সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

“দুদকের তদন্তে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই” — অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১১:০১:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
  • / ১০৫ Time View

13ed4d6b935f29355eb9bae61714dcb3 6862a1cb4990c

13ed4d6b935f29355eb9bae61714dcb3 6862a1cb4990c

 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কয়েকজন কর্মকর্তা ও আন্দোলনকারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চলমান অনুসন্ধান নিয়ে বিতর্কের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, দুদকের কার্যক্রমে সরকারের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ নেই।

সোমবার (৩০ জুন) সচিবালয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত ৭২টি প্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন বাজেট ব্যবস্থা ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারও উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিকরা জানতে চান— এনবিআরের চলমান আন্দোলনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান আদৌ কি আগের সরকারের ধারাবাহিক কোনো পদক্ষেপ, নাকি তা নতুন সরকারের চাপ? জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। অতীতে অনেক সময় সরকারি কর্মকর্তা বা গভর্নররা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করলেও, এখন সেই ধারা বদলে গেছে। দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান, তারা আইন অনুযায়ী কাজ করছে।”

তিনি বলেন, “অনেকে প্রশ্ন তুলছেন— এই সময়েই কেন অনুসন্ধান শুরু হলো? কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এনবিআর এবং বন্দর কার্যক্রম স্থবির থাকায় ব্যবসায়ী মহলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন অভিযোগ নিয়ে আসছিলেন। রাজস্ব আদায় বন্ধ থাকা কিংবা বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বিঘ্ন—এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, “এনবিআর বা বন্দর জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান— এগুলো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। কেউ যদি একতরফাভাবে সেবা বন্ধ করে দেন, তা দেশের স্বার্থবিরোধী। তবে ইতোমধ্যে সমস্যা সমাধানের দিকে অগ্রসর হওয়া সরকারের জন্য আশাব্যঞ্জক।”

আন্দোলনকারী এনবিআর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করুন। ভয় বা পক্ষপাত ছাড়াই জনসেবা নিশ্চিত করুন। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মধ্য দিয়ে কাজ করুন। কেউ নিয়ম লঙ্ঘন করলে, তার জবাবদিহি করতেই হবে—এটাই স্বাভাবিক রাষ্ট্রীয় প্রক্রিয়া।”

উল্লেখ্য, সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগে এনবিআরের ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। অভিযুক্তরা হলেন—

    style="text-align: justify;">
  • এ কে এম বদিউল আলম (সদস্য, আয়কর নীতি বিভাগ),
  • হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার (অতিরিক্ত মহাপরিচালক, নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা অধিদপ্তর),
  • মির্জা আশিক রানা,
  • মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা,
  • সাধন কুমার কুণ্ডু,
  • মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দীন খান।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, অনুসন্ধানে থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে পাঁচজন এনবিআরের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এর মধ্যে তারেক রিকাবদার এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি, যিনি সম্প্রতি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে সরকারের নিরপেক্ষ অবস্থান এবং দুদকের স্বাধীনভাবে কাজ করার ঘোষণার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেওয়া হলো— যে কেউ যদি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকে, প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় হলেও, তদন্ত ও জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

“দুদকের তদন্তে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই” — অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন

Update Time : ১১:০১:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

13ed4d6b935f29355eb9bae61714dcb3 6862a1cb4990c

 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কয়েকজন কর্মকর্তা ও আন্দোলনকারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চলমান অনুসন্ধান নিয়ে বিতর্কের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, দুদকের কার্যক্রমে সরকারের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ নেই।

সোমবার (৩০ জুন) সচিবালয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত ৭২টি প্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন বাজেট ব্যবস্থা ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারও উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিকরা জানতে চান— এনবিআরের চলমান আন্দোলনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান আদৌ কি আগের সরকারের ধারাবাহিক কোনো পদক্ষেপ, নাকি তা নতুন সরকারের চাপ? জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। অতীতে অনেক সময় সরকারি কর্মকর্তা বা গভর্নররা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করলেও, এখন সেই ধারা বদলে গেছে। দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান, তারা আইন অনুযায়ী কাজ করছে।”

তিনি বলেন, “অনেকে প্রশ্ন তুলছেন— এই সময়েই কেন অনুসন্ধান শুরু হলো? কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এনবিআর এবং বন্দর কার্যক্রম স্থবির থাকায় ব্যবসায়ী মহলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন অভিযোগ নিয়ে আসছিলেন। রাজস্ব আদায় বন্ধ থাকা কিংবা বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বিঘ্ন—এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, “এনবিআর বা বন্দর জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান— এগুলো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। কেউ যদি একতরফাভাবে সেবা বন্ধ করে দেন, তা দেশের স্বার্থবিরোধী। তবে ইতোমধ্যে সমস্যা সমাধানের দিকে অগ্রসর হওয়া সরকারের জন্য আশাব্যঞ্জক।”

আন্দোলনকারী এনবিআর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করুন। ভয় বা পক্ষপাত ছাড়াই জনসেবা নিশ্চিত করুন। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মধ্য দিয়ে কাজ করুন। কেউ নিয়ম লঙ্ঘন করলে, তার জবাবদিহি করতেই হবে—এটাই স্বাভাবিক রাষ্ট্রীয় প্রক্রিয়া।”

উল্লেখ্য, সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগে এনবিআরের ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। অভিযুক্তরা হলেন—

    style="text-align: justify;">
  • এ কে এম বদিউল আলম (সদস্য, আয়কর নীতি বিভাগ),
  • হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার (অতিরিক্ত মহাপরিচালক, নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা অধিদপ্তর),
  • মির্জা আশিক রানা,
  • মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা,
  • সাধন কুমার কুণ্ডু,
  • মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দীন খান।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, অনুসন্ধানে থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে পাঁচজন এনবিআরের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এর মধ্যে তারেক রিকাবদার এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি, যিনি সম্প্রতি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে সরকারের নিরপেক্ষ অবস্থান এবং দুদকের স্বাধীনভাবে কাজ করার ঘোষণার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেওয়া হলো— যে কেউ যদি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকে, প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় হলেও, তদন্ত ও জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।