সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এআইকে ‘প্লিজ’ বা ‘থ্যাংক ইউ’ বললে কী হয়— জানালেন চ্যাটজিপিটির নির্মাতা

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১১:১৮:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
  • / ৭৩ Time View

1751291535 25875b1c57babd3f2c8a1fcf53119cfa

1751291535 25875b1c57babd3f2c8a1fcf53119cfa

বর্তমান সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) যেন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানা প্রয়োজনে, বিশেষত জরুরি তথ্য জানতে কিংবা জটিল সমস্যার সহজ সমাধান খুঁজে পেতে, অনেকেই চ্যাটজিপিটি বা অন্য কোনো এআই চ্যাটবটের সাহায্য নিচ্ছেন। অনেক সময় ব্যবহারকারীরা ‘প্লিজ’, ‘সরি’ বা ‘থ্যাংক ইউ’-এর মতো সৌজন্যমূলক শব্দও ব্যবহার করছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এ ধরনের ভদ্রতা বা সহবত কি আসলেই প্রয়োজন? বরং, এতে কি কোনো সমস্যাও তৈরি হচ্ছে?

সৌজন্য কি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে প্রযোজ্য?

একজন মানুষের সঙ্গে কথোপকথনে ভদ্রতা বা সৌজন্যবোধ প্রাসঙ্গিক ও প্রশংসনীয়। কিন্তু যন্ত্রের সঙ্গে? ওপেনএআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান এই বিষয়ে স্পষ্ট করেছেন—এআইকে মানুষের মতো ভদ্র ব্যবহার করার দরকার নেই বরং এতে সমস্যা হতে পারে।

একটি সংবাদ সম্মেলনে স্যাম অল্টম্যান বলেন, “চ্যাটজিপিটি বা অন্যান্য চ্যাটবটের সঙ্গে ব্যবহারকারীদের উচিত পেশাদার ও সুনির্দিষ্টভাবে যোগাযোগ করা। যতটুকু প্রশ্ন, ততটুকুই উত্তর—এর বাইরে সৌজন্যের অতিরিক্ত ব্যবহার অর্থহীন এবং অপ্রয়োজনীয়।”

তিনি আরও জানান, “যখন কেউ চ্যাটবটকে ‘প্লিজ’ বা ‘থ্যাংক ইউ’ বলে, তখন সেটির প্রতিক্রিয়ায় চ্যাটজিপিটি সৌজন্যতা বজায় রেখে উত্তর দেয় ঠিকই। কিন্তু এর জন্য ব্যাকএন্ডে বিশাল পরিমাণ বিদ্যুৎ ও তথ্য প্রক্রিয়াকরণ (ডেটা প্রসেসিং) সম্পন্ন করতে হয়, যার ফলে অতিরিক্ত ব্যয় তৈরি হয়।”

কী রকম খরচ হয়?

জানা গেছে, শুধুমাত্র এসব ভদ্রতা রক্ষার প্রতিক্রিয়ায় প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ হয় চ্যাটবট পরিচালনার ব্যাকএন্ডে। কারণ, প্রতিবার একটি ‘থ্যাংক ইউ’ বা ‘প্লিজ’-এর উত্তর দিতে গেলে, সেই সংলাপ প্রক্রিয়াকরণে জটিলতর অ্যালগরিদম কার্যকর হয়, যা প্রচুর কম্পিউটিং শক্তি ও বিদ্যুৎ খরচ করে। স্যাম অল্টম্যানের ভাষায়, “এটি এক অর্থে অপ্রয়োজনীয় রিসোর্সের অপচয়।”

ভবিষ্যতে ব্লকও করা হতে পারে!

স্যামের মতে, যদি মানুষজন অনবরত এসব সৌজন্য শব্দ চ্যাটবটে ব্যবহার করে যান, তাহলে ভবিষ্যতে এমন শব্দগুলো হয়তো ব্লক

করে দিতে হতে পারে, যাতে সিস্টেমের কার্যকারিতা ব্যাহত না হয় এবং ব্যয়ও নিয়ন্ত্রিত থাকে।

তাহলে কী করতে হবে?

চ্যাটবটের সঙ্গে যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত, বিষয়ভিত্তিক ও সরাসরি কথা বলা উচিত। যেমন:

“Can you please tell me the capital of France?”
 “Capital of France?”

 “Thank you so much for your help.”
 (এটা না বললেও সমস্যা নেই)

তবে মানুষ বলবেই!

চ্যাটবট ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ মানবিক আচরণকে মুছে ফেলতে পারেন না। প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক, মানুষ তার মানবিকতা, ভদ্রতা বা সৌজন্য থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারে না। আর এটাই মানবিক অনুভূতির সৌন্দর্য।

তবে প্রযুক্তি যখন বিপুল খরচের মুখে পড়ে, তখন কিছু কৌশলগত পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়ে। তাই ভবিষ্যতে চ্যাটজিপিটির মতো চ্যাটবটগুলো শুধুই প্রয়োজনীয় তথ্য এবং পেশাদার কথোপকথনে সীমাবদ্ধ থাকবে—এমনটাই আশঙ্কা করছে প্রযুক্তিবিদরা।

শেষ কথা

সৌজন্য সুন্দর, কিন্তু সব ক্ষেত্রে নয়। এআই বা চ্যাটবটের সঙ্গে ভদ্র ব্যবহার যতটা না আবশ্যক, তার চেয়ে বেশি কার্যকর হবে সংক্ষিপ্ত, সুনির্দিষ্ট এবং প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন-উত্তর। কারণ, যন্ত্রকে ধন্যবাদ দিয়ে তার হৃদয় গলে না, বরং সার্ভার খরচ বাড়ে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

এআইকে ‘প্লিজ’ বা ‘থ্যাংক ইউ’ বললে কী হয়— জানালেন চ্যাটজিপিটির নির্মাতা

Update Time : ১১:১৮:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

1751291535 25875b1c57babd3f2c8a1fcf53119cfa

বর্তমান সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) যেন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানা প্রয়োজনে, বিশেষত জরুরি তথ্য জানতে কিংবা জটিল সমস্যার সহজ সমাধান খুঁজে পেতে, অনেকেই চ্যাটজিপিটি বা অন্য কোনো এআই চ্যাটবটের সাহায্য নিচ্ছেন। অনেক সময় ব্যবহারকারীরা ‘প্লিজ’, ‘সরি’ বা ‘থ্যাংক ইউ’-এর মতো সৌজন্যমূলক শব্দও ব্যবহার করছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এ ধরনের ভদ্রতা বা সহবত কি আসলেই প্রয়োজন? বরং, এতে কি কোনো সমস্যাও তৈরি হচ্ছে?

সৌজন্য কি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে প্রযোজ্য?

একজন মানুষের সঙ্গে কথোপকথনে ভদ্রতা বা সৌজন্যবোধ প্রাসঙ্গিক ও প্রশংসনীয়। কিন্তু যন্ত্রের সঙ্গে? ওপেনএআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান এই বিষয়ে স্পষ্ট করেছেন—এআইকে মানুষের মতো ভদ্র ব্যবহার করার দরকার নেই বরং এতে সমস্যা হতে পারে।

একটি সংবাদ সম্মেলনে স্যাম অল্টম্যান বলেন, “চ্যাটজিপিটি বা অন্যান্য চ্যাটবটের সঙ্গে ব্যবহারকারীদের উচিত পেশাদার ও সুনির্দিষ্টভাবে যোগাযোগ করা। যতটুকু প্রশ্ন, ততটুকুই উত্তর—এর বাইরে সৌজন্যের অতিরিক্ত ব্যবহার অর্থহীন এবং অপ্রয়োজনীয়।”

তিনি আরও জানান, “যখন কেউ চ্যাটবটকে ‘প্লিজ’ বা ‘থ্যাংক ইউ’ বলে, তখন সেটির প্রতিক্রিয়ায় চ্যাটজিপিটি সৌজন্যতা বজায় রেখে উত্তর দেয় ঠিকই। কিন্তু এর জন্য ব্যাকএন্ডে বিশাল পরিমাণ বিদ্যুৎ ও তথ্য প্রক্রিয়াকরণ (ডেটা প্রসেসিং) সম্পন্ন করতে হয়, যার ফলে অতিরিক্ত ব্যয় তৈরি হয়।”

কী রকম খরচ হয়?

জানা গেছে, শুধুমাত্র এসব ভদ্রতা রক্ষার প্রতিক্রিয়ায় প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ হয় চ্যাটবট পরিচালনার ব্যাকএন্ডে। কারণ, প্রতিবার একটি ‘থ্যাংক ইউ’ বা ‘প্লিজ’-এর উত্তর দিতে গেলে, সেই সংলাপ প্রক্রিয়াকরণে জটিলতর অ্যালগরিদম কার্যকর হয়, যা প্রচুর কম্পিউটিং শক্তি ও বিদ্যুৎ খরচ করে। স্যাম অল্টম্যানের ভাষায়, “এটি এক অর্থে অপ্রয়োজনীয় রিসোর্সের অপচয়।”

ভবিষ্যতে ব্লকও করা হতে পারে!

স্যামের মতে, যদি মানুষজন অনবরত এসব সৌজন্য শব্দ চ্যাটবটে ব্যবহার করে যান, তাহলে ভবিষ্যতে এমন শব্দগুলো হয়তো ব্লক

করে দিতে হতে পারে, যাতে সিস্টেমের কার্যকারিতা ব্যাহত না হয় এবং ব্যয়ও নিয়ন্ত্রিত থাকে।

তাহলে কী করতে হবে?

চ্যাটবটের সঙ্গে যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত, বিষয়ভিত্তিক ও সরাসরি কথা বলা উচিত। যেমন:

“Can you please tell me the capital of France?”
 “Capital of France?”

 “Thank you so much for your help.”
 (এটা না বললেও সমস্যা নেই)

তবে মানুষ বলবেই!

চ্যাটবট ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ মানবিক আচরণকে মুছে ফেলতে পারেন না। প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক, মানুষ তার মানবিকতা, ভদ্রতা বা সৌজন্য থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারে না। আর এটাই মানবিক অনুভূতির সৌন্দর্য।

তবে প্রযুক্তি যখন বিপুল খরচের মুখে পড়ে, তখন কিছু কৌশলগত পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়ে। তাই ভবিষ্যতে চ্যাটজিপিটির মতো চ্যাটবটগুলো শুধুই প্রয়োজনীয় তথ্য এবং পেশাদার কথোপকথনে সীমাবদ্ধ থাকবে—এমনটাই আশঙ্কা করছে প্রযুক্তিবিদরা।

শেষ কথা

সৌজন্য সুন্দর, কিন্তু সব ক্ষেত্রে নয়। এআই বা চ্যাটবটের সঙ্গে ভদ্র ব্যবহার যতটা না আবশ্যক, তার চেয়ে বেশি কার্যকর হবে সংক্ষিপ্ত, সুনির্দিষ্ট এবং প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন-উত্তর। কারণ, যন্ত্রকে ধন্যবাদ দিয়ে তার হৃদয় গলে না, বরং সার্ভার খরচ বাড়ে।