সরকারি হস্তক্ষেপ ও কঠোর সতর্কতায় এনবিআর সংকটের সমাধান: সব প্রশাসনে সংস্কার এখন সময়ের দাবি

- Update Time : ০৩:০৭:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
- / ১১২ Time View
সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চলমান অচলাবস্থা ও আন্দোলন সরকারি হস্তক্ষেপ এবং কঠোর সতর্কতামূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে আপাতদৃষ্টিতে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে এ ঘটনাটি এককভাবে এনবিআরের নয়, বরং এটি গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রের দীর্ঘদিনের পচন, অনিয়ম ও দুর্নীতির বহিঃপ্রকাশ। এনবিআরের এই অচলাবস্থা দেশব্যাপী রাজস্ব আহরণে স্থবিরতা, আমদানি-রপ্তানিতে বিঘ্ন এবং সরকারি আর্থিক কার্যক্রমে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলার জন্ম দেয়। এ থেকে প্রমাণিত হয়, শুধুমাত্র একটি সংস্থার অচলাবস্থা গোটা রাষ্ট্রকে কাঁপিয়ে দিতে পারে।
এই সংকট কেবল এনবিআরে সীমাবদ্ধ নয়। প্রশাসন, ব্যাংকিং খাত, বীমা প্রতিষ্ঠান, সচিবালয়, ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন, এবং মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে দীর্ঘদিন ধরে চলমান দুর্নীতি, দায়িত্বহীনতা ও জবাবদিহিহীনতা দেশের সাধারণ মানুষের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হস্তক্ষেপ এখন আবশ্যক
বর্তমান সময়ে রাষ্ট্রীয় অচলাবস্থা, দুর্নীতি ও আইন ভাঙার সংস্কৃতি এতটাই বিস্তৃত যে তা দলীয় সরকারের একক প্রচেষ্টায় সংস্কার সম্ভব নয়। একটি শক্তিশালী, নিরপেক্ষ ও জনগণের স্বার্থে নিয়োজিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা, প্রশাসনিক সংস্কার এবং আর্থিক খাতের শুদ্ধিকরণে কঠোর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে।
এই সরকার যেন কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব না করে, বরং সার্বজনীন জাতীয় স্বার্থে গণমানুষের প্রতিনিধিত্বকারী শক্তি হিসেবে কাজ করে—এমন কাঠামো নিশ্চিত করতে হবে।
দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিটি খাতে সংস্কার অত্যাবশ্যক
দেশের জনগণের করের অর্থে পরিচালিত সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব হলো জনসেবা, কিন্তু বাস্তবে আজ জনগণ নিজের অর্থ দিয়েই নির্যাতিত ও বঞ্চিত। প্রতিটি স্তরে দুর্নীতির চিত্র এমন:
- সচিবালয়: নীতিনির্ধারণের কেন্দ্র হলেও এখানেই সবচেয়ে বেশি ঘুষ, দালালচক্র ও ফাইল জটিলতা দেখা যায়।
- ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠান: রাজনৈতিক প্রভাব ও অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির কারণে খেলাপি ঋণের পাহাড় গড়ে উঠেছে।
- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর): কর আদায়ে অনিয়ম, কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির ফলে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে রাষ্ট্র।
- মাঠ প্রশাসন (থানা, জেলা পর্যায়): সাধারণ মানুষ থানায় গেলে ন্যায়বিচার নয়, বরং হয়রানি ও ঘুষের শিকার হয়। জেলা প্রশাসনেও একই অবস্থা, যা ওপেন সিক্রেট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাষ্ট্রের মালিক জনগণ—তাদের স্বার্থেই হতে হবে প্রতিটি সিদ্ধান্ত
সরকার মানেই জনগণের প্রতিনিধি। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। সেই জনগণের অর্থে পরিচালিত রাষ্ট্র যদি তার সেবার পরিবর্তে শোষণ চালায়, তাহলে সেটা প্রকৃত সরকার হতে পারে না। এখন সময় এসেছে জনগণের স্বার্থে প্রকৃত গণমুখী রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার, যেখানে কোনো ধরনের প্রশাসনিক অপচয়, রাজনৈতিক দখলদারিত্ব ও দুর্নীতিকে বরদাস্ত করা হবে না।
এনবিআর সংকট হতে হবে বৃহৎ জাতীয় শুদ্ধি অভিযানের সূচনা
এনবিআরের সংকট শুধু একটি দপ্তরের সংকট নয়, এটি গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থার গভীর ব্যাধির বহিঃপ্রকাশ। সাময়িকভাবে কিছুদিনের জন্য এই সংকট সরকার হস্তক্ষেপ করে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও, যদি গোড়ায় হাত না দেওয়া হয়, তাহলে আগামী দিনে একই রকম বা আরও ভয়াবহ অচলাবস্থার মুখোমুখি হবে দেশ।
অতএব, এখনই সময় একটি সর্বাত্মক জাতীয় শুদ্ধি অভিযান শুরুর। এবং সেই অভিযানের নেতৃত্বে থাকতে হবে একটি অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ জাতীয় সরকার—যারা দলীয় স্বার্থ নয়, দেশের মানুষ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেবে।
দুর্নীতিমুক্ত, জবাবদিহিমূলক এবং জনগণের সেবায় নিয়োজিত একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। আজ যখন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো ধ্বংসের পথে, তখন জনগণের দাবি—দলীয় নয়, জাতীয় স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে রাষ্ট্রীয় শুদ্ধি অভিযান শুরু করা হোক।
দেশকে বাঁচাতে চাই সত্যিকারের নেতৃত্ব। চাই দুর্নীতিমুক্ত, গণমুখী শাসনব্যবস্থা—যেখানে জনগণের স্বপ্ন ও স্বার্থই হবে রাষ্ট্রের মূল নীতিমালা।
Please Share This Post in Your Social Media

সরকারি হস্তক্ষেপ ও কঠোর সতর্কতায় এনবিআর সংকটের সমাধান: সব প্রশাসনে সংস্কার এখন সময়ের দাবি

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চলমান অচলাবস্থা ও আন্দোলন সরকারি হস্তক্ষেপ এবং কঠোর সতর্কতামূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে আপাতদৃষ্টিতে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে এ ঘটনাটি এককভাবে এনবিআরের নয়, বরং এটি গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রের দীর্ঘদিনের পচন, অনিয়ম ও দুর্নীতির বহিঃপ্রকাশ। এনবিআরের এই অচলাবস্থা দেশব্যাপী রাজস্ব আহরণে স্থবিরতা, আমদানি-রপ্তানিতে বিঘ্ন এবং সরকারি আর্থিক কার্যক্রমে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলার জন্ম দেয়। এ থেকে প্রমাণিত হয়, শুধুমাত্র একটি সংস্থার অচলাবস্থা গোটা রাষ্ট্রকে কাঁপিয়ে দিতে পারে।
এই সংকট কেবল এনবিআরে সীমাবদ্ধ নয়। প্রশাসন, ব্যাংকিং খাত, বীমা প্রতিষ্ঠান, সচিবালয়, ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন, এবং মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে দীর্ঘদিন ধরে চলমান দুর্নীতি, দায়িত্বহীনতা ও জবাবদিহিহীনতা দেশের সাধারণ মানুষের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হস্তক্ষেপ এখন আবশ্যক
বর্তমান সময়ে রাষ্ট্রীয় অচলাবস্থা, দুর্নীতি ও আইন ভাঙার সংস্কৃতি এতটাই বিস্তৃত যে তা দলীয় সরকারের একক প্রচেষ্টায় সংস্কার সম্ভব নয়। একটি শক্তিশালী, নিরপেক্ষ ও জনগণের স্বার্থে নিয়োজিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা, প্রশাসনিক সংস্কার এবং আর্থিক খাতের শুদ্ধিকরণে কঠোর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে।
এই সরকার যেন কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব না করে, বরং সার্বজনীন জাতীয় স্বার্থে গণমানুষের প্রতিনিধিত্বকারী শক্তি হিসেবে কাজ করে—এমন কাঠামো নিশ্চিত করতে হবে।
দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিটি খাতে সংস্কার অত্যাবশ্যক
দেশের জনগণের করের অর্থে পরিচালিত সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব হলো জনসেবা, কিন্তু বাস্তবে আজ জনগণ নিজের অর্থ দিয়েই নির্যাতিত ও বঞ্চিত। প্রতিটি স্তরে দুর্নীতির চিত্র এমন:
- সচিবালয়: নীতিনির্ধারণের কেন্দ্র হলেও এখানেই সবচেয়ে বেশি ঘুষ, দালালচক্র ও ফাইল জটিলতা দেখা যায়।
- ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠান: রাজনৈতিক প্রভাব ও অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির কারণে খেলাপি ঋণের পাহাড় গড়ে উঠেছে।
- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর): কর আদায়ে অনিয়ম, কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির ফলে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে রাষ্ট্র।
- মাঠ প্রশাসন (থানা, জেলা পর্যায়): সাধারণ মানুষ থানায় গেলে ন্যায়বিচার নয়, বরং হয়রানি ও ঘুষের শিকার হয়। জেলা প্রশাসনেও একই অবস্থা, যা ওপেন সিক্রেট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাষ্ট্রের মালিক জনগণ—তাদের স্বার্থেই হতে হবে প্রতিটি সিদ্ধান্ত
সরকার মানেই জনগণের প্রতিনিধি। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। সেই জনগণের অর্থে পরিচালিত রাষ্ট্র যদি তার সেবার পরিবর্তে শোষণ চালায়, তাহলে সেটা প্রকৃত সরকার হতে পারে না। এখন সময় এসেছে জনগণের স্বার্থে প্রকৃত গণমুখী রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার, যেখানে কোনো ধরনের প্রশাসনিক অপচয়, রাজনৈতিক দখলদারিত্ব ও দুর্নীতিকে বরদাস্ত করা হবে না।
এনবিআর সংকট হতে হবে বৃহৎ জাতীয় শুদ্ধি অভিযানের সূচনা
এনবিআরের সংকট শুধু একটি দপ্তরের সংকট নয়, এটি গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থার গভীর ব্যাধির বহিঃপ্রকাশ। সাময়িকভাবে কিছুদিনের জন্য এই সংকট সরকার হস্তক্ষেপ করে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও, যদি গোড়ায় হাত না দেওয়া হয়, তাহলে আগামী দিনে একই রকম বা আরও ভয়াবহ অচলাবস্থার মুখোমুখি হবে দেশ।
অতএব, এখনই সময় একটি সর্বাত্মক জাতীয় শুদ্ধি অভিযান শুরুর। এবং সেই অভিযানের নেতৃত্বে থাকতে হবে একটি অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ জাতীয় সরকার—যারা দলীয় স্বার্থ নয়, দেশের মানুষ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেবে।
দুর্নীতিমুক্ত, জবাবদিহিমূলক এবং জনগণের সেবায় নিয়োজিত একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। আজ যখন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো ধ্বংসের পথে, তখন জনগণের দাবি—দলীয় নয়, জাতীয় স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে রাষ্ট্রীয় শুদ্ধি অভিযান শুরু করা হোক।
দেশকে বাঁচাতে চাই সত্যিকারের নেতৃত্ব। চাই দুর্নীতিমুক্ত, গণমুখী শাসনব্যবস্থা—যেখানে জনগণের স্বপ্ন ও স্বার্থই হবে রাষ্ট্রের মূল নীতিমালা।