সময়: শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

এনবিআরের আরও ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামলো দুদক, আন্দোলনকারী কর্মকর্তারাই মূল টার্গেট?

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৫:৫২:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫
  • / ৬৫ Time View

nbr dudok 20250701160904 20250701193233

nbr dudok 20250701160904 20250701193233

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক কমিশনারসহ আরও পাঁচ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসন্ধান শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুদক জানায়, এই অনুসন্ধান এনবিআর সংস্কার আন্দোলনের সাথে জড়িত থাকা একাধিক কর্মকর্তাকে ঘিরেই পরিচালিত হচ্ছে, যা প্রশাসন ও রাজস্ব ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে।

713620a49247ae96f5e265b266dcd4b9 68332026642d1

দুদকের অনুসন্ধানে থাকা কর্মকর্তারা হলেন—ঢাকা পূর্ব কাস্টমস, এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার কাজী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান, উপ-কর কমিশনার মো. মামুন মিয়া, আয়কর গোয়েন্দা ইউনিটের অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা, এবং কর অঞ্চল-২ এর কর পরিদর্শক লোকমান আহমেদ।

উল্লেখ্য, সেহেলা সিদ্দিকা এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের অন্যতম মুখপাত্র হিসেবে সাম্প্রতিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। আন্দোলনে অংশগ্রহণের পরপরই তাদের বিরুদ্ধে এমন দুর্নীতির তদন্ত শুরু হওয়াকে অনেকেই প্রতিহিংসার প্রকাশ বলেও মন্তব্য করছেন।

দুদকের দাবি, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কর ও শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে করদাতাদেরকে অবৈধভাবে কর ফাঁকির সুযোগ করে দিয়েছেন। এমনকি অভিযোগ রয়েছে, কেউ ঘুষ না দিলে তাদের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির ভুয়া মামলা দায়ের করে হয়রানিও করা হতো। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।

86b4a48a440947714b76fff00515efe8 68611512e8199

এর আগে গতকাল (২ জুলাই) এনবিআরের আরও পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তারা হলেন—অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল রশীদ মিয়া, সদস্য লুতফুল আজীম, সিআইসির সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, উপ-কর কমিশনার মো. শিহাবুল ইসলাম এবং যুগ্ম কমিশনার মো. তারেক হাছান। এদের মধ্যে তিনজনই এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সক্রিয় সদস্য।

এদিকে গত ২৯ জুন দুর্নীতির অভিযোগে এনবিআরের আরও ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। যাদের নাম উঠে আসে, তারা হলেন—এনবিআরের সদস্য (আয়কর নীতি) এ কে এম বদিউল আলম, অতিরিক্ত কর কমিশনার ও সংস্কার ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি মির্জা আশিক রানা, যুগ্ম কর কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দিন খান, সহ-সভাপতি মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, অতিরিক্ত কমিশনার ও পরিষদের সভাপতি হাছান তারেক রিকাবদার এবং অতিরিক্ত কমিশনার ও সদস্য সাধন কুমার কুন্ডু। এদের মধ্যে পাঁচজনই ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন।

সাম্প্রতিক সময়ে এনবিআরে এক সপ্তাহব্যাপী ‘মার্চ টু এনবিআর’ ও ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালিত হয়। এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকার গত ১২ মে মধ্যরাতে এনবিআর বিলুপ্ত করে একটি অধ্যাদেশ জারি করলেও, তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে ২৫ মে এক সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়—এনবিআর বিলুপ্ত করা হবে না, বরং একে আরও শক্তিশালী ও স্বতন্ত্র বিভাগে উন্নীত করা হবে। সেই ঘোষণার পর আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত হলেও, আন্দোলনকারীরা চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবিতে অনড় ছিলেন এবং তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন।

এনবিআর ভবনে কড়া নিরাপত্তায় চেয়ারম্যান ফের কার্যালয়ে প্রবেশ করলেও প্রশাসনের ভেতরে চলমান উত্তেজনা ও দ্বন্দ্ব থেমে নেই। এনবিআরের সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে একের পর এক অনুসন্ধান শুরুকে সরকার পক্ষের চাপ প্রয়োগ ও দমননীতির অংশ হিসেবে দেখছেন অনেক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

এখন দেখার বিষয়, দুর্নীতির এসব অনুসন্ধান কতটা নিরপেক্ষ এবং বাস্তবভিত্তিক হয়—না কি এটা আন্দোলনকারীদের দমন করার একটি প্রাতিষ্ঠানিক কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

এনবিআরের আরও ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামলো দুদক, আন্দোলনকারী কর্মকর্তারাই মূল টার্গেট?

Update Time : ০৫:৫২:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫

nbr dudok 20250701160904 20250701193233

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক কমিশনারসহ আরও পাঁচ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসন্ধান শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুদক জানায়, এই অনুসন্ধান এনবিআর সংস্কার আন্দোলনের সাথে জড়িত থাকা একাধিক কর্মকর্তাকে ঘিরেই পরিচালিত হচ্ছে, যা প্রশাসন ও রাজস্ব ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে।

713620a49247ae96f5e265b266dcd4b9 68332026642d1

দুদকের অনুসন্ধানে থাকা কর্মকর্তারা হলেন—ঢাকা পূর্ব কাস্টমস, এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার কাজী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান, উপ-কর কমিশনার মো. মামুন মিয়া, আয়কর গোয়েন্দা ইউনিটের অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা, এবং কর অঞ্চল-২ এর কর পরিদর্শক লোকমান আহমেদ।

উল্লেখ্য, সেহেলা সিদ্দিকা এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের অন্যতম মুখপাত্র হিসেবে সাম্প্রতিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। আন্দোলনে অংশগ্রহণের পরপরই তাদের বিরুদ্ধে এমন দুর্নীতির তদন্ত শুরু হওয়াকে অনেকেই প্রতিহিংসার প্রকাশ বলেও মন্তব্য করছেন।

দুদকের দাবি, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কর ও শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে করদাতাদেরকে অবৈধভাবে কর ফাঁকির সুযোগ করে দিয়েছেন। এমনকি অভিযোগ রয়েছে, কেউ ঘুষ না দিলে তাদের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির ভুয়া মামলা দায়ের করে হয়রানিও করা হতো। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।

86b4a48a440947714b76fff00515efe8 68611512e8199

এর আগে গতকাল (২ জুলাই) এনবিআরের আরও পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তারা হলেন—অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল রশীদ মিয়া, সদস্য লুতফুল আজীম, সিআইসির সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, উপ-কর কমিশনার মো. শিহাবুল ইসলাম এবং যুগ্ম কমিশনার মো. তারেক হাছান। এদের মধ্যে তিনজনই এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সক্রিয় সদস্য।

এদিকে গত ২৯ জুন দুর্নীতির অভিযোগে এনবিআরের আরও ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। যাদের নাম উঠে আসে, তারা হলেন—এনবিআরের সদস্য (আয়কর নীতি) এ কে এম বদিউল আলম, অতিরিক্ত কর কমিশনার ও সংস্কার ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি মির্জা আশিক রানা, যুগ্ম কর কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দিন খান, সহ-সভাপতি মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, অতিরিক্ত কমিশনার ও পরিষদের সভাপতি হাছান তারেক রিকাবদার এবং অতিরিক্ত কমিশনার ও সদস্য সাধন কুমার কুন্ডু। এদের মধ্যে পাঁচজনই ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন।

সাম্প্রতিক সময়ে এনবিআরে এক সপ্তাহব্যাপী ‘মার্চ টু এনবিআর’ ও ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালিত হয়। এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকার গত ১২ মে মধ্যরাতে এনবিআর বিলুপ্ত করে একটি অধ্যাদেশ জারি করলেও, তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে ২৫ মে এক সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়—এনবিআর বিলুপ্ত করা হবে না, বরং একে আরও শক্তিশালী ও স্বতন্ত্র বিভাগে উন্নীত করা হবে। সেই ঘোষণার পর আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত হলেও, আন্দোলনকারীরা চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবিতে অনড় ছিলেন এবং তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন।

এনবিআর ভবনে কড়া নিরাপত্তায় চেয়ারম্যান ফের কার্যালয়ে প্রবেশ করলেও প্রশাসনের ভেতরে চলমান উত্তেজনা ও দ্বন্দ্ব থেমে নেই। এনবিআরের সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে একের পর এক অনুসন্ধান শুরুকে সরকার পক্ষের চাপ প্রয়োগ ও দমননীতির অংশ হিসেবে দেখছেন অনেক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

এখন দেখার বিষয়, দুর্নীতির এসব অনুসন্ধান কতটা নিরপেক্ষ এবং বাস্তবভিত্তিক হয়—না কি এটা আন্দোলনকারীদের দমন করার একটি প্রাতিষ্ঠানিক কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।