সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গুমের শিকার পারভেজের কন্যার হৃদয়বিদারক প্রশ্নে কেঁদে ফেললেন তারেক রহমান

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৭:৪৪:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫
  • / ৪৬ Time View

tarek gum 20250701191756 20250701192623

 

tarek gum 20250701191756 20250701192623

বাবার মুখ ভুলতে বসেছে কিশোরীটি। বছর বছর কেটে গেলেও আর দেখা হয়নি তার বাবার সঙ্গে। ছোট ভাইটি তো বাবার মুখই কোনোদিন দেখেনি। গুমের শিকার হওয়া ছাত্রদল নেতা পারভেজের সন্তানদের হৃদয়বিদারক বাস্তবতা উঠে এলো মঙ্গলবার (১ জুলাই) অনুষ্ঠিত একটি স্মরণ সভায়।

“আমি আর আমার ভাই বাবাকে কি কোনোদিন জড়িয়ে ধরতে পারবো না?”—ছোট্ট এই প্রশ্ন ছুঁয়ে যায় উপস্থিত সবার হৃদয়। প্রশ্নটি ছুঁড়ে দেয় কিশোরী কন্যা। এই একটিমাত্র প্রশ্নেই নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে পুরো অনুষ্ঠানস্থল। আবেগ সামলাতে পারেননি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। চোখের কোণে জমে ওঠা জল আর ধরে রাখতে পারেননি তিনি। বক্তব্য চলাকালেই একাধিকবার চোখ মুছতে দেখা যায় তাকে।

এই হৃদয়স্পর্শী দৃশ্যের জন্ম হয় রাজধানীর একটি স্থানে আয়োজিত জাতীয় ঐক্য গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক বিশেষ আলোচনা সভায়। ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের’ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি শহীদ ও গুমের শিকার পরিবারের সদস্যদের সম্মানে আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছিলেন তারেক রহমান। গুম হওয়া পারভেজের কিশোরী কন্যা যখন মঞ্চে উঠে বাবাকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানায়, তখন কেবল তারেক রহমান নয়, উপস্থিত নেতাকর্মীরাও কান্না চাপতে পারেননি। কিশোরী মেয়েটির কণ্ঠে ছিল অসীম বেদনার স্পর্শ, আর তার প্রতিটি শব্দ যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল গুম হওয়া অসংখ্য পরিবারের হৃদয়ে।

তারেক রহমান পরবর্তীতে বলেন, “এই মেয়েটির কণ্ঠে আজ শুধু একটি পরিবারের নয়—সারা জাতির আর্তনাদ উচ্চারিত হয়েছে। রাষ্ট্র যদি নাগরিকের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, তবে সেই রাষ্ট্র আর গণতান্ত্রিক থাকে না। পারভেজের সন্তানদের চোখে জল দেখে যারা ব্যথিত হয় না, তারা মানুষ নয়।”

তিনি আরও বলেন, “এই সরকার শুধু গুম-খুন করে নয়, মানুষের ভবিষ্যতও গুম করে দিয়েছে। আমরা শপথ করি, গণআন্দোলনের মাধ্যমে এই দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়ে নিখোঁজ সকল নেতাকর্মীকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে আনবো—জীবিত না হোক, অন্তত মর্যাদার সাথে।”

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, গুমের শিকার অন্যান্য নেতাদের পরিবারবর্গ এবং যুব-ছাত্র সংগঠনের নেতারা।

অনুষ্ঠানটি কেবল একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়—একটি জাতিগত যন্ত্রণা, প্রতিবাদ আর প্রতিজ্ঞার মঞ্চ হয়ে ওঠে। গুমের মতো ভয়ংকর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য এই ধরনের আয়োজন আরও ছড়িয়ে পড়ুক, এমন দাবি জানান অনেকেই।

শেষ মুহূর্তে পারভেজের কন্যার সেই প্রশ্ন আবার যেন বাতাসে ভেসে বেড়ায়—
“আমি আর আমার ভাই বাবাকে কি কোনোদিন জড়িয়ে ধরতে পারবো না?”
এই প্রশ্নই যেন হয়ে ওঠে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের নিরন্তর আকুতি ও প্রতিজ্ঞার প্রতীক।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

গুমের শিকার পারভেজের কন্যার হৃদয়বিদারক প্রশ্নে কেঁদে ফেললেন তারেক রহমান

Update Time : ০৭:৪৪:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫

 

tarek gum 20250701191756 20250701192623

বাবার মুখ ভুলতে বসেছে কিশোরীটি। বছর বছর কেটে গেলেও আর দেখা হয়নি তার বাবার সঙ্গে। ছোট ভাইটি তো বাবার মুখই কোনোদিন দেখেনি। গুমের শিকার হওয়া ছাত্রদল নেতা পারভেজের সন্তানদের হৃদয়বিদারক বাস্তবতা উঠে এলো মঙ্গলবার (১ জুলাই) অনুষ্ঠিত একটি স্মরণ সভায়।

“আমি আর আমার ভাই বাবাকে কি কোনোদিন জড়িয়ে ধরতে পারবো না?”—ছোট্ট এই প্রশ্ন ছুঁয়ে যায় উপস্থিত সবার হৃদয়। প্রশ্নটি ছুঁড়ে দেয় কিশোরী কন্যা। এই একটিমাত্র প্রশ্নেই নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে পুরো অনুষ্ঠানস্থল। আবেগ সামলাতে পারেননি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। চোখের কোণে জমে ওঠা জল আর ধরে রাখতে পারেননি তিনি। বক্তব্য চলাকালেই একাধিকবার চোখ মুছতে দেখা যায় তাকে।

এই হৃদয়স্পর্শী দৃশ্যের জন্ম হয় রাজধানীর একটি স্থানে আয়োজিত জাতীয় ঐক্য গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক বিশেষ আলোচনা সভায়। ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের’ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি শহীদ ও গুমের শিকার পরিবারের সদস্যদের সম্মানে আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছিলেন তারেক রহমান। গুম হওয়া পারভেজের কিশোরী কন্যা যখন মঞ্চে উঠে বাবাকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানায়, তখন কেবল তারেক রহমান নয়, উপস্থিত নেতাকর্মীরাও কান্না চাপতে পারেননি। কিশোরী মেয়েটির কণ্ঠে ছিল অসীম বেদনার স্পর্শ, আর তার প্রতিটি শব্দ যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল গুম হওয়া অসংখ্য পরিবারের হৃদয়ে।

তারেক রহমান পরবর্তীতে বলেন, “এই মেয়েটির কণ্ঠে আজ শুধু একটি পরিবারের নয়—সারা জাতির আর্তনাদ উচ্চারিত হয়েছে। রাষ্ট্র যদি নাগরিকের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, তবে সেই রাষ্ট্র আর গণতান্ত্রিক থাকে না। পারভেজের সন্তানদের চোখে জল দেখে যারা ব্যথিত হয় না, তারা মানুষ নয়।”

তিনি আরও বলেন, “এই সরকার শুধু গুম-খুন করে নয়, মানুষের ভবিষ্যতও গুম করে দিয়েছে। আমরা শপথ করি, গণআন্দোলনের মাধ্যমে এই দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়ে নিখোঁজ সকল নেতাকর্মীকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে আনবো—জীবিত না হোক, অন্তত মর্যাদার সাথে।”

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, গুমের শিকার অন্যান্য নেতাদের পরিবারবর্গ এবং যুব-ছাত্র সংগঠনের নেতারা।

অনুষ্ঠানটি কেবল একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়—একটি জাতিগত যন্ত্রণা, প্রতিবাদ আর প্রতিজ্ঞার মঞ্চ হয়ে ওঠে। গুমের মতো ভয়ংকর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য এই ধরনের আয়োজন আরও ছড়িয়ে পড়ুক, এমন দাবি জানান অনেকেই।

শেষ মুহূর্তে পারভেজের কন্যার সেই প্রশ্ন আবার যেন বাতাসে ভেসে বেড়ায়—
“আমি আর আমার ভাই বাবাকে কি কোনোদিন জড়িয়ে ধরতে পারবো না?”
এই প্রশ্নই যেন হয়ে ওঠে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের নিরন্তর আকুতি ও প্রতিজ্ঞার প্রতীক।