সাপের কামড় থেকে বাঁচতে যে দোয়া পড়বেন: কুরআন-হাদিসের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা

- Update Time : ১১:৩৫:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
- / ৪৯ Time View
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে সাপের কামড় একটি বড় আতঙ্ক। প্রাকৃতিকভাবে সাপ, বিচ্ছু ও অন্যান্য বিষাক্ত প্রাণীর দংশন মানুষের প্রাণহানির কারণ হতে পারে। তাই ইসলাম আমাদের এ সকল ক্ষতিকর ও বিষাক্ত প্রাণী থেকে সুরক্ষা লাভের জন্য কিছু দোয়া এবং দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। এই দোয়াগুলো কেবল মুখস্থ করাই নয়, বরং বিশ্বাসের সঙ্গে তা আমলে আনা জরুরি।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শেখানো সাপের দংশন থেকে বাঁচার বিশেষ দোয়া
রাসুল (সা.) বিভিন্ন অবস্থায় কীভাবে দোয়া করতে হবে, তা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। ঘরে সাপ দেখলে যে দোয়া পড়তে হবে, তা হাদিসে এসেছে—
اِنَّا نَسْئَلُكَ بِعَهْدِ نُوْحٍ وَبِعَهْدِ سُلَيْمَانَ بْنِ دَاؤُدَ اَنْ لَا تُؤْذِيْنَا
উচ্চারণ: ইন্না নাসআলুকা বিআহদি নূহ, ওয়া বিআহদি সুলাইমানাবনি দাউদা আল্লা তুযিনা
অর্থ: “হে সাপ! আমরা নূহ (আ.) এবং সুলাইমান (আ.)-এর অঙ্গীকারের কথা তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমাদের ক্ষতি করো না।”
এই দোয়ার পেছনে একটি প্রামাণ্য হাদিস রয়েছে।
হাদিসে প্রমাণ:
হাদিস সূত্রে এসেছে—
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي لَيْلَى، عَنْ أَبِيهِ :
“أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، سُئِلَ عَنْ حَيَّاتِ الْبُيُوتِ، فَقَالَ: إِذَا رَأَيْتُمْ مِنْهُنَّ شَيْئًا فِي مَسَاكِنِكُمْ، فَقُولُوا: أَنْشُدُكُنَّ الْعَهْدَ الَّذِي أَخَذَ عَلَيْكُنَّ نُوحٌ، أَنْشُدُكُنَّ الْعَهْدَ الَّذِي أَخَذَ عَلَيْكُنَّ سُلَيْمَانُ، أَنْ لَا تُؤْذُونَا، فَإِنْ عُدْنَ، فَاقْتُلُوهُنَّ”.
(সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৫২৬০)
অর্থ: আবদুর রহমান ইবনু আবি লাইলা তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে ঘরের সাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “তোমরা যদি তোমাদের ঘরে সাপ দেখতে পাও, তাহলে বলবে—‘আমি তোমাদের কাছে সেই অঙ্গীকারের শপথ করাচ্ছি যা নূহ (আ.) এবং সুলাইমান (আ.) তোমাদের কাছ থেকে নিয়েছিলেন, যেন তোমরা আমাদের ক্ষতি না করো।’ এরপর তারা আবারও ফিরে এলে তাদের হত্যা করো।”
এটি প্রমাণ করে, হাদিসে শুধু দোয়ার কথা নয়, বরং কীভাবে দোয়ার মাধ্যমে প্রথমে সর্তকতা এবং প্রয়োজনে আত্মরক্ষার পদক্ষেপ নিতে হবে, তাও বলা হয়েছে।
সকল বিষাক্ত প্রাণী থেকে সুরক্ষার জন্য রাসুল (সা.)-এর দোয়া
আরেকটি বহুল প্রচলিত দোয়া আছে যা সকল প্রকার ক্ষতিকর প্রাণী, জিন-শয়তান এবং প্রাকৃতিক ক্ষতির হাত থেকে সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। দোয়াটি হলো—
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
উচ্চারণ: আউযু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক
অর্থ: “আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমার মাধ্যমে সৃষ্ট সকল অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।”
এই দোয়া সম্পর্কে হাদিসে এসেছে:
হাদিস:
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন,
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
“যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যায় এই দোয়া তিনবার করে পড়বে, আল্লাহ তাকে সব প্রকার অনিষ্ট, বিষাক্ত প্রাণী ও কষ্টদায়ক কিছু থেকে রক্ষা করবেন।”
(জামে তিরমিজি, হাদিস: ৩৬০৪)
এই দোয়া যেকোনো সময়, বিশেষ করে ঘুমাতে যাওয়ার আগে, ঘোর জঙ্গলে প্রবেশের সময়, পরিত্যক্ত ঘর বা জায়গায় প্রবেশের সময়, বা দুর্গম কোনো স্থানে থাকাকালে বারবার পড়া উচিত।
শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ
- ইসলাম জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা দিয়েছে, এমনকি সাপের কামড় থেকে কিভাবে বাঁচতে হবে, তাও শিক্ষা দিয়েছে।
- প্রথম দোয়াটি সাপ দেখলে শত্রুতা পরিহার করে তাকে সতর্ক করার পদ্ধতি শেখায়।
- দ্বিতীয় দোয়াটি দৈনন্দিন জীবনে যেকোনো প্রকার ক্ষতির আশঙ্কা থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য এক মহান আশ্রয় প্রার্থনার দোয়া।
- বিশ্বাস ও আমল—এই দোয়াগুলো শুধু মুখে বললেই হবে না, বরং ঈমান ও বিশ্বাস সহকারে আমল করতে হবে।
সাপের কামড় বা অন্যান্য বিষাক্ত প্রাণীর অনিষ্ট থেকে বাঁচতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শিক্ষা অনুযায়ী দোয়া পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামী শিক্ষায় প্রতিরক্ষার এই দিকটি অত্যন্ত মানবিক ও বিজ্ঞানসম্মত। তাই আমাদের উচিত, এই দোয়াগুলো শিখে রাখা, নিয়মিত আমল করা এবং পরিবারের সবাইকে শেখানো।
“দোয়া ঈমানদারদের অস্ত্র” — (হাদিস)
আসুন, আমরা আল্লাহর উপর ভরসা রেখে এই আমলগুলো নিজেদের জীবনের অংশ করি।
সূত্র:
- সুনান আবু দাউদ: হাদিস ৫২৬০
- জামে তিরমিজি: হাদিস ৩৬০৪
- সহীহ হাদিস সংকলন ও ইসলামিক স্কলারদের ব্যাখ্যা
- কুরআনের দোয়ার প্রেক্ষাপটে প্রভাবশালী তাফসির ও ফিকহ ব্যাখ্যা
Please Share This Post in Your Social Media

সাপের কামড় থেকে বাঁচতে যে দোয়া পড়বেন: কুরআন-হাদিসের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা

পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে সাপের কামড় একটি বড় আতঙ্ক। প্রাকৃতিকভাবে সাপ, বিচ্ছু ও অন্যান্য বিষাক্ত প্রাণীর দংশন মানুষের প্রাণহানির কারণ হতে পারে। তাই ইসলাম আমাদের এ সকল ক্ষতিকর ও বিষাক্ত প্রাণী থেকে সুরক্ষা লাভের জন্য কিছু দোয়া এবং দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। এই দোয়াগুলো কেবল মুখস্থ করাই নয়, বরং বিশ্বাসের সঙ্গে তা আমলে আনা জরুরি।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শেখানো সাপের দংশন থেকে বাঁচার বিশেষ দোয়া
রাসুল (সা.) বিভিন্ন অবস্থায় কীভাবে দোয়া করতে হবে, তা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। ঘরে সাপ দেখলে যে দোয়া পড়তে হবে, তা হাদিসে এসেছে—
اِنَّا نَسْئَلُكَ بِعَهْدِ نُوْحٍ وَبِعَهْدِ سُلَيْمَانَ بْنِ دَاؤُدَ اَنْ لَا تُؤْذِيْنَا
উচ্চারণ: ইন্না নাসআলুকা বিআহদি নূহ, ওয়া বিআহদি সুলাইমানাবনি দাউদা আল্লা তুযিনা
অর্থ: “হে সাপ! আমরা নূহ (আ.) এবং সুলাইমান (আ.)-এর অঙ্গীকারের কথা তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমাদের ক্ষতি করো না।”
এই দোয়ার পেছনে একটি প্রামাণ্য হাদিস রয়েছে।
হাদিসে প্রমাণ:
হাদিস সূত্রে এসেছে—
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي لَيْلَى، عَنْ أَبِيهِ :
“أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، سُئِلَ عَنْ حَيَّاتِ الْبُيُوتِ، فَقَالَ: إِذَا رَأَيْتُمْ مِنْهُنَّ شَيْئًا فِي مَسَاكِنِكُمْ، فَقُولُوا: أَنْشُدُكُنَّ الْعَهْدَ الَّذِي أَخَذَ عَلَيْكُنَّ نُوحٌ، أَنْشُدُكُنَّ الْعَهْدَ الَّذِي أَخَذَ عَلَيْكُنَّ سُلَيْمَانُ، أَنْ لَا تُؤْذُونَا، فَإِنْ عُدْنَ، فَاقْتُلُوهُنَّ”.
(সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৫২৬০)
অর্থ: আবদুর রহমান ইবনু আবি লাইলা তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে ঘরের সাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “তোমরা যদি তোমাদের ঘরে সাপ দেখতে পাও, তাহলে বলবে—‘আমি তোমাদের কাছে সেই অঙ্গীকারের শপথ করাচ্ছি যা নূহ (আ.) এবং সুলাইমান (আ.) তোমাদের কাছ থেকে নিয়েছিলেন, যেন তোমরা আমাদের ক্ষতি না করো।’ এরপর তারা আবারও ফিরে এলে তাদের হত্যা করো।”
এটি প্রমাণ করে, হাদিসে শুধু দোয়ার কথা নয়, বরং কীভাবে দোয়ার মাধ্যমে প্রথমে সর্তকতা এবং প্রয়োজনে আত্মরক্ষার পদক্ষেপ নিতে হবে, তাও বলা হয়েছে।
সকল বিষাক্ত প্রাণী থেকে সুরক্ষার জন্য রাসুল (সা.)-এর দোয়া
আরেকটি বহুল প্রচলিত দোয়া আছে যা সকল প্রকার ক্ষতিকর প্রাণী, জিন-শয়তান এবং প্রাকৃতিক ক্ষতির হাত থেকে সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। দোয়াটি হলো—
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
উচ্চারণ: আউযু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক
অর্থ: “আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমার মাধ্যমে সৃষ্ট সকল অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।”
এই দোয়া সম্পর্কে হাদিসে এসেছে:
হাদিস:
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন,
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
“যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যায় এই দোয়া তিনবার করে পড়বে, আল্লাহ তাকে সব প্রকার অনিষ্ট, বিষাক্ত প্রাণী ও কষ্টদায়ক কিছু থেকে রক্ষা করবেন।”
(জামে তিরমিজি, হাদিস: ৩৬০৪)
এই দোয়া যেকোনো সময়, বিশেষ করে ঘুমাতে যাওয়ার আগে, ঘোর জঙ্গলে প্রবেশের সময়, পরিত্যক্ত ঘর বা জায়গায় প্রবেশের সময়, বা দুর্গম কোনো স্থানে থাকাকালে বারবার পড়া উচিত।
শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ
- ইসলাম জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা দিয়েছে, এমনকি সাপের কামড় থেকে কিভাবে বাঁচতে হবে, তাও শিক্ষা দিয়েছে।
- প্রথম দোয়াটি সাপ দেখলে শত্রুতা পরিহার করে তাকে সতর্ক করার পদ্ধতি শেখায়।
- দ্বিতীয় দোয়াটি দৈনন্দিন জীবনে যেকোনো প্রকার ক্ষতির আশঙ্কা থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য এক মহান আশ্রয় প্রার্থনার দোয়া।
- বিশ্বাস ও আমল—এই দোয়াগুলো শুধু মুখে বললেই হবে না, বরং ঈমান ও বিশ্বাস সহকারে আমল করতে হবে।
সাপের কামড় বা অন্যান্য বিষাক্ত প্রাণীর অনিষ্ট থেকে বাঁচতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শিক্ষা অনুযায়ী দোয়া পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামী শিক্ষায় প্রতিরক্ষার এই দিকটি অত্যন্ত মানবিক ও বিজ্ঞানসম্মত। তাই আমাদের উচিত, এই দোয়াগুলো শিখে রাখা, নিয়মিত আমল করা এবং পরিবারের সবাইকে শেখানো।
“দোয়া ঈমানদারদের অস্ত্র” — (হাদিস)
আসুন, আমরা আল্লাহর উপর ভরসা রেখে এই আমলগুলো নিজেদের জীবনের অংশ করি।
সূত্র:
- সুনান আবু দাউদ: হাদিস ৫২৬০
- জামে তিরমিজি: হাদিস ৩৬০৪
- সহীহ হাদিস সংকলন ও ইসলামিক স্কলারদের ব্যাখ্যা
- কুরআনের দোয়ার প্রেক্ষাপটে প্রভাবশালী তাফসির ও ফিকহ ব্যাখ্যা