সময়: বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মৌসুমী, ফারিয়া, সাবিলা নূরসহ ২৫ তারকার ব্যাংক হিসাব জব্দ

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৬:০৩:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫
  • / ৭৬ Time View

1750588285 21bc3056105f8903ffe8446d1d6567be (1)

1750588285 21bc3056105f8903ffe8446d1d6567be (1)

 

কর ফাঁকি ও আয়কর না দেওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশের বিনোদন অঙ্গনের একাধিক জনপ্রিয় তারকার ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের কর অঞ্চল-১২-এর পক্ষ থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে মোট ২৫ জন তারকার ব্যাংক হিসাব জব্দের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। তালিকায় রয়েছেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী, চিত্রনায়ক ও পরিচালক বাপ্পারাজ, অভিনেত্রী ও মডেল নুসরাত ফারিয়া, টেলিভিশন অভিনেত্রী সাবিলা নূর, পাশাপাশি বর্ষীয়ান অভিনেতা আহমেদ শরীফ, অভিনেত্রী শবনম পারভীন এবং অভিনেত্রী-উপস্থাপিকা নুসরাত ইয়াসমিন তিশা।

প্রজ্ঞাপনটিতে বলা হয়, আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আয় অর্জন করে, তাদের নির্ধারিত সময়ে কর পরিশোধ বাধ্যতামূলক। অথচ দীর্ঘ সময় ধরে একাধিক তারকা শিল্পী বারবার নোটিশ দেওয়ার পরও আয়কর পরিশোধে গড়িমসি করছেন। এনবিআর তদন্ত করে দেখতে পায়, তাঁদের অনেকের আয় বিশাল অঙ্কের হলেও কর দেওয়া হয়নি বা আংশিক দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ আবার নিজের প্রকৃত আয় গোপন করেছেন।

কর অঞ্চল-১২-এর সহকারী কর কমিশনার কাজী রেহমান সাজিদ মন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, কর ফাঁকির অভিযোগে যেসব তারকার বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। যেসব ব্যাংকে তাঁদের একাধিক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, সেই ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে হিসাব জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা কোনোভাবেই কর ফাঁকি বরদাশত করব না। তাঁরা তারকা মানেই এই নয় যে তাঁরা আইনের ঊর্ধ্বে। কয়েকজন ইতোমধ্যে এনবিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সময় নিয়েছেন কর পরিশোধের জন্য। আবার কেউ কেউ কর দিয়ে ইতোমধ্যে নিষেধাজ্ঞা মুক্ত হয়েছেন।”

সূত্র জানায়, আয়কর দপ্তর বিগত কয়েক মাস ধরে তারকাদের আয়-ব্যয়ের উপর নজর রাখছিল। অনেক তারকা বিনোদন জগতের বাইরেও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করছেন, ইউটিউব ও সোশ্যাল মিডিয়ায় আয় করছেন, বিদেশ ভ্রমণ করছেন, বিলাসবহুল গাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন—কিন্তু এসব আয়ের সঠিক হিসাব আয়কর ফাইলিংয়ে নেই।

প্রভাব পড়বে মিডিয়ায়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তারকাদের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ মিডিয়া ও বিনোদন অঙ্গনে কর সচেতনতা বাড়াবে। পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ ধরনের ব্যবস্থা তারকাদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে। অনেকেই কর পরিশোধ না করাকে ‘সামাজিক স্ট্যাটাস’ বা অবহেলার বিষয় মনে করতেন—এনবিআরের এ উদ্যোগ তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনবে।

আইনজীবীদের অভিমত

আয়কর আইনজীবীরা মনে করছেন, তারকাদের ক্ষেত্রে যেমন কর পরিশোধ বাধ্যতামূলক, তেমনি এনবিআরের উচিত সবার জন্য সমানভাবে নীতিমালা প্রয়োগ করা। তারকাদের নাম প্রকাশ করায় তাঁদের সামাজিক সম্মান কিছুটা ক্ষুণ্ন হলেও এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে।

তালিকাটি কি আরও বড় হতে পারে?

অনেকেই ধারণা করছেন, এই তালিকা আরও বড় হতে পারে। কারণ এখনো অনেক তারকার সম্পদের তথ্য আয়কর নথিতে প্রতিফলিত হয়নি। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এখন থেকে প্রতিনিয়ত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন পেশাজীবীর আয়কর নথি যাচাই করবে তারা।

দেশের তারকা শিল্পীদের জন্য এটি একটি জাগরণ সংকেত। এনবিআরের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে, রাষ্ট্রের কর ব্যবস্থাপনা এখন আরও কঠোর ও তথ্যভিত্তিক হচ্ছে। কর ফাঁকিকে সহনশীলতা নয়, বরং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করাই হবে সময়ের দাবি। তারকারা যদি নিজেরা উদ্যোগী হয়ে কর পরিশোধ করেন, তাহলে তাঁরা যেমন ঝামেলা থেকে রক্ষা পাবেন, তেমনি রাষ্ট্রীয় রাজস্বের উন্নয়নে অবদানও রাখতে পারবেন।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

মৌসুমী, ফারিয়া, সাবিলা নূরসহ ২৫ তারকার ব্যাংক হিসাব জব্দ

Update Time : ০৬:০৩:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

1750588285 21bc3056105f8903ffe8446d1d6567be (1)

 

কর ফাঁকি ও আয়কর না দেওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশের বিনোদন অঙ্গনের একাধিক জনপ্রিয় তারকার ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের কর অঞ্চল-১২-এর পক্ষ থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে মোট ২৫ জন তারকার ব্যাংক হিসাব জব্দের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। তালিকায় রয়েছেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী, চিত্রনায়ক ও পরিচালক বাপ্পারাজ, অভিনেত্রী ও মডেল নুসরাত ফারিয়া, টেলিভিশন অভিনেত্রী সাবিলা নূর, পাশাপাশি বর্ষীয়ান অভিনেতা আহমেদ শরীফ, অভিনেত্রী শবনম পারভীন এবং অভিনেত্রী-উপস্থাপিকা নুসরাত ইয়াসমিন তিশা।

প্রজ্ঞাপনটিতে বলা হয়, আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আয় অর্জন করে, তাদের নির্ধারিত সময়ে কর পরিশোধ বাধ্যতামূলক। অথচ দীর্ঘ সময় ধরে একাধিক তারকা শিল্পী বারবার নোটিশ দেওয়ার পরও আয়কর পরিশোধে গড়িমসি করছেন। এনবিআর তদন্ত করে দেখতে পায়, তাঁদের অনেকের আয় বিশাল অঙ্কের হলেও কর দেওয়া হয়নি বা আংশিক দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ আবার নিজের প্রকৃত আয় গোপন করেছেন।

কর অঞ্চল-১২-এর সহকারী কর কমিশনার কাজী রেহমান সাজিদ মন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, কর ফাঁকির অভিযোগে যেসব তারকার বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। যেসব ব্যাংকে তাঁদের একাধিক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, সেই ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে হিসাব জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা কোনোভাবেই কর ফাঁকি বরদাশত করব না। তাঁরা তারকা মানেই এই নয় যে তাঁরা আইনের ঊর্ধ্বে। কয়েকজন ইতোমধ্যে এনবিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সময় নিয়েছেন কর পরিশোধের জন্য। আবার কেউ কেউ কর দিয়ে ইতোমধ্যে নিষেধাজ্ঞা মুক্ত হয়েছেন।”

সূত্র জানায়, আয়কর দপ্তর বিগত কয়েক মাস ধরে তারকাদের আয়-ব্যয়ের উপর নজর রাখছিল। অনেক তারকা বিনোদন জগতের বাইরেও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করছেন, ইউটিউব ও সোশ্যাল মিডিয়ায় আয় করছেন, বিদেশ ভ্রমণ করছেন, বিলাসবহুল গাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন—কিন্তু এসব আয়ের সঠিক হিসাব আয়কর ফাইলিংয়ে নেই।

প্রভাব পড়বে মিডিয়ায়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তারকাদের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ মিডিয়া ও বিনোদন অঙ্গনে কর সচেতনতা বাড়াবে। পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ ধরনের ব্যবস্থা তারকাদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে। অনেকেই কর পরিশোধ না করাকে ‘সামাজিক স্ট্যাটাস’ বা অবহেলার বিষয় মনে করতেন—এনবিআরের এ উদ্যোগ তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনবে।

আইনজীবীদের অভিমত

আয়কর আইনজীবীরা মনে করছেন, তারকাদের ক্ষেত্রে যেমন কর পরিশোধ বাধ্যতামূলক, তেমনি এনবিআরের উচিত সবার জন্য সমানভাবে নীতিমালা প্রয়োগ করা। তারকাদের নাম প্রকাশ করায় তাঁদের সামাজিক সম্মান কিছুটা ক্ষুণ্ন হলেও এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে।

তালিকাটি কি আরও বড় হতে পারে?

অনেকেই ধারণা করছেন, এই তালিকা আরও বড় হতে পারে। কারণ এখনো অনেক তারকার সম্পদের তথ্য আয়কর নথিতে প্রতিফলিত হয়নি। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এখন থেকে প্রতিনিয়ত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন পেশাজীবীর আয়কর নথি যাচাই করবে তারা।

দেশের তারকা শিল্পীদের জন্য এটি একটি জাগরণ সংকেত। এনবিআরের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে, রাষ্ট্রের কর ব্যবস্থাপনা এখন আরও কঠোর ও তথ্যভিত্তিক হচ্ছে। কর ফাঁকিকে সহনশীলতা নয়, বরং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করাই হবে সময়ের দাবি। তারকারা যদি নিজেরা উদ্যোগী হয়ে কর পরিশোধ করেন, তাহলে তাঁরা যেমন ঝামেলা থেকে রক্ষা পাবেন, তেমনি রাষ্ট্রীয় রাজস্বের উন্নয়নে অবদানও রাখতে পারবেন।