আজ থেকে শুরু এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা, অংশ নিচ্ছে সাড়ে ১২ লাখ শিক্ষার্থী

- Update Time : ১০:৫৮:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
- / ৮০ Time View
সারা দেশের প্রায় সব শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) থেকে শুরু হচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। সকাল ১০টা থেকে একযোগে শুরু হওয়া এই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন মোট ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী, যা দেশের অন্যতম বৃহৎ পাবলিক পরীক্ষাগুলোর একটি। পরীক্ষার্থীরা আজ বাংলা প্রথম পত্র, আলিম পরীক্ষার্থীরা কোরআন মাজিদ এবং ভোকেশনাল পরীক্ষার্থীরা বাংলা বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। পরীক্ষার সময় সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নির্ধারিত হয়েছে।
পরীক্ষার সময়সূচি ও বিষয়সমূহ
লিখিত পরীক্ষা চলবে আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত এবং এর পর ২১ আগস্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে ব্যবহারিক পরীক্ষা। সাধারণত এইচএসসি পরীক্ষার সময়সূচি দীর্ঘ সময়জুড়ে হলেও এবারের সময়সীমা সংক্ষিপ্ত রেখে কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
কোচিং সেন্টার বন্ধ, জিরো টলারেন্স নকল প্রতিরোধে
সুষ্ঠু, সুন্দর এবং নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পরীক্ষার গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশের সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে একদিকে যেমন প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঝুঁকি কমবে, তেমনি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ একমাত্র পরীক্ষার দিকে নিবদ্ধ থাকবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে এবং পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও বিশেষ নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি পালন ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা
এ বছর পরীক্ষা গ্রহণের সময় দুইটি স্বাস্থ্যঝুঁকিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে—করোনাভাইরাস এবং ডেঙ্গু। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে আবারও করোনা সংক্রমণের হার কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে, পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রকোপও উদ্বেগজনক হারে ছড়াচ্ছে। এসব বিবেচনায় সরকার কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে জোর দিয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধির গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা:
- মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে প্রতিটি পরীক্ষার্থীর জন্য।
- প্রতিটি কেন্দ্রে হ্যান্ড
- সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পরীক্ষার আসন বিন্যাস করা হয়েছে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে নির্দেশনা:
- প্রতিটি কেন্দ্রে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, যেন কোথাও পানি জমে না থাকে।
- পরীক্ষার আগে মশক নিধন ওষুধ স্প্রে করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
- প্রতিটি কেন্দ্রে মেডিকেল টিম নিয়োজিত রাখা হয়েছে যাতে জরুরি প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক সেবা দেওয়া যায়।
নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা
পরীক্ষা কেন্দ্রের বাহিরে জটলা কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত জমায়েত প্রতিরোধে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। কেন্দ্রের সামনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় এবং পরীক্ষার্থীরা নির্ভয়ে পরীক্ষা দিতে পারে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ পরীক্ষার্থীদের জন্য:
- পরীক্ষা শুরুর অন্তত ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে পৌঁছান।
- পরিচয়পত্র, প্রবেশপত্র ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম (পেন, পেন্সিল, ক্যালকুলেটর) সঙ্গে রাখুন।
- স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এবং মাস্ক পরিধান করুন।
- প্রয়োজনে মেডিকেল টিমের সহযোগিতা নিন—বিশেষ করে ডেঙ্গু বা জ্বরের উপসর্গ থাকলে।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা কেবলমাত্র শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, বরং একটি জাতির শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। এ বছর করোনা ও ডেঙ্গু পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও সরকার ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডগুলো সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে যেন কোনো শিক্ষার্থী পিছিয়ে না পড়ে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলা যায়—এইচএসসি জীবন গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। নিয়মিত পড়াশোনা, আত্মবিশ্বাস ও সচেতনতার মাধ্যমে সবাই সফল হোক, এটাই প্রত্যাশা।
Please Share This Post in Your Social Media

আজ থেকে শুরু এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা, অংশ নিচ্ছে সাড়ে ১২ লাখ শিক্ষার্থী

সারা দেশের প্রায় সব শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) থেকে শুরু হচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। সকাল ১০টা থেকে একযোগে শুরু হওয়া এই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন মোট ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী, যা দেশের অন্যতম বৃহৎ পাবলিক পরীক্ষাগুলোর একটি। পরীক্ষার্থীরা আজ বাংলা প্রথম পত্র, আলিম পরীক্ষার্থীরা কোরআন মাজিদ এবং ভোকেশনাল পরীক্ষার্থীরা বাংলা বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। পরীক্ষার সময় সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নির্ধারিত হয়েছে।
পরীক্ষার সময়সূচি ও বিষয়সমূহ
লিখিত পরীক্ষা চলবে আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত এবং এর পর ২১ আগস্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে ব্যবহারিক পরীক্ষা। সাধারণত এইচএসসি পরীক্ষার সময়সূচি দীর্ঘ সময়জুড়ে হলেও এবারের সময়সীমা সংক্ষিপ্ত রেখে কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
কোচিং সেন্টার বন্ধ, জিরো টলারেন্স নকল প্রতিরোধে
সুষ্ঠু, সুন্দর এবং নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পরীক্ষার গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশের সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে একদিকে যেমন প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঝুঁকি কমবে, তেমনি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ একমাত্র পরীক্ষার দিকে নিবদ্ধ থাকবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে এবং পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও বিশেষ নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি পালন ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা
এ বছর পরীক্ষা গ্রহণের সময় দুইটি স্বাস্থ্যঝুঁকিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে—করোনাভাইরাস এবং ডেঙ্গু। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে আবারও করোনা সংক্রমণের হার কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে, পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রকোপও উদ্বেগজনক হারে ছড়াচ্ছে। এসব বিবেচনায় সরকার কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে জোর দিয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধির গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা:
- মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে প্রতিটি পরীক্ষার্থীর জন্য।
- প্রতিটি কেন্দ্রে হ্যান্ড
- সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পরীক্ষার আসন বিন্যাস করা হয়েছে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে নির্দেশনা:
- প্রতিটি কেন্দ্রে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, যেন কোথাও পানি জমে না থাকে।
- পরীক্ষার আগে মশক নিধন ওষুধ স্প্রে করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
- প্রতিটি কেন্দ্রে মেডিকেল টিম নিয়োজিত রাখা হয়েছে যাতে জরুরি প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক সেবা দেওয়া যায়।
নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা
পরীক্ষা কেন্দ্রের বাহিরে জটলা কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত জমায়েত প্রতিরোধে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। কেন্দ্রের সামনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় এবং পরীক্ষার্থীরা নির্ভয়ে পরীক্ষা দিতে পারে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ পরীক্ষার্থীদের জন্য:
- পরীক্ষা শুরুর অন্তত ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে পৌঁছান।
- পরিচয়পত্র, প্রবেশপত্র ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম (পেন, পেন্সিল, ক্যালকুলেটর) সঙ্গে রাখুন।
- স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এবং মাস্ক পরিধান করুন।
- প্রয়োজনে মেডিকেল টিমের সহযোগিতা নিন—বিশেষ করে ডেঙ্গু বা জ্বরের উপসর্গ থাকলে।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা কেবলমাত্র শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, বরং একটি জাতির শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। এ বছর করোনা ও ডেঙ্গু পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও সরকার ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডগুলো সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে যেন কোনো শিক্ষার্থী পিছিয়ে না পড়ে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলা যায়—এইচএসসি জীবন গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। নিয়মিত পড়াশোনা, আত্মবিশ্বাস ও সচেতনতার মাধ্যমে সবাই সফল হোক, এটাই প্রত্যাশা।