সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢাবির মলচত্বরে গলায় ফাঁস দিয়ে তরুণীর আত্মহত্যার চেষ্টা: তাৎক্ষণিক উদ্ধার, চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৩:৩০:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
  • / ৮৯ Time View

image 200035 1750972954

image 200035 1750972954

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মলচত্বরে এক বহিরাগত তরুণী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাত আনুমানিক ১১টার দিকে তিনি ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেন। ঘটনাস্থলেই উপস্থিত কিছু সচেতন পথচারীর দ্রুত হস্তক্ষেপে তাকে গাছ থেকে নামিয়ে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা

ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী জুলহাস কবির সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “রাত ১১টার দিকে মেয়েটিকে মলচত্বরের মাঝখানে একটি গাছের সঙ্গে ঝুলতে দেখে আমরা কয়েকজন দৌড়ে যাই। ওড়না কেটে তাকে নিচে নামিয়ে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পাঠানো হয়। আর এক মিনিট দেরি হলেও হয়তো বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।”

প্রশাসনের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা

ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ জানান,

“খবর পেয়েই আমরা পদক্ষেপ নিই। মেয়েটিকে জীবিত উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন। আমরা তার পরিচয় শনাক্ত করেছি এবং তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে—তিনি ঢাকায় আসছেন।”

তরুণীর পরিচয় পারিপার্শ্বিকতা

জানা গেছে, তরুণীটি ঢাকার উত্তরায় তার ভাইয়ের সঙ্গে বসবাস করতেন। তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনার পেছনের কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে।

চিকিৎসা বর্তমান অবস্থা

তরুণীটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর থেকে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তার অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল হলেও মানসিকভাবে তিনি ভেঙে পড়েছেন। চিকিৎসকরা তার শারীরিক ও মানসিক পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

সামাজিক বাস্তবতা বার্তা

এই ঘটনা আমাদের সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে মানসিক চাপ, হতাশা ও আত্মহননের প্রবণতা বাড়ছে—যার অন্যতম কারণ হতে পারে পারিবারিক, শিক্ষাগত বা সামাজিক চাপ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরণের ঘটনা প্রতিরোধে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, পরামর্শসেবা (counseling), পরিবার ও সমাজের সহানুভূতিশীল ভূমিকা জরুরি।

ঢাবির মতো একটি উন্মুক্ত ও জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় এমন একটি ঘটনা শুধু নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগই তৈরি করে না, এটি তরুণ সমাজের মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতির প্রতিচ্ছবি হিসেবেও বিবেচ্য। সময় এসেছে আত্মহত্যার প্রবণতা মোকাবিলায় ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সম্মিলিতভাবে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার। জীবন সবার আগে—এ বার্তাটি আরও জোরালোভাবে ছড়িয়ে দেওয়া এখন সময়ের দাবি।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

ঢাবির মলচত্বরে গলায় ফাঁস দিয়ে তরুণীর আত্মহত্যার চেষ্টা: তাৎক্ষণিক উদ্ধার, চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি

Update Time : ০৩:৩০:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

image 200035 1750972954

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মলচত্বরে এক বহিরাগত তরুণী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাত আনুমানিক ১১টার দিকে তিনি ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেন। ঘটনাস্থলেই উপস্থিত কিছু সচেতন পথচারীর দ্রুত হস্তক্ষেপে তাকে গাছ থেকে নামিয়ে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা

ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী জুলহাস কবির সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “রাত ১১টার দিকে মেয়েটিকে মলচত্বরের মাঝখানে একটি গাছের সঙ্গে ঝুলতে দেখে আমরা কয়েকজন দৌড়ে যাই। ওড়না কেটে তাকে নিচে নামিয়ে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পাঠানো হয়। আর এক মিনিট দেরি হলেও হয়তো বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।”

প্রশাসনের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা

ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ জানান,

“খবর পেয়েই আমরা পদক্ষেপ নিই। মেয়েটিকে জীবিত উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন। আমরা তার পরিচয় শনাক্ত করেছি এবং তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে—তিনি ঢাকায় আসছেন।”

তরুণীর পরিচয় পারিপার্শ্বিকতা

জানা গেছে, তরুণীটি ঢাকার উত্তরায় তার ভাইয়ের সঙ্গে বসবাস করতেন। তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনার পেছনের কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে।

চিকিৎসা বর্তমান অবস্থা

তরুণীটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর থেকে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তার অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল হলেও মানসিকভাবে তিনি ভেঙে পড়েছেন। চিকিৎসকরা তার শারীরিক ও মানসিক পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

সামাজিক বাস্তবতা বার্তা

এই ঘটনা আমাদের সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে মানসিক চাপ, হতাশা ও আত্মহননের প্রবণতা বাড়ছে—যার অন্যতম কারণ হতে পারে পারিবারিক, শিক্ষাগত বা সামাজিক চাপ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরণের ঘটনা প্রতিরোধে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, পরামর্শসেবা (counseling), পরিবার ও সমাজের সহানুভূতিশীল ভূমিকা জরুরি।

ঢাবির মতো একটি উন্মুক্ত ও জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় এমন একটি ঘটনা শুধু নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগই তৈরি করে না, এটি তরুণ সমাজের মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতির প্রতিচ্ছবি হিসেবেও বিবেচ্য। সময় এসেছে আত্মহত্যার প্রবণতা মোকাবিলায় ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সম্মিলিতভাবে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার। জীবন সবার আগে—এ বার্তাটি আরও জোরালোভাবে ছড়িয়ে দেওয়া এখন সময়ের দাবি।