ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন মানেই মৃত্যুদণ্ড: ইরানে পাস হল কড়া নতুন আইন

- Update Time : ১১:৫১:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫
- / ৫৩ Time View
দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে যেকোনো ধরনের সম্পর্ক স্থাপন, যোগাযোগ কিংবা সহযোগিতাকে ‘পৃথিবীতে ফাসাদ‘ বা দুর্নীতি ছড়ানোর অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে ইরানে পাস হয়েছে এক কঠোর নতুন আইন। মঙ্গলবার (১ জুলাই) ইরানের সংসদে এ আইন সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। এ আইন অনুযায়ী, ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক, অর্থনৈতিক বা তথ্যভিত্তিক সম্পর্কের শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য ‘শত্রু রাষ্ট্রের’ সঙ্গেও যোগাযোগ রাখাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।
আইনটির প্রেক্ষাপট: ইসরায়েল–ইরান উত্তেজনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে
গত মাসে ইসরায়েলি সেনা ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ হামলায় ইরানের বেশ কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিমানঘাঁটি ধ্বংস, বিপুল সংখ্যক ভবন ও যানবাহন ধ্বংসের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি হয়। ইরান পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের অন্তত ৩১ হাজার অবকাঠামো ও ৪ হাজারের বেশি যানবাহন ধ্বংস করার দাবি করে।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই ইরানের সংসদ ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা আইন’ নামে এই বিধানটি পাস করে।
কী আছে এই নতুন আইনে?
নতুন আইনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো হলো:
- ইসরায়েল বা তার মিত্রদের সঙ্গে যেকোনো ধরনের যোগাযোগ বা সম্পর্ক স্থাপন (সামরিক, অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত বা রাজনৈতিক) করা ‘মহাপাপ‘ ও ‘ফাসাদ ফিল আরদ‘ হিসেবে বিবেচিত হবে, যার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
- ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে গুপ্তচরগিরি বা গোয়েন্দা তথ্য আদান–প্রদানের চেষ্টা করলে মৃত্যুদণ্ড প্রযোজ্য হবে।
- ইসরায়েলকে কোনোপ্রকার সহায়তা প্রদান, যেমন—অর্থ, প্রযুক্তি, বা সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করাও বেআইনি ও মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ।
- স্টারলিংকসহ অন্যান্য নিষিদ্ধ ইন্টারনেট প্রযুক্তি সরবরাহ বা ব্যবহার করলেও শাস্তি রয়েছে—ছয় মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
এই আইন পাসের পর থেকেই পশ্চিমা বিশ্বে উদ্বেগ বাড়ছে। অনেক মানবাধিকার সংগঠন এই পদক্ষেপকে চরম
তবে ইরানি কর্তৃপক্ষ বলছে,
“এই আইন আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এবং শত্রুদের চক্রান্ত রুখে দিতে একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। ইসরায়েল বারবার আমাদের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ধ্বংসের চেষ্টা করেছে—তাই আমাদের উচিত পাল্টা শক্ত অবস্থান নেওয়া।”
পারমাণবিক কর্মসূচি ও যুদ্ধের ছায়া
এই আইন এমন এক সময় পাস হলো যখন তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে পরমাণু চুক্তি পুনর্বহাল নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে একাধিক হামলা, ইসরায়েলি গোয়েন্দা হামলা ও ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমে এই আলোচনার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল ইরানের পরমাণু সক্ষমতা ধ্বংস করে দিতে চায়, আর ইরান এই আইন পাস করে বার্তা দিতে চায় যে তারা আরও কঠোর ও প্রতিরোধমুখী কৌশলে যাচ্ছে।
ইরানের এই নতুন আইন শুধু আঞ্চলিক উত্তেজনাকে আরও উসকে দেবে না, বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। এটি ইঙ্গিত করে, তেহরান ভবিষ্যতে আরও রক্ষণশীল ও কঠোর নিরাপত্তা নীতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যেখানে বিদেশি প্রভাব, বিশেষ করে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেকোনো যোগাযোগ জীবনের ঝুঁকির শামিল হতে পারে।
এখন সবার দৃষ্টি এই প্রশ্নে—এই আইন ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কতটা রক্ষা করতে পারবে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে তা কী ধরনের প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হবে?
Please Share This Post in Your Social Media

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন মানেই মৃত্যুদণ্ড: ইরানে পাস হল কড়া নতুন আইন

দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে যেকোনো ধরনের সম্পর্ক স্থাপন, যোগাযোগ কিংবা সহযোগিতাকে ‘পৃথিবীতে ফাসাদ‘ বা দুর্নীতি ছড়ানোর অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে ইরানে পাস হয়েছে এক কঠোর নতুন আইন। মঙ্গলবার (১ জুলাই) ইরানের সংসদে এ আইন সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। এ আইন অনুযায়ী, ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক, অর্থনৈতিক বা তথ্যভিত্তিক সম্পর্কের শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য ‘শত্রু রাষ্ট্রের’ সঙ্গেও যোগাযোগ রাখাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।
আইনটির প্রেক্ষাপট: ইসরায়েল–ইরান উত্তেজনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে
গত মাসে ইসরায়েলি সেনা ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ হামলায় ইরানের বেশ কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিমানঘাঁটি ধ্বংস, বিপুল সংখ্যক ভবন ও যানবাহন ধ্বংসের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি হয়। ইরান পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের অন্তত ৩১ হাজার অবকাঠামো ও ৪ হাজারের বেশি যানবাহন ধ্বংস করার দাবি করে।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই ইরানের সংসদ ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা আইন’ নামে এই বিধানটি পাস করে।
কী আছে এই নতুন আইনে?
নতুন আইনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো হলো:
- ইসরায়েল বা তার মিত্রদের সঙ্গে যেকোনো ধরনের যোগাযোগ বা সম্পর্ক স্থাপন (সামরিক, অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত বা রাজনৈতিক) করা ‘মহাপাপ‘ ও ‘ফাসাদ ফিল আরদ‘ হিসেবে বিবেচিত হবে, যার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
- ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে গুপ্তচরগিরি বা গোয়েন্দা তথ্য আদান–প্রদানের চেষ্টা করলে মৃত্যুদণ্ড প্রযোজ্য হবে।
- ইসরায়েলকে কোনোপ্রকার সহায়তা প্রদান, যেমন—অর্থ, প্রযুক্তি, বা সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করাও বেআইনি ও মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ।
- স্টারলিংকসহ অন্যান্য নিষিদ্ধ ইন্টারনেট প্রযুক্তি সরবরাহ বা ব্যবহার করলেও শাস্তি রয়েছে—ছয় মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
এই আইন পাসের পর থেকেই পশ্চিমা বিশ্বে উদ্বেগ বাড়ছে। অনেক মানবাধিকার সংগঠন এই পদক্ষেপকে চরম
তবে ইরানি কর্তৃপক্ষ বলছে,
“এই আইন আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এবং শত্রুদের চক্রান্ত রুখে দিতে একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। ইসরায়েল বারবার আমাদের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ধ্বংসের চেষ্টা করেছে—তাই আমাদের উচিত পাল্টা শক্ত অবস্থান নেওয়া।”
পারমাণবিক কর্মসূচি ও যুদ্ধের ছায়া
এই আইন এমন এক সময় পাস হলো যখন তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে পরমাণু চুক্তি পুনর্বহাল নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে একাধিক হামলা, ইসরায়েলি গোয়েন্দা হামলা ও ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমে এই আলোচনার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল ইরানের পরমাণু সক্ষমতা ধ্বংস করে দিতে চায়, আর ইরান এই আইন পাস করে বার্তা দিতে চায় যে তারা আরও কঠোর ও প্রতিরোধমুখী কৌশলে যাচ্ছে।
ইরানের এই নতুন আইন শুধু আঞ্চলিক উত্তেজনাকে আরও উসকে দেবে না, বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। এটি ইঙ্গিত করে, তেহরান ভবিষ্যতে আরও রক্ষণশীল ও কঠোর নিরাপত্তা নীতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যেখানে বিদেশি প্রভাব, বিশেষ করে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেকোনো যোগাযোগ জীবনের ঝুঁকির শামিল হতে পারে।
এখন সবার দৃষ্টি এই প্রশ্নে—এই আইন ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কতটা রক্ষা করতে পারবে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে তা কী ধরনের প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হবে?