‘আমাদের কী পাপ?’—ত্রাণ আনতে গিয়ে ভাইকে হারানো ফিলিস্তিনি শিশুর আর্তনাদে কাঁদছে বিশ্ব

- Update Time : ১১:৫০:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫
- / ৫৬ Time View
যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক আহ্বান উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অব্যাহতভাবে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে তথাকথিত মার্কিন-ইসরায়েল পরিচালিত ত্রাণকেন্দ্রগুলোর কাছেও হামলা চালানো হচ্ছে, যেখানে ক্ষুধার্ত এবং বেঁচে থাকার লড়াইয়ে থাকা মানুষজন আশ্রয় ও খাদ্যের আশায় জড়ো হন।
আজ শুক্রবার (৫ জুলাই) দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের সামনে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে পাঁচ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আল জাজিরা। এর মধ্যে এক আবেগঘন ও হৃদয়বিদারক ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা দুনিয়াব্যাপী মানুষকে কাঁদাচ্ছে।
ভাই হারানো এক ছোট মেয়ের কান্নায় স্তব্ধ গাজা
ছবির মতো দৃশ্য নয়—এ এক নির্মম বাস্তবতা। ভিডিওটিতে দেখা যায়, একজন ছোট্ট ফিলিস্তিনি মেয়ে বিলাপ করছে তার বড় ভাইয়ের মরদেহের পাশে। এই ভাইটি ছিল পরিবারের জন্য ভরসার একমাত্র মুখ। মাত্র ১৯ বছর বয়সী যুবকটি খাবার সংগ্রহের জন্য গিয়েছিল একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। কিন্তু ফিরে এলো নিথর দেহ হয়ে—ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ঝরে গেল তার প্রাণ।
চোখের জলে ডুবে থাকা ছোট্ট বোনটি কাঁদতে কাঁদতে বলছে,
“আমাদের কী পাপ যে, আমরা ক্ষুধায় মারা যাচ্ছি?”
পাশে থাকা বয়স্ক নারীরা বারবার তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু মেয়েটির কান্না যেন থামেই না। সে আর্তনাদ করে বলতে থাকে,
“আমার বড় ভাই… আমার হৃদয়ের আত্মা… আমাকে ক্ষমা করো ভাই, যদি কখনো তোমাকে কষ্ট দিয়ে থাকি…”
এই দৃশ্য হৃদয় বিদীর্ণ করে দিয়েছে লাখো মানুষকে। অনলাইনে ভিডিওটি পোস্ট করেন ফিলিস্তিনি ফ্রিল্যান্স ফটোসাংবাদিক দোয়া আলবাজ। ভিডিওটি পরে আল জাজিরার সনদপ্রাপ্ত ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থাও যাচাই করে সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
নিহত ভাইটি ছিল একজন শিক্ষার্থী
মেয়েটি আল জাজিরাকে জানিয়েছে, তার ভাইটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিল। সে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখত, পরিবারকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করার আশায় প্রতিদিন লেখাপড়ার পাশাপাশি ছোটখাটো কাজ করত। কিন্তু যুদ্ধ এবং অবরোধের নির্মম বাস্তবতা তাকে খাদ্যের জন্য লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য করেছিল, যেখানেই গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়।
মানবিক বিপর্যয় ও বিশ্ববিবেকের নীরবতা
গাজা উপত্যকার বর্তমান পরিস্থিতিকে জাতিসংঘের মহাসচিব ‘মানবিক লজ্জা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তবুও বিশ্বনেতাদের একটি বড় অংশের নির্লিপ্ততা ও মুখবন্ধ নীতির কারণে ইসরায়েলের এই গণহত্যা যেন অব্যাহত থাকতে পারছে। যুদ্ধ নয়, এটি যেন নিষ্পাপ শিশুদের ও বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত নিধনযজ্ঞ।
এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো নিন্দা জানালেও কার্যকর পদক্ষেপের ঘাটতি এখনও রয়ে গেছে। শিশুদের কষ্ট, ক্ষুধা, আর্তনাদ এবং স্বজন হারানোর বেদনায় গোটা ফিলিস্তিন আজ শোকে স্তব্ধ।
এই ছোট মেয়েটির কান্না, তার আর্তচিৎকার—”আমাদের কী পাপ?”—শুধু গাজার নয়, এটি মানবতার হৃদয়ে ছুরিকাঘাত। এই কান্না যেন বিশ্ব বিবেককে জাগিয়ে তোলে। যতক্ষণ না একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, ন্যায়বিচার এবং মানবিক অধিকার নিশ্চিত হয়, ততক্ষণ এই প্রশ্ন বেজে যাবে—‘আমাদের কী পাপ ছিল?’
Please Share This Post in Your Social Media

‘আমাদের কী পাপ?’—ত্রাণ আনতে গিয়ে ভাইকে হারানো ফিলিস্তিনি শিশুর আর্তনাদে কাঁদছে বিশ্ব

যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক আহ্বান উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অব্যাহতভাবে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে তথাকথিত মার্কিন-ইসরায়েল পরিচালিত ত্রাণকেন্দ্রগুলোর কাছেও হামলা চালানো হচ্ছে, যেখানে ক্ষুধার্ত এবং বেঁচে থাকার লড়াইয়ে থাকা মানুষজন আশ্রয় ও খাদ্যের আশায় জড়ো হন।
আজ শুক্রবার (৫ জুলাই) দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের সামনে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে পাঁচ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আল জাজিরা। এর মধ্যে এক আবেগঘন ও হৃদয়বিদারক ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা দুনিয়াব্যাপী মানুষকে কাঁদাচ্ছে।
ভাই হারানো এক ছোট মেয়ের কান্নায় স্তব্ধ গাজা
ছবির মতো দৃশ্য নয়—এ এক নির্মম বাস্তবতা। ভিডিওটিতে দেখা যায়, একজন ছোট্ট ফিলিস্তিনি মেয়ে বিলাপ করছে তার বড় ভাইয়ের মরদেহের পাশে। এই ভাইটি ছিল পরিবারের জন্য ভরসার একমাত্র মুখ। মাত্র ১৯ বছর বয়সী যুবকটি খাবার সংগ্রহের জন্য গিয়েছিল একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। কিন্তু ফিরে এলো নিথর দেহ হয়ে—ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ঝরে গেল তার প্রাণ।
চোখের জলে ডুবে থাকা ছোট্ট বোনটি কাঁদতে কাঁদতে বলছে,
“আমাদের কী পাপ যে, আমরা ক্ষুধায় মারা যাচ্ছি?”
পাশে থাকা বয়স্ক নারীরা বারবার তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু মেয়েটির কান্না যেন থামেই না। সে আর্তনাদ করে বলতে থাকে,
“আমার বড় ভাই… আমার হৃদয়ের আত্মা… আমাকে ক্ষমা করো ভাই, যদি কখনো তোমাকে কষ্ট দিয়ে থাকি…”
এই দৃশ্য হৃদয় বিদীর্ণ করে দিয়েছে লাখো মানুষকে। অনলাইনে ভিডিওটি পোস্ট করেন ফিলিস্তিনি ফ্রিল্যান্স ফটোসাংবাদিক দোয়া আলবাজ। ভিডিওটি পরে আল জাজিরার সনদপ্রাপ্ত ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থাও যাচাই করে সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
নিহত ভাইটি ছিল একজন শিক্ষার্থী
মেয়েটি আল জাজিরাকে জানিয়েছে, তার ভাইটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিল। সে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখত, পরিবারকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করার আশায় প্রতিদিন লেখাপড়ার পাশাপাশি ছোটখাটো কাজ করত। কিন্তু যুদ্ধ এবং অবরোধের নির্মম বাস্তবতা তাকে খাদ্যের জন্য লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য করেছিল, যেখানেই গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়।
মানবিক বিপর্যয় ও বিশ্ববিবেকের নীরবতা
গাজা উপত্যকার বর্তমান পরিস্থিতিকে জাতিসংঘের মহাসচিব ‘মানবিক লজ্জা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তবুও বিশ্বনেতাদের একটি বড় অংশের নির্লিপ্ততা ও মুখবন্ধ নীতির কারণে ইসরায়েলের এই গণহত্যা যেন অব্যাহত থাকতে পারছে। যুদ্ধ নয়, এটি যেন নিষ্পাপ শিশুদের ও বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত নিধনযজ্ঞ।
এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো নিন্দা জানালেও কার্যকর পদক্ষেপের ঘাটতি এখনও রয়ে গেছে। শিশুদের কষ্ট, ক্ষুধা, আর্তনাদ এবং স্বজন হারানোর বেদনায় গোটা ফিলিস্তিন আজ শোকে স্তব্ধ।
এই ছোট মেয়েটির কান্না, তার আর্তচিৎকার—”আমাদের কী পাপ?”—শুধু গাজার নয়, এটি মানবতার হৃদয়ে ছুরিকাঘাত। এই কান্না যেন বিশ্ব বিবেককে জাগিয়ে তোলে। যতক্ষণ না একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, ন্যায়বিচার এবং মানবিক অধিকার নিশ্চিত হয়, ততক্ষণ এই প্রশ্ন বেজে যাবে—‘আমাদের কী পাপ ছিল?’