গুম-খুনের দ্রুত বিচার ও শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি খালেদা জিয়ার

- Update Time : ১০:২৩:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫
- / ৩৫ Time View
গুম-খুনের দ্রুত বিচার ও শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি খালেদা জিয়ার
“রক্তস্নাত আন্দোলনের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না”—বলেন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী
বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম, খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যার ঘটনায় একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে এসব ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি। শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং তাদের পরিবারগুলোর সম্মানজনক পুনর্বাসন ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ গঠনের বিষয়টিও জোর দিয়ে তুলে ধরেন তিনি।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) ঢাকার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের বিশেষ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বক্তব্যের শুরুতে বেগম জিয়া বলেন, “রক্তস্নাত জুলাই-আগস্ট মাস আমাদের সামনে এক বছর পর আবার হাজির হয়েছে। এই মাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় গণতন্ত্রের জন্য শহীদ হওয়া হাজারো প্রাণের কথা। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনামলে নির্যাতন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালিয়ে দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টায় বিরোধী মতকে নির্মূল করতে তারা সকল মাত্রা অতিক্রম করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “ছাত্র-জনতার সম্মিলিত গণআন্দোলনের মাধ্যমে সেই ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন ঘটেছে। এই বিজয় শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি গণমানুষের বিজয়। এই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, যারা পঙ্গু হয়েছেন, যারা নিখোঁজ হয়েছেন—তাদের সকলের আত্মত্যাগের প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। এই আত্মবলিদান জাতি চিরকাল মনে রাখবে।”
বিএনপি চেয়ারপারসন আরও বলেন, “প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডগুলো যেন সময়ের গহ্বরে হারিয়ে না যায়, সেজন্য এসব ঘটনার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে, যারা শহীদ হয়েছেন, যারা নিখোঁজ, তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে—এটাই তাদের প্রতি আমাদের ন্যূনতম দায়িত্ব।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। এদের ভবিষ্যৎ যেন অনিশ্চয়তায় না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু সম্মাননা নয়, তাদের জীবনের ন্যূনতম নিশ্চয়তা দিতে হবে। শহীদদের রক্ত যেন বৃথা না যায়, তা নিশ্চিত করতেই আমাদের এখনকার করণীয়গুলো ঠিক করতে হবে।”
বেগম খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে আরও বলেন, “প্রিয় দেশবাসী, আমাদের সামনে আজ এক ঐতিহাসিক সুযোগ এসেছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার সুরক্ষা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কোনো আপস নয়—এই প্রতিজ্ঞায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”
তিনি সবাইকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আসুন, আমরা সবাই মিলে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করি। বাস্তবায়ন করি একটি স্বাধীন, আত্মমর্যাদাশীল, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন। ঐক্য, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে জাতি আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে—এই বিশ্বাস নিয়েই আমি কথা বলছি।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যে উপস্থিত নেতাকর্মীরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। শহীদ পরিবারের সদস্যরাও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং দেশব্যাপী আরও বৃহত্তর গণজাগরণের জন্য প্রস্তুতির আহ্বান জানান।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—যে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাই এখন সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি, আর তা আদায়ের জন্য প্রয়োজন সর্বাত্মক জাতীয় ঐক্য ও দৃঢ় অঙ্গীকার।
Please Share This Post in Your Social Media

গুম-খুনের দ্রুত বিচার ও শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি খালেদা জিয়ার

গুম-খুনের দ্রুত বিচার ও শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি খালেদা জিয়ার
“রক্তস্নাত আন্দোলনের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না”—বলেন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী
বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম, খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যার ঘটনায় একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে এসব ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি। শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং তাদের পরিবারগুলোর সম্মানজনক পুনর্বাসন ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ গঠনের বিষয়টিও জোর দিয়ে তুলে ধরেন তিনি।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) ঢাকার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের বিশেষ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বক্তব্যের শুরুতে বেগম জিয়া বলেন, “রক্তস্নাত জুলাই-আগস্ট মাস আমাদের সামনে এক বছর পর আবার হাজির হয়েছে। এই মাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় গণতন্ত্রের জন্য শহীদ হওয়া হাজারো প্রাণের কথা। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনামলে নির্যাতন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালিয়ে দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টায় বিরোধী মতকে নির্মূল করতে তারা সকল মাত্রা অতিক্রম করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “ছাত্র-জনতার সম্মিলিত গণআন্দোলনের মাধ্যমে সেই ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন ঘটেছে। এই বিজয় শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি গণমানুষের বিজয়। এই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, যারা পঙ্গু হয়েছেন, যারা নিখোঁজ হয়েছেন—তাদের সকলের আত্মত্যাগের প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। এই আত্মবলিদান জাতি চিরকাল মনে রাখবে।”
বিএনপি চেয়ারপারসন আরও বলেন, “প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডগুলো যেন সময়ের গহ্বরে হারিয়ে না যায়, সেজন্য এসব ঘটনার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে, যারা শহীদ হয়েছেন, যারা নিখোঁজ, তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে—এটাই তাদের প্রতি আমাদের ন্যূনতম দায়িত্ব।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। এদের ভবিষ্যৎ যেন অনিশ্চয়তায় না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু সম্মাননা নয়, তাদের জীবনের ন্যূনতম নিশ্চয়তা দিতে হবে। শহীদদের রক্ত যেন বৃথা না যায়, তা নিশ্চিত করতেই আমাদের এখনকার করণীয়গুলো ঠিক করতে হবে।”
বেগম খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে আরও বলেন, “প্রিয় দেশবাসী, আমাদের সামনে আজ এক ঐতিহাসিক সুযোগ এসেছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার সুরক্ষা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কোনো আপস নয়—এই প্রতিজ্ঞায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”
তিনি সবাইকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আসুন, আমরা সবাই মিলে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করি। বাস্তবায়ন করি একটি স্বাধীন, আত্মমর্যাদাশীল, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন। ঐক্য, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে জাতি আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে—এই বিশ্বাস নিয়েই আমি কথা বলছি।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যে উপস্থিত নেতাকর্মীরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। শহীদ পরিবারের সদস্যরাও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং দেশব্যাপী আরও বৃহত্তর গণজাগরণের জন্য প্রস্তুতির আহ্বান জানান।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—যে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাই এখন সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি, আর তা আদায়ের জন্য প্রয়োজন সর্বাত্মক জাতীয় ঐক্য ও দৃঢ় অঙ্গীকার।