জামায়াতের সঙ্গে ইসির বৈঠক বুধবার: প্রতীকসহ নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ প্রশস্ত

- Update Time : ১১:৩৩:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
- / ৭ Time View
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আসন্ন বুধবার (২৫ জুন) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ বৈঠকে দলটির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। ইতোমধ্যেই দলটি নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে তাদের পূর্বের নির্বাচনী প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’সহ নিবন্ধন পুনরুদ্ধার করেছে, যার ফলে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের প্রতীকেই অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে দলটি।
মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিইসির একান্ত সচিব আশরাফুল ইসলাম। তিনি জানান, “বুধবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একটি প্রতিনিধিদলকে বৈঠকের জন্য সময় দিয়েছেন সিইসি।”
নিবন্ধনের ইতিহাস ও পুনরুদ্ধার: একটি সংক্ষিপ্ত ফিরে দেখা
২০০৮ সালে জামায়াতে ইসলামীকে নির্বাচন কমিশন ১৪ নম্বর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেয়। দলটি বহু নির্বাচনে তাদের ঐতিহ্যবাহী প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ নিয়ে অংশ নেয়। তবে ২০১৩ সালে হাইকোর্টের এক রায়ে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। সেই রায়ের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করে দেয়।
পরবর্তীতে ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের এক প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে দলটির প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ও বাতিল করা হয়। এর ফলে জামায়াতে ইসলামী আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন করতে পারছিল না এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণে সীমাবদ্ধ ছিল।
তবে চলতি বছরের জুন মাসে নির্বাচন কমিশন পুনর্বিবেচনার ভিত্তিতে দলটির আবেদন মঞ্জুর করে এবং নিবন্ধন ফিরিয়ে দেয়। এর মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় অংশগ্রহণের পথ আবার খুলে যায়।
বৈঠকের তাৎপর্য ও প্রত্যাশা
আগামী বুধবারের বৈঠকটি নির্বাচন কমিশন ও জামায়াতের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক সংলাপের অংশ, যেখানে নিবন্ধনপুনরুদ্ধার পরবর্তী বিষয়গুলো, নির্বাচনী আচরণবিধি, প্রচার-প্রচারণা, প্রার্থী মনোনয়ন ও পর্যবেক্ষণের বিষয়গুলো আলোচনা হতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বৈঠক জামায়াতের সক্রিয় রাজনৈতিক মঞ্চে ফিরে আসার একটি প্রাতিষ্ঠানিক ধাপ, যার প্রভাব দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দৃশ্যমান হতে পারে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন পুনঃপ্রাপ্তি ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এই বৈঠক দেশের রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিএনপি-জামায়াত জোট কিংবা ইসলামী ধারার রাজনীতিতে নতুন করে সমন্বয়ের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে একইসঙ্গে, জামায়াতের অতীত কর্মকাণ্ড ও আদালতের রায় ঘিরে বিতর্কও এখনো বহাল আছে, যার ফলে এই বৈঠক এবং নিবন্ধন সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের এই বৈঠক নিঃসন্দেহে আগামী নির্বাচনী প্রক্রিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাওয়া দলটির রাজনৈতিক সক্রিয়তায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। তবে সেইসঙ্গে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা এবং আদালতের রায়সমূহের সম্মান বজায় রাখা—এই বিষয়গুলোতেও নজর রাখতে হবে। কারণ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের অধিকার যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি আইনের শাসন এবং সাংবিধানিক আদেশের প্রতিফলনও অপরিহার্য।
Please Share This Post in Your Social Media

জামায়াতের সঙ্গে ইসির বৈঠক বুধবার: প্রতীকসহ নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ প্রশস্ত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আসন্ন বুধবার (২৫ জুন) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ বৈঠকে দলটির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। ইতোমধ্যেই দলটি নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে তাদের পূর্বের নির্বাচনী প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’সহ নিবন্ধন পুনরুদ্ধার করেছে, যার ফলে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের প্রতীকেই অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে দলটি।
মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিইসির একান্ত সচিব আশরাফুল ইসলাম। তিনি জানান, “বুধবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একটি প্রতিনিধিদলকে বৈঠকের জন্য সময় দিয়েছেন সিইসি।”
নিবন্ধনের ইতিহাস ও পুনরুদ্ধার: একটি সংক্ষিপ্ত ফিরে দেখা
২০০৮ সালে জামায়াতে ইসলামীকে নির্বাচন কমিশন ১৪ নম্বর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেয়। দলটি বহু নির্বাচনে তাদের ঐতিহ্যবাহী প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ নিয়ে অংশ নেয়। তবে ২০১৩ সালে হাইকোর্টের এক রায়ে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। সেই রায়ের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করে দেয়।
পরবর্তীতে ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের এক প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে দলটির প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ও বাতিল করা হয়। এর ফলে জামায়াতে ইসলামী আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন করতে পারছিল না এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণে সীমাবদ্ধ ছিল।
তবে চলতি বছরের জুন মাসে নির্বাচন কমিশন পুনর্বিবেচনার ভিত্তিতে দলটির আবেদন মঞ্জুর করে এবং নিবন্ধন ফিরিয়ে দেয়। এর মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় অংশগ্রহণের পথ আবার খুলে যায়।
বৈঠকের তাৎপর্য ও প্রত্যাশা
আগামী বুধবারের বৈঠকটি নির্বাচন কমিশন ও জামায়াতের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক সংলাপের অংশ, যেখানে নিবন্ধনপুনরুদ্ধার পরবর্তী বিষয়গুলো, নির্বাচনী আচরণবিধি, প্রচার-প্রচারণা, প্রার্থী মনোনয়ন ও পর্যবেক্ষণের বিষয়গুলো আলোচনা হতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বৈঠক জামায়াতের সক্রিয় রাজনৈতিক মঞ্চে ফিরে আসার একটি প্রাতিষ্ঠানিক ধাপ, যার প্রভাব দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দৃশ্যমান হতে পারে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন পুনঃপ্রাপ্তি ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এই বৈঠক দেশের রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিএনপি-জামায়াত জোট কিংবা ইসলামী ধারার রাজনীতিতে নতুন করে সমন্বয়ের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে একইসঙ্গে, জামায়াতের অতীত কর্মকাণ্ড ও আদালতের রায় ঘিরে বিতর্কও এখনো বহাল আছে, যার ফলে এই বৈঠক এবং নিবন্ধন সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের এই বৈঠক নিঃসন্দেহে আগামী নির্বাচনী প্রক্রিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাওয়া দলটির রাজনৈতিক সক্রিয়তায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। তবে সেইসঙ্গে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা এবং আদালতের রায়সমূহের সম্মান বজায় রাখা—এই বিষয়গুলোতেও নজর রাখতে হবে। কারণ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের অধিকার যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি আইনের শাসন এবং সাংবিধানিক আদেশের প্রতিফলনও অপরিহার্য।