সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অর্থবছরের শেষ দিনে ৩,৬০,৯২০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়: কর্মবিরতি প্রত্যাহারে স্বস্তি ফিরেছে এনবিআরে

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৬:১১:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
  • / ৪৯ Time View

5d78fa12e9b25218f43a039d27050b8219675bdd37d5247 yXaFaLk.original

5d78fa12e9b25218f43a039d27050b8219675bdd37d5247 yXaFaLk.original
 

অর্থবছরের শেষ দিনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে রাজস্ব আদায়ে। সোমবার (৩০ জুন) সকাল ১০টা পর্যন্ত ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের তথ্য নিশ্চিত করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর অন্যতম প্রধান এই সংস্থার সাম্প্রতিক সংকট ও আন্দোলনের মধ্যেও এমন আয় নিয়ে আশাবাদী এনবিআর কর্মকর্তারা।

গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি, কলম বিরতি এবং শাটডাউন কর্মসূচির ফলে দেশের রাজস্ব সংগ্রহ কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছিল। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমসহ সাধারণ ব্যবসা-বাণিজ্যেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে রোববার সন্ধ্যায় আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এবং কর্মকর্তাদের কাজে ফেরার মাধ্যমে সেই অচলাবস্থার অবসান ঘটে। পরদিন সকাল থেকেই এনবিআরের সকল দপ্তরে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসে।

এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, কাস্টমস হাউজগুলো রোববার বিকাল থেকেই কাজ শুরু করেছে। কর্মবিরতি প্রত্যাহারের কারণে কাস্টমস, ভ্যাট, কর অফিস এবং আইসিডিসহ সব ইউনিটে পূর্ণ উপস্থিতিতে কাজ চলছে। তিনি বলেন, “সবাই কাজে ফিরেছেন, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত স্বস্তির। বিশেষ করে ব্যবসায়ী ও নীতি নির্ধারকদের জন্য এটি স্বস্তিদায়ক খবর।”

চেয়ারম্যান আরও বলেন, “গত অর্থবছরের তুলনায় এবারের রাজস্ব আদায় বেশি হবে, এটা নিশ্চিত। তবে আন্দোলনের কারণে কিছুটা ধাক্কা খেয়েছি। তারপরও রাজস্ব সংগ্রহের গতি ধরে রাখার জন্য সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করছে।” তিনি জানান, “আজ (৩০ জুন) সকাল ১০টা পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। ট্রেজারিতে জমা হওয়া অর্থের পূর্ণাঙ্গ হিসাব আগামীকাল পাওয়া যাবে।”

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “সরকারি প্রকল্পের কর ও মূসকের বিল সমন্বয়ের জন্য কিছু সময় লাগবে। জুন মাসের ক্লোজিং প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা দেরি হয়। চূড়ান্ত হিসাব আসতে আরও ২-৩ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।”

রাজস্ব সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় এখন এনবিআর আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে বলেও জানান তিনি। “আমরা এখন ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নয়, বরং ‘আইবাস’ (iBAS++) এর মাধ্যমে আদায় রিপোর্ট করি। ফলে রিপোর্টিং আরও স্বচ্ছ ও সিস্টেমেটিক হয়েছে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিমাণ রাজস্ব আদায় সরকারের উন্নয়ন ব্যয়, সরকারি খরচ এবং বাজেট ঘাটতি মোকাবেলায় সহায়ক হবে। এনবিআরের এই অগ্রগতি চলমান অর্থনৈতিক চাপের মাঝে সরকারের জন্য এক ধরনের স্বস্তি এনে দিয়েছে।

ব্যবসায়ী মহল, বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানি খাতে জড়িতরা এনবিআরের কাজে ফেরাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো আগেই জানিয়েছিল যে, এনবিআরের কর্মবিরতির ফলে শুল্কায়ন ও চালান ছাড় প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। তাই এ অবস্থার অবসান তাদের জন্য আশার সঞ্চার করেছে।

রাজস্ব বোর্ডের আন্দোলনের পেছনে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ, মানবসম্পদ নীতির সংস্কার ও প্রশাসনিক স্বাধীনতা দাবি ছিল। তবে সর্বশেষ আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান এবং কর্মসূচি প্রত্যাহার প্রমাণ করে যে প্রশাসনিক উদ্যোগ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে যেকোনো জটিলতার সমাধান সম্ভব।

সার্বিক বিবেচনায়, অর্থবছরের শেষ দিনে এনবিআরের এই রাজস্ব আদায় শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, বরং এটি দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এখন প্রত্যাশা করা যায়, আগামী অর্থবছরে এই ধারা বজায় রেখে আরও উন্নত, স্বচ্ছ ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

অর্থবছরের শেষ দিনে ৩,৬০,৯২০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়: কর্মবিরতি প্রত্যাহারে স্বস্তি ফিরেছে এনবিআরে

Update Time : ০৬:১১:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
5d78fa12e9b25218f43a039d27050b8219675bdd37d5247 yXaFaLk.original
 

অর্থবছরের শেষ দিনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে রাজস্ব আদায়ে। সোমবার (৩০ জুন) সকাল ১০টা পর্যন্ত ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের তথ্য নিশ্চিত করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর অন্যতম প্রধান এই সংস্থার সাম্প্রতিক সংকট ও আন্দোলনের মধ্যেও এমন আয় নিয়ে আশাবাদী এনবিআর কর্মকর্তারা।

গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি, কলম বিরতি এবং শাটডাউন কর্মসূচির ফলে দেশের রাজস্ব সংগ্রহ কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছিল। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমসহ সাধারণ ব্যবসা-বাণিজ্যেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে রোববার সন্ধ্যায় আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এবং কর্মকর্তাদের কাজে ফেরার মাধ্যমে সেই অচলাবস্থার অবসান ঘটে। পরদিন সকাল থেকেই এনবিআরের সকল দপ্তরে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসে।

এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, কাস্টমস হাউজগুলো রোববার বিকাল থেকেই কাজ শুরু করেছে। কর্মবিরতি প্রত্যাহারের কারণে কাস্টমস, ভ্যাট, কর অফিস এবং আইসিডিসহ সব ইউনিটে পূর্ণ উপস্থিতিতে কাজ চলছে। তিনি বলেন, “সবাই কাজে ফিরেছেন, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত স্বস্তির। বিশেষ করে ব্যবসায়ী ও নীতি নির্ধারকদের জন্য এটি স্বস্তিদায়ক খবর।”

চেয়ারম্যান আরও বলেন, “গত অর্থবছরের তুলনায় এবারের রাজস্ব আদায় বেশি হবে, এটা নিশ্চিত। তবে আন্দোলনের কারণে কিছুটা ধাক্কা খেয়েছি। তারপরও রাজস্ব সংগ্রহের গতি ধরে রাখার জন্য সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করছে।” তিনি জানান, “আজ (৩০ জুন) সকাল ১০টা পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। ট্রেজারিতে জমা হওয়া অর্থের পূর্ণাঙ্গ হিসাব আগামীকাল পাওয়া যাবে।”

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “সরকারি প্রকল্পের কর ও মূসকের বিল সমন্বয়ের জন্য কিছু সময় লাগবে। জুন মাসের ক্লোজিং প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা দেরি হয়। চূড়ান্ত হিসাব আসতে আরও ২-৩ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।”

রাজস্ব সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় এখন এনবিআর আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে বলেও জানান তিনি। “আমরা এখন ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নয়, বরং ‘আইবাস’ (iBAS++) এর মাধ্যমে আদায় রিপোর্ট করি। ফলে রিপোর্টিং আরও স্বচ্ছ ও সিস্টেমেটিক হয়েছে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিমাণ রাজস্ব আদায় সরকারের উন্নয়ন ব্যয়, সরকারি খরচ এবং বাজেট ঘাটতি মোকাবেলায় সহায়ক হবে। এনবিআরের এই অগ্রগতি চলমান অর্থনৈতিক চাপের মাঝে সরকারের জন্য এক ধরনের স্বস্তি এনে দিয়েছে।

ব্যবসায়ী মহল, বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানি খাতে জড়িতরা এনবিআরের কাজে ফেরাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো আগেই জানিয়েছিল যে, এনবিআরের কর্মবিরতির ফলে শুল্কায়ন ও চালান ছাড় প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। তাই এ অবস্থার অবসান তাদের জন্য আশার সঞ্চার করেছে।

রাজস্ব বোর্ডের আন্দোলনের পেছনে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ, মানবসম্পদ নীতির সংস্কার ও প্রশাসনিক স্বাধীনতা দাবি ছিল। তবে সর্বশেষ আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান এবং কর্মসূচি প্রত্যাহার প্রমাণ করে যে প্রশাসনিক উদ্যোগ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে যেকোনো জটিলতার সমাধান সম্ভব।

সার্বিক বিবেচনায়, অর্থবছরের শেষ দিনে এনবিআরের এই রাজস্ব আদায় শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, বরং এটি দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এখন প্রত্যাশা করা যায়, আগামী অর্থবছরে এই ধারা বজায় রেখে আরও উন্নত, স্বচ্ছ ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।