সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এনবিআরের আরও ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি তদন্তে নামলো দুদক

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৭:৫৫:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫
  • / ৭৮ Time View

nbr dudok 20250701160904 20250701193233

nbr dudok 20250701160904 20250701193233

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে আরও কড়াভাবে তৎপর হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সর্বশেষ অভিযানে এনবিআরের আরও পাঁচজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুদকের জনসংযোগ দপ্তর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

দুদকের নজরদারিতে থাকা পাঁচ কর্মকর্তার নামও প্রকাশ করা হয়েছে। তারা হলেন:

  • অতিরিক্ত কর কমিশনার আব্দুল রশীদ মিয়া
  • এনবিআর সদস্য লুতফুল আজীম
  • সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (সিআইসি) মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন
  • উপ কর কমিশনার মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলাম
  • যুগ্ম কর কমিশনার মো. তারেক হাছান

দুদকের তথ্যমতে, এই পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি দায়িত্বে থেকে দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ড, সম্পদের গোপন তথ্য এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে, গত ২৯ জুন এনবিআরের ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তাদের অধিকাংশই এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। একই পরিষদের ব্যানারে চলমান ‘সংস্কারমুখী’ আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তারা। নতুন করে যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে, তাদের মধ্যে তিনজনও সেই একই সংগঠনের সদস্য বলে জানা গেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সদস্যদের পরপর দুদকের নজরদারিতে আনার ফলে এই অনুসন্ধান প্রক্রিয়াকে নিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতিহিংসামূলক আচরণের অভিযোগ উঠতে পারে। কারণ এই সংগঠনটি সাম্প্রতিক সময়ে এনবিআরের ভেতর দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা রোধে সংস্কারের দাবি জানিয়ে ধারাবাহিক আন্দোলন করে আসছিল।

গত এক সপ্তাহ ধরে এনবিআরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটির দিনেও অফিসে উপস্থিত থেকে ‘দুর্নীতি প্রতিরোধ ও প্রশাসনিক সংস্কার’ দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, এনবিআরের অভ্যন্তরে এক ধরনের ক্ষমতাকেন্দ্রিক সিন্ডিকেট কাজ করছে যারা রাজস্ব আদায়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এবং যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি বা পোস্টিং হচ্ছে না।

দুদকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তদন্ত প্রক্রিয়া নিরপেক্ষ এবং কেবল তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে এনবিআরের ভেতরে এটি যেন কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে দমন করার চেষ্টা না হয়, সেদিকেও সতর্ক থাকতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই পরিস্থিতিতে এনবিআরের কর্মপরিবেশ আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একে সংস্কারচেষ্টার বিরুদ্ধে ‘প্রশাসনিক চাপ’ হিসেবে বিবেচনা করছেন। এমন অবস্থায় এনবিআরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে এবং জাতীয় রাজস্ব আদায়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে, দুদক এই অনুসন্ধান অব্যাহত রাখবে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে। যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষে চার্জশিটসহ মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

এনবিআরের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি এবং তার বিরুদ্ধে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিবাদ—এই দ্বৈত সঙ্কটের মাঝেই রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে সঠিক পথে রাখতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

এনবিআরের আরও ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি তদন্তে নামলো দুদক

Update Time : ০৭:৫৫:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫

nbr dudok 20250701160904 20250701193233

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে আরও কড়াভাবে তৎপর হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সর্বশেষ অভিযানে এনবিআরের আরও পাঁচজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুদকের জনসংযোগ দপ্তর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

দুদকের নজরদারিতে থাকা পাঁচ কর্মকর্তার নামও প্রকাশ করা হয়েছে। তারা হলেন:

  • অতিরিক্ত কর কমিশনার আব্দুল রশীদ মিয়া
  • এনবিআর সদস্য লুতফুল আজীম
  • সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (সিআইসি) মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন
  • উপ কর কমিশনার মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলাম
  • যুগ্ম কর কমিশনার মো. তারেক হাছান

দুদকের তথ্যমতে, এই পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি দায়িত্বে থেকে দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ড, সম্পদের গোপন তথ্য এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে, গত ২৯ জুন এনবিআরের ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তাদের অধিকাংশই এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। একই পরিষদের ব্যানারে চলমান ‘সংস্কারমুখী’ আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তারা। নতুন করে যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে, তাদের মধ্যে তিনজনও সেই একই সংগঠনের সদস্য বলে জানা গেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সদস্যদের পরপর দুদকের নজরদারিতে আনার ফলে এই অনুসন্ধান প্রক্রিয়াকে নিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতিহিংসামূলক আচরণের অভিযোগ উঠতে পারে। কারণ এই সংগঠনটি সাম্প্রতিক সময়ে এনবিআরের ভেতর দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা রোধে সংস্কারের দাবি জানিয়ে ধারাবাহিক আন্দোলন করে আসছিল।

গত এক সপ্তাহ ধরে এনবিআরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটির দিনেও অফিসে উপস্থিত থেকে ‘দুর্নীতি প্রতিরোধ ও প্রশাসনিক সংস্কার’ দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, এনবিআরের অভ্যন্তরে এক ধরনের ক্ষমতাকেন্দ্রিক সিন্ডিকেট কাজ করছে যারা রাজস্ব আদায়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এবং যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি বা পোস্টিং হচ্ছে না।

দুদকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তদন্ত প্রক্রিয়া নিরপেক্ষ এবং কেবল তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে এনবিআরের ভেতরে এটি যেন কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে দমন করার চেষ্টা না হয়, সেদিকেও সতর্ক থাকতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই পরিস্থিতিতে এনবিআরের কর্মপরিবেশ আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একে সংস্কারচেষ্টার বিরুদ্ধে ‘প্রশাসনিক চাপ’ হিসেবে বিবেচনা করছেন। এমন অবস্থায় এনবিআরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে এবং জাতীয় রাজস্ব আদায়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে, দুদক এই অনুসন্ধান অব্যাহত রাখবে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে। যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষে চার্জশিটসহ মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

এনবিআরের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি এবং তার বিরুদ্ধে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিবাদ—এই দ্বৈত সঙ্কটের মাঝেই রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে সঠিক পথে রাখতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।