মানুষের হাড় দিয়ে তৈরি বিপজ্জনক সিনথেটিক মাদকসহ ব্রিটিশ নারী আটক

- Update Time : ১২:৩০:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫
- / ১২০ Time View
শ্রীলঙ্কার কলম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক বিপুল পরিমাণ সিনথেটিক মাদকসহ ব্রিটিশ নাগরিক চার্লট মে লি (২১) কে আটক করেছে শ্রীলঙ্কার কাস্টমস বিভাগ। বিশেষ এই মাদক ‘কুশ’ হিসেবে পরিচিত, যা মানুষের হাড় থেকে তৈরি বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং এটি শ্রীলঙ্কায় এখন পর্যন্ত ধরা পড়া সবচেয়ে বড় মাদক চালান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চার্লট দক্ষিণ লন্ডনে বসবাস করেন এবং তিনি পূর্বে বিমানসেবিকা হিসেবে কাজ করতেন। চলতি মাসের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বন্দরনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার লাগেজ তল্লাশি চালানোর সময় দুটি বড় স্যুটকেস থেকে ৪৬ কেজি কুশ মাদক উদ্ধার করা হয়। এটি স্থানীয় সময় অনুযায়ী এক বিশাল ও বিপজ্জনক মাদক পাচারের ঘটনা, যার বাজার মূল্য প্রায় ১৫ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ডের সমান।
চার্লট মে লি পুলিশের সামনে দাবি করেছেন যে, তার অজান্তেই তার লাগেজে মাদক রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি জানি কে এই কাজটি করেছে,” কিন্তু বিস্তারিত কোনও নাম প্রকাশ করেননি। তার কথায়, তিনি নিজের লাগেজ খোলেননি এবং ভাবতেন সেখানে শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত মালামাল রয়েছে।
শ্রীলঙ্কার আইনগত প্রক্রিয়ার আওতায় তাকে বর্তমানে কলম্বোর উত্তরে অবস্থিত নেগোম্বোর একটি কারাগারে রাখা হয়েছে। তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, কারাগারের পরিবেশ কঠোর এবং তাকে কংক্রিটের মেঝেতে ঘুমাতে হচ্ছে, যা তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুবিধায় ফেলছে।
শ্রীলঙ্কার কাস্টমস বিভাগের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিককালে ব্যাংকক হয়ে যাত্রীরা মাদক পাচারে জড়িত থাকার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে ব্যাংকক থেকে যাত্রা করা আরেক ব্রিটিশ নারী বেলা কুলি (১৮) গাঁজা ও হাশিশসহ জর্জিয়ায় আটক হয়েছেন। বেলার কাছে পাওয়া গিয়েছে ১২ কেজি গাঁজা ও ২ কেজি হাশিশ। তার বিরুদ্ধে মাদক পাচার মামলায় ২০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।
‘কুশ’ মাদকটি মূলত পশ্চিম আফ্রিকার সিয়েরা লিওনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এই মাদক গ্রহণকারীরা হঠাৎ রাস্তায় চলার সময় ঘুমিয়ে পড়েন, মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বা এমনকি চলন্ত যানবাহনের নিচে চলে যাওয়ার মতো বিপজ্জনক ঘটনা ঘটায়। এ কারণে সিয়েরা লিওনের সরকার কবরস্থানগুলোর নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে, যেন কেউ মৃতদেহ থেকে হাড় চুরি করে এই মাদক তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে। ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস মাদা বায়ো জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন এই ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে।
এই ধরনের সিনথেটিক মাদক পাচারের ঘটনা আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের বড় একটি অংশ এবং এটি দক্ষিণ এশিয়ার পাশাপাশি পশ্চিম আফ্রিকা ও ইউরোপের অনেক দেশে বড় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তবে, চার্লট মে লি এই মাদক পাচারে সরাসরি যুক্ত কি না তা তদন্ত চলছে। তার দাবি অনুযায়ী, তিনি শুধু ব্যবহারকারী নন বরং কারো ফাঁদে পড়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই মাদক চক্রের অন্যান্য সদস্যদের খুঁজে বের করতে কাজ করে যাচ্ছে।
এই ঘটনার পেছনে থাকা আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানী গ্যাং এবং তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে তদন্ত আরও গভীরতর করার পাশাপাশি শ্রীলঙ্কা ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলো মাদক নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।
সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ
Please Share This Post in Your Social Media

মানুষের হাড় দিয়ে তৈরি বিপজ্জনক সিনথেটিক মাদকসহ ব্রিটিশ নারী আটক

শ্রীলঙ্কার কলম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক বিপুল পরিমাণ সিনথেটিক মাদকসহ ব্রিটিশ নাগরিক চার্লট মে লি (২১) কে আটক করেছে শ্রীলঙ্কার কাস্টমস বিভাগ। বিশেষ এই মাদক ‘কুশ’ হিসেবে পরিচিত, যা মানুষের হাড় থেকে তৈরি বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং এটি শ্রীলঙ্কায় এখন পর্যন্ত ধরা পড়া সবচেয়ে বড় মাদক চালান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চার্লট দক্ষিণ লন্ডনে বসবাস করেন এবং তিনি পূর্বে বিমানসেবিকা হিসেবে কাজ করতেন। চলতি মাসের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বন্দরনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার লাগেজ তল্লাশি চালানোর সময় দুটি বড় স্যুটকেস থেকে ৪৬ কেজি কুশ মাদক উদ্ধার করা হয়। এটি স্থানীয় সময় অনুযায়ী এক বিশাল ও বিপজ্জনক মাদক পাচারের ঘটনা, যার বাজার মূল্য প্রায় ১৫ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ডের সমান।
চার্লট মে লি পুলিশের সামনে দাবি করেছেন যে, তার অজান্তেই তার লাগেজে মাদক রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি জানি কে এই কাজটি করেছে,” কিন্তু বিস্তারিত কোনও নাম প্রকাশ করেননি। তার কথায়, তিনি নিজের লাগেজ খোলেননি এবং ভাবতেন সেখানে শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত মালামাল রয়েছে।
শ্রীলঙ্কার আইনগত প্রক্রিয়ার আওতায় তাকে বর্তমানে কলম্বোর উত্তরে অবস্থিত নেগোম্বোর একটি কারাগারে রাখা হয়েছে। তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, কারাগারের পরিবেশ কঠোর এবং তাকে কংক্রিটের মেঝেতে ঘুমাতে হচ্ছে, যা তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুবিধায় ফেলছে।
শ্রীলঙ্কার কাস্টমস বিভাগের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিককালে ব্যাংকক হয়ে যাত্রীরা মাদক পাচারে জড়িত থাকার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে ব্যাংকক থেকে যাত্রা করা আরেক ব্রিটিশ নারী বেলা কুলি (১৮) গাঁজা ও হাশিশসহ জর্জিয়ায় আটক হয়েছেন। বেলার কাছে পাওয়া গিয়েছে ১২ কেজি গাঁজা ও ২ কেজি হাশিশ। তার বিরুদ্ধে মাদক পাচার মামলায় ২০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।
‘কুশ’ মাদকটি মূলত পশ্চিম আফ্রিকার সিয়েরা লিওনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এই মাদক গ্রহণকারীরা হঠাৎ রাস্তায় চলার সময় ঘুমিয়ে পড়েন, মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বা এমনকি চলন্ত যানবাহনের নিচে চলে যাওয়ার মতো বিপজ্জনক ঘটনা ঘটায়। এ কারণে সিয়েরা লিওনের সরকার কবরস্থানগুলোর নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে, যেন কেউ মৃতদেহ থেকে হাড় চুরি করে এই মাদক তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে। ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস মাদা বায়ো জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন এই ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে।
এই ধরনের সিনথেটিক মাদক পাচারের ঘটনা আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের বড় একটি অংশ এবং এটি দক্ষিণ এশিয়ার পাশাপাশি পশ্চিম আফ্রিকা ও ইউরোপের অনেক দেশে বড় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তবে, চার্লট মে লি এই মাদক পাচারে সরাসরি যুক্ত কি না তা তদন্ত চলছে। তার দাবি অনুযায়ী, তিনি শুধু ব্যবহারকারী নন বরং কারো ফাঁদে পড়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই মাদক চক্রের অন্যান্য সদস্যদের খুঁজে বের করতে কাজ করে যাচ্ছে।
এই ঘটনার পেছনে থাকা আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানী গ্যাং এবং তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে তদন্ত আরও গভীরতর করার পাশাপাশি শ্রীলঙ্কা ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলো মাদক নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।
সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ