সময়: বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ এর  চেয়ারম্যান কে পদত্যাগ করতে বললেন ট্রাম্প

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১০:৪৬:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫
  • / ৪৫ Time View

8 20250703103000

8 20250703103000

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ  এর চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই আহ্বান জানান এবং কড়া ভাষায় পাওয়েলের সমালোচনা করেন। পোস্টে তিনি তাকে কটাক্ষ করে লিখেছেন, টু লেট’— অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত!!!

নিজের মনোনীত কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই ক্ষোভ

ট্রাম্পের এই অবস্থান দ্ব্যর্থহীনভাবে বিস্ময়কর, কারণ ২০১৮ সালে জেরোম পাওয়েলকে ফেডারেল রিজার্ভ প্রধান হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিলেন ট্রাম্প নিজেই। তবে দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পর থেকেই সুদের হার কমানোসহ আর্থিক নীতিতে মতানৈক্য দেখা দেয়। সেই থেকেই ট্রাম্প বারবার ফেডের স্বাধীন নীতিমালাকে আক্রমণ করেছেন, বিশেষ করে যখন তা তাঁর রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কৌশলের পরিপন্থী হয়েছে।

তদন্তের দাবি ভ্রান্ত সাক্ষ্যের অভিযোগ

ট্রাম্পের পোস্টে যুক্ত একটি সংবাদ প্রতিবেদনে ফেডারেল হাউজিং ফিনান্স এজেন্সির পরিচালক বিল পল্টে দাবি করেন, ফেডের সদর দপ্তরের সংস্কার ব্যয় সংক্রান্ত শুনানিতে জেরোম পাওয়েল মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এই অভিযোগকে ঘিরেই কংগ্রেসে তার বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে। পল্টে সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেন, “এসব তথ্য একত্রে পাওয়েলকে বরখাস্ত করার জন্য যথেষ্ট।”

এছাড়া জেরোম পাওয়েল নিজে সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেছেন, ফেডের সংস্কার ব্যয়ের বিষয়ে যেসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, তা আংশিক সত্য এবং বিভ্রান্তিকর। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে দেওয়া বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।

ট্রাম্পপাওয়েল বিরোধ: পুরনো এবং গভীর

ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর লক্ষ্যে সুদের হার কমানোর জন্য তিনি ফেডের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু পাওয়েল তাতে সায় দেননি। ট্রাম্প মনে করেন, উচ্চ সুদের হার মার্কিন অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এর বিপরীতে, জেরোম পাওয়েল ও তাঁর নেতৃত্বাধীন ফেডারেল রিজার্ভ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুদের হার বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করে, যা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি মতানৈক্য তৈরি করে।

এ বছর শুরুতে ট্রাম্প বলেন, তিনি পাওয়েলকে বরখাস্তের কোনো পরিকল্পনা করছেন না। কিন্তু সাম্প্রতিক মন্তব্য ও ঘটনাপ্রবাহে সেই অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

ফেডের স্বাধীনতা আইনগত সীমাবদ্ধতা

যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, ফেডারেল রিজার্ভ একটি স্বাধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এবং এর চেয়ারম্যান ও বোর্ড সদস্যদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সরানো কঠোর নিয়মে সীমাবদ্ধ। ১৯৩৫ সালের সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে, বোর্ড সদস্যদের অপসারণের জন্য গুরুতর কারণ থাকতে হবে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতবিরোধ এর জন্য যথেষ্ট নয়।

ফলে, ট্রাম্প চাইলেই জেরোম পাওয়েলকে সরিয়ে দিতে পারবেন না, যদি না কোনো দলিলভিত্তিক অপরাধ বা গুরুতর অসদাচরণ প্রমাণিত হয়। যদিও অতীতে ট্রাম্প একাধিকবার স্বশাসিত সংস্থার প্রধানদের পদত্যাগে বাধ্য করতে চেষ্টা করেছেন, যা অনেক ক্ষেত্রে আদালতে চ্যালেঞ্জ হয়েছে।

ট্রাম্পের শুল্কনীতি ফেডের মন্তব্য

সম্প্রতি পর্তুগালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের এক সম্মেলনে জেরোম পাওয়েল বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন যদি বিশ্বজুড়ে আমদানি শুল্ক না বাড়াত, তাহলে হয়তো ফেড আগেই সুদের হার কমিয়ে দিত। এই মন্তব্যেও ট্রাম্প শিবির ক্ষুব্ধ হয় এবং একে তার নীতির সরাসরি বিরোধিতা হিসেবে দেখানো হয়।

জেরোম পাওয়েলের অবস্থান

এত সব বিতর্কের মধ্যেও জেরোম পাওয়েল পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক চাপের কারণে পদত্যাগ করবেন না। তাঁর মতে, ফেডের স্বাধীনতা রক্ষা করা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

বর্তমানে ফেডের ব্যয়সংক্রান্ত বিতর্ক এবং সুদের হার নিয়ে রাজনৈতিক চাপ—সবমিলিয়ে জেরোম পাওয়েল এক কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছেন। একইসঙ্গে, ট্রাম্পের বক্তব্য আবারও প্রমাণ করে, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তারের প্রবণতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এখন দেখার বিষয়—এই সংকট ফেডের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারে কিনা, নাকি রাজনীতির চাপেই নতুন কোনো মোড় নেয় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নেতৃত্ব।

 

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ এর  চেয়ারম্যান কে পদত্যাগ করতে বললেন ট্রাম্প

Update Time : ১০:৪৬:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫

8 20250703103000

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ  এর চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই আহ্বান জানান এবং কড়া ভাষায় পাওয়েলের সমালোচনা করেন। পোস্টে তিনি তাকে কটাক্ষ করে লিখেছেন, টু লেট’— অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত!!!

নিজের মনোনীত কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই ক্ষোভ

ট্রাম্পের এই অবস্থান দ্ব্যর্থহীনভাবে বিস্ময়কর, কারণ ২০১৮ সালে জেরোম পাওয়েলকে ফেডারেল রিজার্ভ প্রধান হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিলেন ট্রাম্প নিজেই। তবে দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পর থেকেই সুদের হার কমানোসহ আর্থিক নীতিতে মতানৈক্য দেখা দেয়। সেই থেকেই ট্রাম্প বারবার ফেডের স্বাধীন নীতিমালাকে আক্রমণ করেছেন, বিশেষ করে যখন তা তাঁর রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কৌশলের পরিপন্থী হয়েছে।

তদন্তের দাবি ভ্রান্ত সাক্ষ্যের অভিযোগ

ট্রাম্পের পোস্টে যুক্ত একটি সংবাদ প্রতিবেদনে ফেডারেল হাউজিং ফিনান্স এজেন্সির পরিচালক বিল পল্টে দাবি করেন, ফেডের সদর দপ্তরের সংস্কার ব্যয় সংক্রান্ত শুনানিতে জেরোম পাওয়েল মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এই অভিযোগকে ঘিরেই কংগ্রেসে তার বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে। পল্টে সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেন, “এসব তথ্য একত্রে পাওয়েলকে বরখাস্ত করার জন্য যথেষ্ট।”

এছাড়া জেরোম পাওয়েল নিজে সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেছেন, ফেডের সংস্কার ব্যয়ের বিষয়ে যেসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, তা আংশিক সত্য এবং বিভ্রান্তিকর। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে দেওয়া বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।

ট্রাম্পপাওয়েল বিরোধ: পুরনো এবং গভীর

ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর লক্ষ্যে সুদের হার কমানোর জন্য তিনি ফেডের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু পাওয়েল তাতে সায় দেননি। ট্রাম্প মনে করেন, উচ্চ সুদের হার মার্কিন অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এর বিপরীতে, জেরোম পাওয়েল ও তাঁর নেতৃত্বাধীন ফেডারেল রিজার্ভ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুদের হার বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করে, যা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি মতানৈক্য তৈরি করে।

এ বছর শুরুতে ট্রাম্প বলেন, তিনি পাওয়েলকে বরখাস্তের কোনো পরিকল্পনা করছেন না। কিন্তু সাম্প্রতিক মন্তব্য ও ঘটনাপ্রবাহে সেই অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

ফেডের স্বাধীনতা আইনগত সীমাবদ্ধতা

যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, ফেডারেল রিজার্ভ একটি স্বাধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এবং এর চেয়ারম্যান ও বোর্ড সদস্যদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সরানো কঠোর নিয়মে সীমাবদ্ধ। ১৯৩৫ সালের সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে, বোর্ড সদস্যদের অপসারণের জন্য গুরুতর কারণ থাকতে হবে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতবিরোধ এর জন্য যথেষ্ট নয়।

ফলে, ট্রাম্প চাইলেই জেরোম পাওয়েলকে সরিয়ে দিতে পারবেন না, যদি না কোনো দলিলভিত্তিক অপরাধ বা গুরুতর অসদাচরণ প্রমাণিত হয়। যদিও অতীতে ট্রাম্প একাধিকবার স্বশাসিত সংস্থার প্রধানদের পদত্যাগে বাধ্য করতে চেষ্টা করেছেন, যা অনেক ক্ষেত্রে আদালতে চ্যালেঞ্জ হয়েছে।

ট্রাম্পের শুল্কনীতি ফেডের মন্তব্য

সম্প্রতি পর্তুগালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের এক সম্মেলনে জেরোম পাওয়েল বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন যদি বিশ্বজুড়ে আমদানি শুল্ক না বাড়াত, তাহলে হয়তো ফেড আগেই সুদের হার কমিয়ে দিত। এই মন্তব্যেও ট্রাম্প শিবির ক্ষুব্ধ হয় এবং একে তার নীতির সরাসরি বিরোধিতা হিসেবে দেখানো হয়।

জেরোম পাওয়েলের অবস্থান

এত সব বিতর্কের মধ্যেও জেরোম পাওয়েল পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক চাপের কারণে পদত্যাগ করবেন না। তাঁর মতে, ফেডের স্বাধীনতা রক্ষা করা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

বর্তমানে ফেডের ব্যয়সংক্রান্ত বিতর্ক এবং সুদের হার নিয়ে রাজনৈতিক চাপ—সবমিলিয়ে জেরোম পাওয়েল এক কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছেন। একইসঙ্গে, ট্রাম্পের বক্তব্য আবারও প্রমাণ করে, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তারের প্রবণতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এখন দেখার বিষয়—এই সংকট ফেডের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারে কিনা, নাকি রাজনীতির চাপেই নতুন কোনো মোড় নেয় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নেতৃত্ব।