সময়: শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

রাশিয়ার তালেবান স্বীকৃতিকে ঘিরে চীনের মন্তব্য: স্বাগত জানালেও নিজেদের অবস্থানে সতর্ক বেইজিং

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১০:২৮:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫
  • / ৮৩ Time View

1751628891 8cf6689cc82f5e6ec0c2a2e4b8482575

1751628891 8cf6689cc82f5e6ec0c2a2e4b8482575

আফগানিস্তানে তালেবান সরকারকে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে চীন, তবে এখনো তালেবান সরকারকে পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিতে তারা প্রস্তুত নয় বলে জানিয়েছে বেইজিং। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, “ঐতিহাসিকভাবে বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী হিসেবে চীন সবসময় মনে করে, আফগানিস্তানকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বাইরে রাখা উচিত নয়।”

চীন দীর্ঘদিন ধরেই আফগানিস্তানের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং তালেবান সরকারের সঙ্গে সীমিত কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। যদিও চীন আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি এখনো দেয়নি, তবুও তারা বেইজিংয়ে তালেবানের রাষ্ট্রদূতকে অনুমোদন দিয়েছে এবং কাবুলেও তাদের কূটনৈতিক মিশন সক্রিয় রেখেছে।

মাও নিং বলেন, “চীন বিশ্বাস করে তালেবান সরকারকে পূর্ণ কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়ার আগে তাদেরকে রাজনৈতিক সংস্কার, সন্ত্রাস দমন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বা বৈদেশিক পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, চীন ও আফগানিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক কখনোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।”

চীন ও আফগানিস্তানের কূটনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান মাও। তিনি বলেন, “দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে কূটনৈতিক চ্যানেলগুলো। আফগান জনগণের পাশে রয়েছে চীন এবং বন্ধুত্বপূর্ণ বৈদেশিক নীতি অনুসরণ অব্যাহত থাকবে।”

২০২১ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর তালেবান আফগানিস্তানে ক্ষমতা গ্রহণ করে। পূর্ববর্তী মার্কিনপন্থী সরকার উৎখাত হওয়ার পর দেশটি আবারও ইসলামী শাসন ব্যবস্থায় ফিরে যায়। নারী অধিকার, শিক্ষা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে পশ্চিমা বিশ্ব এখনো তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। বিপরীতে, তালেবান সরকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য মরিয়া।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার এই স্বীকৃতি তালেবানের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক অর্জন হলেও চীন এখনো তার অবস্থান বেশ সংরক্ষিত রেখেছে। আফগানিস্তানের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চল শিনজিয়াংয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রমের সম্ভাবনা মাথায় রেখে চীন তালেবান সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখলেও, সম্পূর্ণ স্বীকৃতি দিতে তারা সময় নিচ্ছে।

আফগানিস্তান বর্তমানে চরম দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং মানবিক সংকটের মুখোমুখি। জাতিসংঘ বলছে, দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ খাদ্য অনিরাপত্তার মধ্যে রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও বৈদেশিক সাহায্য তালেবান সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চীনের এই বিবৃতি স্পষ্ট করছে, তারা তালেবানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রাখলেও আন্তর্জাতিক শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা স্বীকৃতি দেবে না। তবুও, চীনের বক্তব্য তালেবান সরকারের জন্য কিছুটা স্বস্তির কারণ হতে পারে, কারণ এটি পশ্চিমা অবরোধের ভেতরে থেকেও আঞ্চলিক শক্তিগুলোর কাছ থেকে কিছুটা ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে।

রাশিয়ার স্বীকৃতি তালেবান সরকারের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হলেও চীনের সতর্ক প্রতিক্রিয়া বোঝায় যে, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথ এখনো সুগম হয়নি। রাজনৈতিক সংস্কার, মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং প্রতিবেশীদের আস্থা অর্জন না করা পর্যন্ত বড় শক্তিগুলোর কাছ থেকে পূর্ণ স্বীকৃতি পাওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তথ্যসূত্র: এএফপি, গ্লোবাল টাইমস, আল-জাজিরা, রয়টার্স।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

রাশিয়ার তালেবান স্বীকৃতিকে ঘিরে চীনের মন্তব্য: স্বাগত জানালেও নিজেদের অবস্থানে সতর্ক বেইজিং

Update Time : ১০:২৮:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫

1751628891 8cf6689cc82f5e6ec0c2a2e4b8482575

আফগানিস্তানে তালেবান সরকারকে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে চীন, তবে এখনো তালেবান সরকারকে পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিতে তারা প্রস্তুত নয় বলে জানিয়েছে বেইজিং। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, “ঐতিহাসিকভাবে বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী হিসেবে চীন সবসময় মনে করে, আফগানিস্তানকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বাইরে রাখা উচিত নয়।”

চীন দীর্ঘদিন ধরেই আফগানিস্তানের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং তালেবান সরকারের সঙ্গে সীমিত কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। যদিও চীন আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি এখনো দেয়নি, তবুও তারা বেইজিংয়ে তালেবানের রাষ্ট্রদূতকে অনুমোদন দিয়েছে এবং কাবুলেও তাদের কূটনৈতিক মিশন সক্রিয় রেখেছে।

মাও নিং বলেন, “চীন বিশ্বাস করে তালেবান সরকারকে পূর্ণ কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়ার আগে তাদেরকে রাজনৈতিক সংস্কার, সন্ত্রাস দমন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বা বৈদেশিক পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, চীন ও আফগানিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক কখনোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।”

চীন ও আফগানিস্তানের কূটনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান মাও। তিনি বলেন, “দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে কূটনৈতিক চ্যানেলগুলো। আফগান জনগণের পাশে রয়েছে চীন এবং বন্ধুত্বপূর্ণ বৈদেশিক নীতি অনুসরণ অব্যাহত থাকবে।”

২০২১ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর তালেবান আফগানিস্তানে ক্ষমতা গ্রহণ করে। পূর্ববর্তী মার্কিনপন্থী সরকার উৎখাত হওয়ার পর দেশটি আবারও ইসলামী শাসন ব্যবস্থায় ফিরে যায়। নারী অধিকার, শিক্ষা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে পশ্চিমা বিশ্ব এখনো তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। বিপরীতে, তালেবান সরকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য মরিয়া।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার এই স্বীকৃতি তালেবানের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক অর্জন হলেও চীন এখনো তার অবস্থান বেশ সংরক্ষিত রেখেছে। আফগানিস্তানের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চল শিনজিয়াংয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রমের সম্ভাবনা মাথায় রেখে চীন তালেবান সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখলেও, সম্পূর্ণ স্বীকৃতি দিতে তারা সময় নিচ্ছে।

আফগানিস্তান বর্তমানে চরম দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং মানবিক সংকটের মুখোমুখি। জাতিসংঘ বলছে, দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ খাদ্য অনিরাপত্তার মধ্যে রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও বৈদেশিক সাহায্য তালেবান সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চীনের এই বিবৃতি স্পষ্ট করছে, তারা তালেবানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রাখলেও আন্তর্জাতিক শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা স্বীকৃতি দেবে না। তবুও, চীনের বক্তব্য তালেবান সরকারের জন্য কিছুটা স্বস্তির কারণ হতে পারে, কারণ এটি পশ্চিমা অবরোধের ভেতরে থেকেও আঞ্চলিক শক্তিগুলোর কাছ থেকে কিছুটা ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে।

রাশিয়ার স্বীকৃতি তালেবান সরকারের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হলেও চীনের সতর্ক প্রতিক্রিয়া বোঝায় যে, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথ এখনো সুগম হয়নি। রাজনৈতিক সংস্কার, মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং প্রতিবেশীদের আস্থা অর্জন না করা পর্যন্ত বড় শক্তিগুলোর কাছ থেকে পূর্ণ স্বীকৃতি পাওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তথ্যসূত্র: এএফপি, গ্লোবাল টাইমস, আল-জাজিরা, রয়টার্স।