও থামাননি কেন?”