হঠাৎ প্রকাশ্যে কেন ফ্যাসিস্ট কাদের! উদ্দেশ্য কী?

- Update Time : ০২:২০:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫
- / ৬৪ Time View
দীর্ঘ ১১ মাস আত্মগোপনের পর হঠাৎ করেই আবার প্রকাশ্যে এলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ওবায়দুল কাদের, যিনি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর নিপীড়নের মূল পরিকল্পনাকারী এবং প্রকাশ্যে গুলি চালানোর নির্দেশদাতা হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি এক মধ্যরাতের ইউটিউব ভিডিও বার্তায় তাকে দেখা যায়, যেখানে তিনি সরাসরি বিরোধীদের হুমকি ও নির্বাচন বানচালের ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তার এই উদ্ভট উপস্থিতি ও বক্তব্য ঘিরে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে নতুন করে বিতর্ক, শঙ্কা এবং নিন্দা।
এই ভিডিও বার্তায় কাদের বলেন, “আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না।” এমনকি তিনি দাবি করেন যে, “তথাকথিত সংস্কারবাদীরা একটি ‘অশুভ এলায়েন্স’ গড়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে, এবং তারা একটি ক্যাঙ্গারু কোর্ট বসিয়ে বিচার চালাচ্ছে—এই প্রহসন আমরা গুঁড়িয়ে দেব।” বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্য শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়, বরং এটি একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ, যার মাধ্যমে তিনি বর্তমান সরকারবিরোধী গণআন্দোলন ও পরিবর্তনের দাবিকে দমন করতে চাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, ‘কাউয়া কাদের’ নামে সমালোচিত এই রাজনীতিবিদ গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকেই লোকচক্ষুর আড়ালে ছিলেন। মাঝে দু’দফা অডিও বার্তায় তিনি নিজের বাথরুমে লুকিয়ে থাকার কথাও বলেছিলেন, যা নেটদুনিয়ায় হাস্যরস ও ট্রলের জন্ম দেয়। কিন্তু এতদিন ধরে তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। এবারের ভিডিও বার্তা তার আত্মগোপনের পর প্রথম দৃশ্যমান রাজনৈতিক অভিব্যক্তি।
তবে কেন হঠাৎ করে এখনই ওবায়দুল কাদেরের এই উস্কানিমূলক বক্তব্য? এর পেছনে বিশ্লেষকরা চারটি সম্ভাব্য উদ্দেশ্য চিহ্নিত করেছেন:
১. জনমনে ভয় সৃষ্টি:
প্রথমত, আসন্ন নির্বাচন ঘিরে সাধারণ জনগণের মধ্যে ভীতি ছড়ানোই হতে পারে এই বার্তার অন্যতম উদ্দেশ্য। ওবায়দুল কাদের বুঝাতে চাইছেন, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে কেউ নির্বাচন করলে তা সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতায় রূপ নেবে। এভাবে তিনি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত করতে চাচ্ছেন যাতে গণভোটে জনগণের সম্পৃক্ততা কমে যায়।
২. আত্মবিশ্বাস ফেরানোর চেষ্টা:
দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগের বিক্ষিপ্ত, মনোবলহীন ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়া নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙা করাই ছিল এই ভিডিওর লক্ষ্য। আত্মগোপনে থাকা দলের নেতৃবৃন্দের প্রতি একটা বার্তা পৌঁছানো হচ্ছে যে, “আমি আছি, আমরা আছি, দল এখনো মাঠে আছে।”
৩. আন্তর্জাতিক বার্তা প্রদান:
তৃতীয়ত, কাদেরের এ বক্তব্যের মাধ্যমে বিদেশি কূটনৈতিক, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদের একটি বার্তা দেওয়া হচ্ছে—যে আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে কোনও নির্বাচনই গ্রহণযোগ্য নয়। উদ্দেশ্য হচ্ছে—বৈদেশিক মহলে আওয়ামী লীগের গুরুত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা।
৪. অস্থিরতা ও নাশকতার প্রস্তুতি:
চতুর্থত, নির্বাচনের সময় দেশজুড়ে বড় ধরনের সহিংসতা ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা তৈরির লক্ষ্যে মফস্বল ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে চাইছেন কাদের। এমন বক্তব্যের মাধ্যমে একটি সঙ্কটকালীন রণকৌশল তৈরি করার ইঙ্গিত রয়েছে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সামগ্রিকভাবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ভিডিও বার্তাটি কোনো বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিগত উদ্যোগ নয় বরং একটি সুসংগঠিত পরিকল্পনার অংশ, যার মাধ্যমে সরকারপন্থী ঘাঁটি থেকে জনগণের বিপ্লব, সংস্কার আন্দোলন এবং নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করার প্রয়াস চলছে। এছাড়া এ বার্তা ফ্যাসিবাদী শাসনের ফিরতি ছায়া ফেলেছে দেশজুড়ে—যেখানে রাজনৈতিক মতপ্রকাশকে আবারও রক্তপাত দিয়ে দমন করার হুমকি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
সাধারণ মানুষ কী ভাবছে?
এই বক্তব্যকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাদেরের এই বক্তব্য নিয়ে রীতিমতো ট্রলের বন্যা বইছে। নেটিজেনরা বলছেন, “যে মানুষ ১১ মাস ধরে বাথরুমে ছিল, সে এখন এসে নির্বাচনের বিষয়ে হুংকার দিচ্ছে—এটাই হাস্যকর।” কেউ কেউ আবার বলছেন, “যারা নিজের ব্যর্থতা ও দুর্নীতির দায়ে পালিয়ে ছিল, তারা আবার ফিরে এসে গণতন্ত্রের কথা বলছে—এটাই হলো সবচেয়ে বড় প্রতারণা।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কাদেরের এ বক্তব্য আগুনে ঘি ঢালার মতো। তবে মানুষ এখন অনেক সচেতন। গণআন্দোলনের স্বরূপ বুঝে তারা আগেই প্রস্তুতি নিচ্ছে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার।
শেষ কথা, ফ্যাসিবাদের ছায়া থেকে মুক্তির জন্য এই মুহূর্তে প্রয়োজন ঐক্য, সাহসিকতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি আপসহীন নিষ্ঠা। কাদেরের হুংকারই তার ভয় আর দমন-পীড়নের শেষ সুর—যা জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের সামনে নিঃশেষ হবে বলেই অনেকে আশাবাদী।
Please Share This Post in Your Social Media

হঠাৎ প্রকাশ্যে কেন ফ্যাসিস্ট কাদের! উদ্দেশ্য কী?

দীর্ঘ ১১ মাস আত্মগোপনের পর হঠাৎ করেই আবার প্রকাশ্যে এলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ওবায়দুল কাদের, যিনি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর নিপীড়নের মূল পরিকল্পনাকারী এবং প্রকাশ্যে গুলি চালানোর নির্দেশদাতা হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি এক মধ্যরাতের ইউটিউব ভিডিও বার্তায় তাকে দেখা যায়, যেখানে তিনি সরাসরি বিরোধীদের হুমকি ও নির্বাচন বানচালের ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তার এই উদ্ভট উপস্থিতি ও বক্তব্য ঘিরে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে নতুন করে বিতর্ক, শঙ্কা এবং নিন্দা।
এই ভিডিও বার্তায় কাদের বলেন, “আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না।” এমনকি তিনি দাবি করেন যে, “তথাকথিত সংস্কারবাদীরা একটি ‘অশুভ এলায়েন্স’ গড়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে, এবং তারা একটি ক্যাঙ্গারু কোর্ট বসিয়ে বিচার চালাচ্ছে—এই প্রহসন আমরা গুঁড়িয়ে দেব।” বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্য শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়, বরং এটি একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ, যার মাধ্যমে তিনি বর্তমান সরকারবিরোধী গণআন্দোলন ও পরিবর্তনের দাবিকে দমন করতে চাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, ‘কাউয়া কাদের’ নামে সমালোচিত এই রাজনীতিবিদ গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকেই লোকচক্ষুর আড়ালে ছিলেন। মাঝে দু’দফা অডিও বার্তায় তিনি নিজের বাথরুমে লুকিয়ে থাকার কথাও বলেছিলেন, যা নেটদুনিয়ায় হাস্যরস ও ট্রলের জন্ম দেয়। কিন্তু এতদিন ধরে তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। এবারের ভিডিও বার্তা তার আত্মগোপনের পর প্রথম দৃশ্যমান রাজনৈতিক অভিব্যক্তি।
তবে কেন হঠাৎ করে এখনই ওবায়দুল কাদেরের এই উস্কানিমূলক বক্তব্য? এর পেছনে বিশ্লেষকরা চারটি সম্ভাব্য উদ্দেশ্য চিহ্নিত করেছেন:
১. জনমনে ভয় সৃষ্টি:
প্রথমত, আসন্ন নির্বাচন ঘিরে সাধারণ জনগণের মধ্যে ভীতি ছড়ানোই হতে পারে এই বার্তার অন্যতম উদ্দেশ্য। ওবায়দুল কাদের বুঝাতে চাইছেন, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে কেউ নির্বাচন করলে তা সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতায় রূপ নেবে। এভাবে তিনি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত করতে চাচ্ছেন যাতে গণভোটে জনগণের সম্পৃক্ততা কমে যায়।
২. আত্মবিশ্বাস ফেরানোর চেষ্টা:
দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগের বিক্ষিপ্ত, মনোবলহীন ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়া নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙা করাই ছিল এই ভিডিওর লক্ষ্য। আত্মগোপনে থাকা দলের নেতৃবৃন্দের প্রতি একটা বার্তা পৌঁছানো হচ্ছে যে, “আমি আছি, আমরা আছি, দল এখনো মাঠে আছে।”
৩. আন্তর্জাতিক বার্তা প্রদান:
তৃতীয়ত, কাদেরের এ বক্তব্যের মাধ্যমে বিদেশি কূটনৈতিক, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদের একটি বার্তা দেওয়া হচ্ছে—যে আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে কোনও নির্বাচনই গ্রহণযোগ্য নয়। উদ্দেশ্য হচ্ছে—বৈদেশিক মহলে আওয়ামী লীগের গুরুত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা।
৪. অস্থিরতা ও নাশকতার প্রস্তুতি:
চতুর্থত, নির্বাচনের সময় দেশজুড়ে বড় ধরনের সহিংসতা ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা তৈরির লক্ষ্যে মফস্বল ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে চাইছেন কাদের। এমন বক্তব্যের মাধ্যমে একটি সঙ্কটকালীন রণকৌশল তৈরি করার ইঙ্গিত রয়েছে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সামগ্রিকভাবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ভিডিও বার্তাটি কোনো বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিগত উদ্যোগ নয় বরং একটি সুসংগঠিত পরিকল্পনার অংশ, যার মাধ্যমে সরকারপন্থী ঘাঁটি থেকে জনগণের বিপ্লব, সংস্কার আন্দোলন এবং নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করার প্রয়াস চলছে। এছাড়া এ বার্তা ফ্যাসিবাদী শাসনের ফিরতি ছায়া ফেলেছে দেশজুড়ে—যেখানে রাজনৈতিক মতপ্রকাশকে আবারও রক্তপাত দিয়ে দমন করার হুমকি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
সাধারণ মানুষ কী ভাবছে?
এই বক্তব্যকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাদেরের এই বক্তব্য নিয়ে রীতিমতো ট্রলের বন্যা বইছে। নেটিজেনরা বলছেন, “যে মানুষ ১১ মাস ধরে বাথরুমে ছিল, সে এখন এসে নির্বাচনের বিষয়ে হুংকার দিচ্ছে—এটাই হাস্যকর।” কেউ কেউ আবার বলছেন, “যারা নিজের ব্যর্থতা ও দুর্নীতির দায়ে পালিয়ে ছিল, তারা আবার ফিরে এসে গণতন্ত্রের কথা বলছে—এটাই হলো সবচেয়ে বড় প্রতারণা।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কাদেরের এ বক্তব্য আগুনে ঘি ঢালার মতো। তবে মানুষ এখন অনেক সচেতন। গণআন্দোলনের স্বরূপ বুঝে তারা আগেই প্রস্তুতি নিচ্ছে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার।
শেষ কথা, ফ্যাসিবাদের ছায়া থেকে মুক্তির জন্য এই মুহূর্তে প্রয়োজন ঐক্য, সাহসিকতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি আপসহীন নিষ্ঠা। কাদেরের হুংকারই তার ভয় আর দমন-পীড়নের শেষ সুর—যা জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের সামনে নিঃশেষ হবে বলেই অনেকে আশাবাদী।