ইরান থেকে ধেয়ে আসছে ক্ষেপণাস্ত্রের বহর, নাগরিকদের সতর্ক করল ইসরায়েল

- Update Time : ০৩:১৪:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
- / ৮৮ Time View
সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫—ভোররাতে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার মধ্যে ইরান থেকে ইরানর দিকে একযোগে ধেয়ে আসে একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান মধ্য ও উত্তর ইসরায়েল লক্ষ্য করে এসব ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। সঙ্গে সঙ্গে জারি হয় সর্বোচ্চ সতর্কতা, বাজানো হয় সাইরেন, সাধারণ নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
(Times of Israel)
হিব্রু ভাষায় আইডিএফ-এর এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে জানানো হয়:
“পরবর্তী কয়েক মিনিটের মধ্যে সাইরেন শুনলেই নিকটস্থ বম্ব শেল্টারে ঢুকে পড়ুন। জীবন বাঁচানোই এখন প্রধান কাজ।”
এই সতর্কবার্তা অনুযায়ী রাজধানী তেল আভিভ, উপকূলীয় শহর হাইফা এবং আশপাশের এলাকাগুলোতে হাজার হাজার মানুষ বাংকারে আশ্রয় নেন।
ক্ষয়ক্ষতি ও আহতদের তালিকা
আক্রমণে এখন পর্যন্ত ২১ জন ইসরায়েলি আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তেল আভিভ, হাইফা, বেয়ার ইয়াকভ ও নেস জিওনা অঞ্চলে সরাসরি আঘাতে কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জরুরি উদ্ধার দল ধ্বংসস্তূপ থেকে আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
(CBS News)
আইডিএফ জানায়, ইরান প্রায় ৩০টির মতো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তবে ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’, ‘ডেভিডস স্লিং’ এবং ‘অ্যারো–৩’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সফলভাবে বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র মাঝআকাশেই ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও কয়েকটি মিসাইল প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এড়িয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।
ইসরায়েলের পাল্টা জবাব: ইরানের ছয়টি বিমানবন্দরে ড্রোন হামলা
ইরানের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল ড্রোন ও স্টিলথ প্রযুক্তির সহায়তায় একযোগে ছয়টি ইরানি বিমানবন্দরে পাল্টা হামলা চালায়। আইডিএফ জানিয়েছে, এ অভিযানে ১৫টি সামরিক ফাইটার জেট, হেলিকপ্টার এবং একটি ফুয়েল ট্যাঙ্কার বিমানে আঘাত হানা হয়েছে। হামলার ফলে বিমানবন্দরগুলোর রানওয়ে ও ভূগর্ভস্থ অস্ত্রাগার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
(WSJ, JPost)
আইডিএফ সূত্র জানায়, ধ্বংসপ্রাপ্ত যুদ্ধবিমানের মধ্যে ছিল F-14, F-5 ফাইটার জেট এবং AH-1 অ্যাটাক হেলিকপ্টার। ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে সাময়িকভাবে স্থবির করে দিতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
আকাশপথে সতর্কতা: আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল ও রুট পরিবর্তন
ইরান-ইসরায়েল সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ায় মধ্যপ্রাচ্যের আকাশসীমা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলো ফ্লাইট বাতিল করছে অথবা মধ্যপ্রাচ্যের উপর দিয়ে যাত্রাপথ ঘুরিয়ে নিচ্ছে। এতে হাজারো যাত্রী পড়েছেন দেরি ও টিকিট সংক্রান্ত জটিলতায়।
(Reuters)
ইরানের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম আইআরএনএ (IRNA) জানায়, আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলো সক্রিয়ভাবে ড্রোন ও মিসাইল প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। তেহরান ও ইসফাহান অঞ্চলে আকাশে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। তবে ইরান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ বিবরণ প্রকাশ করেনি।
(WSJ)
পরিণতির শঙ্কা: যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে মধ্যপ্রাচ্য?
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই উত্তেজনা এখন আর সীমিত পরিসরে নেই। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইরানে পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালানোর পর থেকেই যে উত্তেজনার সূত্রপাত, তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ না করলে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে গড়াতে পারে। এমন সংঘাত শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির দাম, সরবরাহ চেইন এবং ভূরাজনৈতিক সমীকরণকে প্রভাবিত করবে।
সূত্রসমূহ:
Please Share This Post in Your Social Media

ইরান থেকে ধেয়ে আসছে ক্ষেপণাস্ত্রের বহর, নাগরিকদের সতর্ক করল ইসরায়েল

সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫—ভোররাতে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার মধ্যে ইরান থেকে ইরানর দিকে একযোগে ধেয়ে আসে একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান মধ্য ও উত্তর ইসরায়েল লক্ষ্য করে এসব ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। সঙ্গে সঙ্গে জারি হয় সর্বোচ্চ সতর্কতা, বাজানো হয় সাইরেন, সাধারণ নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
(Times of Israel)
হিব্রু ভাষায় আইডিএফ-এর এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে জানানো হয়:
“পরবর্তী কয়েক মিনিটের মধ্যে সাইরেন শুনলেই নিকটস্থ বম্ব শেল্টারে ঢুকে পড়ুন। জীবন বাঁচানোই এখন প্রধান কাজ।”
এই সতর্কবার্তা অনুযায়ী রাজধানী তেল আভিভ, উপকূলীয় শহর হাইফা এবং আশপাশের এলাকাগুলোতে হাজার হাজার মানুষ বাংকারে আশ্রয় নেন।
ক্ষয়ক্ষতি ও আহতদের তালিকা
আক্রমণে এখন পর্যন্ত ২১ জন ইসরায়েলি আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তেল আভিভ, হাইফা, বেয়ার ইয়াকভ ও নেস জিওনা অঞ্চলে সরাসরি আঘাতে কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জরুরি উদ্ধার দল ধ্বংসস্তূপ থেকে আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
(CBS News)
আইডিএফ জানায়, ইরান প্রায় ৩০টির মতো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তবে ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’, ‘ডেভিডস স্লিং’ এবং ‘অ্যারো–৩’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সফলভাবে বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র মাঝআকাশেই ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও কয়েকটি মিসাইল প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এড়িয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।
ইসরায়েলের পাল্টা জবাব: ইরানের ছয়টি বিমানবন্দরে ড্রোন হামলা
ইরানের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল ড্রোন ও স্টিলথ প্রযুক্তির সহায়তায় একযোগে ছয়টি ইরানি বিমানবন্দরে পাল্টা হামলা চালায়। আইডিএফ জানিয়েছে, এ অভিযানে ১৫টি সামরিক ফাইটার জেট, হেলিকপ্টার এবং একটি ফুয়েল ট্যাঙ্কার বিমানে আঘাত হানা হয়েছে। হামলার ফলে বিমানবন্দরগুলোর রানওয়ে ও ভূগর্ভস্থ অস্ত্রাগার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
(WSJ, JPost)
আইডিএফ সূত্র জানায়, ধ্বংসপ্রাপ্ত যুদ্ধবিমানের মধ্যে ছিল F-14, F-5 ফাইটার জেট এবং AH-1 অ্যাটাক হেলিকপ্টার। ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে সাময়িকভাবে স্থবির করে দিতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
আকাশপথে সতর্কতা: আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল ও রুট পরিবর্তন
ইরান-ইসরায়েল সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ায় মধ্যপ্রাচ্যের আকাশসীমা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলো ফ্লাইট বাতিল করছে অথবা মধ্যপ্রাচ্যের উপর দিয়ে যাত্রাপথ ঘুরিয়ে নিচ্ছে। এতে হাজারো যাত্রী পড়েছেন দেরি ও টিকিট সংক্রান্ত জটিলতায়।
(Reuters)
ইরানের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম আইআরএনএ (IRNA) জানায়, আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলো সক্রিয়ভাবে ড্রোন ও মিসাইল প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। তেহরান ও ইসফাহান অঞ্চলে আকাশে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। তবে ইরান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ বিবরণ প্রকাশ করেনি।
(WSJ)
পরিণতির শঙ্কা: যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে মধ্যপ্রাচ্য?
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই উত্তেজনা এখন আর সীমিত পরিসরে নেই। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইরানে পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালানোর পর থেকেই যে উত্তেজনার সূত্রপাত, তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ না করলে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে গড়াতে পারে। এমন সংঘাত শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির দাম, সরবরাহ চেইন এবং ভূরাজনৈতিক সমীকরণকে প্রভাবিত করবে।
সূত্রসমূহ: