ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা জামায়াতের মূল লক্ষ্য-ডা. শফিকুর রহমান

- Update Time : ১১:৩৩:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
- / ৭২ Time View
গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, ইনসাফভিত্তিক সমাজ গঠন এবং ইসলামি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র রাজনীতির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বলে মন্তব্য করেছেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান। বুধবার (২৫ জুন) বিকেলে রাজধানীর কাফরুল থানায় জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এক নির্বাচনী পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
পথসভায় সভাপতিত্ব করেন কাফরুল থানা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আনোয়ারুল করিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন এবং মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক। আরও উপস্থিত ছিলেন মিরপুর পূর্ব থানা আমির শাহ আলম তুহিন, শহীদুল্লাহ, আলাউদ্দিন, রেজা তুহিন প্রমুখ।
ইনসাফভিত্তিক সমাজ গঠনের আহ্বান
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা এমন একটি সমাজ গড়তে চাই যেখানে সাম্য, ইনসাফ ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠিত হবে—যেখানে কারো ওপর অন্যায় বা বৈষম্য থাকবে না। আমরা চাই এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা, যা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শে পরিচালিত হবে, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা, সম্মান ও অধিকার নিশ্চিত থাকবে।”
তিনি বলেন, “রাসূল (সা.) এর কায়েম করা ইনসাফপূর্ণ সমাজের মতো একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে আমাদের অঙ্গীকার থাকতে হবে। সেই সমাজে নারীরা মাইলের পর মাইল পথ হেঁটেও নিরাপদে চলাফেরা করতে পারতেন। এটাই ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রকৃত রূপ।”
জুলাই বিপ্লবের শহীদদের সম্মান জানাতে হবে
জুলাই বিপ্লবের প্রসঙ্গ টেনে জামায়াত আমির বলেন, “ছাত্র-জনতার ইস্পাত কঠিন ঐক্যই আওয়ামী অপশাসনের পতনের সূচনা করেছিল। তবে এটি সহজ ছিল না। আমরা ২ হাজারেরও বেশি মানুষকে রাজপথে প্রাণ দিতে দেখেছি। বহু মানুষ আহত হয়েছেন, কেউ চোখ হারিয়েছেন, কেউ পঙ্গু হয়েছেন। শহীদ পরিবারগুলোর পাশে জামায়াত সবসময় থেকেছে। কারো কারো এতিম সন্তানের দায়িত্বও আমরা নিয়েছি।”
তিনি জুলাই বিপ্লবের শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে ঘোষণা করার আহ্বান জানান এবং বলেন, “এই বিপ্লবের চেতনা ধরে রাখতে ও এর সুফল ঘরে তুলতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
ইসলাম ও কুরআনভিত্তিক শাসন প্রতিষ্ঠার তাগিদ
ডা. শফিক বলেন, “দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়, বরং প্রতিটি মুমিনের ওপর ফরজ। ইসলাম আমাদের পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, আর আল-কুরআন সেই জীবন পরিচালনার সর্বোত্তম দিকনির্দেশনা। আমরা বিশ্বাস করি, আল্লাহর বিধান এবং রাসূল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করলেই এই দুনিয়ায় শান্তি ও আখিরাতে মুক্তি অর্জন করা সম্ভব।”
তিনি বলেন, “মানুষের বানানো বিধান দিয়ে প্রকৃত কল্যাণ সম্ভব নয়। মানবজাতির জন্য আল্লাহর আইনই যথার্থ এবং সঠিক পথের দিশারী। তাই কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে কুরআন-সুন্নাহর ওপর ভিত্তি করে শাসনব্যবস্থা কায়েম করার জন্য আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস চালাতে হবে।”
ঐক্যের ডাক
ডা. শফিকুর রহমান তাঁর বক্তব্যের শেষাংশে বলেন, “আমাদের দরকার একটি আধ্যাত্মিক, ন্যায়ভিত্তিক ও কল্যাণমুখী ঐক্য। দলমত, মতাদর্শ ও ব্যক্তিগত বিভেদ ভুলে গিয়ে ইসলামের ছায়াতলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের দ্বীনের রাজনীতি ও সমাজব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।”
তিনি উপস্থিত জনসাধারণ, নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের আহ্বান জানান, “আসুন, আমরা ইসলামী আন্দোলনে আত্মনিয়োগ করি। আর্তমানবতার কল্যাণে, বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে এবং মহান আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠায় ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলি।”
Please Share This Post in Your Social Media

ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা জামায়াতের মূল লক্ষ্য-ডা. শফিকুর রহমান

গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, ইনসাফভিত্তিক সমাজ গঠন এবং ইসলামি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র রাজনীতির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বলে মন্তব্য করেছেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান। বুধবার (২৫ জুন) বিকেলে রাজধানীর কাফরুল থানায় জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এক নির্বাচনী পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
পথসভায় সভাপতিত্ব করেন কাফরুল থানা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আনোয়ারুল করিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন এবং মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি ডা. ফখরুদ্দিন মানিক। আরও উপস্থিত ছিলেন মিরপুর পূর্ব থানা আমির শাহ আলম তুহিন, শহীদুল্লাহ, আলাউদ্দিন, রেজা তুহিন প্রমুখ।
ইনসাফভিত্তিক সমাজ গঠনের আহ্বান
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা এমন একটি সমাজ গড়তে চাই যেখানে সাম্য, ইনসাফ ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠিত হবে—যেখানে কারো ওপর অন্যায় বা বৈষম্য থাকবে না। আমরা চাই এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা, যা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শে পরিচালিত হবে, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা, সম্মান ও অধিকার নিশ্চিত থাকবে।”
তিনি বলেন, “রাসূল (সা.) এর কায়েম করা ইনসাফপূর্ণ সমাজের মতো একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে আমাদের অঙ্গীকার থাকতে হবে। সেই সমাজে নারীরা মাইলের পর মাইল পথ হেঁটেও নিরাপদে চলাফেরা করতে পারতেন। এটাই ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রকৃত রূপ।”
জুলাই বিপ্লবের শহীদদের সম্মান জানাতে হবে
জুলাই বিপ্লবের প্রসঙ্গ টেনে জামায়াত আমির বলেন, “ছাত্র-জনতার ইস্পাত কঠিন ঐক্যই আওয়ামী অপশাসনের পতনের সূচনা করেছিল। তবে এটি সহজ ছিল না। আমরা ২ হাজারেরও বেশি মানুষকে রাজপথে প্রাণ দিতে দেখেছি। বহু মানুষ আহত হয়েছেন, কেউ চোখ হারিয়েছেন, কেউ পঙ্গু হয়েছেন। শহীদ পরিবারগুলোর পাশে জামায়াত সবসময় থেকেছে। কারো কারো এতিম সন্তানের দায়িত্বও আমরা নিয়েছি।”
তিনি জুলাই বিপ্লবের শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে ঘোষণা করার আহ্বান জানান এবং বলেন, “এই বিপ্লবের চেতনা ধরে রাখতে ও এর সুফল ঘরে তুলতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
ইসলাম ও কুরআনভিত্তিক শাসন প্রতিষ্ঠার তাগিদ
ডা. শফিক বলেন, “দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়, বরং প্রতিটি মুমিনের ওপর ফরজ। ইসলাম আমাদের পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, আর আল-কুরআন সেই জীবন পরিচালনার সর্বোত্তম দিকনির্দেশনা। আমরা বিশ্বাস করি, আল্লাহর বিধান এবং রাসূল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করলেই এই দুনিয়ায় শান্তি ও আখিরাতে মুক্তি অর্জন করা সম্ভব।”
তিনি বলেন, “মানুষের বানানো বিধান দিয়ে প্রকৃত কল্যাণ সম্ভব নয়। মানবজাতির জন্য আল্লাহর আইনই যথার্থ এবং সঠিক পথের দিশারী। তাই কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে কুরআন-সুন্নাহর ওপর ভিত্তি করে শাসনব্যবস্থা কায়েম করার জন্য আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস চালাতে হবে।”
ঐক্যের ডাক
ডা. শফিকুর রহমান তাঁর বক্তব্যের শেষাংশে বলেন, “আমাদের দরকার একটি আধ্যাত্মিক, ন্যায়ভিত্তিক ও কল্যাণমুখী ঐক্য। দলমত, মতাদর্শ ও ব্যক্তিগত বিভেদ ভুলে গিয়ে ইসলামের ছায়াতলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের দ্বীনের রাজনীতি ও সমাজব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।”
তিনি উপস্থিত জনসাধারণ, নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের আহ্বান জানান, “আসুন, আমরা ইসলামী আন্দোলনে আত্মনিয়োগ করি। আর্তমানবতার কল্যাণে, বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে এবং মহান আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠায় ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলি।”