“ইউনূস সরকারকে ডুবাতে বাইরের কেউ দরকার নেই, প্রেস সচিবই যথেষ্ট” — গোলাম মাওলা রনি

- Update Time : ১১:২৬:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫
- / ৭৮ Time View
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনীতিবিদ গোলাম মাওলা রনি। তিনি বলেছেন, ইউনূস সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে বা সরকারকে বিপদে ফেলতে বাইরের কোনো ষড়যন্ত্রকারীর প্রয়োজন নেই—এই প্রেস সচিবই একাই যথেষ্ট।
শুক্রবার (৪ জুলাই) রাত ৯টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক মন্তব্য পোস্ট করেন গোলাম মাওলা রনি। সেখানে তিনি প্রেস সচিব শফিকুল আলমের একটি ছবিও যুক্ত করেন এবং তীব্র ভাষায় তার কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন।
তিনি লেখেন,
“ছবিতে যে ভদ্রলোককে দেখছেন, তার একটি নাম আছে, এবং সেই নামের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে এমন এক অভিধা যুক্ত হয়েছে, যা টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত মানুষের মন ও মস্তিষ্কে বহু বছর ধরে প্রতিধ্বনিত হবে। আমি সাধারণত এই ধরনের মানুষদের নিয়ে কথা বলি না। কিন্তু যখন রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থেকে কেউ এমন কিছু বলতে ও করতে থাকেন, যা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়ায়—তখন প্রতিবাদ করাটা নাগরিক দায়িত্ব হয়ে ওঠে।“
রনি আরও বলেন,
“আমি এক টেলিভিশন টকশোতে সোজাসুজি বলেছি—ইউনূস সরকারকে ডুবানোর জন্য বাইরের কোনো শত্রু বা আন্তর্জাতিক চক্রান্তের প্রয়োজন নেই। এই প্রেস সচিব শফিকুল আলমের মতো একজন কর্মকর্তা থাকলেই যথেষ্ট। তাঁর বক্তব্য, আচরণ এবং সিদ্ধান্তগুলো এমন পর্যায়ের, যা জনগণের আস্থা হ্রাস করে এবং সরকারের প্রতি বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করে।“
‘মব’ প্রসঙ্গে মন্তব্য
ফেসবুক পোস্টে গোলাম মাওলা রনি আরও বলেন,
“আমি সম্প্রতি ‘মব’ নিয়ে কথা বলেছিলাম—যেখানে বলেছি, নূর হোসেন শহীদ হয়েছিলেন এরশাদ সরকারের সময় ‘মব’ এর শিকার হয়ে। মব মানে ‘জঙ্গল জাস্টিস’। এটি শুধু জনতার ক্ষোভ নয়, কখনও কখনও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতেও ঘটে থাকে। রাষ্ট্র যদি আইন ও ন্যায়বিচারের পরিবর্তে প্রতিহিংসার পথে হাঁটে, তবে সেটা গণতন্ত্র নয়, ফ্যাসিবাদের
তিনি আরো দাবি করেন,
“বর্তমান সরকারের অন্তর্বর্তী কাঠামোতে কিছু কিছু ব্যক্তি এমনভাবে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছেন, যেন তারা এককভাবে পুরো রাষ্ট্র চালানোর অধিকার রাখেন। অথচ তাদের আচরণ ও বক্তব্যে দায়িত্বশীলতার ঘাটতি প্রকট। প্রেস সচিবের দায়িত্ব রাষ্ট্রের মুখপাত্র হিসেবে জনগণকে তথ্য দেওয়া, বিভ্রান্তি দূর করা এবং সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা করা—কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তিনি নিজেই বিভ্রান্তির উৎস হয়ে উঠেছেন।“
রাজনৈতিক মহলে আলোচনা ও বিতর্ক
গোলাম মাওলা রনির এই পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেকেই তার মন্তব্যকে সমর্থন জানাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন, এ ধরনের ব্যক্তিগত আক্রমণ সরকারের স্থিতিশীলতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, রনির এই বক্তব্য শুধু একজন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নয়, বরং পুরো অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর এক প্রকার অনাস্থার বহিঃপ্রকাশ। এর ফলে প্রেস সচিবের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে পারে, এবং ভবিষ্যতে সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েও জনমনে সন্দেহ তৈরি হতে পারে।
প্রেস সচিবের ভূমিকা নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির সরাসরি ও কঠোর ভাষায় সমালোচনা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বর্তমান উত্তপ্ত রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই ধরনের মন্তব্য সরকারের অভ্যন্তরীণ স্থিতি ও জনসম্পৃক্ততার ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটি স্পষ্ট যে, অন্তর্বর্তী সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে এখন দায়িত্বশীলতা ও স্বচ্ছতার প্রশ্নে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে।
Please Share This Post in Your Social Media

“ইউনূস সরকারকে ডুবাতে বাইরের কেউ দরকার নেই, প্রেস সচিবই যথেষ্ট” — গোলাম মাওলা রনি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনীতিবিদ গোলাম মাওলা রনি। তিনি বলেছেন, ইউনূস সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে বা সরকারকে বিপদে ফেলতে বাইরের কোনো ষড়যন্ত্রকারীর প্রয়োজন নেই—এই প্রেস সচিবই একাই যথেষ্ট।
শুক্রবার (৪ জুলাই) রাত ৯টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক মন্তব্য পোস্ট করেন গোলাম মাওলা রনি। সেখানে তিনি প্রেস সচিব শফিকুল আলমের একটি ছবিও যুক্ত করেন এবং তীব্র ভাষায় তার কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন।
তিনি লেখেন,
“ছবিতে যে ভদ্রলোককে দেখছেন, তার একটি নাম আছে, এবং সেই নামের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে এমন এক অভিধা যুক্ত হয়েছে, যা টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত মানুষের মন ও মস্তিষ্কে বহু বছর ধরে প্রতিধ্বনিত হবে। আমি সাধারণত এই ধরনের মানুষদের নিয়ে কথা বলি না। কিন্তু যখন রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থেকে কেউ এমন কিছু বলতে ও করতে থাকেন, যা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়ায়—তখন প্রতিবাদ করাটা নাগরিক দায়িত্ব হয়ে ওঠে।“
রনি আরও বলেন,
“আমি এক টেলিভিশন টকশোতে সোজাসুজি বলেছি—ইউনূস সরকারকে ডুবানোর জন্য বাইরের কোনো শত্রু বা আন্তর্জাতিক চক্রান্তের প্রয়োজন নেই। এই প্রেস সচিব শফিকুল আলমের মতো একজন কর্মকর্তা থাকলেই যথেষ্ট। তাঁর বক্তব্য, আচরণ এবং সিদ্ধান্তগুলো এমন পর্যায়ের, যা জনগণের আস্থা হ্রাস করে এবং সরকারের প্রতি বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করে।“
‘মব’ প্রসঙ্গে মন্তব্য
ফেসবুক পোস্টে গোলাম মাওলা রনি আরও বলেন,
“আমি সম্প্রতি ‘মব’ নিয়ে কথা বলেছিলাম—যেখানে বলেছি, নূর হোসেন শহীদ হয়েছিলেন এরশাদ সরকারের সময় ‘মব’ এর শিকার হয়ে। মব মানে ‘জঙ্গল জাস্টিস’। এটি শুধু জনতার ক্ষোভ নয়, কখনও কখনও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতেও ঘটে থাকে। রাষ্ট্র যদি আইন ও ন্যায়বিচারের পরিবর্তে প্রতিহিংসার পথে হাঁটে, তবে সেটা গণতন্ত্র নয়,
তিনি আরো দাবি করেন,
“বর্তমান সরকারের অন্তর্বর্তী কাঠামোতে কিছু কিছু ব্যক্তি এমনভাবে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছেন, যেন তারা এককভাবে পুরো রাষ্ট্র চালানোর অধিকার রাখেন। অথচ তাদের আচরণ ও বক্তব্যে দায়িত্বশীলতার ঘাটতি প্রকট। প্রেস সচিবের দায়িত্ব রাষ্ট্রের মুখপাত্র হিসেবে জনগণকে তথ্য দেওয়া, বিভ্রান্তি দূর করা এবং সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা করা—কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তিনি নিজেই বিভ্রান্তির উৎস হয়ে উঠেছেন।“
রাজনৈতিক মহলে আলোচনা ও বিতর্ক
গোলাম মাওলা রনির এই পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেকেই তার মন্তব্যকে সমর্থন জানাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন, এ ধরনের ব্যক্তিগত আক্রমণ সরকারের স্থিতিশীলতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, রনির এই বক্তব্য শুধু একজন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নয়, বরং পুরো অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর এক প্রকার অনাস্থার বহিঃপ্রকাশ। এর ফলে প্রেস সচিবের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে পারে, এবং ভবিষ্যতে সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েও জনমনে সন্দেহ তৈরি হতে পারে।
প্রেস সচিবের ভূমিকা নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির সরাসরি ও কঠোর ভাষায় সমালোচনা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বর্তমান উত্তপ্ত রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই ধরনের মন্তব্য সরকারের অভ্যন্তরীণ স্থিতি ও জনসম্পৃক্ততার ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এটি স্পষ্ট যে, অন্তর্বর্তী সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে এখন দায়িত্বশীলতা ও স্বচ্ছতার প্রশ্নে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে।