বিদেশে যৌথ বিবৃতি দিয়ে নিরপেক্ষতার ভারসাম্য হারিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা: মন্তব্য জামায়াতে ইসলামী

- Update Time : ০৬:১৭:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫
- / ৩০ Time View
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে লন্ডনে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক বৈঠক এবং বৈঠক-পরবর্তী যৌথ প্রেস ব্রিফিং নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির দাবি, বিদেশে বসে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যৌথভাবে বিবৃতি প্রদানের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, যা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে বড় বাধা তৈরি করতে পারে।
শনিবার (১৪ জুন) রাজধানীর বসুন্ধরায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলটির নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আমির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ স্বাক্ষরিত এক লিখিত বিবৃতিতে দলটির অবস্থান তুলে ধরা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, “লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতি ও প্রেস ব্রিফিং আয়োজন প্রমাণ করে, তিনি একটি নির্দিষ্ট দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রদর্শন করেছেন। এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও আগাম নির্বাচনী পরিবেশকে প্রভাবিত করার মতো ঘটনা। আমরা এ ঘটনাকে প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতার ব্যত্যয় এবং দায়িত্বহীন আচরণ বলে মনে করি।”
জামায়াতের দাবি, একজন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো—সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমানতালে যোগাযোগ রাখা এবং অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ তৈরি করা। “কিন্তু কোনো একটি নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে বিদেশে বসে যৌথ বিবৃতি প্রদান করার ঘটনা নির্বাচনকে ঘিরে জনমনে শঙ্কা ও আস্থার ঘাটতি সৃষ্টি করেছে,” বিবৃতিতে বলা হয়।
জামায়াত আরও দাবি করে, ইতিপূর্বে প্রধান উপদেষ্টা দেশে থেকে একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথক ও যৌথভাবে বৈঠক করেছেন, যা ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু বিদেশে গিয়ে শুধুমাত্র একটি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি প্রদানের মাধ্যমে একটি পক্ষের প্রতি পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ প্রকাশ পেয়েছে। দলটির ভাষায়, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এমন প্রথা নেই এবং এটি দেশের প্রচলিত কূটনৈতিক রীতিনীতিরও পরিপন্থী।”
এছাড়া বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়কাল নিয়ে যে ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন—২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে—তা নিয়ে এখনও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হয়নি। এ অবস্থায় কোনো পক্ষকে ‘বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত’ হিসেবে তুলে ধরা ভবিষ্যতের নির্বাচনী পরিবেশকে আরও বিতর্কিত করতে পারে।
জামায়াত মনে করে, নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে প্রধান উপদেষ্টার উচিত হবে দেশে ফিরে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখে আলোচনা করা এবং তার সব ধরনের পদক্ষেপ জনসমক্ষে স্বচ্ছভাবে তুলে ধরা। দলটি আরও দাবি করেছে, “বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণ চায় একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং সরকারের প্রতি তাদের আস্থা পুনরুদ্ধার। প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা যদি সেই আস্থা ক্ষুণ্ন করে, তবে তা দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হতে পারে।”
জামায়াতে ইসলামী ইতিপূর্বেও নির্বাচন-পূর্ব আলোচনায় অংশ নিয়েছে এবং তাদের মতে, সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান ১৬ এপ্রিল একটি বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, “আমরা মনে করি আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের রমজানের আগেই, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে।” তার এই মন্তব্য দলটির অবস্থান স্পষ্ট করে—তারা নির্বাচনমুখী তবে তা হতে হবে নিরপেক্ষ পরিবেশে।
সর্বশেষে, বিবৃতিতে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন অবিলম্বে সরকারের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। দেশের মানুষ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ চায়—এমনটাই জানিয়ে দলটি বলেছে, “জাতির প্রত্যাশা পূরণে প্রধান উপদেষ্টাকে দায়িত্বশীল, সুস্পষ্ট ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে।”
Please Share This Post in Your Social Media

বিদেশে যৌথ বিবৃতি দিয়ে নিরপেক্ষতার ভারসাম্য হারিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা: মন্তব্য জামায়াতে ইসলামী

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে লন্ডনে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক বৈঠক এবং বৈঠক-পরবর্তী যৌথ প্রেস ব্রিফিং নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির দাবি, বিদেশে বসে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যৌথভাবে বিবৃতি প্রদানের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, যা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে বড় বাধা তৈরি করতে পারে।
শনিবার (১৪ জুন) রাজধানীর বসুন্ধরায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলটির নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আমির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ স্বাক্ষরিত এক লিখিত বিবৃতিতে দলটির অবস্থান তুলে ধরা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, “লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতি ও প্রেস ব্রিফিং আয়োজন প্রমাণ করে, তিনি একটি নির্দিষ্ট দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রদর্শন করেছেন। এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও আগাম নির্বাচনী পরিবেশকে প্রভাবিত করার মতো ঘটনা। আমরা এ ঘটনাকে প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতার ব্যত্যয় এবং দায়িত্বহীন আচরণ বলে মনে করি।”
জামায়াতের দাবি, একজন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো—সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমানতালে যোগাযোগ রাখা এবং অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ তৈরি করা। “কিন্তু কোনো একটি নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে বিদেশে বসে যৌথ বিবৃতি প্রদান করার ঘটনা নির্বাচনকে ঘিরে জনমনে শঙ্কা ও আস্থার ঘাটতি সৃষ্টি করেছে,” বিবৃতিতে বলা হয়।
জামায়াত আরও দাবি করে, ইতিপূর্বে প্রধান উপদেষ্টা দেশে থেকে একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথক ও যৌথভাবে বৈঠক করেছেন, যা ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু বিদেশে গিয়ে শুধুমাত্র একটি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি প্রদানের মাধ্যমে একটি পক্ষের প্রতি পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ প্রকাশ পেয়েছে। দলটির ভাষায়, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এমন প্রথা নেই এবং এটি দেশের প্রচলিত কূটনৈতিক রীতিনীতিরও পরিপন্থী।”
এছাড়া বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়কাল নিয়ে যে ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন—২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে—তা নিয়ে এখনও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হয়নি। এ অবস্থায় কোনো পক্ষকে ‘বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত’ হিসেবে তুলে ধরা ভবিষ্যতের নির্বাচনী পরিবেশকে আরও বিতর্কিত করতে পারে।
জামায়াত মনে করে, নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে প্রধান উপদেষ্টার উচিত হবে দেশে ফিরে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখে আলোচনা করা এবং তার সব ধরনের পদক্ষেপ জনসমক্ষে স্বচ্ছভাবে তুলে ধরা। দলটি আরও দাবি করেছে, “বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণ চায় একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং সরকারের প্রতি তাদের আস্থা পুনরুদ্ধার। প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা যদি সেই আস্থা ক্ষুণ্ন করে, তবে তা দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হতে পারে।”
জামায়াতে ইসলামী ইতিপূর্বেও নির্বাচন-পূর্ব আলোচনায় অংশ নিয়েছে এবং তাদের মতে, সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান ১৬ এপ্রিল একটি বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, “আমরা মনে করি আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের রমজানের আগেই, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে।” তার এই মন্তব্য দলটির অবস্থান স্পষ্ট করে—তারা নির্বাচনমুখী তবে তা হতে হবে নিরপেক্ষ পরিবেশে।
সর্বশেষে, বিবৃতিতে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন অবিলম্বে সরকারের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। দেশের মানুষ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ চায়—এমনটাই জানিয়ে দলটি বলেছে, “জাতির প্রত্যাশা পূরণে প্রধান উপদেষ্টাকে দায়িত্বশীল, সুস্পষ্ট ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে।”