সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মালয়েশিয়ায় আইএস সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক ৩৬ বাংলাদেশি: চরমপন্থি নেটওয়ার্ক তৈরির চেষ্টা

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৫:৪৮:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
  • / ৬৪ Time View

556165a3f551d3aa18775cb258570c22 686251b798802

556165a3f551d3aa18775cb258570c22 686251b798802

মালয়েশিয়ায় আটক ৩৬ জন বাংলাদেশি আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে নজরদারিতে রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটির পুলিশ মহাপরিদর্শক দাতুক সেরি মোহাম্মদ খালিদ ইসমাইল। মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবিরোধী আইন “সিকিউরিটি অফেন্সেস (স্পেশাল মেজারস) অ্যাক্ট ২০১২”-এর আওতায় এই বাংলাদেশিদের গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ প্রধান খালিদ ইসমাইল জানান, আটককৃতদের মধ্যে কিছু বাংলাদেশিকে ইতোমধ্যেই নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং বর্তমানে তারা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। তিনি বলেন, “তাদের চরমপন্থি কর্মকাণ্ড ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। শিগগিরই আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।”

সংবাদমাধ্যম নিউ স্ট্রেইট টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বিত অভিযানের ভিত্তিতে সেলাঙ্গর ও জোহর প্রদেশে তিন ধাপে অভিযান চালিয়ে ৩৬ জন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়। এই নিরাপত্তা অভিযান শুরু হয়েছিল গত ২৪ এপ্রিল। অভিযান পরিচালনায় মালয়েশিয়ার সন্ত্রাসবাদবিরোধী ইউনিট, স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং অভিবাসন বিভাগ একযোগে কাজ করেছে।

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি সাইফুদ্দিন নাসুতিওন ইসমাইল বলেন, “এই বাংলাদেশিদের মধ্যে ৫ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ-সম্পর্কিত অপরাধের অভিযোগ এনে শাহ আলম এবং জোহর বারু সেশন কোর্টে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আরও ১৫ জনকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৬ জন এখনো তদন্তাধীন রয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।”

মালয়েশিয়ার গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে, এই বাংলাদেশিরা আইএস-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে একটি নতুন উগ্রপন্থি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে আইএস মতাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া, অর্থ সংগ্রহ করা এবং দেশে সরকারবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনের জন্য জনবল ও অবকাঠামো গড়ে তোলা।

বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের চরমপন্থি নেটওয়ার্ক শুধু মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যই হুমকি নয়, বরং বাংলাদেশকেও নতুন করে নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। এই ঘটনা বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এদিকে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানা গেছে। দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোও বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে, যাতে এসব ব্যক্তির দেশীয় সংযোগ এবং উদ্দেশ্য যাচাই করে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আইএস-এর কার্যক্রম গত কয়েক বছরে সীমিত হয়ে এলেও তাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত কিছু বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী এখনো সক্রিয় রয়েছে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। মালয়েশিয়ার মতো দেশে, যেখানে বিপুল সংখ্যক বিদেশি শ্রমিক রয়েছে, সেখানে এমন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা উদ্বেগজনক।

উল্লেখ্য, অতীতেও মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে চরমপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এত বড় পরিসরে বাংলাদেশি নাগরিকদের একটি সংঘবদ্ধ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা এই প্রথম ধরা পড়লো বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বাংলাদেশের সমাজ ও প্রশাসনে এই ঘটনাটি গভীর আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবাসীদের নিরাপত্তা, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আন্তর্জাতিক ইমেজ রক্ষায় এখনই কঠোর নজরদারি এবং সচেতনতামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

মালয়েশিয়ায় আইএস সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক ৩৬ বাংলাদেশি: চরমপন্থি নেটওয়ার্ক তৈরির চেষ্টা

Update Time : ০৫:৪৮:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

556165a3f551d3aa18775cb258570c22 686251b798802

মালয়েশিয়ায় আটক ৩৬ জন বাংলাদেশি আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে নজরদারিতে রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটির পুলিশ মহাপরিদর্শক দাতুক সেরি মোহাম্মদ খালিদ ইসমাইল। মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবিরোধী আইন “সিকিউরিটি অফেন্সেস (স্পেশাল মেজারস) অ্যাক্ট ২০১২”-এর আওতায় এই বাংলাদেশিদের গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ প্রধান খালিদ ইসমাইল জানান, আটককৃতদের মধ্যে কিছু বাংলাদেশিকে ইতোমধ্যেই নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং বর্তমানে তারা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। তিনি বলেন, “তাদের চরমপন্থি কর্মকাণ্ড ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। শিগগিরই আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।”

সংবাদমাধ্যম নিউ স্ট্রেইট টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বিত অভিযানের ভিত্তিতে সেলাঙ্গর ও জোহর প্রদেশে তিন ধাপে অভিযান চালিয়ে ৩৬ জন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়। এই নিরাপত্তা অভিযান শুরু হয়েছিল গত ২৪ এপ্রিল। অভিযান পরিচালনায় মালয়েশিয়ার সন্ত্রাসবাদবিরোধী ইউনিট, স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং অভিবাসন বিভাগ একযোগে কাজ করেছে।

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি সাইফুদ্দিন নাসুতিওন ইসমাইল বলেন, “এই বাংলাদেশিদের মধ্যে ৫ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ-সম্পর্কিত অপরাধের অভিযোগ এনে শাহ আলম এবং জোহর বারু সেশন কোর্টে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আরও ১৫ জনকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৬ জন এখনো তদন্তাধীন রয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।”

মালয়েশিয়ার গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে, এই বাংলাদেশিরা আইএস-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে একটি নতুন উগ্রপন্থি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে আইএস মতাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া, অর্থ সংগ্রহ করা এবং দেশে সরকারবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনের জন্য জনবল ও অবকাঠামো গড়ে তোলা।

বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের চরমপন্থি নেটওয়ার্ক শুধু মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যই হুমকি নয়, বরং বাংলাদেশকেও নতুন করে নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। এই ঘটনা বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এদিকে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানা গেছে। দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোও বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে, যাতে এসব ব্যক্তির দেশীয় সংযোগ এবং উদ্দেশ্য যাচাই করে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আইএস-এর কার্যক্রম গত কয়েক বছরে সীমিত হয়ে এলেও তাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত কিছু বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী এখনো সক্রিয় রয়েছে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। মালয়েশিয়ার মতো দেশে, যেখানে বিপুল সংখ্যক বিদেশি শ্রমিক রয়েছে, সেখানে এমন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা উদ্বেগজনক।

উল্লেখ্য, অতীতেও মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে চরমপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এত বড় পরিসরে বাংলাদেশি নাগরিকদের একটি সংঘবদ্ধ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা এই প্রথম ধরা পড়লো বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বাংলাদেশের সমাজ ও প্রশাসনে এই ঘটনাটি গভীর আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবাসীদের নিরাপত্তা, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আন্তর্জাতিক ইমেজ রক্ষায় এখনই কঠোর নজরদারি এবং সচেতনতামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।